ঢাকা ০২:০৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হারমোনি উৎসব মধ্যদিয়ে ২৬টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টীদের মিলনমেলা

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:২৯:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৫ ১৯ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দেশ-বিদেশের ভ্রমন পিপাসুদের কাছে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, তাদের ব্যবহৃত পণ্য প্রদর্শন ও বিপননের লক্ষে আয়োজন করা হয়েছে আগামী ১০, ১১ ও ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনদিনব্যাপী হারমোনি উৎসবের। যেখানে একত্রে শ্রীমঙ্গলের ২৬টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টী তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, ব্যবহার্য পোষাক, পণ্য ও খাদ্যাভাস তুলে ধরবে। এই মুহুর্তে চলছে তার প্রস্তুতি।

মৌলভীবাজার জেলায় রয়েছে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস। এই নৃ- জাতিগোষ্ঠীর প্রত্যেকেরই রয়েছে নিজস্ব কৃষ্টি, কালচার ও ভাষা। সময়ের আবর্তে তা প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। অন্যদিকে এই এলাকাটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর থাকায় প্রতিনিয়ত সমাগম ঘটে ভ্রমন পিপাসুদের।

এই ভ্রমন পিপাসুদের সাথে বৈচিত্র্যময় এই জাতিগোষ্টীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসন এর সহয়োগীতায় ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো শ্রীমঙ্গলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তিন দিনব্যাপী “হারমোনি উৎসব”।

আগামী ১০, ১১ ও ১২ জানুয়ারি বিটিআরআই সংলগ্ন কাকিয়াছড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে এ উৎসব। এই মুহুর্তে চলছে প্রস্তুতি। শুধু সাংস্কৃতিক পরিবেশনা নয় এসব নৃ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন ব্যবহার্য পোষাক, বিভিন্ন পন্য ও খাদ্যসামগ্রীর সমন্বয়ে বসবে মেলা।

খাসিয়া কমিউনিটির নেতা ও শ্রীমঙ্গল লাউয়াছড়া খাসিপুঞ্জির হেডম্যান ফিলাপত্মী জানান, এই উৎসবে শ্রীমঙ্গল উপজেলার খাসিয়া জনগোষ্টী তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি বিশেষ করে খাসিয়াদের আচার অনুষ্ঠান, পোষাক, উৎপাদিত পণ্য, ব্যবহার্য্য সামগ্রী প্রদর্শন ও বিপননের করার প্রস্তুতি নিয়েছেন।

তিনি জানান, এ হারমেনি উৎসবে খাসিয়াদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ডিয়া কেরছা ও মালা পরিধানের মাধ্যমে বিশেষ নৃত্যানুষ্ঠান হবে। থাকবে তীর-ধনুক প্রতিযোগিতা, গুলতি দিয়ে খেলা (সীয়াট বাটু), তৈলাক্ত বাঁশে উঠার প্রতিযোগিতা (কিউ থেনেং) সহ লাইভ পান বাছাই।

বাংলাদেশে যে সকল স্থানে খাসিয়া অধিবাসী রয়েছেন তাদের নিজস্ব পোষাকে এই অনুষ্ঠান উপভোগ করারও আমন্ত্রন জানানো হয়েছে।

চা শ্রমিক নেতা পরিমল সিং বারাইক জানান, উৎসবে চা শ্রমিকদের অংশগ্রহনের দায়িত্ব পড়েছে তার উপর। তিনি জানান, অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া ২৬টি জাতিগোষ্টীর মধ্যে চা জনগোষ্ঠীরই ১৯টি জাতি। এই ১৯ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাড়াইকরা করবে ঝুমুর নৃত্য, অনেকে এটিকে চা নৃত্য বলেও থাকেন। সবর জনগোষ্ঠী পরিবেশন করবে পত্র সওরা নৃত্য ও চড়ইয়া নৃত্য, খাড়িয়ারা পরিবেশন করবে খাড়ি নৃত্য, রিকিয়াসনরা করবে লাঠি নৃত্য, রাজভল্ববরা করবে উড়িয়া নৃত্য, কন্দরা করবে কুই নৃত্য।

