ঢাকা ০৯:০৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রধান উপদেষ্টার সাথে ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের সাক্ষাৎ

সম্পর্কে মেঘ, দূর করতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:৩২:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ৫৬ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন কারণে দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে একটি মেঘ এসেছে, সেই মেঘটি দূর করতে হবে। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

এদিকে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলাতে দিল্লিকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন। অন্যদিকে, ভারত সংখ্যালঘু ইস্যুতে উদ্বেগ জানিয়েছে। জবাবে, সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি, ভারতীয় গণমাধ্যমে সংখ্যালঘু ইস্যুতে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো বন্ধ করা ও সীমান্ত হত্যা পুরোপুরি বন্ধের দাবি  জানিয়েছে বাংলাদেশ।

সোমবার ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির সঙ্গে বৈঠক বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন, এসময় বৈঠকে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচারের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এসব মিথ্যাচার বন্ধে ভারতের পদক্ষেপ কামনা করা হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে খোলামনে আলোচনা হয়েছে বলেন তিনি।

ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছেন,  বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে গভীরভাবে কাজ করতে আগ্রহী ভারত। দিল্লি আশা করছে, দুই নিকট প্রতিবেশীর সম্পর্ক একটা ইতিবাচক এবং গঠনমূলক সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যাবে। একই সঙ্গে সংল্যাঘলুদের নিরাপত্তার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে উদ্বেগের কথাও জানিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করে যে ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন, সেটা সরকার পছন্দ করছে না বলে জানানো হয়েছে ভারতের পররাষ্ট্রসচিবকে। উত্তরে বিক্রম মিশ্রি জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার অবস্থান দুই দেশের সম্পর্কে বাধা হওয়া উচিত নয়। সংখ্যালঘু নিয়ে আলোচনার বিষয়ে জসীম আরও বলেন, সংখ্যালঘু বিষয়ে আমরা বলেছি তাদের কোনো সংশয় থাকলে তারা আমাদের দেশে এসে সরেজমিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে সীমান্ত হত্যা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা বলেছি, সীমান্তে হত্যাকাÐ কাম্য নয় এবং দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সঙ্গে এ ধরনের হত্যাকান্ড সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

মো. জসীম উদ্দিন বলেন, আমরা সবসময় বলেছি যে, সীমান্তহত্যা যেন শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হয়। তাদের দিক থেকে তারা বলেছে, সীমান্তে নানা ধরনের অপরাধ হয়। হত্যাকান্ডের সঙ্গে এসব অপরাধের সংযোগ আছে। বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো এগিয়ে নিতে এবং জোরদার করতে ভারত ইচ্ছা পোষণ করেছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টে যে বিপ্লব হয়েছে সেটি সম্পর্কে ভারত অবগত রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের সৌজন্য সাক্ষাত শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিনের আমন্ত্রণে আমি ঢাকায় এসেছি। অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মুহূর্তে আমি ঢাকায় এসেছি, বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার জন্য। এ বছর আগস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে আমাদের উভয় দেশের নেতাদের মধ্যে প্রথম কথা হয়েছে। তাদের মধ্যে টেলিফোন আলাপ হয়েছে। নিউইয়র্কে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে।

বিক্রম মিশ্রি বলেন, আমার এ সফর তারই অংশ। নতুন সরকারের সঙ্গে এটা প্রথম ফরেন সচিব মিটিং। আজকের এই আলোচনা আমাদের উভয়পক্ষকে এই সুযোগটা করে দিয়েছে। আমাদের মধ্যে খোলামেলা এবং গঠনমূলক মতবিনিময় হয়েছে। আমাদের আকাক্সক্ষা হলো-ইতিবাচক, গঠনমূলক এবং পারস্পরিক ও লাভজনক সম্পর্ক, যেটা বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে আমরা অতীতে দেখেছি ও আমরা ভবিষ্যতেও এটা দেখতে চাই।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উভয় দেশের জনগণকেন্দ্রিক হবে জানিয়ে মিশ্রি বলেন, এই সম্পর্ক হবে জনগণকেন্দ্রিক। এটা উভয় দেশের জনগণের উপকারে আসবে এবং এর প্রতিফলন আমাদের প্রাত্যহিক ঘটনার মধ্যে পাচ্ছি। যার মধ্যে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ, পানি, এনার্জি, উন্নয়ন সহযোগিতা, কনস্যুলার সহযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক যোগাযোগ রয়েছে। এই বিষয়গুলোর ওপর আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে আকাক্সক্ষার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারতের আকাক্সক্ষা হলো-অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে গভীরভাবে কাজ করা। একইসঙ্গে আমরা সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি আলোচনা করেছি। সংখ্যালঘু ইস্যুতে আমি আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। সংখ্যালঘুর বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বলেছে, বিষয়টি দেখবে।

