ঢাকা ০৮:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নওগাঁয় কেজিতে ৩ টাকা বেড়েছে চালের দাম

নওগাঁ প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৮:২০:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ মার্চ ২০২৪ ১৩৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

খাদ্য শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত নওগাঁয় আবারও বেড়েছে চালের দাম। ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে পাইকারি মোকামে প্রকারভেদে প্রতিকেজিতে ২-৩ টাকা বেড়েছে। এখন খুচরা বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। তবে দাম বাড়লেও খুচরা চাল বাজারে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। নেই বেচা-কেনা। এদিকে চালের দাম বাড়ায় দরিদ্র ক্রেতাদের মাঝে অস্বস্থি বিরাজ করছে। তাই ক্রেতারা আবারও বাজার মনিটরিংয়ের দাবী জানান।

ধানের দাম বাড়ার অজুহাতে এর প্রভাব পড়েছে চালের বাজারেও। পাইকারি মোকামে প্রকারভেদে প্রতি বস্তায় (৫০ কেজি) দাম বেড়েছে ১০০-১৫০ টাকা। ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে প্রকারভেদে প্রতি কেজিতে ২-৩ টাকা বেড়ে স্বর্ণা-৫ চাল ৫০-৫২ টাকা কেজি, জিরাশাইল ৬৪-৬৬ টাকা এবং কাটারিভোগ ৬৮-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমনটিই জানালে এক ব্যবসায়ী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসকিং মিলের এক ব্যবসায়ী জানান, বাজারে স্বর্ণা-৫ চাল ২৪০০ টাকা বস্তা, কাটারি সিদ্ধ ২২৫০-২৩০০ টাকা এবং নাজির ২৩৫০-২৪০০ টাকা বস্তা। এর কমবেশিও হতে পারে। তবে বাজারে বিক্রি নেই। তাহলে কেন দাম বাড়লো এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ এর দাম বৃদ্ধি, লোনের ইন্টারেস্ট বৃদ্ধিসহ আনুষঙ্গিন দাম বাড়ার কারনে দাম বেড়েছে। এছাড়া বাজারে ধানের আমদানি নেই। তবে আগামী ২০ দিনের মধ্যে নতুন ধান নামবে, তখন দাম কমবে বলে জানালেন তিনি। তবে তিনি ক্ষোভ নিয়েই বললেন, আমাদের হাসকি মিলের এই ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে। অন্য কোনো ব্যবসা করবো ভাবছি। এখন আর আমাদের ব্যবসা নেই, বড় বড় কোম্পানীর দখলে চলে গিয়েছে এই চালের ব্যবসা বলেও মন্তব্য করেন তিনি। হাসকি মিলের আরেক ব্যবসায়ী জানালেন, একসিদ্ধ স্বর্ণা-৫ চাল ২৫৬০ টাকা বস্তা বিক্রি করেছেন।

স্বর্ণা চাল কিনতে গিয়েছিলেন শহরের দয়ালের মোড়ের অটো রিকসা চালক আফজাল। বাজারে গিয়ে কেজি প্রতি দুই টাকা করে বেশি কিনতে হয়েছে তাকে। ক্ষোভ নিয়ে বললেন এমনিতেই চিকন চাল আমাদের মতো গরীবরা কিনতে পারিনা, মোটা চাল কিনে খেতে হয়, তার উপর এই রোজার সময়ে চালের দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি।

খুচরা চাল ব্যবসায়ী টিংকু শুধুমাত্র স্বর্ণা-৫ চালের দাম বেড়েছে দাবি করে বলেন, কোনো ক্রেতাই নেই। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ৫ কেজি চাল বিক্রি করেছি। তবে চালের বাজারে তেমন প্রভাব পড়েনি।

দাম বাড়লেও তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি জানিয়ে আরেক খুচরা চাল ব্যবসায়ী বুলেট বলেন, বাজারে ক্রেতা নেই। সকাল থেকে বুনি করতে পারিনি।