এছাড়াও থাকেবে ওরাওদের ওরাও নৃত্য, ভূঁইয়াদের ভূঁইয়া গীত, সাঁওতালদের লাগড়ে নৃত্য, গড়াইতদের গড়াইত নৃত্য, লোহারদের ভুজপুরি রামায়ন কীর্তন, মুন্ডাদের মুন্ডারি নৃত্য, কুর্মীদের কুরমালি নৃত্য, ভূমিজদের ভূমিজ নৃত্য, বুনার্জীদের উড়িয়া ভজন, গঞ্জুদের গঞ্জু নৃত্য, কড়াদের কড়া নৃত্য প্রভৃতি।

ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর নেতা জনক দেব বর্মা জানান, এ উৎসবে তাদের ঐতিহ্যবাহী কাথারক নৃত্য, বেসু নৃত্য, জুম নৃত্য, গ্যারি পুজা, ক্যার পুজা, নক থাপেংমা পূজা ও কাদং (রনপা) পরিবেশনসহ প্রদর্শীত হবে তাদের লাইভ তাঁত।

গারো জনগোষ্টীর নেতা পার্থ হাজং জানান, এই উৎসবে গারো সম্প্রদায়ের অনেকগুলো পরিবেশনা থাকবে। এর মধ্যে গারো জনগোষ্ঠীর জুম নৃত্য, আমোয়দেব (পুজা), গ্রীক্কা নাচ (মল্লয়যুদ্ধ), চাওয়ারী সিক্কা (জামাই-বৌ নির্বাচন), চাম্বিল নাচ (বানর নৃত্য), মান্দি নাচ, রে রে গান, সেরেনজিং (প্রেমকাহিনীর গান)সহ আরো বেশ কিছু আয়োজন।

উৎসবে আরো আকর্শন হলো মণিপুরর জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী রাসলীলার নৃত্য, পুং চলোম নৃত্য (মৃদঙ্গ নৃত্য), ও রাধাকৃষ্ণ নৃত্য। এ ব্যাপারে মনিপুরি নৃত্য প্রশিক্ষক কেয়া সিংহা জানান, উৎসবের জন্য মনিপুরী ঐতিয্যের অনুষ্ঠানগুলোর মহড়া চলছে।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইসলাম উদ্দিন জানান, উৎসবে এ উপজেলার নৃ-গোষ্ঠী খাসিয়া, গারো, মণিপুরী, ত্রিপুরা, সবর, খাড়িয়া, রিকিয়াসন, বারাইক, কন্দ, রাজভল্বব, ভূঁইয়া, সাঁওতাল, ওরাও, গড়াইত, মুন্ডা, কুর্মী, ভুমিজ, বুনার্জী, লোহার, গঞ্জু ও কড়াসহ ২৬টি জনগোষ্ঠী অংশ নিচ্ছেন, যেখানে প্রদর্শনী হবে ৪৯টি। থাকবে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ধামাইল নৃত্যও।

তিনি বলেন, এই উৎসবের জন্য ইতিমধ্যে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক পর্যটক বিভিন্ন হোটেল মোটেলে রোমও বুকিং করেছেন। আমরা চেষ্টা করছি আমাদের সর্ব্বোচ্চ পরিশ্রম দিয়ে ভালো কিছু উপহার দেয়ার।

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন জানান, মৌলভীবাজার জেলা সবুজ পাহাড় নয়নাভিরাম চা বাগান মনো মুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত।

প্রকৃতির অপূর্ব সুরম্য নিকেতনে বসবাসরত অর্ধশতাধিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের বিচিত্রময় ও বর্ণিল ভাষা, শিল্প- সংস্কৃতি জীবনাচরণ জেলা কি করেছে আরও প্রসিদ্ধ ও সুসমৃদ্ধ।

এই বৈচিত্র্য কে তুলে ধরার লক্ষে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে এই তিন দিনের হারমোনি উৎসব।এই আয়োজনটি শ্রীমঙ্গল ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জীবনধারা, বণাঢ্য সংস্কৃতি, বাহারি খাদ্য ও তাদের উৎপাদিত পণ্যের প্রচারে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। এর মাধ্যমে আমরা এ এলাকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশ সাধন করতে সক্ষম হবো।

এছাড়াও উৎসবে খাসিয়া জনগোষ্ঠীর পান নিয়ে লাইভ পরিবেশনা, ত্রিপুরাদের কোমর তাঁত, মণিপুরীদের লাইভ তাঁত, চা ও রাবার প্রসেসিং, কুমারদের লাইভ মাটির জিনিসপত্র প্রস্তুত করাও থাকছে উৎসবের আকর্ষণ।

