ঢাকা ০৪:৪৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রথম আলো সম্পাদকসহ ৯ আসামির বিরুদ্ধে মামলা

৫ বছরেও বিচার পায়নি শিক্ষার্থী নাইমুলের পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:০৪:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ৫০ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরার রাহাতের মৃত্যুর ৫ বছর পরও তার পরিবার বিচার পায়নি। ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর প্রথম আলোর সাময়িকী ‘কিশোর আলো’ অনুষ্ঠানে বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় তার। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। তবে পরে কিশোর আলোর সম্পাদক ও লেখক আনিসুল হককে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং আদালত অন্য ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে।

আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলেও আসামিপক্ষের আবেদনে এ মামলাটির বিচার কার্যক্রম উচ্চ আদালতে আটকে যায়। এতে এ ঘটনার পাঁচ বছর পার হলেও ভুক্তভোগী পরিবার বিচার পায়নি। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন প্রথম আলোর হেড অব ইভেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্টিভেশন কবির বকুল, নির্বাহী শাহপরান তুষার, নির্বাহী শুভাশীষ প্রামাণিক, কিশোর আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক মহিতুল আলম, ডেকোরেশন ও জেনারেটর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের জসীম উদ্দিন, মোশাররফ হোসেন, সুজন ও কামরুল হাওলাদার। আসামিদের সবাই জামিনে রয়েছেন।

বাদীর আইনজীবী মোহাম্মদ ওমর ফারুক আসিফ বলেন, মামলাটির বিচার কার্যক্রমে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে। আমি জজ কোর্টের অংশটুকু দেখি। এ ছাড়া কিছু জানি না।

মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৯ সালের ১ ন‌ভেম্বর ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে প্রথম আলোর সাময়িকী কিশোর আলোর অনুষ্ঠানে বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরার রাহাতের মৃত্যু হয়। এরপর ৬ নভেম্বর নাইমুল আবরা‌রের বাবা ম‌জিবুর রহমান প্রথম আলো সম্পাদক ও প্রকাশক এবং কি‌শোর আলোর প্রকাশক ম‌তিউর রহমা‌নের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আদালত শিক্ষা‌র্থী নাইমুল আবরারের মরদেহ দ্রুত কবর থে‌কে তু‌লে ময়নাতদ‌ন্তের নি‌র্দেশ দেন।

একই স‌ঙ্গে এ ঘটনায় হওয়া অপমৃত্যুর মামলার স‌ঙ্গে নতুন মামলা একীভূত ক‌রে তদন্ত ক‌রে মোহাম্মদপুর থানার ও‌সিকে প্র‌তি‌বেদন দাখিলের নি‌র্দেশ দেন। তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি প্রথম আলো সম্পাদকসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন জমা দেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুল আলিম।

মামলা প্রতিবেদনে নাইমুল আবরার নিহত হওয়ায় কিশোর আলো কর্তৃপক্ষের অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে উল্লেখ করা হয়। পরে ওই বছরের ১২ নভেম্বর প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। তবে একই সঙ্গে কিশোর আলোর সম্পাদক ও লেখক আনিসুল হককে মামলা থেকে অব্যাহতির আদেশ দেন।

এই অভিযোগ গঠনের বৈধতা নিয়ে ও মামলা বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্টে আবেদন করেন প্রথম আলো সম্পাদক। মামলা বাতিল চেয়ে প্রথম আলো সম্পাদকের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ মামলার কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন।

সে আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ২১ ডিসেম্বর আপিল বিভাগে আবেদন করেন। পরে ২৩ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আনা আবেদনে ‘নো অর্ডার’ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট। এতে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করে হাইকোর্ট বিভাগ যে আদেশ দিয়েছেন, তা আপিল বিভাগেও বহাল থাকে।

তবে এ বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী প্রশান্ত কর্মকার বলেন, ‘মামলাটির বিচার কার্যক্রম উচ্চ আদালতে স্থগিতাদেশ রয়েছে। এ মামলায় কোনো সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি।’

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, সঠিকভাবে বিদ্যুতের ব্যবস্থাপনা না করে এ রকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে এবং এতে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা করা হয়নি। ঘটনা ঘটার পর রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ ক্যাম্পাসের উল্টোপাশের সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে রাহাতকে না নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তৃপক্ষ ভুক্তভোগীর বাবা মজিবুরকে কিছু জানায়নি। তার বন্ধু ও সহপাঠীর মাধ্যমে ছেলের মৃত্যুর সংবাদ জানতে পারেন। অথচ আনুমানিক ৩টার সময় সে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। ৪টা ১৫ মিনিটে ইউনিভার্সেলে ভর্তি করা হয়, ৪টা ৫১ মিনিটে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

