ঢাকা ০৬:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিসার বিষে নীল সাড়ে ৩ কোটি শিশু

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:৫১:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪ ২১ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সীসা বিষক্রিয়ায় শিশু মৃত্যুর দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ স্থানে। বাংলাদেশে সাড়ে তিন কোটি শিশুর শরীরে ক্ষতিকর মাত্রায় সীসা রয়েছে। যা ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ।

উন্মুক্ত বাতাসে এবং আবাসস্থলের কাছাকাছি এলাকায় ব্যবহূত সিসা-অ্যাসিড ব্যাটারির অবৈধ পুনর্ব্যবহারকে সিসার সংস্পর্শে আসার একটি প্রধান উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের জন্য উল্লেখযোগ্য মাত্রায় স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। সিসার বিষক্রিয়ায় শিশুরা ব্যাপকহারে এবং আগের চেয়ে বেশি মাত্রায় আক্রান্ত হচ্ছে। ইউনিসেফের পক্ষ থেকে সিসামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কৌশল প্রণয়নে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) বিআইসিসিতে ‘আন্তর্জাতিক সিসাদূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহ’ উপলক্ষে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং ইউনিসেফ আয়োজিত জাতীয় কর্মশালায় এ আহবান জানানো হয়।

শৈশবে সীসার সংস্পর্শে আসার ক্ষেত্রে অন্যান্য উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে -সীসাযুক্ত পাইপের ব্যবহারের ফলে পানিতে থাকা সীসা; সক্রিয় শিল্প থেকে আসা সীসা – যেমন খনি এবং ব্যাটারি পুনর্ব্যবহারযোগ্যকরন; সীসাভিত্তিক রং ও রঞ্জক পদার্থ; সীসাযুক্ত গ্যাসোলিন, যা সাম্প্রতিক দশকগুলোতে যথেষ্ট মাত্রায় হ্রাস পেয়েছে, তবে ঐতিহাসিকভাবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রধান উৎস হিসেবে রয়ে গেছে; খাবারের ক্যানে সীসার ঝালাই এবং মশলা, কসমেটিকস, আয়ুর্বেদিক ওষুধ, খেলনা এবং অন্যান্য ভোগ্যপণ্যে সীসার উপস্থিতি। যেসব বাবা-মায়ের পেশা সীসা নিয়ে কাজ করার সঙ্গে সম্পর্কিত তারা প্রায়ই তাদের পোশাক, চুল, হাত ও জুতার মাধ্যমে সীসামিশ্রতি ধূলা নিয়ে আসেন এবং এতে করে অজান্তেই তাদের শিশুরা বিষাক্ত এই উপাদানের সংস্পর্শে আসে।

ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ারস বলেন, সাধারণত, ভারী ধাতু বিশেষ করে সিসা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের ওপর বেশি প্রভাব ফেলে, এই ক্ষতি চিরস্থায়ী ও অপরিবর্তনীয়। দুর্ভাগ্যবশত, শিশুদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের বিকাশের সময়সীমা কমে যায় এবং প্রায় সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে হৃদরোগ দেখা দেয়, আর গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে তাদের অনাগত শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে সুস্পষ্ট আইন ও বেসরকারি খাতের সঠিক পদক্ষেপ দ্বারা এই দূষণ প্রতিরোধযোগ্য। দূষণের শিকার ভুক্তভোগী নারী ও শিশুদের যে অতিরিক্ত খরচ ও ভোগান্তি হয়ে থাকে এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে যে বাড়তি খরচ হয়, সেটাও অনেকাংশে কমিয়ে ফেলা সম্ভব।

