পরিবেশবাদের নামে দেশীয় শিল্প ধ্বংসের প্রতিবাদে সমাবেশ
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:১৬:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ৬৬ বার পড়া হয়েছে
পরিবেশবাদ হচ্ছে একটি ষড়যন্ত্র। এর মাধ্যমে দেশীয় শিল্প ধ্বংস করে বিদেশী ব্যবসায়ীদের সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করে ইনসাফ কায়েমকারী ছাত্র-শ্রমিক-জনতার সদস্যরা বলেন, শুধু দেশীয় পর্যটন শিল্প নয়, পরিবেশবাদের নামে দেশীয় পলিথিন, ইটভাটা, পাথর উত্তোলনসহ অনেক দেশীয় শিল্প বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। অথচ এসব শিল্পের সাথে কোটি কোটি মানুষের রুটি-রুজি জড়িত। তাদের বিকল্প রুটি-রুজির ব্যবস্থা না করে দেশীয় শিল্প বন্ধ করা কখনই গ্রহণযোগ্য নয়।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর মালিবাগ ফালইয়াফরাহু চত্বরে “পরিবেশবাদ মানে দেশের বেলায় বন্ধ, বিদেশীতে অন্ধ” এই শিরোনামে সমাবেশের আয়োজন করেছে ইনসাফ কায়েমকারী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা।
ইনসাফ কায়েমকারী ছাত্র-শ্রমিক জনতা’র বক্তারা বলেন, বর্তমান পরিবেশ উপদেষ্টা নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, এই অজুহাতে পর্যটক যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। শুরুতে তারা জানায়, নভেম্বর মাসে পর্যটক যেতে পারবে, কিন্তু রাত্রী যাপন করতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবে নভেম্বর মাসে দ্বীপটিতে ১ জন পর্যটকও যেতে দেয়া হয়নি, সরকারীভাবে বাধা দেয়া হয়েছে। আবার তারা বলেছিলো, ডিসেম্বর ও জানুয়ারীতে ২ হাজার পর্যটক যেতে পারবে। কিন্তু ২ হাজার পর্যটক যাওয়ার মত জাহাজ অনুমোদন দেয়া হয়নি। ১টি মাত্র জাহাজ অনুমোদন দেয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে মাত্র ৬শ’ যাত্রী যাতায়াত করতে পারছে। এ থেকে অনুধাবন করা যায়, সরকার বলছে একটা কিন্তু করছে অন্যটা। তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে দেশীয় শিল্প ধ্বংস করছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে কর্মহীন করছে।
ইনসাফ কায়েমকারী ছাত্র-শ্রমিক জনতা’র বক্তারা বলেন, দেশীয় শিল্পকে পরিবেশবাদের নামে বন্ধ করলেও বিদেশীদের বেলায় সরকারের আচরণ অন্ধের মত। বিশেষ করে গত ৩রা ডিসেম্বর, প্রধান উপদেষ্টা ইউনুস মার্কিন তেল-গ্যাস কোম্পানি ‘শেভরন’কে গ্যাস অনুসন্ধানে স্বাগত জানিয়েছে। অথচ এই শেভরন ২০০৮ সালে মৌলভীবাজরের গ্যাস অনুসন্ধানের নামে সংরক্ষিত বনাঞ্চল লাউয়াছড়া ও এর আশেপাশের বনভূমি এলাকায় নির্বিচারে বিস্ফোরণ ঘটায়, এতে বন এলাকায় সৃষ্ট ভূকম্পনে বন্যপ্রাণী ও স্থানীয় লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, বনের কয়েক জায়গায় আগুন ধরে যায়, বনের আশপাশের বাড়িঘরে ফাটল দেখা দেয়। কিন্তু এত কিছুর পরও শেভরনের বিরুদ্ধে পরিবেশ উপদেষ্টার সংগঠন ‘বেলা’ কোন প্রতিবাদ করেনি। এছাড়া ১৯৯৭ সালের মৌলভীবাজারের মাগুরছড়ায় বহুজাতিক কোম্পানি ‘অক্সিডেন্টাল’ যে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে পরিবেশ বিপর্যয় করে তার ক্ষতিপূরণের দায় নেয়া কোম্পানি ‘শেভরনে’র ১৪ হাজার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে বাংলাদেশকে দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু এখন পর্যন্তু শেভরন সেই পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতির দায় পরিশোধ করেনি। শুধু তাই নয়, ২০১৭ সালে সরকারকে না জানিয়েই নিজেদের হাতে থাকা তিন গ্যাসক্ষেত্র (বিবিয়ানা, মৌলভীবাজার ও জালালাবাদ) চীনা কোম্পানির কাছে গোপনে বিক্রি করে দিয়েছিলো এই শেভরন। কিন্তু এতকিছুর পরও শেভরনের বেলায় পরিবেশবাদীরা কিছুই দেখতে পায় না। আর বর্তমান এই অন্তর্বর্তী সরকার তাদের অবাধে কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।
ইনসাফ কায়েমকারী ছাত্র-শ্রমিক জনতা’র বক্তারা বলেন, শুধু বিদেশী কোম্পানি শেভরন দ্বারা পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে এমনটা নয়। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় বন্য হাতির অভয়ারণ্যতে কোরীয়ানরা ইপিজেড (কেইপিজেড) নির্মাণ করেছে, যার মাধ্যমে হাতির অভ্যয়ারণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে চলাচলের রাস্তা হারিয়ে বন্য হাতি ক্ষিপ্ত হয়ে গত কয়েক বছরে প্রায় ৩৯ জন মানুষকে হত্যা করে। এত কিছুর পরও কোরীয়ান ব্যবসায়ীদের কিছু বলতে চায়নি পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা। বরং গত ১৩ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে আয়োজিত এক সভায় সে মানুষ ও বন্য হাতির সহবস্থান করার মত আজগুবি কথা বলে।
ইনসাফ কায়েমকারী ছাত্র-শ্রমিক জনতা’র বক্তারা বলেন, মার্কিন কোম্পানি শেভরন ও কোরিয়ানদের নিয়ে সরকারের এহেন আচরণে বুঝা যায়, বিদেশীরা যতই বাংলাদেশের পরিবেশ ধ্বংস করুক, এটা সরকার দেখতে পায় না, কিন্তু বাংলাদেশীরা নিজ দেশের পরিবেশ ব্যবহার করলেই পরিবেশ ধ্বংসের অজুহাত দিয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। তার মানে দেশীয় শিল্প বন্ধ করে, বিদেশীদের কাছে বাংলাদেশের অর্থনীতি তুলে দেয়াই পরিবেশবাদীদের কাজ। এটাই পরিবেশবাদের অজুহাতে দেশকে পরনির্ভর করার একটা গভীর ষড়যন্ত্র এই উড়ে এস জুড়ে বসা সরকারের।
ইনসাফ কায়েমকারী ছাত্র-শ্রমিক জনতা’র বক্তারা বলেন, আমরা দেখতে পাই, আফ্রিকাতে সংরক্ষিত এলাকা নাম দিয়ে বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ সমৃদ্ধ এলাকাগুলোতে স্থানীয়দের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় কর্তৃপক্ষ। অতঃপর বিদেশী কোম্পানি দিয়ে সেখানে প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাট করানো হয়। বাংলাদেশেও এখন তেমনটাই হচ্ছে। পরিবেশের কথা বলে জনগণকে উচ্ছেদ করে বিদেশীদের ডেকে আনা হচ্ছে সম্পদ লুটপাটের জন্য। আমরা বাংলাদেশকে আফ্রিকার মত লুটতরাদের দেশ বানাতে দিতে পারি না। বাংলাদেশের দেশীয় শিল্পের বিরুদ্ধে কোনরূপ ষড়যন্ত্র আমরা মেনে নিবো না।