ঢাকা ১২:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভয়াবহ বন্যা, শেরপুরে দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত

শেরপুর প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৫:২৪:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪ ৩৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের সব পাহাড়ি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে জেলার নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী, নকলা শ্রীবরদী এবং শেরপুর সদরের অন্তত ৪০টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রাম। আকস্মিক এ বন্যায় এখন পর্যন্ত ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। পানিবন্দী অবস্থায় দুর্ভোগে পড়েছে প্রায় দেড় লাখ মানুষ।

নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ভারী বর্ষণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় শেরপুরের নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতীতে বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন ইদ্রিস আলী, খলিলুর রহমান ও বাঘবেড় বালুরচর গ্রামের ওমিজা বেগমসহ ৪ জন। নিখোঁজ রয়েছে একজন। সেনাবাহিনী, পুলিশ ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে বন্যায় আটকে পড়াদের উদ্ধারে অভিযান চললেও পানির প্রবল স্রোত আর পর্যাপ্ত নৌযানের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার কাজ। সেনাবাহিনীর ছয়টি টিম ছয়টি স্পিডবোট নিয়ে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে।

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলার ভোগাই নদীর নাকুগাঁও পয়েন্টে পানি ১ সেন্টিমিটার এবং নালিতাবাড়ী পয়েন্টে ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির তীব্র স্রোতে অপর পাহাড়ি নদী চেল্লাখালীর ওয়াটার গেজ উঠে যাওয়ায় এখানকার পরিমাণ জানা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছেন। সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র, মৃগী ও দশানী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

তবে পাহাড়ি নদীগুলোর উজানে নদীর পানি কিছুটা কমলেও থেমে থেমে ভারী বর্ষণের ফলে বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হচ্ছে না। বরং ভাটি এলাকায় পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুক্রবার রাত থেকে প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা।

নালিতাবাড়ীর ভোগাই, চেল্লাখালী নদীর ও ঝিনাইগাতীর মহারশির বিভিন্ন স্থানের বাঁধে ব্যাপক ভাঙন হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে শেরপুর-নালিতাবাড়ী ভায়া গাজিরখামার সড়ক, শেরপুর-নালিতাবাড়ী ভায়া তিনআনী সড়ক, নালিতাবাড়ী-নাকুগাঁও স্থলবন্দর সড়কসহ জেলার প্রধান গুরুত্বপূর্ণ অন্তত ১০টি সড়ক। বিধ্বস্ত হয়েছে অসংখ্য গ্রামীণ পাকা ও কাঁচা সড়ক। ভেসে গেছে এসব এলাকার সব পুকুরের মাছ। সেইসঙ্গে অনেক পরিবারের গবাদি পশু ভেসে গেছে, নষ্ট হয়ে গেছে উঠতি আমনক্ষেত।

জেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ পর্যন্ত জেলার সাড়ে সাড়ে ৮শ হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে। সাড়ে ৯০০ হেক্টর জমির সবজির আবাদ পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, শনিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় শেরপুরে বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ মিলিমিটার এবং নালিতাবাড়ীর দুটি পয়েন্টে ১৭০ ও ১০০ মিলিমিটার।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ভয়াবহ বন্যা, শেরপুরে দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৫:২৪:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪

ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের সব পাহাড়ি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে জেলার নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী, নকলা শ্রীবরদী এবং শেরপুর সদরের অন্তত ৪০টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রাম। আকস্মিক এ বন্যায় এখন পর্যন্ত ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। পানিবন্দী অবস্থায় দুর্ভোগে পড়েছে প্রায় দেড় লাখ মানুষ।

নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ভারী বর্ষণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় শেরপুরের নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতীতে বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন ইদ্রিস আলী, খলিলুর রহমান ও বাঘবেড় বালুরচর গ্রামের ওমিজা বেগমসহ ৪ জন। নিখোঁজ রয়েছে একজন। সেনাবাহিনী, পুলিশ ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে বন্যায় আটকে পড়াদের উদ্ধারে অভিযান চললেও পানির প্রবল স্রোত আর পর্যাপ্ত নৌযানের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার কাজ। সেনাবাহিনীর ছয়টি টিম ছয়টি স্পিডবোট নিয়ে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে।

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলার ভোগাই নদীর নাকুগাঁও পয়েন্টে পানি ১ সেন্টিমিটার এবং নালিতাবাড়ী পয়েন্টে ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির তীব্র স্রোতে অপর পাহাড়ি নদী চেল্লাখালীর ওয়াটার গেজ উঠে যাওয়ায় এখানকার পরিমাণ জানা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছেন। সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র, মৃগী ও দশানী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

তবে পাহাড়ি নদীগুলোর উজানে নদীর পানি কিছুটা কমলেও থেমে থেমে ভারী বর্ষণের ফলে বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হচ্ছে না। বরং ভাটি এলাকায় পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুক্রবার রাত থেকে প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা।

নালিতাবাড়ীর ভোগাই, চেল্লাখালী নদীর ও ঝিনাইগাতীর মহারশির বিভিন্ন স্থানের বাঁধে ব্যাপক ভাঙন হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে শেরপুর-নালিতাবাড়ী ভায়া গাজিরখামার সড়ক, শেরপুর-নালিতাবাড়ী ভায়া তিনআনী সড়ক, নালিতাবাড়ী-নাকুগাঁও স্থলবন্দর সড়কসহ জেলার প্রধান গুরুত্বপূর্ণ অন্তত ১০টি সড়ক। বিধ্বস্ত হয়েছে অসংখ্য গ্রামীণ পাকা ও কাঁচা সড়ক। ভেসে গেছে এসব এলাকার সব পুকুরের মাছ। সেইসঙ্গে অনেক পরিবারের গবাদি পশু ভেসে গেছে, নষ্ট হয়ে গেছে উঠতি আমনক্ষেত।

জেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ পর্যন্ত জেলার সাড়ে সাড়ে ৮শ হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে। সাড়ে ৯০০ হেক্টর জমির সবজির আবাদ পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, শনিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় শেরপুরে বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ মিলিমিটার এবং নালিতাবাড়ীর দুটি পয়েন্টে ১৭০ ও ১০০ মিলিমিটার।