ঢাকা ১০:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাচারের টাকায় রমরমা ‘অর্থ বিনিময়’ ব্যবসা সাবেক এমপি মান্নানের

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:৪৭:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৪ ১২ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সাবেক এমপি ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আবদুল মান্নান পাচারকৃত কোটি কোটি টাকা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে রমরমা ব্যবসা চালাচ্ছেন। শুধু নিউ ইয়র্কেই তার ‘অর্থ বিনিময়’ বা মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে চারটি। সানম্যান এক্সপ্রেস গ্লোবাল মানি ট্রান্সফার (পুর্বনাম রুপালী এক্সচেঞ্জ) নামের এ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দেখাশোনা করছেন তার একমাত্র ছেলে তাসফিক মান্নান। সম্প্রতি আট কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন ঢাকার আদালত।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শামীম খন্দকার আবেদন করলে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন এ আদেশ দেন।

আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা-১০ আসনের সাবেক এমপি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের সাবেক মহাসচিব মেজর মান্নান দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন।

তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানতে পেরেছেন যে অভিযুক্ত যে কোনো সময় দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারে। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে আবেদনটি করেন।


২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর দুদকের ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মেজর (অব.) মান্নানসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন দুদকের উপ-পরিচালক আবদুল মাজেদ।

সূত্র জানায়, বিআইএফসি চেয়ারম্যান, পরিচালক ও কর্মকর্তারা পরস্পর যোগসাজশে টেলিকম সার্ভিস এন্টারপ্রাইজের মালিক আমিনুর রহমানকে জামানত ও বন্ধক ছাড়াই ঋণ হিসেবে ৮ কোটি টাকা বিতরণ করেন। পরে সেই টাকা বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়।

উল্লেখ্য, মেজর (অব.) আবদুল মান্নান আওয়ামী লীগের দোসরদেরকে অনুসরণ করে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার লক্ষে মোটা অঙ্কের অর্থ পাচার করে তুরষ্কে বাড়িসহ ব্যবসা বানিজ্য শুরু করেন বলে একটি বিস্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

সূত্রটি আরও জানান, অর্থ জালিয়াতি ও পাচার সংক্রান্ত মেজর (অব.) মান্নানের বিরুদ্ধে দুদুকে ১৪টি মামলা রয়েছে। উক্ত মামলায় গত এক বছরে তিনি ২ বার জেল হাজতে যান। পরবর্তীতে তিনি আইনমন্ত্রী আনিছুল হকের বান্ধবী তৌফিকা করিমের সাথে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে জানিম লাভ করে বিদেশে পালিয়ে যাবার চেষ্টা চালান।

তাছাড়া পাচারকৃত কোটি কোটি টাকা দিয়ে মেজর (অব.) আবদুল মান্নান তার ছেলে তাসফিক মান্নান ও নিকটাত্মীয়দের দিয়ে নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে ‘সানম্যান এক্সপ্রেস গ্লোবাল মানি ট্রান্সফার’ নামে বেশ কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন। নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে জনৈক কর্মকর্তা জানান ‘সানম্যান এক্সপ্রেস গ্লোবাল মানি ট্রান্সফার’ (পুর্বনাম রুপালী এক্সচেঞ্জ)-এর শুধু নিউ ইয়র্কেই তাদের চারটি শাখা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে-৭৩ স্ট্রিটে (প্রধান কার্যালয়ে), ৭৪ স্ট্রিটে শাখা, অ্যাস্টোরিয়া, ও জামাইকা। এছাড়াও আরও ৪০/৫০ জন এজেন্ট রয়েছে এবং অন্যান্য অঙ্গরাজ্যেও রয়েছে আরও প্রায় ১২০টি শাখা।

সানম্যান এক্সপ্রেস গ্লোবাল মানি ট্রান্সফার’ (পুর্বনাম রুপালী এক্সচেঞ্জ)-এর বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও সিইও মাসুদ রানা তপনের সঙ্গে বেশ কয়েক দফায় মুঠো ফোনে যোগাযোগে ব্যর্থ হয়ে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলে তিনি কোন প্রতিক্রিয়া জানাননি।


ইতোমধ্যে আবদুল মান্নান নিজে পালানোর প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এর আগেই তার একমাত্র ছেলেকে ‘সানম্যান এক্সপ্রেস গ্লোবাল মানি ট্রান্সফার দেখাশোনার দায়িত্ব দেন এবং তাকে নিরাপদ স্থানে পালিয়ে যাবার ব্যবস্থা করেন। আবদুল মান্নান পালানোর প্রস্তুতির খবর পেয়ে সাম্প্রতি আট কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় তার ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

পাচারের টাকায় রমরমা ‘অর্থ বিনিময়’ ব্যবসা সাবেক এমপি মান্নানের

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:৪৭:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৪

সাবেক এমপি ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আবদুল মান্নান পাচারকৃত কোটি কোটি টাকা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে রমরমা ব্যবসা চালাচ্ছেন। শুধু নিউ ইয়র্কেই তার ‘অর্থ বিনিময়’ বা মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে চারটি। সানম্যান এক্সপ্রেস গ্লোবাল মানি ট্রান্সফার (পুর্বনাম রুপালী এক্সচেঞ্জ) নামের এ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দেখাশোনা করছেন তার একমাত্র ছেলে তাসফিক মান্নান। সম্প্রতি আট কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন ঢাকার আদালত।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শামীম খন্দকার আবেদন করলে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন এ আদেশ দেন।

আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা-১০ আসনের সাবেক এমপি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের সাবেক মহাসচিব মেজর মান্নান দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন।

তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানতে পেরেছেন যে অভিযুক্ত যে কোনো সময় দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারে। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে আবেদনটি করেন।


২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর দুদকের ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মেজর (অব.) মান্নানসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন দুদকের উপ-পরিচালক আবদুল মাজেদ।

সূত্র জানায়, বিআইএফসি চেয়ারম্যান, পরিচালক ও কর্মকর্তারা পরস্পর যোগসাজশে টেলিকম সার্ভিস এন্টারপ্রাইজের মালিক আমিনুর রহমানকে জামানত ও বন্ধক ছাড়াই ঋণ হিসেবে ৮ কোটি টাকা বিতরণ করেন। পরে সেই টাকা বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়।

উল্লেখ্য, মেজর (অব.) আবদুল মান্নান আওয়ামী লীগের দোসরদেরকে অনুসরণ করে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার লক্ষে মোটা অঙ্কের অর্থ পাচার করে তুরষ্কে বাড়িসহ ব্যবসা বানিজ্য শুরু করেন বলে একটি বিস্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

সূত্রটি আরও জানান, অর্থ জালিয়াতি ও পাচার সংক্রান্ত মেজর (অব.) মান্নানের বিরুদ্ধে দুদুকে ১৪টি মামলা রয়েছে। উক্ত মামলায় গত এক বছরে তিনি ২ বার জেল হাজতে যান। পরবর্তীতে তিনি আইনমন্ত্রী আনিছুল হকের বান্ধবী তৌফিকা করিমের সাথে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে জানিম লাভ করে বিদেশে পালিয়ে যাবার চেষ্টা চালান।

তাছাড়া পাচারকৃত কোটি কোটি টাকা দিয়ে মেজর (অব.) আবদুল মান্নান তার ছেলে তাসফিক মান্নান ও নিকটাত্মীয়দের দিয়ে নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে ‘সানম্যান এক্সপ্রেস গ্লোবাল মানি ট্রান্সফার’ নামে বেশ কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন। নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে জনৈক কর্মকর্তা জানান ‘সানম্যান এক্সপ্রেস গ্লোবাল মানি ট্রান্সফার’ (পুর্বনাম রুপালী এক্সচেঞ্জ)-এর শুধু নিউ ইয়র্কেই তাদের চারটি শাখা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে-৭৩ স্ট্রিটে (প্রধান কার্যালয়ে), ৭৪ স্ট্রিটে শাখা, অ্যাস্টোরিয়া, ও জামাইকা। এছাড়াও আরও ৪০/৫০ জন এজেন্ট রয়েছে এবং অন্যান্য অঙ্গরাজ্যেও রয়েছে আরও প্রায় ১২০টি শাখা।

সানম্যান এক্সপ্রেস গ্লোবাল মানি ট্রান্সফার’ (পুর্বনাম রুপালী এক্সচেঞ্জ)-এর বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও সিইও মাসুদ রানা তপনের সঙ্গে বেশ কয়েক দফায় মুঠো ফোনে যোগাযোগে ব্যর্থ হয়ে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলে তিনি কোন প্রতিক্রিয়া জানাননি।


ইতোমধ্যে আবদুল মান্নান নিজে পালানোর প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এর আগেই তার একমাত্র ছেলেকে ‘সানম্যান এক্সপ্রেস গ্লোবাল মানি ট্রান্সফার দেখাশোনার দায়িত্ব দেন এবং তাকে নিরাপদ স্থানে পালিয়ে যাবার ব্যবস্থা করেন। আবদুল মান্নান পালানোর প্রস্তুতির খবর পেয়ে সাম্প্রতি আট কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় তার ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।