ঢাকা ০২:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কৃষি জমিতে ইটভাটার অনুমতি! পাশেই স্কুল-এতিমখানা

মাহবুব বিশ্বাস, বরগুনা
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৪:২৭:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫ ৫২ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জেলা প্রশাসন, কৃষি অধিদপ্তর ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়েই লোকালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এবং তিন ফসলি কৃষি জমিতে চারটি ইটভাটি নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ওই এলাকার অন্তত পাঁচ’শ একর তিন ফসলি জমি এবং পাঁচ হাজার মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পরেছে। ইটভাটির কারনে ফসলি জমির উর্বরতা ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ফলে তেমন ফসল হচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী কৃষকদের। দ্রুত ইটভাটি গুলোর কার্যক্রম বন্ধের দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

ইটভাটি চারটি আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের রায়বালা গ্রামে। তবে প্রশাসন ওই চারটি ইটভাটিতে অনুমতি দেয়নি বলে দাবী করেছেন।

বিবিসি ইটভাটির মালিক মোঃ হান্নান মৃধা বলেন, জিকঝ্যাক ইটভাটিতে ইট প্রস্তুত করছি। এখন আর কৃষি জমি ও পরিবেশ নষ্ট হওয়ার কোন সুযোগ নেই।

তিনি আরও বলেন, আমার এ ইটভাটিতে জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সকল দপ্তরের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন। তারা ইটভাটি নির্মাণের অনুমতি দিয়েছেন। তবে লোকালয়ে প্রশাসন কিভাবে ইটভাটি নির্মাণের অনুমতি দিলো এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি?

জানা গেছে, আমতলী উপজেলার রায়বালা গ্রামে ২০১৭ সালে আব্দুল হান্নান মৃধা বিবিসি, ২০১৮ সালে বিবিসি ইটভাটির তিন’শ গজ দুরে শানু হাওলাদার ফাইভস্টার, ২০১৯ সালে ওই দুই ইটভাটির পাশাপাশি মাহবুবুল আলম মৃধা এমএমবি এবং ২০২১ সালে একই স্থানে নুর জামান এডিবি নামের ইঠভাটি নির্মাণ করেছেন। ফসলি জমি নষ্ট করে এ ইটভাটি চারটি গড়ে উঠেছে। ওই ইটভাটি চারটিতে জেলা প্রশাসন, কৃষি অধিদপ্তর ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। প্রশাসন, কৃষি বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তর অনুমতি ছাড়াই ইটভাটি চারটি গড়ে তুলেছেন।

তবে ইটভাটির মালিকরা দাবী করছেন জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কৃষি অফিসার ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা পরিদর্শণ করে অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু কিভাবে সকল দপ্তর পরিদর্শণ করে এমন লোকালয়ে ইটভাটি নির্মাণের অনুমতি দিলো এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি তারা। আধা কিলোমিটারের মধ্যে চারটি ইটভাটি নির্মাণ করায় ওই এলাকার অন্তত পাচ’শ একর তিন ফসলি জমি, গাছপালা, জীব বৈচিত্র্য, প্রাণী সম্পদ, খামার,গ্রামীণ সড়ক নষ্ট ও পরিবেশ দুষিত হচ্ছে। ওই গ্রামের পাঁচ হাজার মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পরেছে।

কৃষকরা অভিযোগ করেন ইটভাটি নির্মাণ করার পরে ওই জমির উর্বরতা হারিয়েছে। জমিতে এখন আর আগের মত ফসল ফলছে না। এছাড়া ওই ইটভাটি চারটির পাঁচ’শ গজের মধ্যে রয়েছে রায়বালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মহিষকাটা নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসা, এতিম খানা ও ইবতেদায়ী মাদ্রাসা।

ইট প্রস্তুত ও ভাটি স্থাপন আইনে উল্লেখ আছে, আবাসিক এলাকা, তিন ফসলী কৃষি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটি স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু রায়বালা গ্রামে ইটভাটির মালিকরা এই আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ইটভাটি স্থাপন করেছেন। ওই আইন লঙ্ঘন করে কেউ ইটভাটি স্থাপন করলে তাদের এক বছর অনধিক পাঁচ বছরের জেল অথবা আর্থিক জরিমানা করার বিধান রয়েছে। কিন্তু ওই আইনের প্রতিফলন ঘটছে না ওই ইটভাটিগুলোতে।

অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনকে জানানোর পরেও তারা অজ্ঞাত কারনে কার্যকরী ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। ঘনবসতি এলাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন, কৃষি জমি ও পরিবেশ রক্ষায় ওই গ্রামের ইটভাটিগুলো বন্ধে রায়বালা গ্রামের সচেতন নাগরিক দাবী জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিবিসি, ফাইভস্টার, এডিবি ও এমএমএস ইটভাটির পাশে ঘণ বসতি ঘরবাড়ী, গাছপালা ও তিন ফসলি জমি। ওই ইটভাটিগুলোর পাশেই রায়বালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, এতিম খানা ও ইবতেদায়ী মাদ্রাসা। চারটি ইটভাটিতে দেদার ইট পোড়ানোর কাজ চলছে।

রায়বালা গ্রামের কৃষক শাহজাহান আকন বলেন, আধা কিলোমিটারের মধ্যে চারটি ইটভাটি নির্মাণ করায় ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়েছে। এখন আর আগের মত জমিতে ফসল ফলছে না।

তিনি আরও বলেন, ইটভাটির কারনে এলাকার পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। দ্রæত ওই ইটভাটি গুলো বন্ধের দাবী জানান তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা নাশির সিকদার বলেন, একই গ্রামে চারটি ইটভাটি নির্মাণ করায় বসবাসের অযোগ্য হয়ে পরেছে। কালো ধোয়া এবং ধুলা ময়লায় পরিবেশ দূষিত হয়ে পরেছে। দ্রুত এ ইটভাটি গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে দাবী জানান তিনি।

রায়বালা গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, ইটভাটিগুলোর কারনে ওই এলাকার অন্তত পাঁচ’শ একর ফসলি জমি,জীব বৈচিত্র্য, গ্রামীণ সড়ক নষ্ট হচ্ছে এবং পাঁচ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। ওই গ্রামের কৃষি জমি ও মানুষকে স্বাস্থ্য ঝুঁকির হাত থেকে রক্ষায় ওই ইটভাটিগুলো বন্ধের দাবী জানাই।

এমএমএস ইটভাটির পরিচালক মোঃ মাহবুবুল আলম মৃধা বলেন, সকল আইন কানুন মেনেই ইটভাটি নির্মাণ করেছি।

রায়বালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহিনুর বেগম বলেন, বিদ্যালয়ের কয়েক গজের মধ্যেই তিনটি ইটভাটি রয়েছে। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিয়ে রয়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

কুকুয়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোঃ জাকির হোসেন বলেন, প্রভাবখাটিয়ে ইটভাটির মালিকরা কৃষি জমি নষ্ট করে ইটভাটি নির্মাণ করছেন। এতে এই এলাকার অন্তত পাচ’শ একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মধ্যে রয়েছে। দ্রুত ওই ইটভাটিগুলো বন্ধের দাবী তাদের।

এডিবি ইটভাটির মালিক মোঃ নুর জামাল বলেন, প্রশাসনের সকল দপ্তরের অনুমতি নিয়েই ইটভাটি নির্মাণ করেছি। প্রশাসন কিভাবে লোকালয়ে ইটভাটি নির্মাণের অনুমতি দিলো এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি তিনি।

আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার ঈশা ইকবাল বলেন, রায়বালা এলাকার কোন ইটভাটি স্থাপনে ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। কৃষি জমিতে ইটভাটি স্থাপন করলে একদিকে আবাদি জমি নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ইটভাটি এলাকার জমির ফসল ও পরিবেশ নষ্ট হয়।

বরগুনা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হায়াত মাহমুদ রকিব বলেন, পরিবেশ নষ্ট হয় এমন জায়গায় ইটভাটি স্থাপন করতে পারবে না। রায়বালা গ্রামে কোন ইটভাটি স্থাপন করার অনুমতি দেয়া হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। তিনি আরো বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে ওই ইটভাটিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বাংলা টাইমসকে বলেন, সরকারী নিয়মবহিভূত কোন ইটভাটি নির্মাণ করা হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বাংলা টাইমসকে বলেন, ওই ইটভাটিগুলো পরিদর্শণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

কৃষি জমিতে ইটভাটার অনুমতি! পাশেই স্কুল-এতিমখানা

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৪:২৭:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫

জেলা প্রশাসন, কৃষি অধিদপ্তর ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়েই লোকালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এবং তিন ফসলি কৃষি জমিতে চারটি ইটভাটি নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ওই এলাকার অন্তত পাঁচ’শ একর তিন ফসলি জমি এবং পাঁচ হাজার মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পরেছে। ইটভাটির কারনে ফসলি জমির উর্বরতা ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ফলে তেমন ফসল হচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী কৃষকদের। দ্রুত ইটভাটি গুলোর কার্যক্রম বন্ধের দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

ইটভাটি চারটি আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের রায়বালা গ্রামে। তবে প্রশাসন ওই চারটি ইটভাটিতে অনুমতি দেয়নি বলে দাবী করেছেন।

বিবিসি ইটভাটির মালিক মোঃ হান্নান মৃধা বলেন, জিকঝ্যাক ইটভাটিতে ইট প্রস্তুত করছি। এখন আর কৃষি জমি ও পরিবেশ নষ্ট হওয়ার কোন সুযোগ নেই।

তিনি আরও বলেন, আমার এ ইটভাটিতে জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সকল দপ্তরের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন। তারা ইটভাটি নির্মাণের অনুমতি দিয়েছেন। তবে লোকালয়ে প্রশাসন কিভাবে ইটভাটি নির্মাণের অনুমতি দিলো এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি?

জানা গেছে, আমতলী উপজেলার রায়বালা গ্রামে ২০১৭ সালে আব্দুল হান্নান মৃধা বিবিসি, ২০১৮ সালে বিবিসি ইটভাটির তিন’শ গজ দুরে শানু হাওলাদার ফাইভস্টার, ২০১৯ সালে ওই দুই ইটভাটির পাশাপাশি মাহবুবুল আলম মৃধা এমএমবি এবং ২০২১ সালে একই স্থানে নুর জামান এডিবি নামের ইঠভাটি নির্মাণ করেছেন। ফসলি জমি নষ্ট করে এ ইটভাটি চারটি গড়ে উঠেছে। ওই ইটভাটি চারটিতে জেলা প্রশাসন, কৃষি অধিদপ্তর ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। প্রশাসন, কৃষি বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তর অনুমতি ছাড়াই ইটভাটি চারটি গড়ে তুলেছেন।

তবে ইটভাটির মালিকরা দাবী করছেন জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কৃষি অফিসার ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা পরিদর্শণ করে অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু কিভাবে সকল দপ্তর পরিদর্শণ করে এমন লোকালয়ে ইটভাটি নির্মাণের অনুমতি দিলো এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি তারা। আধা কিলোমিটারের মধ্যে চারটি ইটভাটি নির্মাণ করায় ওই এলাকার অন্তত পাচ’শ একর তিন ফসলি জমি, গাছপালা, জীব বৈচিত্র্য, প্রাণী সম্পদ, খামার,গ্রামীণ সড়ক নষ্ট ও পরিবেশ দুষিত হচ্ছে। ওই গ্রামের পাঁচ হাজার মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পরেছে।

কৃষকরা অভিযোগ করেন ইটভাটি নির্মাণ করার পরে ওই জমির উর্বরতা হারিয়েছে। জমিতে এখন আর আগের মত ফসল ফলছে না। এছাড়া ওই ইটভাটি চারটির পাঁচ’শ গজের মধ্যে রয়েছে রায়বালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মহিষকাটা নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসা, এতিম খানা ও ইবতেদায়ী মাদ্রাসা।

ইট প্রস্তুত ও ভাটি স্থাপন আইনে উল্লেখ আছে, আবাসিক এলাকা, তিন ফসলী কৃষি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটি স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু রায়বালা গ্রামে ইটভাটির মালিকরা এই আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ইটভাটি স্থাপন করেছেন। ওই আইন লঙ্ঘন করে কেউ ইটভাটি স্থাপন করলে তাদের এক বছর অনধিক পাঁচ বছরের জেল অথবা আর্থিক জরিমানা করার বিধান রয়েছে। কিন্তু ওই আইনের প্রতিফলন ঘটছে না ওই ইটভাটিগুলোতে।

অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনকে জানানোর পরেও তারা অজ্ঞাত কারনে কার্যকরী ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। ঘনবসতি এলাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন, কৃষি জমি ও পরিবেশ রক্ষায় ওই গ্রামের ইটভাটিগুলো বন্ধে রায়বালা গ্রামের সচেতন নাগরিক দাবী জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিবিসি, ফাইভস্টার, এডিবি ও এমএমএস ইটভাটির পাশে ঘণ বসতি ঘরবাড়ী, গাছপালা ও তিন ফসলি জমি। ওই ইটভাটিগুলোর পাশেই রায়বালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, এতিম খানা ও ইবতেদায়ী মাদ্রাসা। চারটি ইটভাটিতে দেদার ইট পোড়ানোর কাজ চলছে।

রায়বালা গ্রামের কৃষক শাহজাহান আকন বলেন, আধা কিলোমিটারের মধ্যে চারটি ইটভাটি নির্মাণ করায় ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়েছে। এখন আর আগের মত জমিতে ফসল ফলছে না।

তিনি আরও বলেন, ইটভাটির কারনে এলাকার পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। দ্রæত ওই ইটভাটি গুলো বন্ধের দাবী জানান তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা নাশির সিকদার বলেন, একই গ্রামে চারটি ইটভাটি নির্মাণ করায় বসবাসের অযোগ্য হয়ে পরেছে। কালো ধোয়া এবং ধুলা ময়লায় পরিবেশ দূষিত হয়ে পরেছে। দ্রুত এ ইটভাটি গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে দাবী জানান তিনি।

রায়বালা গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, ইটভাটিগুলোর কারনে ওই এলাকার অন্তত পাঁচ’শ একর ফসলি জমি,জীব বৈচিত্র্য, গ্রামীণ সড়ক নষ্ট হচ্ছে এবং পাঁচ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। ওই গ্রামের কৃষি জমি ও মানুষকে স্বাস্থ্য ঝুঁকির হাত থেকে রক্ষায় ওই ইটভাটিগুলো বন্ধের দাবী জানাই।

এমএমএস ইটভাটির পরিচালক মোঃ মাহবুবুল আলম মৃধা বলেন, সকল আইন কানুন মেনেই ইটভাটি নির্মাণ করেছি।

রায়বালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহিনুর বেগম বলেন, বিদ্যালয়ের কয়েক গজের মধ্যেই তিনটি ইটভাটি রয়েছে। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিয়ে রয়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

কুকুয়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোঃ জাকির হোসেন বলেন, প্রভাবখাটিয়ে ইটভাটির মালিকরা কৃষি জমি নষ্ট করে ইটভাটি নির্মাণ করছেন। এতে এই এলাকার অন্তত পাচ’শ একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মধ্যে রয়েছে। দ্রুত ওই ইটভাটিগুলো বন্ধের দাবী তাদের।

এডিবি ইটভাটির মালিক মোঃ নুর জামাল বলেন, প্রশাসনের সকল দপ্তরের অনুমতি নিয়েই ইটভাটি নির্মাণ করেছি। প্রশাসন কিভাবে লোকালয়ে ইটভাটি নির্মাণের অনুমতি দিলো এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি তিনি।

আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার ঈশা ইকবাল বলেন, রায়বালা এলাকার কোন ইটভাটি স্থাপনে ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। কৃষি জমিতে ইটভাটি স্থাপন করলে একদিকে আবাদি জমি নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ইটভাটি এলাকার জমির ফসল ও পরিবেশ নষ্ট হয়।

বরগুনা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হায়াত মাহমুদ রকিব বলেন, পরিবেশ নষ্ট হয় এমন জায়গায় ইটভাটি স্থাপন করতে পারবে না। রায়বালা গ্রামে কোন ইটভাটি স্থাপন করার অনুমতি দেয়া হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। তিনি আরো বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে ওই ইটভাটিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বাংলা টাইমসকে বলেন, সরকারী নিয়মবহিভূত কোন ইটভাটি নির্মাণ করা হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বাংলা টাইমসকে বলেন, ওই ইটভাটিগুলো পরিদর্শণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।