ঢাকা ১২:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাহাড় ধসের শঙ্কা, ঝুঁকি নিয়ে বাস লাখ লাখ মানুষের

কক্সবাজার প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:৪১:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪ ৬০ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কক্সবাজারে প্রবেশ করতে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল। সেখান থেকে পাহাড়ের মাঝ দিয়ে গেছে কলাতলী পর্যটন জোনের ৪ লেনের সড়ক। সড়কের দু’পাশে ঘন জঙ্গলবেষ্টিত সারি সারি পাহাড়। আর সেসব পাহাড়ে পাকা-আধা পাকা দালান ও ঝুঁপড়িঘরে ঠাসা। কলাতলী থেকে মেরিন ড্রাইভ ধরে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত এসব পাহাড়ের পাদদেশে দীর্ঘদিন ধরে চলছে এই ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস।

সারাদেশে আগামী পাঁচদিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এমন তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এছাড়াও চার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে কক্সবাজার, উখিয়া, টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরসহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। চলতি বছরও বর্ষার শুরুতেই কক্সবাজারের ৮ উপজেলায় পাহাড়ে ফাটল ও ধস দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি পাহাড় ধসে ১২ জন নিহত হয়েছে। এরমধ্যে ১৯ জুন রাতে উখিয়া উপজেলার পালংখালী এলাকায় ৫টি স্থানে পাহাড় ধসে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার শহরের বাদশাঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসে মারা যায় এক দম্পতি।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, কক্সবাজার জেলা সদর, টেকনাফ,উখিয়া, রামু, চকরিয়া, ঈদগাঁও,পেকুয়া ও মহেশখালীতে অন্তত ৫ লাখ মানুষ ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে। তবে জেলায় পাহাড়ে অবৈধ বসতি ও ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীর সঠিক পরিসংখ্যানও নেই সংশ্লিষ্ট কোনো দপ্তরে। এদিকে, বর্ষা এলেই স্থানীয় প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে সরে যেতে মাইকিং করে।

জানা গেছে, কক্সবাজারের নয় উপজেলার মধ্যে কুতুবদিয়া ছাড়া বাকি ৮টি উপজেলার এক-তৃতীয়াংশ বনভূমি। জীববৈচিত্র্য ভরপুর পাহাড়ের বিস্তীর্ণ বনভূমির একটি বড় অংশ গত দুই দশক ধরে দখল হয়ে গেছে।

তথ্যমতে, বিগত ১০ বছরে এ বিভাগের অধীন ১৩ হাজার ৩৪৭ একর বনভূমি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিভাগের ৭৬ হাজার ৪৫৭ একর বনভূমির মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ে দখলে গেছে ১২ হাজার ৬০৫ একর।

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের এক লাখ ২০ হাজার ৫৮৩ একর বনভূমির মধ্যে বড় অংশ হাতছাড়া হয়েছে। এর মধ্যে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা শিবির রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার একর বনভূমিজুড়ে। রোহিঙ্গা শিবিরের আশপাশের পাহাড়েও গড়ে উঠছে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, পাহাড়ে অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে বন বিভাগের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। বেদখল হওয়া বনভূমি উদ্ধারে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

কক্সবাজার সোসাইটি’র সভাপতি কমরেড গিয়াস উদ্দিন বলেন, সম্প্রতি কক্সবাজারে সংরক্ষিত বনের পাহাড় দখল করে বসতি স্থাপন ও পাহাড় কাটার ঘটনা বেড়েছে।

পরিবেশ আন্দোলন কক্সবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, কক্সবাজারে পাহাড় নিধনের ভয়ানক পরিস্থিতি সর্ম্পকে সবাই অবগত। কিন্তু কোনো সংস্থা কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে না।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিভীষণ কান্তি দাশ এসব বিষয়ে বলেন, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সতর্ক করে নিয়মিত প্রচারণা চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসতির তালিকা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি শিবিরে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত অন্তত ১২ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। এসব ক্যাম্পের মধ্যে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের ৭ থেকে ১১ নম্বর ক্যাম্পে ৫ হাজার ৫০০টি বসতঘর পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে।

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ক্যাম্পে পাহাড় ধসে ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বেশির ভাগ পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে গত তিন বছরে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

