নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের দিকে যাচ্ছে বৈষম্যবিরোধীরা। এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকা নাহিদ ইসলামকে নেতৃত্বে রেখে দল গঠনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা আসতে পারে। দলের নাম এখনো চূড়ান্ত না হলেও তারুণ্যনির্ভরই হবে দলটি।

এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা বিভিন্ন জেলা সফর করেছেন। সে সময় নতুন দল গঠনের বিষয়টি আলোচনায় আসে। এরপর কোটা সংস্কার আন্দোলন পরিচালনার জন্য গঠিত এই প্ল্যাটফর্মকে সাংগঠনিক রূপ দিতে গঠন করা হয় আহবায়ক কমিটি। সেই সাথে গঠন করা হয় জাতীয় নাগরিক কমিটি।

গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ পুনর্গঠনে কাজ করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটি। দল গঠনের প্রক্রিয়া নিয়েও কিছুদিন ধরে কাজ করছেন। তারা মনে করেন, বিপ্লব-পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে মানুষ নতুন রাজনৈতিক শক্তিকে দেখতে চায়।

জাতীয় নাগরিক কমিটির একটি সূত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, আগামী বছরের জানুয়ারি সামনে রেখেই তাদের প্রস্তুতি চলছে। জানুয়ারিতে তারা নতুন একটি রাজনৈতিক দল ঘোষণা করতে পারেন। অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে নেতৃত্বে রেখেই তারা দল গঠনের চিন্তা।

সূত্রমতে,বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাদের উদ্যোগেই হবে নতুন এই দল। নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন নেতা এবং বাইরের বিভিন্ন দলের নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠন হতে পারে এই দল। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ-আলোচনাও চলছে।

নতুন দল গঠন করলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি থাকবে। প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে এই দুটি সংগঠন।

জাতীয় নাগরিক কমিটির শীর্ষপর্যায়ের এক নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, নাহিদ ইসলামকে সামনে রেখে আমরা জানুয়ারিতে দল গঠনের বিষয়ে ভাবছি। সে ক্ষেত্রে তাকে দল গঠনের আগে উপদেষ্টার পদ ছাড়তে হবে। নাগরিক কমিটি ঢাকাসহ দেশের সব থানাপর্যায়ে কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলাপর্যায়ে কমিটি করার কাজ করছে।

গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীদের উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের আলোচনা শুরু হয় গত সেপ্টেম্বরে। ৮ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্র পুনর্গঠন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও ‘নতুন বাংলাদেশের’ রাজনৈতিক বন্দোবস্ত সফল করার লক্ষ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির ৫৬ সদস্যের একটি কমিটি আত্মপ্রকাশ করে।

প্রায় একই সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও বিভিন্ন জেলায় সফর শুরু করেন। এরমধ্যে প্রায় ১৫টি জেলায় তারা কমিটি ঘোষণা করেন। অন্যগুলোও প্রক্রিয়াধীন।

অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক কমিটি ঢাকায় ২০টির বেশি থানাপর্যায়ের কমিটি ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া সিলেট, চট্টগ্রাম, রংপুর, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলার কমিটিও প্রস্তুত রয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ গণমাধ্যমকে বলেন, আগামী জানুয়ারির আগে আগে আমরা সব জেলার কমিটি ঘোষণা করব।

জাতীয় নাগরিক কমিটির পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার সেক্রেটারি আরিফুল ইসলাম আদীব সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশের জনগণের অধিকার রক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীন, শক্তিশালী করা একই সঙ্গে মানুষের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছিলাম রাইজিং কর্মসূচির অংশ হিসেবে। এরমধ্যে আমরা ঢাকার ২০টি জেলায় কমিটি ঘোষণা করেছি।

নাগরিক কমিটির আহবায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, গণ-অভ্যুত্থানে যে তরুণ সমাজ এবং নাগরিকরা এসেছে তাদের মধ্যে একটা উদ্যোগের আকাক্সক্ষা দেখেছি। তারা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মধ্য দিয়ে দেশ পুনর্গঠন চান।