ঢাকা ১১:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৮ মাস পর জাল ফেলবেন জেলেরা

শাহ জালাল, বরিশাল
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৮:৪১:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪ ৪২ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

প্রজননের পরে ইলিশ পোনা জাটকার নির্বিঘ্ন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৮ মাসের আহরন নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলো রোববার (৩০ জুন) মধ্যরাতে। পূর্ণাঙ্গ ইলিশ সম্পদে পরিণত করতে জাটকা আহরনে টানা ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় সোমবার (১ জুলাই) ভোর থেকেই জেলেরা বরিশালের অভ্যন্তরীণ ও উপকূলের নদ-নদীতে জাল ফেলবেন।

তবে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধিসহ স্থিতিশীলতা ও টেকসই বিচরনের লক্ষ্যে আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ সীমানায় সব ধরনের মৎস্য আহরন ও পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা বলবত থাকছে।

মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশে বিগত বছরগুলোর মতো গত ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন মাঝরাত পর্যন্ত বরিশালসহ সারা দেশেই জাটকা আহরন-পরিবহন ও বিপননে নিষেধাজ্ঞা বলবত ছিলো। দেশের অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে জাটকা আহরনে নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে বরিশাল সহ সন্নিহিত এলাকায় প্রশাসনের সহায়তায় মৎস্য বিভাগ ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ অভিযান পরিচালনার পাশাপশি নৌ বহিনী, কোষ্ট গার্ড, পুলিশ ও র‌্যাব সহ বিভিন্ন আইন-শৃংখলা বাহিনীরও নজরদারী চালায়।

এই সময়ে জাটকা আহরনে বিরত জেলেদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করনে বরিশালসহ উপকূলের ৯৭টি উপজেলার ৩ লাখ ৬১ হাজার ৭১টি জেলে পরিবারের মাঝে ৫৭ হাজার ৭৭২ টন চাল বিতরন করা হয়েছে। গত ফেব্রæয়ারী থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে এসব চাল বিতরণ করা হ।

অপরদিকে, মৎস্য বিভাগ সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী জাটকা আহরন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে গত ৮ মাসে বরিশাল উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ১৩ হাজারের মত অভিযান ছাড়াও দুই হাজার ২০০ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জাটকা আহরনের দায়ে প্রায় দেড় হাজার জেলে ও মৎস্যজীবীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডাদেশ প্রদান করা হয়েছে।

একই সময়ে প্রায় ৯০ লাখ টাকা জরিমানা আদায় ছাড়াও প্রায় ২শ কোটি টাকা মূল্যের ১৯ লাখ মিটার নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল সহ ৩১ হাজার অন্যান্য নিষিদ্ধ জাল বাজেয়াপ্ত করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। একই সময়ে প্রায় ৩শ টন জাটকা সহ আরো প্রায় সোয়া ২শ টন অন্যান্য মাছ আটক করে বিভিন্ন লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে বিতরন করে মৎস্য অধিদপ্তর। অভিযানকালে জাটকা আহরনে ব্যবহৃত নৌকা সহ বিভিন্ন মৎস্য উপকরন নিলামে বিক্রী করে সরকারের আয় হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ টাকা। অভয়াশ্রমসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে জাটকা ছাড়াও অন্যান্য মাছ আহরনের দায়ে প্রায় ২২শটি মামলাও দায়ের করেছে মৎস্য অধিদপ্তর।

মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে অন্তত ৩০ ভাগ ইলিশ সারা বছরই ডিম বহন করে। তবে প্রতিদিন শ্রোতের বিপরিতে ৭১ কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটে চলা অভিপ্রয়াণী মাছ ইলিশ জীবনচক্রে স্বাদু পানি থেকে সমুদ্রের নোনা পানিতে এবং সেখান থেকে পুনরায় স্বাদু পানিতে অভিপ্রয়াণ করে। উপকূলের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মূল প্রজনন ক্ষেত্রে আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগে পর মুক্ত ভাসমান অবস্থায় ছাড়া ডিম থেকে ফুটে বের হয়ে ইলিশের লার্ভা, স্বাদু পানি ও নোনা পানির নার্সারী ক্ষেত্রসমূহে বিচরন করে খাবার গ্রহন করে বড় হয়ে থাকে।

মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, নার্সারী ক্ষেত্রসমুহে ৭ থেকে ১০ সপ্তাহ ভেসে ভেড়াবার পরে জাটকা হিসেব সমুদ্রে চলে গিয়ে পরিপক্কতা অর্জন করে। বঙ্গোপসাগরে ১২-১৮ মাস বিচরন করে জাটকা পরিপক্ক ও প্রজননক্ষম পূর্ণাঙ্গ ইলিশে পরিনত হয়ে আবার স্বাদু পানির নার্সারী ক্ষেত্রে ফিরে এসে ডিম ছাড়ে।

সমুদ্রে যাবার সময় পর্যন্ত যেসব এলাকায় জাটকা খাদ্য গ্রহন করে বেড়ে ওঠে সেগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ নার্সারী ক্ষেত্র হিসেবে অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বরিশাল উপকূলে এধরনের ৬টি অভয়াশ্রম ঘোষণা করে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সব ধরনের মৎস্য আহরন নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় ইলিশ সহ সবধরনের মাছেরই নির্বিচার আহরন রহিত করতে সাহায্য করছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য অধিদপ্তর সহ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

