ঢাকা ০৩:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নতুন আশা জাগিয়েছে ব্রি ধান ১০৩

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:০৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৬ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত ব্রি ধান১০৩। স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন এ ধানের জাতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত জাতের চেয়ে অনেক কম হয়েছে। এ জাতটি বিদ্যমান জাতের তুলনায় বিঘাপ্রতি ১ থেকে ২ মণ বেশি ফলন দিয়েছে। খড়ের উৎপাদনও বেশ ভালো। আমন মৌসুমে সবেচেয়ে বেশি ফলন দিতে সক্ষম চিকন নতুন এ জাতের ধান কৃষকের মাঠে চাষাবাদে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে আশার আলো জাগিয়েছে।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ও সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার ড. মো: রোমেল বিশ্বাস এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমরা ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি ও দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্রি উদ্ভবিত উচ্চফলনশীল এবং হাইব্রিড ধান নিয়ে গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট ও নড়াইল জেলায় কাজ করছি। চলতি আমন মৌসুমে ৩ জেলায় ব্রি ধান১০৩ এর প্রদর্শনী প্লট করা হয়। গোপাগঞ্জ সদর উপজেলার বোড়াশী গ্রামের কৃষক এসএম লিয়াকত শেখের জমিতে উৎপাদিত ধান কেটে পরিমাপ করে দেখাগেছে প্রতি বিঘায় (৩৩ শতাংশ) এ ধান ২১ মণ ফলন দিয়েছে। বাগেরহাট ও নড়াইল জেলায় এ ধান আশানুরূপ ফলেছে। তাই আমন মৌসুমে দেশের ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষকের আর্থসামাজিক অবস্থার বিপ্লব ঘটাবে ব্রি ধান১০৩।

তিনি আরও বলেন, ব্রি ধান১০৩ এ আধুনিক উফশী ধানের সব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। ধানের দানা লম্বা ও চিকন। ১ হাজার টি পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২৩ দশমিক ৭ গ্রাম। এ ধানের প্রোটিন এবং অ্যামাইলোজের পরিমাণ যথাক্রমে ৮.৩ শতাংশ এবং ২৪ শতাংশ। প্রতি হেক্টরে এ জাতটির গড় ফলন ৬ .২ টন। গোপালগঞ্জে ফলেছে ৬.২৫ মেট্রিক টন। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে প্রতি হেক্টরে ৭.৯৮ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। এ জাতের গড় জীবনকাল ১৩০ দিন (১২৮-১৩৩ দিন)। ২০২২ সালে এ ধানের জাত অবমুক্ত করা হয়েছে। এ বছর কৃষকের মাঠে আমন সৌসুমে এ ধান সবচেয়ে বেশি ফলন দিয়েছে। এ ধান চাষাবাদ করে কৃষক ১ ফসলী জমিকে ২ ফসলী ও ২ ফসলী জমিকে ৩ ফসলী জমিতে পরিণত করতে পারেন। ফসলের নীবিড়তা বৃদ্ধি করে কৃষক লাভবান হবেন।

ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের সাইন্টিফিক অফিসার সৃজন চন্দ্র দাস জানান, এ জাতটি রোপা আমন মৌসুমে বৃষ্টিনির্ভর চাষাবাদ উপযোগী। এ ধানের চাষাবাদ অন্যান্য উফশী রোপা আমন ধানের মতোই। বীজ বপনের উপযুক্ত সময় ১৫ জুন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত। সারের মাত্রা অন্যান্য উফশী জাতের মতোই । এ ধানের জাতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ নেই বললেই চলে । তাই ধান উৎপাদনে খরচ সাশ্রয় হয়। আমরা আগামী আমন মৌসুমে কৃষককে দিয়ে এ জাতের ধান বেশি বেশি চাষাবাদ করাব। সেভাবেই বীজ উৎপাদন করা হয়েছে।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বোড়াশী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিনোদিনী সিকদার বলেন, আমার ব্লকে ব্রি ধান১০৩ এর ২টি প্রদর্শনী প্লট করে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। প্রতিটি প্লটেই ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষক লাভজনক এ ধান চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ব্রি বীজ দিলে আগামী বছর আমরা এ ধানের চাষাবাদ ছড়িয়ে দিতে পারব। এতে দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বোড়াশী গ্রামের কৃষক এসএম লিয়াকত শেখ বলেন, স্থানীয় আমনে বিঘায় ৪/৫ মণ ফলন পেতাম। সময় লাগত ১৮০ দিন। পরে কৃষি বিভাগের পরামর্শে আমানের উফশীসহ অন্যান্য জাত করেছি। সেখানে বিঘায় ১৮/২০ মণ ফলন পেয়েছিলাম । কিন্তু এ বছর ব্রি ধান১০৩ করে বিঘায় ২২ মণ ধান পেয়েছি। সময় লেগেছে ১৩০ দিন। এ ধানের পোকার আক্রমণ হয়নি। সেচ খরচ লাগেনি। ফলনও ২ মণবেশি পেয়েছি। কম খরচে বেশি ধান পেয়ে লাভবান হয়েছি। এ ধান কেটে জমিতে বছরে ৩ থেকে ৪ টি ফসল করতে পারছি। আমি আগামীতে এ ধান করব। বীজ পেলে আমরা প্রতিবেশীরাও এ ধান চাষাবাদ করবে বলে জানিয়েছেন।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার বলেন, ব্রি ধান১০৩ উফশী জাত। এ ধান হাইব্রিড ধানের মতোই ফলন দিয়েছে। তাই লাভজক ব্রি ধান১০৩ জাতের আবাদ আগামী বছর অন্তত ১০ হেক্টরে ছড়িয়ে দেবো।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

