কাপ্তাই হ্রদের পানির চূড়ান্ত বিপদসীমায়, পানিবন্দি ৩০ হাজার মানুষ (ভিডিও)
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৬:৩০:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৪ ৭০ বার পড়া হয়েছে
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও এক সপ্তাহের টানা বর্ষণের কারণে পানির চূড়ান্ত বিপদসীমায় রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ। এরমধ্যে জেলার নিম্নাঞ্চলে বসবাসরত বিভিন্ন উপজেলায় অন্তত ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। বন্যা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রাঙামাটি শহরের হজী ধনমিয়া পাহাড়, মিয়াজি পাহাড়, বাগানবাড়ি, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ দেওয়ান পাড়া, স্বর্ণ টিলা, রসুলপুর, শান্তিনগর আসামস্তি, সিলেটি পাড়া, ব্রাহ্মণটিলা, রাঙাপানি, হাসপাতাল এলাকা, পাবলিক হেলথ, রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি ও পুরান বস্তিসহ কাপ্তাই হ্রদের তীরবর্তী বেশ কিছু এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর চূড়ান্ত বিপদসীমায় পৌঁছেছে। এ জন্য পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে শুরু করেছে।
পানি বেড়ে যাওয়ায় প্রায় পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে বলে বাংলা টাইমস’কে জানান রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার হাজী ধনিয়া পাহাড় এলাকার বাসিন্দা মুহম্মদ নূরুল আলম। তিনি বলেন, ঘরে পানি। চুলা ডুবে যাওয়ায় রান্না করা যাচ্ছে না। বাথরুম ডুবে গেছে। বিষধর সাপের ভয়ে ছেলেমেয়ে নিয়ে রাতে ঘুমানোর মতো পরিবেশ নেই। অসহনীয় দুর্ভোগের মধ্যে দিন পার করছি।
রাঙামাটি পর্যটন এলাকার বাসিন্দা মাওলানা আব্দুল বাছিত খান বলেন, আমাদের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা ঝুলন্ত ব্রিজ। পানিতে ডুবে যাওয়ায় আমরা দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছি। খুব কষ্ট হচ্ছে।
পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে বসবাসরত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রধান পেশাগুলোর মধ্যে কৃষিকাজ, মৎস্য আহরণ ও কাঠের ব্যবসা অন্যতম। বর্তমানে সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ বন্ধ, কাঠের ব্যবসাও সীমিত।
তবলছড়ি বাজারের ব্যবসায়ী রায়হান খান বলেন, ভারতের বন্যার পানি নেমে আসায় নিত্যপন্যের দাম হুহু করে বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে কৃষিজমি তলিয়ে যাওয়ায় অত্র অঞ্চলের মানুষ খাদ্য ও অর্থ সংকটে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তথ্য মতে, কাপ্তাই হ্রদের পানির ধারণ ক্ষমতা ১০৯ মিন সি লেভেল (এমএসএল)। হ্রদে পানি রয়েছে ১০৮ দশমিক ৯২ এমএসএল।
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বাঁধের ১৬টি জলকপাট দিয়ে ছয় ইঞ্চির পরিবর্তে সকাল থেকে এক ফুট করে ১৮ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে গিয়ে পড়ছে।
জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের জানান, উজানে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় হ্রদের পানি ছাড়ার পরও পানি বাড়ছে। তাই সকাল থেকে স্পিলওয়ের গেট ছয় ইঞ্চির পরিবর্তে এক ফুট করে ১৮ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে গিয়ে পড়ছে। যদি পানি এভাবে বাড়ে তাহলে পানি ছাড়ার পরিমাণ বাড়ানো হবে।
জেলা প্রশাসনের তথ্য, জেলার রাঙামাটি সদর, লংগদু, বরকল, নানিয়াচর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন তাদের রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, পানিবন্দি মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে বাঁধের পানি ছাড়া অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি, অল্প কিছুদিনের মধ্যে পানি কমে আসবে। এ ছাড়া রাঙ্গামাটি সদরে পাহাড়ধসে ঝুঁকিতে আছে ১৩৬৬ মানুষ। প্রাণহানি এড়াতে ৭৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ঝুঁকি এড়াতে সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস কাজ করছে। বন্যাদুর্গতের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৫ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বিতরণ করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও দেওয়া হবে।