৮ মাস পর জাল ফেলবেন জেলেরা

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৮:৪১:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪

প্রজননের পরে ইলিশ পোনা জাটকার নির্বিঘ্ন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৮ মাসের আহরন নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলো রোববার (৩০ জুন) মধ্যরাতে। পূর্ণাঙ্গ ইলিশ সম্পদে পরিণত করতে জাটকা আহরনে টানা ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় সোমবার (১ জুলাই) ভোর থেকেই জেলেরা বরিশালের অভ্যন্তরীণ ও উপকূলের নদ-নদীতে জাল ফেলবেন।

তবে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধিসহ স্থিতিশীলতা ও টেকসই বিচরনের লক্ষ্যে আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ সীমানায় সব ধরনের মৎস্য আহরন ও পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা বলবত থাকছে।

মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশে বিগত বছরগুলোর মতো গত ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন মাঝরাত পর্যন্ত বরিশালসহ সারা দেশেই জাটকা আহরন-পরিবহন ও বিপননে নিষেধাজ্ঞা বলবত ছিলো। দেশের অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে জাটকা আহরনে নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে বরিশাল সহ সন্নিহিত এলাকায় প্রশাসনের সহায়তায় মৎস্য বিভাগ ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ অভিযান পরিচালনার পাশাপশি নৌ বহিনী, কোষ্ট গার্ড, পুলিশ ও র‌্যাব সহ বিভিন্ন আইন-শৃংখলা বাহিনীরও নজরদারী চালায়।

এই সময়ে জাটকা আহরনে বিরত জেলেদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করনে বরিশালসহ উপকূলের ৯৭টি উপজেলার ৩ লাখ ৬১ হাজার ৭১টি জেলে পরিবারের মাঝে ৫৭ হাজার ৭৭২ টন চাল বিতরন করা হয়েছে। গত ফেব্রæয়ারী থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে এসব চাল বিতরণ করা হ।

অপরদিকে, মৎস্য বিভাগ সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী জাটকা আহরন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে গত ৮ মাসে বরিশাল উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ১৩ হাজারের মত অভিযান ছাড়াও দুই হাজার ২০০ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জাটকা আহরনের দায়ে প্রায় দেড় হাজার জেলে ও মৎস্যজীবীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডাদেশ প্রদান করা হয়েছে।

একই সময়ে প্রায় ৯০ লাখ টাকা জরিমানা আদায় ছাড়াও প্রায় ২শ কোটি টাকা মূল্যের ১৯ লাখ মিটার নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল সহ ৩১ হাজার অন্যান্য নিষিদ্ধ জাল বাজেয়াপ্ত করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। একই সময়ে প্রায় ৩শ টন জাটকা সহ আরো প্রায় সোয়া ২শ টন অন্যান্য মাছ আটক করে বিভিন্ন লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে বিতরন করে মৎস্য অধিদপ্তর। অভিযানকালে জাটকা আহরনে ব্যবহৃত নৌকা সহ বিভিন্ন মৎস্য উপকরন নিলামে বিক্রী করে সরকারের আয় হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ টাকা। অভয়াশ্রমসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে জাটকা ছাড়াও অন্যান্য মাছ আহরনের দায়ে প্রায় ২২শটি মামলাও দায়ের করেছে মৎস্য অধিদপ্তর।

মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে অন্তত ৩০ ভাগ ইলিশ সারা বছরই ডিম বহন করে। তবে প্রতিদিন শ্রোতের বিপরিতে ৭১ কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটে চলা অভিপ্রয়াণী মাছ ইলিশ জীবনচক্রে স্বাদু পানি থেকে সমুদ্রের নোনা পানিতে এবং সেখান থেকে পুনরায় স্বাদু পানিতে অভিপ্রয়াণ করে। উপকূলের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মূল প্রজনন ক্ষেত্রে আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগে পর মুক্ত ভাসমান অবস্থায় ছাড়া ডিম থেকে ফুটে বের হয়ে ইলিশের লার্ভা, স্বাদু পানি ও নোনা পানির নার্সারী ক্ষেত্রসমূহে বিচরন করে খাবার গ্রহন করে বড় হয়ে থাকে।

মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, নার্সারী ক্ষেত্রসমুহে ৭ থেকে ১০ সপ্তাহ ভেসে ভেড়াবার পরে জাটকা হিসেব সমুদ্রে চলে গিয়ে পরিপক্কতা অর্জন করে। বঙ্গোপসাগরে ১২-১৮ মাস বিচরন করে জাটকা পরিপক্ক ও প্রজননক্ষম পূর্ণাঙ্গ ইলিশে পরিনত হয়ে আবার স্বাদু পানির নার্সারী ক্ষেত্রে ফিরে এসে ডিম ছাড়ে।

সমুদ্রে যাবার সময় পর্যন্ত যেসব এলাকায় জাটকা খাদ্য গ্রহন করে বেড়ে ওঠে সেগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ নার্সারী ক্ষেত্র হিসেবে অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বরিশাল উপকূলে এধরনের ৬টি অভয়াশ্রম ঘোষণা করে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সব ধরনের মৎস্য আহরন নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় ইলিশ সহ সবধরনের মাছেরই নির্বিচার আহরন রহিত করতে সাহায্য করছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য অধিদপ্তর সহ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা।