ঢাকা ০২:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মোবাইলে কথা বলছেন আ’লীগ নেতারা, কারাগারে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য

বাংলা টাইমস ডেস্ক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:২১:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪ ৪০ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আলোচিত ব্যবসায়ী বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান কারাগারে রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, কারাগারে বসে তিনি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।  

কারাগার থেকে একটি সূত্র জানিয়েছে, মোবাইল ফোনে তিনি ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তার মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগ থাকায় বিদেশে কথা বলতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।

তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, কারাগারের ভেতর থেকে মোবাইল ফোনে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। তাকে যেখানে বন্দি রাখা হয়েছে, সেখানে জ্যামার বসানো রয়েছে।

এদিকে সূত্রটি আরও জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক আওয়ামী লীগ নেতারা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছে সূত্রটি।

কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, শুধু কারারক্ষীদের নয়, কারা কর্মকর্তাদেরও কারাগারের অভ্যন্তরে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশে নিষেধ রয়েছে। আবার বন্দিদের কাছে মোবাইল কিংবা মাদক রয়েছে কি না তা উদ্ধারে মাঝে মাঝে রুটিন তল্লাশি চালানো হয়। এন্ট্রি পয়েন্টেও তল্লাশির ব্যবস্থা রয়েছে। এত কিছুর পরও কারাগারে বন্দিদের কাছে চলে যায় মোবাইল ফোন।

কারাগারের একজন কর্মকর্তা জানান, মূলত মোটা অঙ্কের টাকার লোভ সামলাতে না পেরে কারাগারে দায়িত্বরতদের মাধ্যমে বন্দিদের কাছে মোবাইল ফোন যাচ্ছে। কখনো কখনো দায়িত্বরত এই সদস্যরা জ্যামার বন্ধ করে দেন।

সূত্র জানায়, নতুন আইজি প্রিজনস কেন্দ্রীয় কারাগারে যোগদানের পর যথেষ্ট কড়াকড়ি আরোপ করা হলেও অসাধু কিছু কারা কর্মকর্তা ও কারারক্ষী কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের অবৈধ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারাগারের একজন কর্মকর্তা জানান, আইজি প্রিজনসকে অন্ধকারে রেখে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কিছু কর্মকর্তা এমপি-মন্ত্রীদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করছেন।

এ বিষয়ে আইজি প্রিজনস ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন বলেন, ফোনে কথা বলার সুযোগ পাওয়ার কথা নয়। এরপরও যেহেতু বিষয়টি সামনে এসেছে, সেটি চেক করে দেখব।

তিনি বলেন, সালমান এফ রহমানকে যে জোনে রাখা হয়েছে, সেখানে মোবাইল ফোন যাওয়ার সুযোগ নেই। মামলার কারণে আদালতে যাওয়া-আসার সময় তাদের দুবার করে চেক করা হয়। আর তাকে যেখানে বন্দি রাখা হয়েছে, সেখানে জ্যামার বসানো রয়েছে।

সাবেক ডিআইজি প্রিজনস ও কারা বিশ্লেষক মেজর (অব.) সামছুল হায়দার ছিদ্দিকী বলেন, কারাগারে যারা দায়িত্ব পালন করেন তাদের মাধ্যমে মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুযোগ পান বন্দিরা। একজন কারারক্ষী যদি কিছুক্ষণ কথা বলার জন্য ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পান, সেটি তার কাছে অনেক টাকা। প্রভাবশালী বন্দিদের কাছে এ টাকা কিছু না। ফলে ঝুঁকি নিয়ে অনেক কারারক্ষী এসব অপরাধে জড়ান।

এর আগে ২০২১ সালের জুলাই মাসে কারাগারে বসে ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমিন মোবাইলে জুম মিটিং করেছিলেন বলে খবর প্রকাশ পায়। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রিজন সেলের প্রধান কারারক্ষীসহ আটজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।  

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

মোবাইলে কথা বলছেন আ’লীগ নেতারা, কারাগারে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:২১:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

আলোচিত ব্যবসায়ী বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান কারাগারে রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, কারাগারে বসে তিনি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।  

কারাগার থেকে একটি সূত্র জানিয়েছে, মোবাইল ফোনে তিনি ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তার মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগ থাকায় বিদেশে কথা বলতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।

তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, কারাগারের ভেতর থেকে মোবাইল ফোনে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। তাকে যেখানে বন্দি রাখা হয়েছে, সেখানে জ্যামার বসানো রয়েছে।

এদিকে সূত্রটি আরও জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক আওয়ামী লীগ নেতারা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছে সূত্রটি।

কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, শুধু কারারক্ষীদের নয়, কারা কর্মকর্তাদেরও কারাগারের অভ্যন্তরে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশে নিষেধ রয়েছে। আবার বন্দিদের কাছে মোবাইল কিংবা মাদক রয়েছে কি না তা উদ্ধারে মাঝে মাঝে রুটিন তল্লাশি চালানো হয়। এন্ট্রি পয়েন্টেও তল্লাশির ব্যবস্থা রয়েছে। এত কিছুর পরও কারাগারে বন্দিদের কাছে চলে যায় মোবাইল ফোন।

কারাগারের একজন কর্মকর্তা জানান, মূলত মোটা অঙ্কের টাকার লোভ সামলাতে না পেরে কারাগারে দায়িত্বরতদের মাধ্যমে বন্দিদের কাছে মোবাইল ফোন যাচ্ছে। কখনো কখনো দায়িত্বরত এই সদস্যরা জ্যামার বন্ধ করে দেন।

সূত্র জানায়, নতুন আইজি প্রিজনস কেন্দ্রীয় কারাগারে যোগদানের পর যথেষ্ট কড়াকড়ি আরোপ করা হলেও অসাধু কিছু কারা কর্মকর্তা ও কারারক্ষী কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের অবৈধ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারাগারের একজন কর্মকর্তা জানান, আইজি প্রিজনসকে অন্ধকারে রেখে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কিছু কর্মকর্তা এমপি-মন্ত্রীদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করছেন।

এ বিষয়ে আইজি প্রিজনস ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন বলেন, ফোনে কথা বলার সুযোগ পাওয়ার কথা নয়। এরপরও যেহেতু বিষয়টি সামনে এসেছে, সেটি চেক করে দেখব।

তিনি বলেন, সালমান এফ রহমানকে যে জোনে রাখা হয়েছে, সেখানে মোবাইল ফোন যাওয়ার সুযোগ নেই। মামলার কারণে আদালতে যাওয়া-আসার সময় তাদের দুবার করে চেক করা হয়। আর তাকে যেখানে বন্দি রাখা হয়েছে, সেখানে জ্যামার বসানো রয়েছে।

সাবেক ডিআইজি প্রিজনস ও কারা বিশ্লেষক মেজর (অব.) সামছুল হায়দার ছিদ্দিকী বলেন, কারাগারে যারা দায়িত্ব পালন করেন তাদের মাধ্যমে মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুযোগ পান বন্দিরা। একজন কারারক্ষী যদি কিছুক্ষণ কথা বলার জন্য ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পান, সেটি তার কাছে অনেক টাকা। প্রভাবশালী বন্দিদের কাছে এ টাকা কিছু না। ফলে ঝুঁকি নিয়ে অনেক কারারক্ষী এসব অপরাধে জড়ান।

এর আগে ২০২১ সালের জুলাই মাসে কারাগারে বসে ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমিন মোবাইলে জুম মিটিং করেছিলেন বলে খবর প্রকাশ পায়। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রিজন সেলের প্রধান কারারক্ষীসহ আটজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।