মানুষ বেচাকেনার হাট! দর কষাকষি শেষে বিক্রি
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৩৯:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ ৪৬ বার পড়া হয়েছে
দিনাজপুরের বীরগঞ্জে জমে উঠেছে শ্রম কেনা-বেচার হাট। এ হাটে কাক ডাকা ভোর হতে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম হতে শ্রমিক-দিনমজুর-ক্ষেতমজুররা ছুটে আসেন শ্রম বিক্রির আশায়। তাদের চোখে-মুখে হাজারটা অসহায়ত্বের ছাপ। এই হাটে কেউ আসেন বিক্রি হতে আর কেউ আসেন কিনতে। বাজারের পণ্য সামগ্রীর মতই দাম কষাকষি করেই বিক্রি হয় এই হাটে মানুষের শ্রম। হাটে আসা ক্রেতারা বলছেন, আগে শ্রমিক-দিনমজুর-ক্ষেতমজুরের সংকট ছিল প্রকট বর্তমানে এই হাটের দৃশ্যপট বদলেছে।
বীরগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বড় শ্রম (শ্রমিক-দিনমজুর-ক্ষেতমজুর) বিক্রির হাট বসে সাতোর ইউনিয়নের পঁচিশ মাইল নামক স্থানে। প্রায় দুই দশক ধরে শ্রম বিক্রির হাট নামে জায়গাটির পরিচিতি রয়েছে। প্রতিদিন কাক ডাকা ভোর থেকে ভিড় জমে শত শত শ্রম বিক্রেতা ও শ্রম ক্রেতাদের। ভোর সাড়ে ৫টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত চলে শ্রম কেনাবেচা।
শ্রমিক-দিনমজুররা তাদের দক্ষতা অনুপাতে ধান-পাট কাটা, ক্ষেত-খামার বা গৃহস্থালি-ঘরামী কাজের জন্য নিজেদের শ্রম বিক্রি করে আসছে। একই চিত্র উপজেলার ভোগনগর, সাতোর, মাহানপুর ইউনিয়ন, পার্শ^র্তী উপজেলার কাহারোল ও সেতাবগঞ্জ উপজেলায় শ্রমের হাট বসে। বীরগঞ্জ উপজেলায় আরো কয়েকটি শ্রম কেনা-বেচার হাট বসে। তার মধ্যে সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী পচিঁশ মাইল নামক স্থানে শ্রম কেনা-বেচার হাটটি। বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মানুষ বেচাকেনার হাটটি। শ্রমজীবীদের কদর দিনদিন বেড়েছে। কাজের জন্য মানুষ বিক্রি হয়। দূর-দূরান্ত থেকে শ্রমিক-দিনমজুর-ক্ষেতমজুররা আসেন এই হাটে।
উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের রছুলনগর গ্রামের চান্দু মিয়া জানান, উপযুক্ত পারিশ্রমিক পেলে কাজে যাব। কৃষি শ্রমিক ক্রেতা লুৎফর রহমান বলেন, একজন কামলা নিতে এসেছি ক্ষেতের বীজতলা প্রস্তুত করার জন্য। দরদাম ঠিক হলে কাজ করাবো।
ভোগনগর ইউনিয়নের ক্ষেতমজুর হরিপদ বর্মন বলেন, এই হাটে শ্রম বিক্রি করতে এসেছি- ৬শ’ টাকা দিন হাজিরা হলে কাজে যাব।
স্থানীয় সার বিক্রেতা মো: আব্দুর রহমান জানান, এই হাট দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে শ্রম কেনা-বেচা। শ্রমিক-দিনমজুর-ক্ষেতমজুররা ভোর ৫টা থেকে ৮টার মধ্যে দরদাম করেন। এরপর ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দিন চুক্তিতে কাজ করেন। সাধারণত দৈনিক মজুরি ৫শ’ থেকে ৭শ’ টাকার মধ্যে হয়। তা নির্ভর করে কাজের ধরন ও শ্রমের চাহিদার ওপর। হাটটি শুধু বীরগঞ্জবাসী নয়; বরং আশপাশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার শ্রমিক-দিনমজুর-ক্ষেতমজুরদের আস্থার জায়গা হয়ে উঠেছে। এখানে এসে তারা যেমন কাজ পান, তেমনি কাজের চাহিদা মেটানোর জন্য মালিকরাও উপযুক্ত শ্রমিক খুঁজে পান। তা শ্রম বিক্রির পাশাপাশি দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থানের নির্দিষ্ট ঠিকানা হিসেবে সুপরিচিত হয়ে উঠেছে।
সাতোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ জাকির হোসেন রাজা বলেন, পঁচিশ মাইল বাজারে দীর্ঘদিন থেকে শ্রমজীবী মানুষের বেচাকেনা হয়ে আসছে। কৃষি কাজের জন্য প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ আসে এই বাজারে। আগে ক্ষেতে খামারে কাজের মানুষ পাওয়া খুবই কষ্টকর ছিল। বর্তমানে কৃষি কাজের মানুষ খুঁজতে আর প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হতে হয় না।