সিসাসহ শিশুদের ক্ষতিসাধন করে এমন ভারী ধাতুর উৎস সম্পর্কে ধারণা বাড়ানো এবং সিসার দূষণ কমানোর লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি খাতের অংশীজনদের সম্পৃক্ত করতে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় পূর্ববর্তী গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়, যেখানে শিশুদের রক্তে উদ্বেগজনক মাত্রায় সিসার উপস্থিতি, সিসার উৎস ও দূষণের উপায়গুলো দেখানো হয়। বলা হয়, সিসা দূষণের বাস্তবতা বুঝতে হলে সারাদেশে এর উপস্থিতি (রক্তে সিসার মাত্রা) সম্পর্কিত উপাত্ত জানা জরুরি।

কর্মশালায় জানানো হয়, রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)-এর সঙ্গে মিলে ইউনিসেফ টাঙ্গাইল, খুলনা, পটুয়াখালী ও সিলেট জেলায় ৯৮০ জন এবং ঢাকায় ৫০০ শিশুকে পরীক্ষা করে সবার রক্তে সিসার উপস্থিতি পেয়েছে। এসব নমুনার মধ্যে চার জেলায় ৪০ শতাংশ এবং ঢাকায় ৮০ শতাংশ নমুনায় প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি সিসা পাওয়া যায়, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত ন্যূনতম মাত্রার চেয়ে বেশি।

অবশ্য শিশুদের রক্তে কোনো মাত্রায় সিসার উপস্থিতিই নিরাপদ নয়। তাই এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সিসা শনাক্তকরণ ও সিসা প্রতিরোধ করতে হবে। সিসা দূষণ একটি জরুরি পরিবেশগত স্বাস্থ্য সংকট, বিশেষ করে বাংলাদেশে। দ্রুত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন পরিবেশে ভারী ধাতুর দূষণ বাড়িয়েছে, ফলে শিশুদের বাতাস, পানি, মাটি, খাবার, খেলনা, রং ও রান্নার সামগ্রীর মাধ্যমে বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি বেড়েছে।

সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কমিউনিটির নারী ও শিশুদের মধ্যে সিসা দূষণের প্রভাব ব্যাপক; এটি ছোট শিশুদের জন্য বেশি ক্ষতিকর, যা স্থায়ীভাবে তাদের স্নায়বিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণ হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

সিসার বিষে নীল সাড়ে ৩ কোটি শিশু

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:৫১:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪

সীসা বিষক্রিয়ায় শিশু মৃত্যুর দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ স্থানে। বাংলাদেশে সাড়ে তিন কোটি শিশুর শরীরে ক্ষতিকর মাত্রায় সীসা রয়েছে। যা ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ।

উন্মুক্ত বাতাসে এবং আবাসস্থলের কাছাকাছি এলাকায় ব্যবহূত সিসা-অ্যাসিড ব্যাটারির অবৈধ পুনর্ব্যবহারকে সিসার সংস্পর্শে আসার একটি প্রধান উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের জন্য উল্লেখযোগ্য মাত্রায় স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। সিসার বিষক্রিয়ায় শিশুরা ব্যাপকহারে এবং আগের চেয়ে বেশি মাত্রায় আক্রান্ত হচ্ছে। ইউনিসেফের পক্ষ থেকে সিসামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কৌশল প্রণয়নে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) বিআইসিসিতে ‘আন্তর্জাতিক সিসাদূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহ’ উপলক্ষে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং ইউনিসেফ আয়োজিত জাতীয় কর্মশালায় এ আহবান জানানো হয়।

শৈশবে সীসার সংস্পর্শে আসার ক্ষেত্রে অন্যান্য উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে -সীসাযুক্ত পাইপের ব্যবহারের ফলে পানিতে থাকা সীসা; সক্রিয় শিল্প থেকে আসা সীসা – যেমন খনি এবং ব্যাটারি পুনর্ব্যবহারযোগ্যকরন; সীসাভিত্তিক রং ও রঞ্জক পদার্থ; সীসাযুক্ত গ্যাসোলিন, যা সাম্প্রতিক দশকগুলোতে যথেষ্ট মাত্রায় হ্রাস পেয়েছে, তবে ঐতিহাসিকভাবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রধান উৎস হিসেবে রয়ে গেছে; খাবারের ক্যানে সীসার ঝালাই এবং মশলা, কসমেটিকস, আয়ুর্বেদিক ওষুধ, খেলনা এবং অন্যান্য ভোগ্যপণ্যে সীসার উপস্থিতি। যেসব বাবা-মায়ের পেশা সীসা নিয়ে কাজ করার সঙ্গে সম্পর্কিত তারা প্রায়ই তাদের পোশাক, চুল, হাত ও জুতার মাধ্যমে সীসামিশ্রতি ধূলা নিয়ে আসেন এবং এতে করে অজান্তেই তাদের শিশুরা বিষাক্ত এই উপাদানের সংস্পর্শে আসে।

ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ারস বলেন, সাধারণত, ভারী ধাতু বিশেষ করে সিসা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের ওপর বেশি প্রভাব ফেলে, এই ক্ষতি চিরস্থায়ী ও অপরিবর্তনীয়। দুর্ভাগ্যবশত, শিশুদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের বিকাশের সময়সীমা কমে যায় এবং প্রায় সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে হৃদরোগ দেখা দেয়, আর গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে তাদের অনাগত শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে সুস্পষ্ট আইন ও বেসরকারি খাতের সঠিক পদক্ষেপ দ্বারা এই দূষণ প্রতিরোধযোগ্য। দূষণের শিকার ভুক্তভোগী নারী ও শিশুদের যে অতিরিক্ত খরচ ও ভোগান্তি হয়ে থাকে এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে যে বাড়তি খরচ হয়, সেটাও অনেকাংশে কমিয়ে ফেলা সম্ভব।

সিসাসহ শিশুদের ক্ষতিসাধন করে এমন ভারী ধাতুর উৎস সম্পর্কে ধারণা বাড়ানো এবং সিসার দূষণ কমানোর লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি খাতের অংশীজনদের সম্পৃক্ত করতে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় পূর্ববর্তী গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়, যেখানে শিশুদের রক্তে উদ্বেগজনক মাত্রায় সিসার উপস্থিতি, সিসার উৎস ও দূষণের উপায়গুলো দেখানো হয়। বলা হয়, সিসা দূষণের বাস্তবতা বুঝতে হলে সারাদেশে এর উপস্থিতি (রক্তে সিসার মাত্রা) সম্পর্কিত উপাত্ত জানা জরুরি।

কর্মশালায় জানানো হয়, রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)-এর সঙ্গে মিলে ইউনিসেফ টাঙ্গাইল, খুলনা, পটুয়াখালী ও সিলেট জেলায় ৯৮০ জন এবং ঢাকায় ৫০০ শিশুকে পরীক্ষা করে সবার রক্তে সিসার উপস্থিতি পেয়েছে। এসব নমুনার মধ্যে চার জেলায় ৪০ শতাংশ এবং ঢাকায় ৮০ শতাংশ নমুনায় প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি সিসা পাওয়া যায়, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত ন্যূনতম মাত্রার চেয়ে বেশি।

অবশ্য শিশুদের রক্তে কোনো মাত্রায় সিসার উপস্থিতিই নিরাপদ নয়। তাই এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সিসা শনাক্তকরণ ও সিসা প্রতিরোধ করতে হবে। সিসা দূষণ একটি জরুরি পরিবেশগত স্বাস্থ্য সংকট, বিশেষ করে বাংলাদেশে। দ্রুত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন পরিবেশে ভারী ধাতুর দূষণ বাড়িয়েছে, ফলে শিশুদের বাতাস, পানি, মাটি, খাবার, খেলনা, রং ও রান্নার সামগ্রীর মাধ্যমে বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি বেড়েছে।

সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কমিউনিটির নারী ও শিশুদের মধ্যে সিসা দূষণের প্রভাব ব্যাপক; এটি ছোট শিশুদের জন্য বেশি ক্ষতিকর, যা স্থায়ীভাবে তাদের স্নায়বিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণ হচ্ছে।