জমির উর্বর অংশ যাচ্ছে ইটভাটায়, হুমকির মুখে ফসলের ফলন
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:০১:২৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ৪৪ বার পড়া হয়েছে
ফসলের ফলন বৃদ্ধিতে জমিতে জৈব উপাদান থাকা বেশি জরুরী। আর তা থাকে মাটির উপরিভাগে। কিন্ত সম্প্রতি সময়ে আমন ধান ঘরে তোলার পর ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের মাঠে মাঠে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। ফলে হাজার বছরে তৈরী উর্বর জৈব উপাদানসমৃদ্ধ সেই (টপ সোয়েল) ট্রাক্টর অথবা ট্রলি ভরে চলে যাচ্ছে ইটভাটায় অথবা খানাখন্দ ভরাটে। যা এখনই রুখতে না পারলে ভবিষ্যতে জমির উর্বরতা ও ফসলের ফলন পড়বে হুমকির মুখে। অথচ অদৃশ্য কারনে প্রশাসন রয়েছে একেবারেই নিরব।
সরেজমিনে কালীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় গেলে দেখা যায়, মাঠে মাঠে জমির উপরিভাগের মাটি ভেকু মেশিনে কেটে ট্রাক্টরে ভরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মাঠগুলোতে অসংখ্য ট্রাক্টরে ভরা। এতে করে মাটি বহনের সময় সড়কের ওপর পড়ে কাঁদা মাটিতে পিচ্ছিল হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো খুঁজতে ভাটা মালিকেরা সব ইটভাটায় গড়ে তুলেছেন পাকা সড়কের পাশে। এখন সব ইট ভাটায় মাটি তুলে স্তুপ করে সড়কের পাশেই রাখা হচ্ছে। যে কারনে একটু বৃষ্টি হলেই কাঁদা সড়কে ছড়িয়ে পড়ে। ওই সড়কে চলাচল হয়ে ওঠে ঝুঁকিপূর্ণ। তারমধ্যে উপজেলা বলাকান্দর গ্রামের মধ্যকার ইটভাটার মাটি যেন পিচ সড়কের সঙ্গে মিশে গেছে।
জানাগেছে, এ জন্য ভাটা মালিকেরা অসচেতন সরল সোজা কৃষকদের টাকার লোভনীয় অফারে দুর্বল করছে। এখন এলাকার অধিকাংশ ইটভাটায় এভাবে ফসলী জমির মাটির উর্বর অংশ পুড়িয়ে ইট তৈরী হচ্ছে।
কৃষকরা জানান, প্রতিবছরই শীতের শুষ্ক মৌসুমে বিভিন্ন মাঠ থেকে মাটি কেটে থাকে। এ জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ভেকু নামের এক যন্ত্র। যা ঘন্টা চুিক্ততে মাটি ব্যবসায়ী ও ভাটা মালিকেরা ভাড়া করে এনেছেন। আর এ মাটি বহন করা হচ্ছে ট্রাক্টরে করে। স্থানীয় ছাড়াও বিশেষ চুক্তিতে পাশ্ববর্তী মাগুরা,যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, নড়াইল, পাবনা জেলা থেকে ভাড়া করে আনা হয়েছে ভেকু, ট্রাক্টর ছাড়াও মাটি কাটার দক্ষ শ্রমিকও। কৃষকদের অভিযোগ ভাটা মালিকেরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কিছু বলতে সাহস পাচ্ছেন না।
পথচারী মোটরসাইকেল চালক সাইদুর রহমান জানান, উপজেলার প্রায় সব এলাকাতেই ইটভাটা রয়েছে। বিভিন্ন গ্রামীন পাকা সড়ক দিয়েই তারা ট্রাক্টরে ভরে মাটি নিয়ে আসছে। মাটি ভর্তি দ্রুতগতির এ ট্রাক্টরগুলো থেকে মাটি ছিটকে সড়কের উপরে পড়ে লেপটে যাচ্ছে। রাতভর বৃষ্টির মত ঝরছে কুয়াশা। এতে সড়কের উপরে পড়ে থাকা মাটি ভিজে পিচ্ছিল কাঁদায় পরিণত হচ্ছে। যে কারনে মটর বাইকসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাদেরকে সাবধানে,ভয়ে ভয়ে পথ চলতে হচ্ছে। তারপরও ঘটছে দূর্ঘটনা। তিনি বলেন, গুটি কয়েক মানুষের স্বার্থে সব মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক হবে এটা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
কালীগঞ্জ শহরের ফয়লা গ্রামের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম জানান, সাধারনত শীতের সময়ে ইটভাটা গুলোতে মাটি এনে স্তপ করে রাখে। কিন্ত এ বছর চতুর ইটভাটার মালিকেরা মাটি কাটার কৌশল পরিবর্তন করে বেশিরভাগ মাটি কাঁটছে রাতে।
তিনি বলেন, সড়কের পাশেই তার বাসাবাড়ি। মাটি টানার ট্রাক্টরের লাগাতর উচ্চ শব্দে কোনভাবে ঘুমানো যাচ্ছে না। এমনকি গভীর রাতে ট্রাক্টরের প্রচন্ড শব্দে শিশুরা ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠছে। শহরে সড়কের পাশে যাদের বাসাবাড়ি তারা সকলেই তার মত সমানভাবে ভুক্তভোগী।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুব আলম রনি জানান, ফসল ফলাতে হলে যে কোন জমির টপ সোয়েলটাই বেশি জরুরী। কেননা জমির উপরিভাগের ১৫ সেঃ মিঃ গভীর পর্যন্ত মাটিতেই জৈব উপাদান থাকে। এ স্তরটি থেকেই ফসলী গাছে খাদ্য পায়।
তিনি বলেন, নিজেদের অসচেতনতায় যারা মাটির এ অংশটি কাটতে দিচ্ছেন তারা অবশ্যই ভুল করছেন। কারন যে কোন জমির এ টপ সোয়েলটা একদিনে তৈরী হয়নি। ফলে এখনই সকলে নজর না রাখলে ভবিষ্যতে ফসলের ফলন বিপর্যয় দেখা দিবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনষ্টিটিউট সয়েল মাইক্রোবায়োজি এ্যান্ড বায়োকেমিষ্ট্রি কেন্দ্রীয় গবেষনাগার ঢাকার উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ কে এম জগলুল পাশা মুঠোফোনে জানান, মাটির উপরের টপ সয়েলটা ফসল উৎপাদনের জন্য খুবই দরকার। যদি এই টপ সয়েল বা জৈব উপাদান কেটে ফেলা হয় তাহলে ভবিষ্যতে ওই জমিতে ফসল উৎপাদন পড়বে হুমকিতে।
তিনি বলেন, এদেশের মাটিতে সোনা ফলে। ফলে সমতল উর্বর মাটিই আমাদের প্রধান সম্পদ। ফলে এ সম্পদ রক্ষণাবেক্ষনে সকলেরই দায়িত্বশীল হতে হবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মাটি কাটার বিষয়টি তিনি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন।