ঢাকা ০৬:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাবা আছে-বাবা নেই!

সুপন রায়
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:৪৫:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪ ২০৮ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রাত ১২টা ছুঁইছুঁই। হঠাৎ ফোন এলো। ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে বলা হলো বাবার শরীরটা খারাপ তোমার ফোনটা খোলা রেখো। ঠিক পাঁচ মিনিট পর আবার ফোন এলো, কিন্তু তখন আর অপেক্ষার কথা বলা হলো না। রুখ্য কন্ঠে ফোনে ভেসে এলো বাবা আর নেই। এই কথা শুনে আমি কাঁদব না কি করব সেই ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। এরপর তড়িঘড়ি করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে মাঝরাতেই বাবার পানে ছুটে চললাম।

ফোনটা যখন বেজে উঠলো তখন ভাত খাচ্ছিলাম। সংবাদ মাধ্যমে কর্মরত থাকায় অফিস থেকে ফিরতে একটু দেরি হয়। প্রতিদিনের মতো বাসায় ফিরি। সেদিনও বাসায় ফিরে আসি। তবে প্রতিদিনের মতো নয়। কারণ এই দিনটি ছিলো অন্যদিনের চেয়ে একদম আলাদা।

২০১৩ সালের ১৫ মে। হঠাৎ করেই নিভে গেলো জীবন প্রদীপ। কিছুই না বলেই পাড়ি দিলো দূর আকাশে। সব সম্পর্ক ছিন্ন করে, কাঁদিয়ে। আর কখনো দেখা হবে না, কথা হবে না। একসাথে খাওয়া হবে না, একসাথে ঘুমানো হবে না। হারিয়ে গেলেন হারাদের দেশে।

১৫ মে। বছরের এই দিনটা এলেই চোখ ভিজে যায়। শত চেষ্টা করেও দুই নদীর জল আটকাতে পারি না। গোপনে সুরঙ্গ দিয়ে গড়গড় করে বেরিয়ে তলিয়ে যায়। ভেসে যায় সবকিছু।

দিন কমে যাচ্ছে। বয়স বাড়ছে। ধীরে ধীরে বাবার পথেই হাঁটছি। খালি চোখে সবকিছু দেখি না।

সময়টা ঠিক মনে নেই। তবে বাবার চলে যাওয়ার কিছুদিন আগে। বাড়ি থেকে আমি ঢাকায় আসছিলাম। অচল মানুষটি ঠিক বাজপাখির মতো এসে বলল ‘বাবা তোমার সাথে আর দেখা হবে না, ভাল থেকো।’ তখন ঠিক ওই কথার মানে বুঝিনি-বাবা হয়তো আগেই বুঝে গিয়েছিলেন-আর দেখা হবে না। এই বেদনা আমাকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে।

এরপর প্রায়ই ফোনে কথা হতো-তবে শরীর এতোটা খারাপ তা কখনো কথায় বোঝা যায়নি। ফোন দিয়ে আমাকে আসার জন্য বলতেন। কিন্তু আসি আসি করে দেরি হয়ে গেলো। অফিস থেকে বাড়ি যাওয়ার জন্য ছুটিও নেই। কিন্তু আমার সেই ছুটির আগেই চিরদিনের জন্য ছুটি নিয়ে গেলেন বাবা।

এখনো বাবার জন্য অপেক্ষায় থাকি। দিন-রাত সমানতালে। খুঁজেফিরি- দেখিনা কোথাও। অপেক্ষায় অপেক্ষায় নদীর স্রোত ভয়ে যায়। খড়কুটোর মতো স্রোতে ভেসে যায় স্বপ্নেরা।

কেননা, বাবা আশা জাগিয়ে ছিলেন, স্বপ্ন দেখিয়ে ছিলেন। তার শিক্ষা-সততা ধারণ করে হাজারো মন ছুটেছে নির্দিষ্টপানে। নিজেকে বিলিয়েছেন আজীবন শিক্ষায়। কারণ বাবা ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

বাবা আছে-বাবা নেই!