প্রথম আলো সম্পাদকসহ ৯ আসামির বিরুদ্ধে মামলা

৫ বছরেও বিচার পায়নি শিক্ষার্থী নাইমুলের পরিবার

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:০৪:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরার রাহাতের মৃত্যুর ৫ বছর পরও তার পরিবার বিচার পায়নি। ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর প্রথম আলোর সাময়িকী ‘কিশোর আলো’ অনুষ্ঠানে বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় তার। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। তবে পরে কিশোর আলোর সম্পাদক ও লেখক আনিসুল হককে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং আদালত অন্য ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে।

আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলেও আসামিপক্ষের আবেদনে এ মামলাটির বিচার কার্যক্রম উচ্চ আদালতে আটকে যায়। এতে এ ঘটনার পাঁচ বছর পার হলেও ভুক্তভোগী পরিবার বিচার পায়নি। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন প্রথম আলোর হেড অব ইভেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্টিভেশন কবির বকুল, নির্বাহী শাহপরান তুষার, নির্বাহী শুভাশীষ প্রামাণিক, কিশোর আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক মহিতুল আলম, ডেকোরেশন ও জেনারেটর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের জসীম উদ্দিন, মোশাররফ হোসেন, সুজন ও কামরুল হাওলাদার। আসামিদের সবাই জামিনে রয়েছেন।

বাদীর আইনজীবী মোহাম্মদ ওমর ফারুক আসিফ বলেন, মামলাটির বিচার কার্যক্রমে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে। আমি জজ কোর্টের অংশটুকু দেখি। এ ছাড়া কিছু জানি না।

মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৯ সালের ১ ন‌ভেম্বর ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে প্রথম আলোর সাময়িকী কিশোর আলোর অনুষ্ঠানে বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরার রাহাতের মৃত্যু হয়। এরপর ৬ নভেম্বর নাইমুল আবরা‌রের বাবা ম‌জিবুর রহমান প্রথম আলো সম্পাদক ও প্রকাশক এবং কি‌শোর আলোর প্রকাশক ম‌তিউর রহমা‌নের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আদালত শিক্ষা‌র্থী নাইমুল আবরারের মরদেহ দ্রুত কবর থে‌কে তু‌লে ময়নাতদ‌ন্তের নি‌র্দেশ দেন।

একই স‌ঙ্গে এ ঘটনায় হওয়া অপমৃত্যুর মামলার স‌ঙ্গে নতুন মামলা একীভূত ক‌রে তদন্ত ক‌রে মোহাম্মদপুর থানার ও‌সিকে প্র‌তি‌বেদন দাখিলের নি‌র্দেশ দেন। তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি প্রথম আলো সম্পাদকসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন জমা দেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুল আলিম।

মামলা প্রতিবেদনে নাইমুল আবরার নিহত হওয়ায় কিশোর আলো কর্তৃপক্ষের অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে উল্লেখ করা হয়। পরে ওই বছরের ১২ নভেম্বর প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। তবে একই সঙ্গে কিশোর আলোর সম্পাদক ও লেখক আনিসুল হককে মামলা থেকে অব্যাহতির আদেশ দেন।

এই অভিযোগ গঠনের বৈধতা নিয়ে ও মামলা বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্টে আবেদন করেন প্রথম আলো সম্পাদক। মামলা বাতিল চেয়ে প্রথম আলো সম্পাদকের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ মামলার কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন।

সে আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ২১ ডিসেম্বর আপিল বিভাগে আবেদন করেন। পরে ২৩ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আনা আবেদনে ‘নো অর্ডার’ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট। এতে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করে হাইকোর্ট বিভাগ যে আদেশ দিয়েছেন, তা আপিল বিভাগেও বহাল থাকে।

তবে এ বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী প্রশান্ত কর্মকার বলেন, ‘মামলাটির বিচার কার্যক্রম উচ্চ আদালতে স্থগিতাদেশ রয়েছে। এ মামলায় কোনো সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি।’

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, সঠিকভাবে বিদ্যুতের ব্যবস্থাপনা না করে এ রকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে এবং এতে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা করা হয়নি। ঘটনা ঘটার পর রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ ক্যাম্পাসের উল্টোপাশের সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে রাহাতকে না নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তৃপক্ষ ভুক্তভোগীর বাবা মজিবুরকে কিছু জানায়নি। তার বন্ধু ও সহপাঠীর মাধ্যমে ছেলের মৃত্যুর সংবাদ জানতে পারেন। অথচ আনুমানিক ৩টার সময় সে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। ৪টা ১৫ মিনিটে ইউনিভার্সেলে ভর্তি করা হয়, ৪টা ৫১ মিনিটে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।