পাহাড় ধসের শঙ্কা, ঝুঁকি নিয়ে বাস লাখ লাখ মানুষের

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:৪১:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪

কক্সবাজারে প্রবেশ করতে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল। সেখান থেকে পাহাড়ের মাঝ দিয়ে গেছে কলাতলী পর্যটন জোনের ৪ লেনের সড়ক। সড়কের দু’পাশে ঘন জঙ্গলবেষ্টিত সারি সারি পাহাড়। আর সেসব পাহাড়ে পাকা-আধা পাকা দালান ও ঝুঁপড়িঘরে ঠাসা। কলাতলী থেকে মেরিন ড্রাইভ ধরে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত এসব পাহাড়ের পাদদেশে দীর্ঘদিন ধরে চলছে এই ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস।

সারাদেশে আগামী পাঁচদিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এমন তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এছাড়াও চার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে কক্সবাজার, উখিয়া, টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরসহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। চলতি বছরও বর্ষার শুরুতেই কক্সবাজারের ৮ উপজেলায় পাহাড়ে ফাটল ও ধস দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি পাহাড় ধসে ১২ জন নিহত হয়েছে। এরমধ্যে ১৯ জুন রাতে উখিয়া উপজেলার পালংখালী এলাকায় ৫টি স্থানে পাহাড় ধসে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার শহরের বাদশাঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসে মারা যায় এক দম্পতি।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, কক্সবাজার জেলা সদর, টেকনাফ,উখিয়া, রামু, চকরিয়া, ঈদগাঁও,পেকুয়া ও মহেশখালীতে অন্তত ৫ লাখ মানুষ ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে। তবে জেলায় পাহাড়ে অবৈধ বসতি ও ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীর সঠিক পরিসংখ্যানও নেই সংশ্লিষ্ট কোনো দপ্তরে। এদিকে, বর্ষা এলেই স্থানীয় প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে সরে যেতে মাইকিং করে।

জানা গেছে, কক্সবাজারের নয় উপজেলার মধ্যে কুতুবদিয়া ছাড়া বাকি ৮টি উপজেলার এক-তৃতীয়াংশ বনভূমি। জীববৈচিত্র্য ভরপুর পাহাড়ের বিস্তীর্ণ বনভূমির একটি বড় অংশ গত দুই দশক ধরে দখল হয়ে গেছে।

তথ্যমতে, বিগত ১০ বছরে এ বিভাগের অধীন ১৩ হাজার ৩৪৭ একর বনভূমি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিভাগের ৭৬ হাজার ৪৫৭ একর বনভূমির মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ে দখলে গেছে ১২ হাজার ৬০৫ একর।

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের এক লাখ ২০ হাজার ৫৮৩ একর বনভূমির মধ্যে বড় অংশ হাতছাড়া হয়েছে। এর মধ্যে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা শিবির রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার একর বনভূমিজুড়ে। রোহিঙ্গা শিবিরের আশপাশের পাহাড়েও গড়ে উঠছে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, পাহাড়ে অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে বন বিভাগের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। বেদখল হওয়া বনভূমি উদ্ধারে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

কক্সবাজার সোসাইটি’র সভাপতি কমরেড গিয়াস উদ্দিন বলেন, সম্প্রতি কক্সবাজারে সংরক্ষিত বনের পাহাড় দখল করে বসতি স্থাপন ও পাহাড় কাটার ঘটনা বেড়েছে।

পরিবেশ আন্দোলন কক্সবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, কক্সবাজারে পাহাড় নিধনের ভয়ানক পরিস্থিতি সর্ম্পকে সবাই অবগত। কিন্তু কোনো সংস্থা কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে না।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিভীষণ কান্তি দাশ এসব বিষয়ে বলেন, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সতর্ক করে নিয়মিত প্রচারণা চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসতির তালিকা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি শিবিরে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত অন্তত ১২ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। এসব ক্যাম্পের মধ্যে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের ৭ থেকে ১১ নম্বর ক্যাম্পে ৫ হাজার ৫০০টি বসতঘর পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে।

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ক্যাম্পে পাহাড় ধসে ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বেশির ভাগ পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে গত তিন বছরে।