নওগাঁ চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, ১০-১৫ দিন আগে ২-৩ টাকা বেড়েছে চালের দাম। বর্তমানে চালের বাজার স্থিতিশীল আছে। পাইকারি বাজারে দাম বাড়লে খুচরা বাজারেও প্রভাব পড়বে এটাই স্বাভাবিক।


তিনি আরও জানান, প্রতি বছর এই মৌসুমে ধান-চালের দাম কিছুটা বাড়ে। ধানের দাম কিছুটা বাড়ার কারণে প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। আর এক মাসের মধ্যে ধান কাটা-মাড়াই শুরু হতে পারে। নতুন ধান বাজারে আসলে চালের দাম স্বাভাবিক হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে গত জানুয়ারি মাসে নওগাঁয় জেলা প্রশাসনের মজুদ বিরোধী অভিযানে অবৈধভাবে ধান-চাল মজুত রাখার দায়ে ৭ দিনের অভিযানে ৩৯টি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ১৯ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে। এছাড়া তিনটি গোডাউন সিলগালাও করা হয়েছিল সেসময়। বেশ কয়েকটি চাল ব্যবসায়ীরও করা হয়েছিল জরিমানা। দেওয়া হয়েছিল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিক্রির নির্দেশ। তখন সপ্তাহের ব্যবধানে ২-৪ টাকা চালের দাম কমেছিল। মজুদ বিরোধী অভিযানের কারণে প্রশংসা পেয়েছিলেন সাধারণ জনগণের।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলা বলেন, এর আগে চালের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় আমরা অভিযান চালিয়েছিলাম। সেসময় বড়ো বড়ো প্রতিষ্ঠানেও অভিযান চালিয়েছি। ভোক্তাদের জন্য আমাদের সবসময় চেষ্টা থাকবে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার। এই জন্য মিল মালিকদের ডাকা হয়েছে, তাদের নিয়ে সভা করবো। তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান এই উর্দ্ধতন কর্মকর্তা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

নওগাঁয় কেজিতে ৩ টাকা বেড়েছে চালের দাম

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৮:২০:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ মার্চ ২০২৪

খাদ্য শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত নওগাঁয় আবারও বেড়েছে চালের দাম। ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে পাইকারি মোকামে প্রকারভেদে প্রতিকেজিতে ২-৩ টাকা বেড়েছে। এখন খুচরা বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। তবে দাম বাড়লেও খুচরা চাল বাজারে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। নেই বেচা-কেনা। এদিকে চালের দাম বাড়ায় দরিদ্র ক্রেতাদের মাঝে অস্বস্থি বিরাজ করছে। তাই ক্রেতারা আবারও বাজার মনিটরিংয়ের দাবী জানান।

ধানের দাম বাড়ার অজুহাতে এর প্রভাব পড়েছে চালের বাজারেও। পাইকারি মোকামে প্রকারভেদে প্রতি বস্তায় (৫০ কেজি) দাম বেড়েছে ১০০-১৫০ টাকা। ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে প্রকারভেদে প্রতি কেজিতে ২-৩ টাকা বেড়ে স্বর্ণা-৫ চাল ৫০-৫২ টাকা কেজি, জিরাশাইল ৬৪-৬৬ টাকা এবং কাটারিভোগ ৬৮-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমনটিই জানালে এক ব্যবসায়ী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসকিং মিলের এক ব্যবসায়ী জানান, বাজারে স্বর্ণা-৫ চাল ২৪০০ টাকা বস্তা, কাটারি সিদ্ধ ২২৫০-২৩০০ টাকা এবং নাজির ২৩৫০-২৪০০ টাকা বস্তা। এর কমবেশিও হতে পারে। তবে বাজারে বিক্রি নেই। তাহলে কেন দাম বাড়লো এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ এর দাম বৃদ্ধি, লোনের ইন্টারেস্ট বৃদ্ধিসহ আনুষঙ্গিন দাম বাড়ার কারনে দাম বেড়েছে। এছাড়া বাজারে ধানের আমদানি নেই। তবে আগামী ২০ দিনের মধ্যে নতুন ধান নামবে, তখন দাম কমবে বলে জানালেন তিনি। তবে তিনি ক্ষোভ নিয়েই বললেন, আমাদের হাসকি মিলের এই ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে। অন্য কোনো ব্যবসা করবো ভাবছি। এখন আর আমাদের ব্যবসা নেই, বড় বড় কোম্পানীর দখলে চলে গিয়েছে এই চালের ব্যবসা বলেও মন্তব্য করেন তিনি। হাসকি মিলের আরেক ব্যবসায়ী জানালেন, একসিদ্ধ স্বর্ণা-৫ চাল ২৫৬০ টাকা বস্তা বিক্রি করেছেন।

স্বর্ণা চাল কিনতে গিয়েছিলেন শহরের দয়ালের মোড়ের অটো রিকসা চালক আফজাল। বাজারে গিয়ে কেজি প্রতি দুই টাকা করে বেশি কিনতে হয়েছে তাকে। ক্ষোভ নিয়ে বললেন এমনিতেই চিকন চাল আমাদের মতো গরীবরা কিনতে পারিনা, মোটা চাল কিনে খেতে হয়, তার উপর এই রোজার সময়ে চালের দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি।

খুচরা চাল ব্যবসায়ী টিংকু শুধুমাত্র স্বর্ণা-৫ চালের দাম বেড়েছে দাবি করে বলেন, কোনো ক্রেতাই নেই। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ৫ কেজি চাল বিক্রি করেছি। তবে চালের বাজারে তেমন প্রভাব পড়েনি।

দাম বাড়লেও তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি জানিয়ে আরেক খুচরা চাল ব্যবসায়ী বুলেট বলেন, বাজারে ক্রেতা নেই। সকাল থেকে বুনি করতে পারিনি।

নওগাঁ চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, ১০-১৫ দিন আগে ২-৩ টাকা বেড়েছে চালের দাম। বর্তমানে চালের বাজার স্থিতিশীল আছে। পাইকারি বাজারে দাম বাড়লে খুচরা বাজারেও প্রভাব পড়বে এটাই স্বাভাবিক।


তিনি আরও জানান, প্রতি বছর এই মৌসুমে ধান-চালের দাম কিছুটা বাড়ে। ধানের দাম কিছুটা বাড়ার কারণে প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। আর এক মাসের মধ্যে ধান কাটা-মাড়াই শুরু হতে পারে। নতুন ধান বাজারে আসলে চালের দাম স্বাভাবিক হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে গত জানুয়ারি মাসে নওগাঁয় জেলা প্রশাসনের মজুদ বিরোধী অভিযানে অবৈধভাবে ধান-চাল মজুত রাখার দায়ে ৭ দিনের অভিযানে ৩৯টি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ১৯ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে। এছাড়া তিনটি গোডাউন সিলগালাও করা হয়েছিল সেসময়। বেশ কয়েকটি চাল ব্যবসায়ীরও করা হয়েছিল জরিমানা। দেওয়া হয়েছিল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিক্রির নির্দেশ। তখন সপ্তাহের ব্যবধানে ২-৪ টাকা চালের দাম কমেছিল। মজুদ বিরোধী অভিযানের কারণে প্রশংসা পেয়েছিলেন সাধারণ জনগণের।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলা বলেন, এর আগে চালের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় আমরা অভিযান চালিয়েছিলাম। সেসময় বড়ো বড়ো প্রতিষ্ঠানেও অভিযান চালিয়েছি। ভোক্তাদের জন্য আমাদের সবসময় চেষ্টা থাকবে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার। এই জন্য মিল মালিকদের ডাকা হয়েছে, তাদের নিয়ে সভা করবো। তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান এই উর্দ্ধতন কর্মকর্তা।