কোন সময় কোন অনুষ্ঠান :

১০ জানুয়ারি শুক্রবার বিকাল ৩টায় হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। বিকাল ৪টা ১৫ মিনিটে খাসিয়াদের গ্রুফ নৃত্য। ৪টা ৪৫ মিনিটে ত্রিপুরাদের কাথারক নৃত্য, ৫টায় হবে গারোদের মল্লয় যুদ্ধ, ৫.৪৫ মিনিটে হবে গারোদের জুম নৃত্য এবং ৭.৩০ মিনিটে শুরু হবে মনিপুরীদের রাসলীলা নৃত্য।

১১ জানুয়ারি :

১১ জানুয়ারি শনিবার সকাল ১১.৩০ মিনিটে অনুষ্ঠান শুরু হবে প্রথমে হবে চা জনগোষ্ঠির কড়া অধিবাসীর কড়া নৃত্য। দুপুর ১২টায় ভুমিজ নৃত্য, ১২.১৫ মিনিটে ভূইয়াগীতি, ১২.৩০ মিনিটে সবরদের চড়াইয়া নৃত্য, ১.৩০ মিনিটে গারোদের চাম্বিল নৃত্য (বানর নৃত্য), বেলা ২টায় হবে কুর্মীদের কুরমালী নৃত্য, ২.৩০ মিনিটে লহরদের ভুজপুরী রামায়ন কীর্তন, ৩টায় গঞ্জু নৃত্য, ৩.১৫ মিনিটে বারাইকদের ঝুমুর নৃত্য, ৩.৩০ মিনিটে গারোদের রে রে গান, ৩.৪৫ মিটিটে খাসিয়া গান, ৪.৩০ মিনিটে গারোদের জামাই বউ নির্বাচন, গারোদের ভাষায় এটাকে বলে চাউয়ারী শিক্কা। ৫টায় হবে মান্দি নৃত্য, ৫.৪৫ মিনিটে হবে ঋকিয়াসনদের খারিয়া নৃত্য (কাঠি নৃত্য), ৬.১৫ মিনিটে কন্দদের কুই নৃত্য, ৬.৩০ মিনিটে সাওতালদের লাগরে নৃত্য, ৬.৪৫ মিনিটে গারোদের মান্দি নৃত্য ও ৭.৩০ মিনিটে মনিপুরীদের মৃদঙ্গ নৃত্য।

১২ জানুয়ারি রবিবার :

এদিনও সকাল ১১.৩০ মিনিটে অনুষ্ঠান শুরু হবে প্রথমে হবে চা জনগোষ্ঠির মুন্ডা অধিবাসীর মুন্ডারীনৃত্য। দুপুর ১২টায় বুনার্জীদের উড়িয়া ভজন, ১২.১৫ মিনিটে গড়াইত নৃত্য, ১২.৩০ মিনিটে রাজভল্লবদের উড়িয়া নৃত্য, ২.৩০ মিনিটে সবরদের পত্র সওরা নৃত্য, ৩টায় ঝুমুর নৃত্য, ৩.১৫ মিনিটে কুই নৃত্য, ৩.৩০ মিনিটে লাগরে নৃত্য, ৩.৪৫ মিটিটে ওড়াও নৃত্য, ৪.৩০ মিনিটে জুম নৃত্য, গারোদের সেরেনজিং নৃত্য, ৫.৪৫ মিনিটে হবে বৈশ্য নৃত্য, ৬টায় খাসি দলীয় নৃত্য, ৬.১৫ মিনিটে হবে ধামাইল নৃত্য, ৬.৪৫ মিনিটে গারোদের মান্দি নৃত্য ও ৭.৩০ মিনিটে মনিপুরীদের রাধাকৃষ্ণ নৃত্য।

তবে পৃথক পৃথক জাতিগোষ্ঠীর এই সমৃদ্ধ সংস্কৃতি সংরক্ষনে সরকারের এগিয়ে আসার দাবী জানিয়েছেন সংস্কৃতি প্রেমীরা। বিশেষ করে চা শ্রমিক ও খাসিয়া সম্প্রদায়ের জন্য একটি সাংস্কৃতিক একাডেমী স্থাপনের দাবী সংশ্লিষ্টদের।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

