ঢাকা ০৪:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নাহিদের কমিশন বাণিজ্য, রয়েছে গাড়ি বিলাসও

সিলেট ব্যুরো
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৫:৪৪:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৬ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সম্পদের অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। এরমেধ্যে দুদক মাঠে কাজ কাজ করছে। মন্ত্রীর দায়িত্বকালে গড়ে তুলে ছিলেন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। মন্ত্রীত্বকালে গ্রহণ করেন উন্নয়ন প্রকল্পের কমিশনের বিপুল অর্থ। আর এসব অবৈধ অর্থ যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যে পাচারও করেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর প্রাথমিক তদন্তে তার দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া গেছে।

আর নাহিদের হলফনামা বলছে, তার সম্পদ বেড়েছে অন্তত ১২ গুণ। বেড়েছে আয়ের পরিমাণও। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জানিয়েছেন, নুরুল ইসলাম নাহিদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্তে দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া গেছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে অর্থ পাচার করেছেন মর্মেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনি নামে- বেনামে বহু সম্পদ গড়ে তুলেছেন। এজন্যে দুদক তার দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছে।

দুদক সূত্র বলছে, নুরুল ইসলাম নাহিদ তার যুক্তরাজ্য প্রবাসী ভাই ডা. নজরুল ইসলামের মাধ্যমে লন্ডনে অর্থ পাচার করেছেন। একই ভাবে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বন্ধু কামাল আহমদের মাধ্যমেও আমেরিকায় পাচার করেছেন বিপুল অবৈধ অর্থ। পরপর দু’বার শেখ হাসিনার সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন নাহিদ। শিক্ষামন্ত্রী থাকা কালে বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে কমিশন গ্রহণ করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

অবৈধ টাকায় নিজের নামে রাজধানী ঢাকার উত্তরায় ফ্ল্যাটসহ পাঁচ কাঠা জমি, নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকায় তিন কাঠা জমি, তার একক ও যৌথ মালিকানায় সিলেট বিয়ানীবাজারে অকৃষি জমি, বিভিন্ন ব্যাংকে জমা ও বিনিয়োগ, স্ত্রীর নামে সঞ্চয়পত্রসহ বিভিন্ন ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অর্থ রয়েছে বলে তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে।

দুদকের প্রাথমিক তদন্তে এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় নুরুল ইসলাম নাহিদের অবৈধ সম্পদের খুুঁজে দুদক মাঠে নেমেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে, তিনি কি পরিমাণ অর্থ লন্ডন-আমেরিকায় পাচার করেছেন তার কোনো পরিসংখ্যান সূত্র নিশ্চিত করতে পারেনি।

নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ১২ গুণেরও বেশি। আয় বেড়েছে ১৩ গুণ। ২০০৮ সালে তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ২১ লাখ ৫৭ হাজার ৯১১ টাকা।

২০২৩ সালের হলফনামায় উল্লেখ করেন, তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ৭ লাখ ৯৩ হাজার ১৩২ টাকা।
অবশ্য, স্থাবর সম্পদের পরিমাণ কখনো বাড়লেও আবার কমার হিসেবও পাওয়া গেছে। ২০০৮ সালের হলফনামা অনুযায়ী, তার বার্ষিক আয়ের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ টাকা। অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ২১ লাখ ৫৭ হাজার ৯১১ টাকা আর স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল যৌথ মালিকানায় ৫ একর কৃষি জমি, নিজের নামে ৩ কাঠা জমি এবং যৌথ মালিকানায় রয়েছে ২ একর জমি।

২০১৩ সালের হলফনামায় লিখেছেন তার বার্ষিক আয় ১৭ লাখ ৭২ হাজার ৩০০ টাকা। অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৯৮ লাখ ৫ হাজার ৫৫০ টাকা। স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৩১ শতক কৃষি জমি, ৬০ লাখ টাকার অকৃষি জমি ও যৌথ মালিকানায় ৪৫ হাজার ৭৮ হাজার টাকার অকৃষি জমি।

২০১৮ সালের হলফনামায় তিনি লিখেছেন, বার্ষিক আয় ১৬ লাখ ৩০ হাজার ২০৫ টাকা। ১ কোটি ৫৮ লাখ ১৬ হাজার ৯ টাকার অস্থাবর সম্পদ আর ৮৪ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪০ টাকার স্থাবর সম্পদ।

আর সর্বশেষ ২০২৩ সালের হলফনামা অনুযায়ী তার বার্ষিক আয়ের পরিমাণ ৫০ লাখ ৩০ হাজার ১১৩ টাকা । অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ৭ লাখ ৯৩ হাজার ১৩২ টাকা। স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২৭ লাখ ২৮ হাজার ৪৪০ টাকা। এর মধ্যে ঢাকার উত্তরায় প্লাটসহ ফ্ল্যাটের দাম ২১ লাখ ৮ হাজার ৪৪০ টাকা বলে উল্লেখ করেন।

এক সময়ের বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাহিদ বাদ যাননি গাড়ি বিলাস থেকেও। ২০২৩ সালের হলফনামায় তিনি একটি গাড়ির মূল্য ৬১ লাখ ২৫ হাজার ৪০৫ টাকা উল্লেখ করেন। গাড়ি নম্বর ঢাকা মেট্রো ঘ-১৮-৪৪০০। কিন্তু হলফনামায় গাড়ির ব্র্যান্ড ও সাল উল্লেখ করেননি।

এর আগে ২০১৮ সালের হলফনামায় কেবল গাড়ির মূল্য ৫৯ লাখ ৩৩ হাজার ৩২১ টাকা উল্লেখ করলেও গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর, মডেল উল্লেখ করেন নি নাহিদ। তারও আগের ২০১৩ সালের হলফনামায় তিনি গাড়ির মূল্য ৩২ লাখ ৯১ হাজার ২৯১ টাকা উল্লেখ করেন। কিন্তু এই গাড়িরও রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও মডেল কিংবা কোনো তথ্যই হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেননি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

নাহিদের কমিশন বাণিজ্য, রয়েছে গাড়ি বিলাসও

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৫:৪৪:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সম্পদের অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। এরমেধ্যে দুদক মাঠে কাজ কাজ করছে। মন্ত্রীর দায়িত্বকালে গড়ে তুলে ছিলেন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। মন্ত্রীত্বকালে গ্রহণ করেন উন্নয়ন প্রকল্পের কমিশনের বিপুল অর্থ। আর এসব অবৈধ অর্থ যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যে পাচারও করেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর প্রাথমিক তদন্তে তার দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া গেছে।

আর নাহিদের হলফনামা বলছে, তার সম্পদ বেড়েছে অন্তত ১২ গুণ। বেড়েছে আয়ের পরিমাণও। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জানিয়েছেন, নুরুল ইসলাম নাহিদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্তে দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া গেছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে অর্থ পাচার করেছেন মর্মেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনি নামে- বেনামে বহু সম্পদ গড়ে তুলেছেন। এজন্যে দুদক তার দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছে।

দুদক সূত্র বলছে, নুরুল ইসলাম নাহিদ তার যুক্তরাজ্য প্রবাসী ভাই ডা. নজরুল ইসলামের মাধ্যমে লন্ডনে অর্থ পাচার করেছেন। একই ভাবে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বন্ধু কামাল আহমদের মাধ্যমেও আমেরিকায় পাচার করেছেন বিপুল অবৈধ অর্থ। পরপর দু’বার শেখ হাসিনার সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন নাহিদ। শিক্ষামন্ত্রী থাকা কালে বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে কমিশন গ্রহণ করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

অবৈধ টাকায় নিজের নামে রাজধানী ঢাকার উত্তরায় ফ্ল্যাটসহ পাঁচ কাঠা জমি, নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকায় তিন কাঠা জমি, তার একক ও যৌথ মালিকানায় সিলেট বিয়ানীবাজারে অকৃষি জমি, বিভিন্ন ব্যাংকে জমা ও বিনিয়োগ, স্ত্রীর নামে সঞ্চয়পত্রসহ বিভিন্ন ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অর্থ রয়েছে বলে তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে।

