ঢাকা ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রংপুর সিটি করপোরেশন

দেড় মাস ধরে বিকল আইসিউ রোগীবহনকারী এ্যাম্বুলেন্স, ১৫ রোগীর মৃত্যু!

রংপুর প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০২:৪৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ৬৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রংপুর সিটি করপোরেশনের আইসিউ রোগীবহন কারী ও লাশবাহি এ্যাম্বুলেন্স ৪টি এ্যাম্বুলেন্স বিকল হয়ে একমাস ধরে পড়ে থাকলেও মেরামত করার কোন উদ্যেগ গ্রহন করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে ১৫ লাখ জনসংখ্যার রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডের মানুষ জরুরী প্রয়োজনে এ্যাম্বুলেন্ন সার্ভিস পাচ্ছে না। এতে গত দেড় মাসে অন্তত ১৫ জন মুমুর্ষ রোগীকে হাসপাতালে যথা সময়ে আনতে না পারায় মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

রংপুর সিটি করপোরেশন সুত্রে জানা গেছে, নগর বাসির জরুরী প্রয়োজনে বিশেষ করে গুরতর অসুস্থ রোগীদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরী চিকিৎসা দেবার জন্য ৫টি এ্যাম্বুলেন্স থাকলেও ৪টি গত দেড় মাসের মধ্যে বিকল হয়ে রংপুর সিটি করপোরেশনের গ্যারেজে পড়ে আছে। একমাক্র সচল এ্যাম্বুলেন্সটিও কাজ করছেনা ফলে এ্যাম্বুলেন্স বিহিন হয়ে পড়েছে রংপুর সিটি করপোরেশন। ফলে জরুরী প্রয়োজনে মুর্মুষ রোগীদের দ্রæত চিকিৎসা দেবার জন্য হাসপাতালে আনা নেয়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

সিটি করপোরেশনের যান্ত্রিক শাখার দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, রংপুর সিটি করপোরেশনের ৪টি সচল এ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে ছোট এ্যাম্বুলেন্সটি গত ১৮ নভেম্বর থেকে বিকল হয়ে পড়ে আছে। এরপর বড় এ্যাম্বুলেন্স ৩টির একটি ১৫ নভেম্বর বিকল হয়ে যায়। অন্যদিকে ভারত সরকার কর্তৃক শুভেচ্ছা উপ হার হিসেবে প্রদান করা সর্বাধুনিক এ্যাম্বুলেন্স যার মুল্য ২ কোটি টাকারও বেশী সেই এ্যাম্বুলেন্সটি আইসিইউ সুবিধাসহ সর্বাধুনিক সকল সুবিধা সম্বলিত এ্যাম্বুলেন্সটি পহেলা ডিসেম্বর এবং করপোরেশনের একমাত্র লাশ বহনকারী শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এ্যামুলেন্সটি ৮ ডিসেম্বর বিকল হয়ে গেছে। বর্তমান লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্সসহ ৪টি বিকল হয়ে পড়ে থাকায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ২শ ৫ বর্গকিলোমিটার এলাকার রংপুর সিটি করপোরেশনের ১৫ লাখের বেশী মানুষ এ্যাম্বুলেন্স সেবা পাচ্ছেনা।

এ ব্যাপারে নগরীর সিও বাজার এলাকার বাসিন্দা আফজালুল ইসলাম জানান, সিটি করপোরেশনের একমাত্র শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লাশ বাহি এ্যাম্বুলেন্সটি বিকল হয়ে যাওয়ায় তার স্বজনের লাশ দাফন করার জন্য চট্টগ্রাম থেকে স্বজনদের জন্য অপেক্ষা করা সম্ভব হয়নি। কেননা লাশবাহি এ্যাম্বুলেন্সটি ভাড়া চেয়েও পাওয়া যায়নি তাদের বলা হয়েছে লাশবাহি গাড়িটি বিকল হয়ে পড়ে আছে। কবে নাগাদ সচল হবে তাও কোন কর্মকর্তাই জানাতে পারেনি।