বিক্রম মিশ্রি বলেন, সা¤প্রতিক সময়ে আমাদের দুই দেশের মধ্যে কিছু দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি। ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক এবং ক‚টনৈতিক বিষয়ে আক্রমণের বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা সার্বিকভাবে উভয়পক্ষের মধ্যে গঠনমূলক মনোভাব চাই। অপেক্ষায় আছি, আমাদের সম্পর্ক একটা ইতিবাচক এবং গঠনমূলক সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যাবে। দিনব্যাপী সফরে সকালে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় যান। সেখানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন তাকে স্বাগত জানান। পরে দুই পররাষ্ট্র সচিব একান্তে কিছু সময় আলাপ-আলোচনা করেন।

এরপর তারা ফরেন অফিস কনসালটেশনে (এফওসি)তে বসেন প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা এ বৈঠক মধ্যাহ্নভোজের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এর আগে গত বছর ২৪ নভেম্বর দুই দেশের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তখন ঐ বৈঠকে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশের তৎকালীন  পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। আর  ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা। তবে এক বছরের ব্যবধানে দুই দেশেরই সরকার পরিবর্তন হয়েছে ও পররাষ্ট্র সচিব পরিবর্তন হয়েছে।

সচিব পর্যায়ের বৈঠক শেষে বিক্রম মিশ্রি পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। এরপর তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সৌজন্য সাক্ষাত করেন।

এদিকে, সকালে নিজ কার্যালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যভূক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠককালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নরত বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের ভিসা না পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি এসময় ইউরোপীয় দেশগুলোর ভিসা অফিস ঢাকা অথবা প্রতিবেশী কোনো দেশে স্থানান্তর হলে বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়ই উপকৃত হবে বলে রাষ্ট্রদূতদের জানিয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

প্রধান উপদেষ্টার সাথে ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের সাক্ষাৎ

সম্পর্কে মেঘ, দূর করতে হবে

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:৩২:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন কারণে দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে একটি মেঘ এসেছে, সেই মেঘটি দূর করতে হবে। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

এদিকে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলাতে দিল্লিকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন। অন্যদিকে, ভারত সংখ্যালঘু ইস্যুতে উদ্বেগ জানিয়েছে। জবাবে, সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি, ভারতীয় গণমাধ্যমে সংখ্যালঘু ইস্যুতে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো বন্ধ করা ও সীমান্ত হত্যা পুরোপুরি বন্ধের দাবি  জানিয়েছে বাংলাদেশ।

সোমবার ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির সঙ্গে বৈঠক বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন, এসময় বৈঠকে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচারের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এসব মিথ্যাচার বন্ধে ভারতের পদক্ষেপ কামনা করা হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে খোলামনে আলোচনা হয়েছে বলেন তিনি।

ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছেন,  বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে গভীরভাবে কাজ করতে আগ্রহী ভারত। দিল্লি আশা করছে, দুই নিকট প্রতিবেশীর সম্পর্ক একটা ইতিবাচক এবং গঠনমূলক সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যাবে। একই সঙ্গে সংল্যাঘলুদের নিরাপত্তার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে উদ্বেগের কথাও জানিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করে যে ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন, সেটা সরকার পছন্দ করছে না বলে জানানো হয়েছে ভারতের পররাষ্ট্রসচিবকে। উত্তরে বিক্রম মিশ্রি জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার অবস্থান দুই দেশের সম্পর্কে বাধা হওয়া উচিত নয়। সংখ্যালঘু নিয়ে আলোচনার বিষয়ে জসীম আরও বলেন, সংখ্যালঘু বিষয়ে আমরা বলেছি তাদের কোনো সংশয় থাকলে তারা আমাদের দেশে এসে সরেজমিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে সীমান্ত হত্যা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা বলেছি, সীমান্তে হত্যাকাÐ কাম্য নয় এবং দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সঙ্গে এ ধরনের হত্যাকান্ড সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