দুদকের প্রাথমিক তদন্তে এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় নুরুল ইসলাম নাহিদের অবৈধ সম্পদের খুুঁজে দুদক মাঠে নেমেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে, তিনি কি পরিমাণ অর্থ লন্ডন-আমেরিকায় পাচার করেছেন তার কোনো পরিসংখ্যান সূত্র নিশ্চিত করতে পারেনি।

নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ১২ গুণেরও বেশি। আয় বেড়েছে ১৩ গুণ। ২০০৮ সালে তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ২১ লাখ ৫৭ হাজার ৯১১ টাকা।

২০২৩ সালের হলফনামায় উল্লেখ করেন, তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ৭ লাখ ৯৩ হাজার ১৩২ টাকা।
অবশ্য, স্থাবর সম্পদের পরিমাণ কখনো বাড়লেও আবার কমার হিসেবও পাওয়া গেছে। ২০০৮ সালের হলফনামা অনুযায়ী, তার বার্ষিক আয়ের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ টাকা। অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ২১ লাখ ৫৭ হাজার ৯১১ টাকা আর স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল যৌথ মালিকানায় ৫ একর কৃষি জমি, নিজের নামে ৩ কাঠা জমি এবং যৌথ মালিকানায় রয়েছে ২ একর জমি।

২০১৩ সালের হলফনামায় লিখেছেন তার বার্ষিক আয় ১৭ লাখ ৭২ হাজার ৩০০ টাকা। অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৯৮ লাখ ৫ হাজার ৫৫০ টাকা। স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৩১ শতক কৃষি জমি, ৬০ লাখ টাকার অকৃষি জমি ও যৌথ মালিকানায় ৪৫ হাজার ৭৮ হাজার টাকার অকৃষি জমি।

২০১৮ সালের হলফনামায় তিনি লিখেছেন, বার্ষিক আয় ১৬ লাখ ৩০ হাজার ২০৫ টাকা। ১ কোটি ৫৮ লাখ ১৬ হাজার ৯ টাকার অস্থাবর সম্পদ আর ৮৪ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪০ টাকার স্থাবর সম্পদ।

আর সর্বশেষ ২০২৩ সালের হলফনামা অনুযায়ী তার বার্ষিক আয়ের পরিমাণ ৫০ লাখ ৩০ হাজার ১১৩ টাকা । অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ৭ লাখ ৯৩ হাজার ১৩২ টাকা। স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২৭ লাখ ২৮ হাজার ৪৪০ টাকা। এর মধ্যে ঢাকার উত্তরায় প্লাটসহ ফ্ল্যাটের দাম ২১ লাখ ৮ হাজার ৪৪০ টাকা বলে উল্লেখ করেন।

এক সময়ের বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাহিদ বাদ যাননি গাড়ি বিলাস থেকেও। ২০২৩ সালের হলফনামায় তিনি একটি গাড়ির মূল্য ৬১ লাখ ২৫ হাজার ৪০৫ টাকা উল্লেখ করেন। গাড়ি নম্বর ঢাকা মেট্রো ঘ-১৮-৪৪০০। কিন্তু হলফনামায় গাড়ির ব্র্যান্ড ও সাল উল্লেখ করেননি।

এর আগে ২০১৮ সালের হলফনামায় কেবল গাড়ির মূল্য ৫৯ লাখ ৩৩ হাজার ৩২১ টাকা উল্লেখ করলেও গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর, মডেল উল্লেখ করেন নি নাহিদ। তারও আগের ২০১৩ সালের হলফনামায় তিনি গাড়ির মূল্য ৩২ লাখ ৯১ হাজার ২৯১ টাকা উল্লেখ করেন। কিন্তু এই গাড়িরও রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও মডেল কিংবা কোনো তথ্যই হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেননি।