মেঘনায় জাহাজে সাত খুন
কাগজে লিখে বোঝানোর চেষ্টা করছেন আহত জুয়েল
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:১৬:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ৭৭ বার পড়া হয়েছে
চাঁদপুরের মেঘনায় জাহাজ থেকে ৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে কীভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বেলা ১টার পর মরদেহের খবর পাওয়া যায়। জাহাজটির নাম এমভি আল-বাখেরা। জাহাজটি নোঙর করা অবস্থায় ছিল।
জাহাজ থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় জুয়েল রানা (৩৫) কে। তার শ্বাসনালী কেটে যাওয়ায় কথা বলতে পারছেন না। তাই কাগজে লিখে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। ঘটনার বিষয়ে নৌ পুলিশকে কিছু একটা বলতে চেয়েছেন; কিন্তু শ্বাসনালি কেটে যাওয়ায় তিনি কিছু বলতে পারছিলেন না। তাই নিজ হাতে লিখে সেটি বলার চেষ্টা করেন। শেষ পর্যন্ত অবস্থা গুরুতর হওয়ায় লেখা শেষের আগেই সোমবার সন্ধ্যায় তাকে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে করে চাঁদপুর সদর হাসপাতাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়।
চাঁদপুরের হাইমচরের মেঘনা নদীর ঈশানবালা খাল এলাকায় নোঙর করা এমভি আল-বাখেরা নামের একটি জাহাজ থেকে সোমবার বেলা তিনটার পরে পাঁচজনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আর তিনজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
চাঁদপুর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম ইকবাল বলেন, আহত জুয়েলের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি; কিন্তু তিনি কথা বলতে পারেননি। শুধু একটি কাগজে তার নাম আর একটি মুঠোফোন নম্বর দিয়ে যান। আর শেষ দিকে “আমি স” লেখার পর অ্যাম্বুলেন্সটি চাঁদপুর থেকে চলে যায়। আমাদের ধারণা, জুয়েল হয়তো কিছু একটা জানেন বলে বলার চেষ্টা করেছেন।
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সন্ধ্যায় চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় বলেন, ওই জাহাজে গিয়ে পাঁচজনকে পাঁচটি কক্ষে রক্তাক্ত অবস্থায় মৃত পান। বাকি তিনজনকে জাহাজের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত অবস্থায় জীবিত মনে হওয়ায় দ্রুতই ২৫০ শয্যা চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়; কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পর দুজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ভাগ্যক্রমে শ্বাসনালি কাটা অবস্থায় জুয়েল নামের একজন স্টাফ এখনো বেঁচে আছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, প্রাথমিক তদন্ত করে বিষয়টি ডাকাতি মনে করছি না। এ ধরনের নৃশংসতম ঘটনা একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড মনে হচ্ছে। কারণ, সেখানে দুটি মোবাইল, মানিব্যাগ ও অন্যান্য জিনিসপত্র অক্ষত পাওয়া যায়।
চাঁদপুর নৌ পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ভোরে বা সকালের মধ্যে কোনো এক সময়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে তাঁরা ধারণা করছেন। যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি মেঘনা নদীর পশ্চিমাংশ চর এলাকায়। দুপুরে খবর পেয়ে নৌ পুলিশের সেখানে পৌঁছাতেও এক ঘণ্টা সময় লেগেছে। দুর্বৃত্তরা নিরিবিলি এলাকা নিশ্চিত হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়ে সহজে পালিয়ে যায় বলে ধারণা করছেন।
নিহত সাতজনের মরদেহের ময়নাতদন্ত করতে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে জাহাজের মাস্টার কিবরিয়া (৬০), ইঞ্জিনচালক সালাউদ্দিন (৫৫), সুকানি আমিনুল মুন্সি (৪০), গ্রিজার সজিবুল (৩৫), আজিজুল (৪০), স্টাফ মাজেদুল ইসলামের পরিচয় পাওয়া যায়।
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘সবাইকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ জন্য একজন ছাড়া বাকিরা রক্তক্ষরণে মারা যান। জুয়েল নামের একজনের শ্বাসনালি কাটার পরও তিনি শ্বাস নিতে পারায় তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মহসীন উদ্দিন বলেন, কীভাবে, কেন, কারা ঘটাল, আশা করি তদন্তের মাধ্যমে তা বেরিয়ে আসবে।’
আহত জুয়েল রানাকে রাত পৌনে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাকে নাক, কান ও গলা বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি এখনো শঙ্কামুক্ত নন।