হারমোনি উৎসব মধ্যদিয়ে ২৬টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টীদের মিলনমেলা

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:২৯:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৫

দেশ-বিদেশের ভ্রমন পিপাসুদের কাছে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, তাদের ব্যবহৃত পণ্য প্রদর্শন ও বিপননের লক্ষে আয়োজন করা হয়েছে আগামী ১০, ১১ ও ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনদিনব্যাপী হারমোনি উৎসবের। যেখানে একত্রে শ্রীমঙ্গলের ২৬টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টী তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, ব্যবহার্য পোষাক, পণ্য ও খাদ্যাভাস তুলে ধরবে। এই মুহুর্তে চলছে তার প্রস্তুতি।

মৌলভীবাজার জেলায় রয়েছে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস। এই নৃ- জাতিগোষ্ঠীর প্রত্যেকেরই রয়েছে নিজস্ব কৃষ্টি, কালচার ও ভাষা। সময়ের আবর্তে তা প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। অন্যদিকে এই এলাকাটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর থাকায় প্রতিনিয়ত সমাগম ঘটে ভ্রমন পিপাসুদের।

এই ভ্রমন পিপাসুদের সাথে বৈচিত্র্যময় এই জাতিগোষ্টীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসন এর সহয়োগীতায় ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো শ্রীমঙ্গলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তিন দিনব্যাপী “হারমোনি উৎসব”।

আগামী ১০, ১১ ও ১২ জানুয়ারি বিটিআরআই সংলগ্ন কাকিয়াছড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে এ উৎসব। এই মুহুর্তে চলছে প্রস্তুতি। শুধু সাংস্কৃতিক পরিবেশনা নয় এসব নৃ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন ব্যবহার্য পোষাক, বিভিন্ন পন্য ও খাদ্যসামগ্রীর সমন্বয়ে বসবে মেলা।

খাসিয়া কমিউনিটির নেতা ও শ্রীমঙ্গল লাউয়াছড়া খাসিপুঞ্জির হেডম্যান ফিলাপত্মী জানান, এই উৎসবে শ্রীমঙ্গল উপজেলার খাসিয়া জনগোষ্টী তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি বিশেষ করে খাসিয়াদের আচার অনুষ্ঠান, পোষাক, উৎপাদিত পণ্য, ব্যবহার্য্য সামগ্রী প্রদর্শন ও বিপননের করার প্রস্তুতি নিয়েছেন।

তিনি জানান, এ হারমেনি উৎসবে খাসিয়াদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ডিয়া কেরছা ও মালা পরিধানের মাধ্যমে বিশেষ নৃত্যানুষ্ঠান হবে। থাকবে তীর-ধনুক প্রতিযোগিতা, গুলতি দিয়ে খেলা (সীয়াট বাটু), তৈলাক্ত বাঁশে উঠার প্রতিযোগিতা (কিউ থেনেং) সহ লাইভ পান বাছাই।

বাংলাদেশে যে সকল স্থানে খাসিয়া অধিবাসী রয়েছেন তাদের নিজস্ব পোষাকে এই অনুষ্ঠান উপভোগ করারও আমন্ত্রন জানানো হয়েছে।

চা শ্রমিক নেতা পরিমল সিং বারাইক জানান, উৎসবে চা শ্রমিকদের অংশগ্রহনের দায়িত্ব পড়েছে তার উপর। তিনি জানান, অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া ২৬টি জাতিগোষ্টীর মধ্যে চা জনগোষ্ঠীরই ১৯টি জাতি। এই ১৯ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাড়াইকরা করবে ঝুমুর নৃত্য, অনেকে এটিকে চা নৃত্য বলেও থাকেন। সবর জনগোষ্ঠী পরিবেশন করবে পত্র সওরা নৃত্য ও চড়ইয়া নৃত্য, খাড়িয়ারা পরিবেশন করবে খাড়ি নৃত্য, রিকিয়াসনরা করবে লাঠি নৃত্য, রাজভল্ববরা করবে উড়িয়া নৃত্য, কন্দরা করবে কুই নৃত্য।