একই কথা জানান, নগরীর দর্শনা এলাকার সালামত আলী, মর্ডান মোড়ের নাসিমা বেগম সহ অনেকে। তারা বলেন, রংপুরে বেসরকারী বেশ কয়েকটি এ্যাম্বুলেন্স থাকলেও সে গুলোর মান খুবই খারাপ। তার পরেও লাশ বহনকারী শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একমাত্র এ্যাম্বুলেন্সটি রংপুর সিটি করপোরেশনের হলেও সেটি বিকল হওয়ায় আমরা সেটি ব্যাবহার করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। তারা আরো বলেন নগরীতে আর কোন লাশবাহি এ্যাম্বুলেন্স নেই। বিষয়টি সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীলদের দেখা উচিত ছিলো বলেও জানান তারা।

এদিকে, নগরীর নবদীগজ্ঞ এলাকার মোরশেদা বেগম নামে একজন কর্মজিবী নারী অভিযোগ করেন, তার ভাই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে জরুরী ভিত্তিতে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া জরুরী ছিলো উন্নত চিকিৎসার জন্য কিন্তু রংপুর সিটি করপোরেশনের একমাত্র আ্ইসিইউ সুবিধা সম্পন্ন এ্যাম্বুলেন্সটি বিকল হওয়ায় ঢাকায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে তার ভাইকে অনেকটাই বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।

একইভাবে প্রয়োজনের সময় এ্যাম্বুলেন্স সুবিধা না পাওয়ার কারনে বেশ কয়েকজন মুমুর্ষ রোগীকে হাসপাতালে আনার আগে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে এমন অভিযোগ নগরীর অনেকের।

এ ব্যাপারে রংপুর সিটি করপোরেশনের যান্ত্রিক শাখার নির্বাহি প্রকৌশলী বিপ্লব বিশ্বাসের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি লাশবাহিসহ ৪টি এ্যাম্বুলেন্স বিকল হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, দ্রুতই সচল করার সকল পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

তবে নাম প্রকাশে অনিশ্চুক সিটি করপোরেশনের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, যান্ত্রিক শাখাটি দুর্নিতীর আখড়ায় পরিনত হয়েছে। এটারই চিকিৎসা করা দরকার তা নাহলে নগরবাসি কাংখিত সেবা পাবেনা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

রংপুর সিটি করপোরেশন

দেড় মাস ধরে বিকল আইসিউ রোগীবহনকারী এ্যাম্বুলেন্স, ১৫ রোগীর মৃত্যু!

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০২:৪৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

রংপুর সিটি করপোরেশনের আইসিউ রোগীবহন কারী ও লাশবাহি এ্যাম্বুলেন্স ৪টি এ্যাম্বুলেন্স বিকল হয়ে একমাস ধরে পড়ে থাকলেও মেরামত করার কোন উদ্যেগ গ্রহন করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে ১৫ লাখ জনসংখ্যার রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডের মানুষ জরুরী প্রয়োজনে এ্যাম্বুলেন্ন সার্ভিস পাচ্ছে না। এতে গত দেড় মাসে অন্তত ১৫ জন মুমুর্ষ রোগীকে হাসপাতালে যথা সময়ে আনতে না পারায় মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

রংপুর সিটি করপোরেশন সুত্রে জানা গেছে, নগর বাসির জরুরী প্রয়োজনে বিশেষ করে গুরতর অসুস্থ রোগীদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরী চিকিৎসা দেবার জন্য ৫টি এ্যাম্বুলেন্স থাকলেও ৪টি গত দেড় মাসের মধ্যে বিকল হয়ে রংপুর সিটি করপোরেশনের গ্যারেজে পড়ে আছে। একমাক্র সচল এ্যাম্বুলেন্সটিও কাজ করছেনা ফলে এ্যাম্বুলেন্স বিহিন হয়ে পড়েছে রংপুর সিটি করপোরেশন। ফলে জরুরী প্রয়োজনে মুর্মুষ রোগীদের দ্রæত চিকিৎসা দেবার জন্য হাসপাতালে আনা নেয়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

সিটি করপোরেশনের যান্ত্রিক শাখার দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, রংপুর সিটি করপোরেশনের ৪টি সচল এ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে ছোট এ্যাম্বুলেন্সটি গত ১৮ নভেম্বর থেকে বিকল হয়ে পড়ে আছে। এরপর বড় এ্যাম্বুলেন্স ৩টির একটি ১৫ নভেম্বর বিকল হয়ে যায়। অন্যদিকে ভারত সরকার কর্তৃক শুভেচ্ছা উপ হার হিসেবে প্রদান করা সর্বাধুনিক এ্যাম্বুলেন্স যার মুল্য ২ কোটি টাকারও বেশী সেই এ্যাম্বুলেন্সটি আইসিইউ সুবিধাসহ সর্বাধুনিক সকল সুবিধা সম্বলিত এ্যাম্বুলেন্সটি পহেলা ডিসেম্বর এবং করপোরেশনের একমাত্র লাশ বহনকারী শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এ্যামুলেন্সটি ৮ ডিসেম্বর বিকল হয়ে গেছে। বর্তমান লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্সসহ ৪টি বিকল হয়ে পড়ে থাকায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ২শ ৫ বর্গকিলোমিটার এলাকার রংপুর সিটি করপোরেশনের ১৫ লাখের বেশী মানুষ এ্যাম্বুলেন্স সেবা পাচ্ছেনা।

এ ব্যাপারে নগরীর সিও বাজার এলাকার বাসিন্দা আফজালুল ইসলাম জানান, সিটি করপোরেশনের একমাত্র শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লাশ বাহি এ্যাম্বুলেন্সটি বিকল হয়ে যাওয়ায় তার স্বজনের লাশ দাফন করার জন্য চট্টগ্রাম থেকে স্বজনদের জন্য অপেক্ষা করা সম্ভব হয়নি। কেননা লাশবাহি এ্যাম্বুলেন্সটি ভাড়া চেয়েও পাওয়া যায়নি তাদের বলা হয়েছে লাশবাহি গাড়িটি বিকল হয়ে পড়ে আছে। কবে নাগাদ সচল হবে তাও কোন কর্মকর্তাই জানাতে পারেনি।

একই কথা জানান, নগরীর দর্শনা এলাকার সালামত আলী, মর্ডান মোড়ের নাসিমা বেগম সহ অনেকে। তারা বলেন, রংপুরে বেসরকারী বেশ কয়েকটি এ্যাম্বুলেন্স থাকলেও সে গুলোর মান খুবই খারাপ। তার পরেও লাশ বহনকারী শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একমাত্র এ্যাম্বুলেন্সটি রংপুর সিটি করপোরেশনের হলেও সেটি বিকল হওয়ায় আমরা সেটি ব্যাবহার করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। তারা আরো বলেন নগরীতে আর কোন লাশবাহি এ্যাম্বুলেন্স নেই। বিষয়টি সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীলদের দেখা উচিত ছিলো বলেও জানান তারা।

এদিকে, নগরীর নবদীগজ্ঞ এলাকার মোরশেদা বেগম নামে একজন কর্মজিবী নারী অভিযোগ করেন, তার ভাই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে জরুরী ভিত্তিতে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া জরুরী ছিলো উন্নত চিকিৎসার জন্য কিন্তু রংপুর সিটি করপোরেশনের একমাত্র আ্ইসিইউ সুবিধা সম্পন্ন এ্যাম্বুলেন্সটি বিকল হওয়ায় ঢাকায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে তার ভাইকে অনেকটাই বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।

একইভাবে প্রয়োজনের সময় এ্যাম্বুলেন্স সুবিধা না পাওয়ার কারনে বেশ কয়েকজন মুমুর্ষ রোগীকে হাসপাতালে আনার আগে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে এমন অভিযোগ নগরীর অনেকের।

এ ব্যাপারে রংপুর সিটি করপোরেশনের যান্ত্রিক শাখার নির্বাহি প্রকৌশলী বিপ্লব বিশ্বাসের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি লাশবাহিসহ ৪টি এ্যাম্বুলেন্স বিকল হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, দ্রুতই সচল করার সকল পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

তবে নাম প্রকাশে অনিশ্চুক সিটি করপোরেশনের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, যান্ত্রিক শাখাটি দুর্নিতীর আখড়ায় পরিনত হয়েছে। এটারই চিকিৎসা করা দরকার তা নাহলে নগরবাসি কাংখিত সেবা পাবেনা।