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:৪৫:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪

রাত ১২টা ছুঁইছুঁই। হঠাৎ ফোন এলো। ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে বলা হলো বাবার শরীরটা খারাপ তোমার ফোনটা খোলা রেখো। ঠিক পাঁচ মিনিট পর আবার ফোন এলো, কিন্তু তখন আর অপেক্ষার কথা বলা হলো না। রুখ্য কন্ঠে ফোনে ভেসে এলো বাবা আর নেই। এই কথা শুনে আমি কাঁদব না কি করব সেই ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। এরপর তড়িঘড়ি করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে মাঝরাতেই বাবার পানে ছুটে চললাম।

ফোনটা যখন বেজে উঠলো তখন ভাত খাচ্ছিলাম। সংবাদ মাধ্যমে কর্মরত থাকায় অফিস থেকে ফিরতে একটু দেরি হয়। প্রতিদিনের মতো বাসায় ফিরি। সেদিনও বাসায় ফিরে আসি। তবে প্রতিদিনের মতো নয়। কারণ এই দিনটি ছিলো অন্যদিনের চেয়ে একদম আলাদা।

২০১৩ সালের ১৫ মে। হঠাৎ করেই নিভে গেলো জীবন প্রদীপ। কিছুই না বলেই পাড়ি দিলো দূর আকাশে। সব সম্পর্ক ছিন্ন করে, কাঁদিয়ে। আর কখনো দেখা হবে না, কথা হবে না। একসাথে খাওয়া হবে না, একসাথে ঘুমানো হবে না। হারিয়ে গেলেন হারাদের দেশে।

১৫ মে। বছরের এই দিনটা এলেই চোখ ভিজে যায়। শত চেষ্টা করেও দুই নদীর জল আটকাতে পারি না। গোপনে সুরঙ্গ দিয়ে গড়গড় করে বেরিয়ে তলিয়ে যায়। ভেসে যায় সবকিছু।

দিন কমে যাচ্ছে। বয়স বাড়ছে। ধীরে ধীরে বাবার পথেই হাঁটছি। খালি চোখে সবকিছু দেখি না।

সময়টা ঠিক মনে নেই। তবে বাবার চলে যাওয়ার কিছুদিন আগে। বাড়ি থেকে আমি ঢাকায় আসছিলাম। অচল মানুষটি ঠিক বাজপাখির মতো এসে বলল ‘বাবা তোমার সাথে আর দেখা হবে না, ভাল থেকো।’ তখন ঠিক ওই কথার মানে বুঝিনি-বাবা হয়তো আগেই বুঝে গিয়েছিলেন-আর দেখা হবে না। এই বেদনা আমাকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে।

এরপর প্রায়ই ফোনে কথা হতো-তবে শরীর এতোটা খারাপ তা কখনো কথায় বোঝা যায়নি। ফোন দিয়ে আমাকে আসার জন্য বলতেন। কিন্তু আসি আসি করে দেরি হয়ে গেলো। অফিস থেকে বাড়ি যাওয়ার জন্য ছুটিও নেই। কিন্তু আমার সেই ছুটির আগেই চিরদিনের জন্য ছুটি নিয়ে গেলেন বাবা।

এখনো বাবার জন্য অপেক্ষায় থাকি। দিন-রাত সমানতালে। খুঁজেফিরি- দেখিনা কোথাও। অপেক্ষায় অপেক্ষায় নদীর স্রোত ভয়ে যায়। খড়কুটোর মতো স্রোতে ভেসে যায় স্বপ্নেরা।

কেননা, বাবা আশা জাগিয়ে ছিলেন, স্বপ্ন দেখিয়ে ছিলেন। তার শিক্ষা-সততা ধারণ করে হাজারো মন ছুটেছে নির্দিষ্টপানে। নিজেকে বিলিয়েছেন আজীবন শিক্ষায়। কারণ বাবা ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট