১১ হাজার ভোল্টের তারে বিদ্যুতায়িত হয় রথটি
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১০:৫৬:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ জুলাই ২০২৪ ৭৯ বার পড়া হয়েছে
সনাতন ধর্মালম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব রথযাত্রার রথ বিদ্যুতায়িত হওয়ায় তা বিষাদে রূপ নেয়। রবিবার (৭ জুলাই) বিকালে রথযাত্রা শুরুর পরই শহরের সেউজগাড়ি মোড়ে লোহার তৈরী উচুঁ রথের উপরীভাগ বিদ্যুতের উচ্চ ভোল্টেজের সরবরাহ তারের সাথে বিদ্যুতায়িত হয়। এতে ৫ জন নিহত ও কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়।
আহতদের বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বগুড়া মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হিন্দু ধর্মালম্বীদের অন্যতম এই উৎসবে যোগ দিতে আসা নারী পুরুষদের মাঝে কান্নার রোল পড়ে যায়। দুর্ঘটনার পর শত শত নারী পুরুষ হাসপাতালে ছুটে যান। তাদের আর্তনাদে হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। নিহত আহতদের বন্ধু ও স্বজনদের অনেকে শোকে সজ্ঞা হারান। ঘটনার আকষ্মিকতায় অনেকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
নিহতরা হলেন- নরেশ মোহন্ত(৬০), ইসকন মন্দিরের সেবক অলক কুমার(৩২), আতশি (৪৫), রঞ্জিতা মোহন্ত(৫৫) ও জলি রানী সাহা(৪০)। চিকিৎসাধীনদের মধ্যে ৫/৭ জনের অবস্থা গুরুতর। অনেকের শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যায়।
এ ঘটনায় নিহতদের সৎকারের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা প্রদান এবং ঘটনাতদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল কায়েশকে প্রধান করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এর অন্য সদস্যরা হলেন- পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, সিভিল সার্জন ও নেসকোর প্রতিনিধি।
রোববার সন্ধ্যার পর বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগ থেকে সার্জারী বিভাগ পর্যন্ত হাসপাতলের প্রতিটি স্থান উৎকন্ঠিত মানুষদের ভীড়। চিকিৎসা সেবায় বিঘ্ন দূর করতে ভিড় সামলাতে এক পর্যায়ে ওয়ার্ডের গেট বন্ধ করে দেয়া হয়। সেখানে শেরপুর থেকে আসা অনিমা সঙ্গী রত্নাকে নিয়ে কাঁদছিলেন। জানালেন ভাইয়ের খোঁজ নিতে হাসপাতালে আসেন। কিছু পরেই ট্রলিতে বের করে নিয়ে আসার পরে ই অনিমা লাশ দেখেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। লাশটি যে তার ধর্ম ভাই অলক কুমারের। এরকম কান্নার রোল ও স্বজন হারানো এবং আহত স্বজনদের খুজতে আসা নারী পুরুষের কান্নার দৃশ্য ছিলো হাসপাতালের সর্বত্র। ঘটনার পরে বেশির ভাগ আহতদের নেয়া হয় বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ ও মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে।
হাসপাতালে নেয়ার কিছু পর বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪ জন এবং বগুড়া মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে একজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। আহতদের মধ্যে ৩৫ জনেরও বেশি বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ এবং ৩জনকে বগুড়া মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ২ জন নিবিড় পর্যবক্ষনে রয়েছেন।
শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথ যাত্রার আয়োজন করে শহরের সেউজগাড়ি পালপাড়ার ইসকন আনন্দ আশ্রম। মনিদরের সামনে থেকে রথযাত্রার আনুষ্ঠানিকতার পর রথ যাত্রা শুরু করে। এতে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হিন্দুধর্মালম্বী নারী পুরুষ শিশুসহ বিভিন্ন বয়সীরা অংশ নেন। এর ১৫ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে রোববার (৭ জুলাই) বিকাল সোয়া ৫ টার দিকে দুর্ঘটনা ঘটে।
সেউজ গাড়ি মোড় এলাকায় রথ পৌঁছলে রথের উঁচু অগ্রভাগ উচ্চ ভোল্টেজের বিদ্যুত সরবরাহ তারের সাথে বিদ্যুতায়িত হয়। এতে রথের ওপরে থাকা লোকজন ছিটকে পড়ে। উচুঁ রথ থেকে পড়ে গিয়েও আনেক আহত হয়। রথের ওপর ও রথ ঘিরে থাকা লোকজন বিদ্যুতস্পৃস্ট হয়।
ঘটনার আকস্মিকতায় অনেকে হতবিহবল হয়ে পড়েন। এর পরেই শত শত মানুষের ছোটাছুটি শুরু হয়। হতাহতদের উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে পাঠিয়ে প্রায় আধাঘন্টা পর আবার রথ যাত্রা শুরু হয়।
সেউজগাড়ি এলাকার ব্যবসায়ী দিপক রায় জানান, তারের মাথা রথের উচুঁ অংশ স্পর্শ করলে আগুন দেখা দেয়। ঘটনাস্থলে থাকা দীপক জানান অর্ধশত লোক হতাহত হয়। ঘটনার পর আহত নারী পুরুষদের রাস্তার ওপর পড়ে কাতরাতে দেখা যায়। বিদ্যুতের কারণে অনেকের শরীর পুড়ে যায়।
বগুড়া বিদ্যুত বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মান্নাফ জানান, বিদ্যুতের সরবরাহ তারটি ১১ হাজার ভোল্টেজের ছিলো। রথটির উচুঁ অংশ এর সাথে লাগলে দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহতদের বাড়ি শহরের সেউজগাড়ি, শাজাহানপুরের গোহাইল, সারিয়াকান্দি ও নন্দীগ্রাম উপজেলায়। ঘটনার পর পরেই রথযাত্রীসহ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে যান।
বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার অতিরিক্ত ডিআইজি পদেপদোন্নতিপ্রাপ্ত সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডাঃ মোঃ জুলফিককার আলম, সদর উপজেলা চেয়্যারম্যান লিটন পোদ্দার, সিভিল সার্জন ডাঃ শফিউল আজম, বগুড়া পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাগর কুমার রায় হাসপাতালে ছুটে যান। এসময় হাসপাতালের উর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিতি ছিলেন। চিকিৎসকরা রোগীদের সেবায় ছিলেন তৎপর।