পদত্যাগ করলেন টিউলিপ
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:২৯:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫ ৩৬ বার পড়া হয়েছে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠের কাছ থেকে ফ্ল্যাট উপহার নিয়ে ব্যাপক চাপের মুখে পদত্যাগ করেছেন যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক । ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) তার পদত্যাগের বিষয়টি জানিয়েছে।
টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অর্থনৈতিক অসঙ্গতির অভিযোগ উঠেছে। এরপর নিজের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগকে তদন্তের আহ্বান জানান টিউলিপ। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগের উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস।
লন্ডনে হাসিনা ঘনিষ্ঠের কাছ থেকে উপহার নেওয়া ছাড়াও; সাবেক এক বাংলাদেশি এমপির কাছ থেকে ২০১৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের দুটি টিকিট নিয়েছিলেন টিউলিপ। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অন্যান্য আরও আর্থিক অসঙ্গতির অভিযোগ উঠেছে। এসবের মধ্যে দেশটির বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টি টিউলিপকে বরখাস্তের দাবি জানিয়েছিল। তারা বলছিল, টিউলিপের ওপর ব্রিটেনের দুর্নীতি প্রতিরোধের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারই নাম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়েছে। এতে তিনি মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পালনের নৈতিকতা হারিয়েছেন।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অফ কমন্সের নির্বাচনে চার বার জয়ী লেবার পার্টির নেত্রী টিউলিপের বিরুদ্ধে সম্প্রতি নীতি-বহির্ভূত সুবিধা নেয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছিল ব্রিটিশ সংবাদপত্র ফিনান্সিয়াল টাইমসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে। সেখানে দাবি করা হয়, প্রবাসী বাংলাদেশি আবাসন ব্যবসায়ী আব্দুল মোতালিফের কাছ থেকে লন্ডনে বিনামূল্যে একটি ফ্ল্যাট নিয়েছেন হাসিনার ভাইঝি।
ব্রিটেনের জমি ও আবাসন দফতরের ‘মালিকানা হস্তান্তর নথি’ প্রকাশ করে ওই খবরে দাবি করা হয়েছিল, মোতালিফের কাছ থেকে লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকার ওই ফ্ল্যাটের মালিকানা গ্রহণের বিনিময়ে কোনও অর্থ দিতে হয়নি টিউলিপকে।
তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ সালে ফ্ল্যাটটি তাঁকে দেওয়া হয়েছিল। তখন অবশ্য টিউলিপ মন্ত্রী বা পার্লামেন্ট সদস্য ছিলেন না। এর আগে ২০০১ সালে সেটি ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ড (প্রায় ২ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা) দিয়ে কেনা হয়েছিল। ফ্ল্যাটটির বর্তমান দাম নথিতে উল্লেখ করা হয়নি। তবে একই ভবনের আর একটি ফ্ল্যাট গত অগস্টে ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে (প্রায় ৭ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা) বিক্রি হয়েছে।
প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ৭০ বছরের মোতালিফ ‘আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ’ হিসাবেই পরিচিত। বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনের বাসিন্দা। ভোটার তালিকা সংক্রান্ত নথি জানাচ্ছে, ওই ঠিকানায় মজিবুল ইসলাম নামের আর এক ব্যক্তিও বসবাস করেন।
মজিবুলের বাবা ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। মোতালিফের ঘনিষ্ঠদের ব্যাখ্যা, ব্যবসায় মন্দার সময় তাঁকে আর্থিক সহায়তা করেছিলেন টিউলিপের মা তথা হাসিনার বোন রেহানা। তাই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ নিজের মালিকানায় থাকা ‘একটি সম্পদ’ টিউলিপকে দিয়েছিলেন মোতালিফ।
ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য সান়ডে টাইমস্’ গত সপ্তাহে জানিয়েছে, লন্ডনের হ্যাম্পস্টেডে ফিঞ্চলে রোডের ধারে হাসিনার আর এক বোনঝি আজমিনা সিদ্দিকের একটি ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। সেটি আজমিনাকে বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছিল। টিউলিপের স্বামী ক্রিশ্চিয়ান পার্সিও এক সময়ে এই ফ্ল্যাটটিকে নিজের ঠিকানা হিসাবে ব্যবহার করেছেন বলে ওই খবরে জানানো হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, গত ৫ অগস্ট জনবিক্ষোভের জেরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদ ইস্তফা দিয়ে হাসিনা দেশ ছাড়ার সময় তাঁর সঙ্গী ছিলেন টিউলিপ-আজমিনার মা রেহানা। দুই বোন এক সঙ্গেই ভারতে এসেছিলেন। পরে রেহানা ব্রিটেনে ফিরে যান।