১৩ লাখ শিক্ষার্থীর বই প্রেসে, ৯৭ দিন বই ছাড়া ক্লাস
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৩:২৬:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ১১১ বার পড়া হয়েছে
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির ১ম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে চলতি বছরের ৮ আগস্ট। ক্লাস শুরু হওয়ার ৩ মাস (৯৭ দিন) পেরিয়ে গেলেও একাদশ শ্রেণির ৫টি আবশ্যিক বই অদ্যাবধি শিক্ষার্থীরা হাতে পাননি।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছেন, প্রেসের কাজ শেষে ১৫ নভেম্বর বই হাতে পাবেন। কিন্তু লাইব্রেরি মালিকরা বলছেন এখনো বই হাতে আসেনি।জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সরবরাহ করতে নাপারা বইগুলো হলো- আবশ্যিক বাংলা সাহিত্য পাঠ, বাংলা সহপাঠ, ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বইয়ের বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন।
উল্লিখিত বইয়ের পাÐুলিপি চ‚ড়ান্ত না হওয়ায় এই ভোগান্তির কথা কয়েক দফায় বলেছিলেন এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তা। প্রতিবছর উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বিভাগভিত্তিক বইগুলো ছাড়া ওই পাঁচটি বই এনসিটিবির অধীনে ছেপে বাজারে বিক্রি করা হয়। এনসিটিবি ইতোমধ্যে ওই পাঁচটি বইয়ের প্রায় ৩১ লাখ কপি ছাপার দরপত্র আহŸান করে। সে মোতাবেক চলতি মাসের গত ৭ নভেম্বর প্রমা, আনন্দ, তায়েফ,ব্রাইট, ফাহিম, মৌসুমী, লিখন,আগামী প্রকাশনীকে উল্লিখিত বইয়ের পাÐুলিপি সরবরাহ করা হয়েছে। তারা ১৫ নভেম্বর বই বাজারে ছাড়ার কথা বলেছে। কিন্তু লাইব্রেরি মালিকরা বলছেন এখনো বই হাতে আসেনি। আগামী রোববার আনুষ্ঠানিকতা শেষে বই ছাড় হতে পারে। প্রকাশকরা সরকারকে ন্যূনতম ‘রয়্যালটি’ দিয়ে এনসিটিবি নির্ধারিত মূল্যে বইগুলো বাজারে বিক্রি করে থাকেন। আর শিক্ষার্থীরা তখন বাজার থেকে এসব বই পেয়ে থাকেন।
২০২৪ সালে সারাদেশে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ জন শিক্ষার্থী পাস করেছেন। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ১৩ লাখ ৩৫ হাজার একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির আবেদন করেছিলেন। তাদের মধ্যে ১৩ লাখের মতো শিক্ষার্থী কলেজ ও সমস্তরের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছেন।
হাতে পৌঁছেনি এমন বইগুলোতে কেমন পরিবর্তন হয়েছে জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবির)- সূত্র জানায় খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। তবে ‘বাংলা’ ‘ইংরেজি’ বইয়ে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে।বাংলায় জাতির পিতার এবং বন্দনাধর্মী লেখায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। সব মিলে ১০ শতাংশর মত পরিবর্তন হয়েছে। এগুলো যেহেতু ছাপার দরপত্র আহŸান-এর মাধ্যমে দেয়া হয়েছে,সেহেতু আমরা এখন অনলাইনে দিতে পারিনা।এর আগে ২২ অক্টোবর এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান জানিয়েছিলেন আজকে (২২ অক্টোবর) পাÐুলিপি হাতে এসেছে এবং আজকেই প্রেসে যাবে মর্মে মিটিং হচ্ছে। প্রেসে গেলে এক সপ্তাহের মধ্যেই বই বাজারে যাবে। অথচ ৩ সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও বাজারে বই আসেনি।
লবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের ইংরেজির সহকারী অধ্যাপক খায়রুল আনাম আবেশ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (আইসিটি) সহকারী অধ্যাপক খন্দকার মেহেদী হাসান এবং বাংলা’র প্রভাষক মো. আবু হানিফা মÐল বলেন, ৩ মাস পার হয়েছে ক্লাশ শুরু হওয়ার,অথচ এখন পর্যন্ত আবশ্যিক বাংলা সাহিত্য পাঠ, বাংলা সহপাঠ, ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বইয়ের বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন শিক্ষার্থীরা হাতে পাননি। আবশ্যিক বিষয়ের বই যদি অনিশ্চয়তার মধ্যে বিলম্ব হয়,তাহলে শিক্ষার্থীদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়। জানতে পারলাম সব মিলে ১০ শতাংশর মত পরিবর্তন হয়েছে। তাহলে এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ আগে যদি জানাত যেসব বিষয় বাদ যাবেনা, সেগুলো আগে পড়ানো শুরু করে দেন,পরে বই গেলে তা পড়াবেন। কোনো কিছুই জানানো হচ্ছেনা,আমরা শিক্ষার্থীদের এবিষয়ে কিছই বলতে পারছিনা।
এবছর কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং দেশের দক্ষিণ-প‚র্বাঞ্চলীয় ১১টি জেলায় সাম্প্রতিক বন্যার কারণে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সময় অন্তত ছয় দফায় বাড়ানো হয়। বর্তমান বন্যা পরিস্থিতির কারণে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনের মাধ্যমে নিশ্চায়নকৃত শিক্ষার্থীদের কলেজে ভর্তির সময়সীমা দফায় দফায় বৃদ্ধি করা হয়।
স্থানীয় কলেজ লাইব্রেরির স্বত্বাধিকারী মো. দারুল ইসলাম জানান,এখনো বই হাতে আসেনি।আজকেউ খোঁজ নিয়েছি। শুনলাম প্রেসের কাজ শেষ হয়েছে কিন্তু আনুষ্ঠানিকতার (বইয়ের উদ্বোধন) জন্য আগামী রোববার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
বই শিক্ষার্থীরা হাতে পাবার সর্বশেষ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবির)-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একেএম রিয়াজুল হাসান ‘বাংলা টাইমস’কে বলেন, ‘পাঁচটি বইয়ের পাÐুলিপি চ‚ড়ান্ত করে ইতোমধ্যে ৭ নভেম্বর প্রেসে দেয়া হয়েছে। প্রেস ১৫ নভেম্বর বই বাজারে ছাড়তে চেয়েছে। পরিবর্তনের বিষয়ে বলেন, বাংলায় জাতির পিতার এবং বন্দনাধর্মী লেখায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। সব মিলে ১০ শতাংশর মত পরিবর্তন হয়েছে। যেহেতু প্রেসে দেয়া হয়েছে,সেহেতু অনলাইনে দেয়ার সুযোগ নেই।’