কর বৃদ্ধি, দাম বাড়বে যেসব পণ্যের
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৮:১২:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৫ ৫৭ বার পড়া হয়েছে
দেশীয় তৈরি ফ্রিজ, এসি, মোটরসাইকেল শিল্পে কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। এর ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে। এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, খুচরা যন্ত্রাংশসহ পূর্ণাঙ্গ ফ্রিজার, রেফ্রিজারেটর, মোটরসাইকেল, এয়ারকন্ডিশনার ও কম্প্রেসর তৈরির ক্ষমতাসম্পন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কেবল এই শিল্পের ব্যবসা থেকে অর্জিত আয়ের ওপর প্রদেয় আয়কর হার ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো। বর্তমানে এ ধরনের শিল্প তাদের আয়ের ওপর ১০ শতাংশ কর দিচ্ছে।
এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশে উৎপাদিত মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, এসি ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স পণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে কিছু পণ্য বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে এসব ভারী শিল্প দেশে স্থাপিত হয়েছে। এসব শিল্প স্থাপনে সরকার বিপুল পরিমাণ কর, ভ্যাট ছাড় দিয়েছে। করছাড় দেয়ার ফলে এসব শিল্প এখন অনেকটাই স্বাবলম্বী হয়েছে। বর্তমানে এ ধরনের শিল্প তাদের আয়ের ওপর ১০ শতাংশ কর দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সাধারণত এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ২০-২২ শতাংশ কর্পোরেট কর দিতে হয়। দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় এবং তাদের স্বাবলম্বী করতে এতদিন তাদের কর কমানো ছিল। ওটাই বাড়ানো হয়েছে। মানে করছাড় প্রত্যাহার করে নিলো এনবিআর।
এনবিআরের ওই আদেশ ২০২৫-২০২৬ করবর্ষ থেকে কার্যকর হবে, যা ২০৩২ সালে ৩০ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকিবে। প্রজ্ঞাপনে বেশকিছু শর্তের কথা বলা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে-
১. শিল্প প্রতিষ্ঠানটি কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ এর অধীন নিবন্ধিত হতে হবে।
২. শিল্প প্রতিষ্ঠানটিকে আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ৭৬ এর উপ-ধারা (৫) এবং (৬) সহ অন্যান্য বিধানাবলি পরিপালন করতে হবে।
৩. শিল্প প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব মোল্ড ও ডাইস তৈরির ক্ষমতা থাকতে হবে।
৪. শিল্প প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব পলি ইউরিথিন ফোমিং প্ল্যান, পাউডার কোটিং প্ল্যান্ট এবং সক্রিয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট এর ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৫. শিল্প প্রতিষ্ঠানটি এনবিআরের অনুমোদিত হতে হবে এবং বিদ্যমান ব্যবসার পুনর্গঠন বা এইরূপ ব্যবসা বিভাজন দ্বারা গঠিত শিল্প প্রতিষ্ঠান অথবা বাংলাদেশে বিদ্যমান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মেশিনারি অথবা স্থাপনা হস্তান্তরের মাধ্যমে গঠিত কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান হতে পারবে না।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী অব্যাহতিপ্রাপ্ত কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান শর্ত পরিপালনে ব্যর্থ হলে এনবিআর প্রদত্ত অনুমোদন প্রত্যাহার করতে পারবে।
আরও জানা যায়, খুচরা যন্ত্রাংশসহ পূর্ণ ফ্রিজ, রেফ্রিজারেটর, মোটরসাইকেল, এয়ার কন্ডিশনার ও কম্প্রেসর তৈরির প্রতিষ্ঠানকে কর ছাড় দিয়ে ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর এনবিআর থেকে আদেশ জারি করা হয়েছে। যাতে শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে ২০৩২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কর হ্রাস করে ১০ শতাংশ করা হয়। উৎপাদনের তারিখ হতে এসব প্রতিষ্ঠান তাদের আয়ের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হতো।
এর আগে ২০০৯ সাল থেকে এসব খাতকে করছাড় দিয়ে আসছে এনবিআর। সে সময় ৫ শতাংশ হারে কর দিতো হতো।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ফ্রিজ ও এসির কম্প্রেসর বাজারজাত করে ওয়ালটন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি দেশীয় ফ্রিজের বাজারে মার্কেট লিডার। এসি তৈরিতেও তারা শক্ত স্থান লাভ করছে। দেশে মোটরসাইকেল খাতে নতুন করে হোন্ডা, টিভিএস, হিরো ও রানার – এ চারটি কোম্পানিতে ম্যানুফেকচারিং শুরু করেছে, যেখানে বিদেশি বিনিয়োগও আছে। এছাড়া বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী তৈরি করছে। যার ফলে আমদানি নির্ভরতা প্রতিনিয়ত কমছে। অতিরিক্ত করারোপের ফলে এসব উদীয়মান শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।