এছাড়াও থাকেবে ওরাওদের ওরাও নৃত্য, ভূঁইয়াদের ভূঁইয়া গীত, সাঁওতালদের লাগড়ে নৃত্য, গড়াইতদের গড়াইত নৃত্য, লোহারদের ভুজপুরি রামায়ন কীর্তন, মুন্ডাদের মুন্ডারি নৃত্য, কুর্মীদের কুরমালি নৃত্য, ভূমিজদের ভূমিজ নৃত্য, বুনার্জীদের উড়িয়া ভজন, গঞ্জুদের গঞ্জু নৃত্য, কড়াদের কড়া নৃত্য প্রভৃতি।

ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর নেতা জনক দেব বর্মা জানান, এ উৎসবে তাদের ঐতিহ্যবাহী কাথারক নৃত্য, বেসু নৃত্য, জুম নৃত্য, গ্যারি পুজা, ক্যার পুজা, নক থাপেংমা পূজা ও কাদং (রনপা) পরিবেশনসহ প্রদর্শীত হবে তাদের লাইভ তাঁত।

গারো জনগোষ্টীর নেতা পার্থ হাজং জানান, এই উৎসবে গারো সম্প্রদায়ের অনেকগুলো পরিবেশনা থাকবে। এর মধ্যে গারো জনগোষ্ঠীর জুম নৃত্য, আমোয়দেব (পুজা), গ্রীক্কা নাচ (মল্লয়যুদ্ধ), চাওয়ারী সিক্কা (জামাই-বৌ নির্বাচন), চাম্বিল নাচ (বানর নৃত্য), মান্দি নাচ, রে রে গান, সেরেনজিং (প্রেমকাহিনীর গান)সহ আরো বেশ কিছু আয়োজন।

উৎসবে আরো আকর্শন হলো মণিপুরর জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী রাসলীলার নৃত্য, পুং চলোম নৃত্য (মৃদঙ্গ নৃত্য), ও রাধাকৃষ্ণ নৃত্য। এ ব্যাপারে মনিপুরি নৃত্য প্রশিক্ষক কেয়া সিংহা জানান, উৎসবের জন্য মনিপুরী ঐতিয্যের অনুষ্ঠানগুলোর মহড়া চলছে।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইসলাম উদ্দিন জানান, উৎসবে এ উপজেলার নৃ-গোষ্ঠী খাসিয়া, গারো, মণিপুরী, ত্রিপুরা, সবর, খাড়িয়া, রিকিয়াসন, বারাইক, কন্দ, রাজভল্বব, ভূঁইয়া, সাঁওতাল, ওরাও, গড়াইত, মুন্ডা, কুর্মী, ভুমিজ, বুনার্জী, লোহার, গঞ্জু ও কড়াসহ ২৬টি জনগোষ্ঠী অংশ নিচ্ছেন, যেখানে প্রদর্শনী হবে ৪৯টি। থাকবে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ধামাইল নৃত্যও।

তিনি বলেন, এই উৎসবের জন্য ইতিমধ্যে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক পর্যটক বিভিন্ন হোটেল মোটেলে রোমও বুকিং করেছেন। আমরা চেষ্টা করছি আমাদের সর্ব্বোচ্চ পরিশ্রম দিয়ে ভালো কিছু উপহার দেয়ার।

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন জানান, মৌলভীবাজার জেলা সবুজ পাহাড় নয়নাভিরাম চা বাগান মনো মুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত।

প্রকৃতির অপূর্ব সুরম্য নিকেতনে বসবাসরত অর্ধশতাধিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের বিচিত্রময় ও বর্ণিল ভাষা, শিল্প- সংস্কৃতি জীবনাচরণ জেলা কি করেছে আরও প্রসিদ্ধ ও সুসমৃদ্ধ।

এই বৈচিত্র্য কে তুলে ধরার লক্ষে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে এই তিন দিনের হারমোনি উৎসব।এই আয়োজনটি শ্রীমঙ্গল ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জীবনধারা, বণাঢ্য সংস্কৃতি, বাহারি খাদ্য ও তাদের উৎপাদিত পণ্যের প্রচারে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। এর মাধ্যমে আমরা এ এলাকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশ সাধন করতে সক্ষম হবো।

এছাড়াও উৎসবে খাসিয়া জনগোষ্ঠীর পান নিয়ে লাইভ পরিবেশনা, ত্রিপুরাদের কোমর তাঁত, মণিপুরীদের লাইভ তাঁত, চা ও রাবার প্রসেসিং, কুমারদের লাইভ মাটির জিনিসপত্র প্রস্তুত করাও থাকছে উৎসবের আকর্ষণ।

