রমজানের আগে বাড়তে পারে দাম
বাজারে ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সঙ্কট

- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:২৭:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ৪৬ বার পড়া হয়েছে
ভোজ্যতেল নিয়ে ফের শুরু হয়েছে তেলেসমাতি। ভোক্তাদের অভিযোগ, বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। ফের দাম বাড়াতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। এরমধ্যে মাত্র একমাসের ব্যবধানে ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে সরকারের কাছে আবদার করেছে মিল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।
এর আগে গত ৬ জানুয়ারি সংগঠনের নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম মোল্লা বাণিজ্য সচিবের কাছে ১০ জানুয়ারির মধ্যে মূল্য সমন্বয়ের দাবি জানান। এরপর থেকেই বাজারে ভোজ্যতেলের এক ধরনের সংকট তৈরি হয়।
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশে শুরু হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতা গত ছয় মাসে অনেকটাই কমে এসেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিতরা কাটলেও সয়াবিন তেলের সংকট কাটছেই না। তেল নিয়ে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের তেলেসমাতির ফলে আবারও সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে বোতলজাত ভোজ্যতেলের।
এদিকে, বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাড়তি চালের দাম এখনো কমেনি। বরং দু-এক জাতের চালে দাম আরও বাড়ছে। ৬২ টাকার কমে মোটা চাল এবং ৮০ টাকার কমে কোনো সরু চাল মিলছে না। তবে স্বস্তি রয়েছে ডিম ও সবজির দামে। বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ অনেক; এতে কমেছে দাম। বর্তমানে প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি ২০-২৫ টাকা, প্রতি কেজি মুলা ২০-৩০ টাকা, শালগম ৩০-৪০ টাকা, ধরনভেদে শিম ৩০-৫০ টাকা ও টমেটো ২০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বেগুন ৫০-৫০ টাকা, পেঁপে ৩০-৪০ টাকা ও লাউ ২০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজি বিক্রেতারা জানান, মৌসুমের নতুন দেশি কাঁচা মরিচ বাজারে এসেছে। তাতে দামও কমেছে। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়। আলুর কেজি ২০-৩০ টাকা ও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। ফার্মে মুরগির ডিমের দামও কম রয়েছে। প্রতি ডজন ১৩৫-১৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়।
গত ৯ ডিসেম্বর ভোজ্যতেলের নতুন দাম নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই সময় বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৮ টাকা বাড়িয়ে ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা করা হয়। খোলা পাম তেলের লিটারও ১৪৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা করা হয়। এ ছাড়া বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় ৮৬০ টাকা, যা আগে ছিল ৮১৮ টাকা।
ভোক্তাদের আশা ছিল, দাম বাড়ানোর পর সংকট কেটে যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বাজারে অস্থিরতা রয়েই যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন বাজার থেকে সয়াবিন তেলের সংকটের তথ্য জানা গেছে। বিশেষ করে এক ও দুই লিটারের বোতলের সরবরাহ নেই বললেই চলে।
মানিকনগরের বাসিন্দা গোলাম মওলা বলেন, বাজার এবং মহল্লার বিভিন্ন দোকান ঘুরে বোতলজাত সয়াবিন তেল মেলেনি। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় ব্যবসায়ীরা মানুষকে জিম্মি করে বারবার তাদের দাবি আদায় করে নেন। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে তারা যে হারে দাম বাড়ান, সেই হারে কখনও দেশের বাজারে তেলের দাম কমান না। এ ছাড়া আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় বছরের পর বছর জিম্মি করে ভোক্তার পকেট লুটেন মুনফাখোর ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজার, পাড়া-মহল্লা ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোম্পানিগুলো হঠাৎ করে কয়েক দিন ধরে তেলে সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। দুই কোম্পানির তেল পাওয়া গেলেও তা চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য। আবার কোনো কোম্পানির তেল নিতে হলে শর্ত হিসাবে তেলের সঙ্গে তাদের অন্যান্য পণ্য কিনতে হচ্ছে খুচরা ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের। বড় বাজারগুলোয় হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানির পরিশোধিত ৫ লিটারের তেলের বোতল বাজারে পাওয়া গেলেও এক লিটার ও আধা লিটারের বোতলের তেল নেই বললেই চলে। আবার পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে তেল না থাকার মতো চিত্র দেখা গেছে। কোনো কোনো দোকানে তেল থাকলেও তা পরিচিত গ্রাহক ছাড়া বিক্রি করা হচ্ছে না।
গত বছরের ১৫ অক্টোবর স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য বৃদ্ধি না করে আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং স্থানীয় উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ, দুই পর্যায়ে মোট ১০ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের আবেদন করে এ মন্ত্রণালয়। পরে সেটি আমলে নিয়ে আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ ও স্থানীয় উৎপাদনে মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহার করে এনবিআর। তবে এর প্রভাব বাজারে নেই।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন সংবাদম্যাধ্যমকে বলেন, সরবরাহ বন্ধ করে বা কমিয়ে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। শুল্ক প্রত্যাহার ছাড়াও সরকার নানা সুবিধা দিলেও তার সুফল ভোক্তারা পান না। বাজারে একাধিক সংস্থা তদারকি করে। কিন্তু ভোক্তা এ থেকে কোনো সুফল পাচ্ছে না। পণ্যের দাম বাড়লেই কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনা করেন। কিন্তু যে স্তরে কারসাজি হয়েছে, সেই স্তরে মনিটরিং হয় না।