মো. জসীম উদ্দিন বলেন, আমরা সবসময় বলেছি যে, সীমান্তহত্যা যেন শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হয়। তাদের দিক থেকে তারা বলেছে, সীমান্তে নানা ধরনের অপরাধ হয়। হত্যাকান্ডের সঙ্গে এসব অপরাধের সংযোগ আছে। বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো এগিয়ে নিতে এবং জোরদার করতে ভারত ইচ্ছা পোষণ করেছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টে যে বিপ্লব হয়েছে সেটি সম্পর্কে ভারত অবগত রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের সৌজন্য সাক্ষাত শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিনের আমন্ত্রণে আমি ঢাকায় এসেছি। অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মুহূর্তে আমি ঢাকায় এসেছি, বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার জন্য। এ বছর আগস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে আমাদের উভয় দেশের নেতাদের মধ্যে প্রথম কথা হয়েছে। তাদের মধ্যে টেলিফোন আলাপ হয়েছে। নিউইয়র্কে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে।

বিক্রম মিশ্রি বলেন, আমার এ সফর তারই অংশ। নতুন সরকারের সঙ্গে এটা প্রথম ফরেন সচিব মিটিং। আজকের এই আলোচনা আমাদের উভয়পক্ষকে এই সুযোগটা করে দিয়েছে। আমাদের মধ্যে খোলামেলা এবং গঠনমূলক মতবিনিময় হয়েছে। আমাদের আকাক্সক্ষা হলো-ইতিবাচক, গঠনমূলক এবং পারস্পরিক ও লাভজনক সম্পর্ক, যেটা বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে আমরা অতীতে দেখেছি ও আমরা ভবিষ্যতেও এটা দেখতে চাই।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উভয় দেশের জনগণকেন্দ্রিক হবে জানিয়ে মিশ্রি বলেন, এই সম্পর্ক হবে জনগণকেন্দ্রিক। এটা উভয় দেশের জনগণের উপকারে আসবে এবং এর প্রতিফলন আমাদের প্রাত্যহিক ঘটনার মধ্যে পাচ্ছি। যার মধ্যে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ, পানি, এনার্জি, উন্নয়ন সহযোগিতা, কনস্যুলার সহযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক যোগাযোগ রয়েছে। এই বিষয়গুলোর ওপর আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে আকাক্সক্ষার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারতের আকাক্সক্ষা হলো-অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে গভীরভাবে কাজ করা। একইসঙ্গে আমরা সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি আলোচনা করেছি। সংখ্যালঘু ইস্যুতে আমি আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। সংখ্যালঘুর বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বলেছে, বিষয়টি দেখবে।

বিক্রম মিশ্রি বলেন, সা¤প্রতিক সময়ে আমাদের দুই দেশের মধ্যে কিছু দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি। ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক এবং ক‚টনৈতিক বিষয়ে আক্রমণের বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা সার্বিকভাবে উভয়পক্ষের মধ্যে গঠনমূলক মনোভাব চাই। অপেক্ষায় আছি, আমাদের সম্পর্ক একটা ইতিবাচক এবং গঠনমূলক সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যাবে। দিনব্যাপী সফরে সকালে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় যান। সেখানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন তাকে স্বাগত জানান। পরে দুই পররাষ্ট্র সচিব একান্তে কিছু সময় আলাপ-আলোচনা করেন।

এরপর তারা ফরেন অফিস কনসালটেশনে (এফওসি)তে বসেন প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা এ বৈঠক মধ্যাহ্নভোজের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এর আগে গত বছর ২৪ নভেম্বর দুই দেশের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তখন ঐ বৈঠকে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশের তৎকালীন  পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। আর  ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা। তবে এক বছরের ব্যবধানে দুই দেশেরই সরকার পরিবর্তন হয়েছে ও পররাষ্ট্র সচিব পরিবর্তন হয়েছে।

সচিব পর্যায়ের বৈঠক শেষে বিক্রম মিশ্রি পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। এরপর তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সৌজন্য সাক্ষাত করেন।

এদিকে, সকালে নিজ কার্যালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যভূক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠককালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নরত বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের ভিসা না পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি এসময় ইউরোপীয় দেশগুলোর ভিসা অফিস ঢাকা অথবা প্রতিবেশী কোনো দেশে স্থানান্তর হলে বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়ই উপকৃত হবে বলে রাষ্ট্রদূতদের জানিয়েছেন।