কোন সময় কোন অনুষ্ঠান :

১০ জানুয়ারি শুক্রবার বিকাল ৩টায় হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। বিকাল ৪টা ১৫ মিনিটে খাসিয়াদের গ্রুফ নৃত্য। ৪টা ৪৫ মিনিটে ত্রিপুরাদের কাথারক নৃত্য, ৫টায় হবে গারোদের মল্লয় যুদ্ধ, ৫.৪৫ মিনিটে হবে গারোদের জুম নৃত্য এবং ৭.৩০ মিনিটে শুরু হবে মনিপুরীদের রাসলীলা নৃত্য।

১১ জানুয়ারি :

১১ জানুয়ারি শনিবার সকাল ১১.৩০ মিনিটে অনুষ্ঠান শুরু হবে প্রথমে হবে চা জনগোষ্ঠির কড়া অধিবাসীর কড়া নৃত্য। দুপুর ১২টায় ভুমিজ নৃত্য, ১২.১৫ মিনিটে ভূইয়াগীতি, ১২.৩০ মিনিটে সবরদের চড়াইয়া নৃত্য, ১.৩০ মিনিটে গারোদের চাম্বিল নৃত্য (বানর নৃত্য), বেলা ২টায় হবে কুর্মীদের কুরমালী নৃত্য, ২.৩০ মিনিটে লহরদের ভুজপুরী রামায়ন কীর্তন, ৩টায় গঞ্জু নৃত্য, ৩.১৫ মিনিটে বারাইকদের ঝুমুর নৃত্য, ৩.৩০ মিনিটে গারোদের রে রে গান, ৩.৪৫ মিটিটে খাসিয়া গান, ৪.৩০ মিনিটে গারোদের জামাই বউ নির্বাচন, গারোদের ভাষায় এটাকে বলে চাউয়ারী শিক্কা। ৫টায় হবে মান্দি নৃত্য, ৫.৪৫ মিনিটে হবে ঋকিয়াসনদের খারিয়া নৃত্য (কাঠি নৃত্য), ৬.১৫ মিনিটে কন্দদের কুই নৃত্য, ৬.৩০ মিনিটে সাওতালদের লাগরে নৃত্য, ৬.৪৫ মিনিটে গারোদের মান্দি নৃত্য ও ৭.৩০ মিনিটে মনিপুরীদের মৃদঙ্গ নৃত্য।

১২ জানুয়ারি রবিবার :

এদিনও সকাল ১১.৩০ মিনিটে অনুষ্ঠান শুরু হবে প্রথমে হবে চা জনগোষ্ঠির মুন্ডা অধিবাসীর মুন্ডারীনৃত্য। দুপুর ১২টায় বুনার্জীদের উড়িয়া ভজন, ১২.১৫ মিনিটে গড়াইত নৃত্য, ১২.৩০ মিনিটে রাজভল্লবদের উড়িয়া নৃত্য, ২.৩০ মিনিটে সবরদের পত্র সওরা নৃত্য, ৩টায় ঝুমুর নৃত্য, ৩.১৫ মিনিটে কুই নৃত্য, ৩.৩০ মিনিটে লাগরে নৃত্য, ৩.৪৫ মিটিটে ওড়াও নৃত্য, ৪.৩০ মিনিটে জুম নৃত্য, গারোদের সেরেনজিং নৃত্য, ৫.৪৫ মিনিটে হবে বৈশ্য নৃত্য, ৬টায় খাসি দলীয় নৃত্য, ৬.১৫ মিনিটে হবে ধামাইল নৃত্য, ৬.৪৫ মিনিটে গারোদের মান্দি নৃত্য ও ৭.৩০ মিনিটে মনিপুরীদের রাধাকৃষ্ণ নৃত্য।

তবে পৃথক পৃথক জাতিগোষ্ঠীর এই সমৃদ্ধ সংস্কৃতি সংরক্ষনে সরকারের এগিয়ে আসার দাবী জানিয়েছেন সংস্কৃতি প্রেমীরা। বিশেষ করে চা শ্রমিক ও খাসিয়া সম্প্রদায়ের জন্য একটি সাংস্কৃতিক একাডেমী স্থাপনের দাবী সংশ্লিষ্টদের।