নতুন আশা জাগিয়েছে ব্রি ধান ১০৩

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:০৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত ব্রি ধান১০৩। স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন এ ধানের জাতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত জাতের চেয়ে অনেক কম হয়েছে। এ জাতটি বিদ্যমান জাতের তুলনায় বিঘাপ্রতি ১ থেকে ২ মণ বেশি ফলন দিয়েছে। খড়ের উৎপাদনও বেশ ভালো। আমন মৌসুমে সবেচেয়ে বেশি ফলন দিতে সক্ষম চিকন নতুন এ জাতের ধান কৃষকের মাঠে চাষাবাদে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে আশার আলো জাগিয়েছে।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ও সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার ড. মো: রোমেল বিশ্বাস এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমরা ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি ও দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্রি উদ্ভবিত উচ্চফলনশীল এবং হাইব্রিড ধান নিয়ে গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট ও নড়াইল জেলায় কাজ করছি। চলতি আমন মৌসুমে ৩ জেলায় ব্রি ধান১০৩ এর প্রদর্শনী প্লট করা হয়। গোপাগঞ্জ সদর উপজেলার বোড়াশী গ্রামের কৃষক এসএম লিয়াকত শেখের জমিতে উৎপাদিত ধান কেটে পরিমাপ করে দেখাগেছে প্রতি বিঘায় (৩৩ শতাংশ) এ ধান ২১ মণ ফলন দিয়েছে। বাগেরহাট ও নড়াইল জেলায় এ ধান আশানুরূপ ফলেছে। তাই আমন মৌসুমে দেশের ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষকের আর্থসামাজিক অবস্থার বিপ্লব ঘটাবে ব্রি ধান১০৩।

তিনি আরও বলেন, ব্রি ধান১০৩ এ আধুনিক উফশী ধানের সব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। ধানের দানা লম্বা ও চিকন। ১ হাজার টি পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২৩ দশমিক ৭ গ্রাম। এ ধানের প্রোটিন এবং অ্যামাইলোজের পরিমাণ যথাক্রমে ৮.৩ শতাংশ এবং ২৪ শতাংশ। প্রতি হেক্টরে এ জাতটির গড় ফলন ৬ .২ টন। গোপালগঞ্জে ফলেছে ৬.২৫ মেট্রিক টন। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে প্রতি হেক্টরে ৭.৯৮ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। এ জাতের গড় জীবনকাল ১৩০ দিন (১২৮-১৩৩ দিন)। ২০২২ সালে এ ধানের জাত অবমুক্ত করা হয়েছে। এ বছর কৃষকের মাঠে আমন সৌসুমে এ ধান সবচেয়ে বেশি ফলন দিয়েছে। এ ধান চাষাবাদ করে কৃষক ১ ফসলী জমিকে ২ ফসলী ও ২ ফসলী জমিকে ৩ ফসলী জমিতে পরিণত করতে পারেন। ফসলের নীবিড়তা বৃদ্ধি করে কৃষক লাভবান হবেন।

ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের সাইন্টিফিক অফিসার সৃজন চন্দ্র দাস জানান, এ জাতটি রোপা আমন মৌসুমে বৃষ্টিনির্ভর চাষাবাদ উপযোগী। এ ধানের চাষাবাদ অন্যান্য উফশী রোপা আমন ধানের মতোই। বীজ বপনের উপযুক্ত সময় ১৫ জুন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত। সারের মাত্রা অন্যান্য উফশী জাতের মতোই । এ ধানের জাতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ নেই বললেই চলে । তাই ধান উৎপাদনে খরচ সাশ্রয় হয়। আমরা আগামী আমন মৌসুমে কৃষককে দিয়ে এ জাতের ধান বেশি বেশি চাষাবাদ করাব। সেভাবেই বীজ উৎপাদন করা হয়েছে।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বোড়াশী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিনোদিনী সিকদার বলেন, আমার ব্লকে ব্রি ধান১০৩ এর ২টি প্রদর্শনী প্লট করে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। প্রতিটি প্লটেই ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষক লাভজনক এ ধান চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ব্রি বীজ দিলে আগামী বছর আমরা এ ধানের চাষাবাদ ছড়িয়ে দিতে পারব। এতে দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বোড়াশী গ্রামের কৃষক এসএম লিয়াকত শেখ বলেন, স্থানীয় আমনে বিঘায় ৪/৫ মণ ফলন পেতাম। সময় লাগত ১৮০ দিন। পরে কৃষি বিভাগের পরামর্শে আমানের উফশীসহ অন্যান্য জাত করেছি। সেখানে বিঘায় ১৮/২০ মণ ফলন পেয়েছিলাম । কিন্তু এ বছর ব্রি ধান১০৩ করে বিঘায় ২২ মণ ধান পেয়েছি। সময় লেগেছে ১৩০ দিন। এ ধানের পোকার আক্রমণ হয়নি। সেচ খরচ লাগেনি। ফলনও ২ মণবেশি পেয়েছি। কম খরচে বেশি ধান পেয়ে লাভবান হয়েছি। এ ধান কেটে জমিতে বছরে ৩ থেকে ৪ টি ফসল করতে পারছি। আমি আগামীতে এ ধান করব। বীজ পেলে আমরা প্রতিবেশীরাও এ ধান চাষাবাদ করবে বলে জানিয়েছেন।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার বলেন, ব্রি ধান১০৩ উফশী জাত। এ ধান হাইব্রিড ধানের মতোই ফলন দিয়েছে। তাই লাভজক ব্রি ধান১০৩ জাতের আবাদ আগামী বছর অন্তত ১০ হেক্টরে ছড়িয়ে দেবো।