সেন্টমার্টিনে আবারও পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা
শঙ্কা বাড়ছে পর্যটন ব্যবসায়

- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:১৭:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ১৭ বার পড়া হয়েছে
সেন্টমার্টিন ভ্রমণের মৌসুম গতকাল (শুক্রবার) শেষ হয়েছে এবং আজ ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আবারও পর্যটকদের জন্য নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এই প্রবাল দ্বীপে পর্যটন চালু রাখা হলেও পরিবেশগত কারণ ও সরকারি নীতির কারণে নির্দিষ্ট সময়ের পর ভ্রমণ সীমিত করা হয়।
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে দ্বীপের পর্যটননির্ভর ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। হোটেল, রেস্টুরেন্ট, নৌপরিবহন, কটেজসহ পর্যটনকেন্দ্রিক নানা খাতের ব্যবসা কিছুদিনের জন্য স্থবির হয়ে পড়বে। এতে দ্বীপের বাসিন্দারা আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন, বিশেষ করে যারা শুধুমাত্র পর্যটকদের সেবার ওপর নির্ভরশীল। তবে পরিবেশবিদরা বলছেন, সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজনীয়। অতিরিক্ত পর্যটন চাপে প্রবাল ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়তে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে দ্বীপের টিকে থাকার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ৯ মাস সেখানে পর্যটকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। ফলে দ্বীপের পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরা ও স্থানীয় বাসিন্দারা চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন। সাধারণত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় মাস পর্যটকদের জন্য দ্বীপটি বন্ধ থাকে, তবে এবার অতিরিক্ত তিন মাস নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সরকারের দাবি, এই পদক্ষেপ দ্বীপের পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে।
ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা সেন্টমার্টিনের পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট ও ট্যুর অপারেটররা দীর্ঘ সময়ের নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন। দ্বীপে প্রায় ১০ হাজার মানুষের জীবিকা পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, অন্তত ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত পর্যটকদের যাতায়াত চালু রাখলে তাদের কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হতো।
স্থানীয় রিসোর্ট মালিক আব্দুল মালেক বলেন, প্রতিবছর পাঁচ মাস জাহাজ চললেও চলতি বছর মাত্র দুই মাসের সরকার অনুমোদন দিয়েছে যেটা আমাদের দ্বীপের মানুষের বা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের দুই মাসে অল্প আয় বাকি দশমাস চলা খুব কঠিন হবে।
সীক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, সরকারি নির্দেশনার কারণে আমরা কিন্তু নভেম্বরে পর্যটক নিতে পারি নাই। আমাদের দাবি ছিল নভেম্বরের প্রেক্ষিতে ফেব্রæয়ারিতে অন্তত উন্মুক্ত করে দেয়া হোক।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, সরকারের সর্বশেষ নির্দেশনা সে অনুযায়ী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা সেন্টমার্টিনে যেতে পারবেন। যদি দ্বীপবাসী এমন কোনো চাহিদা থাকে আর তারা যদি আমাদের মাধ্যমে সরকারকে জানাতে চায় তাহলে তা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জানতে পারেন। তবে এ ব্যাপারের সরকার যে নির্দেশনা দেবে তাই আমরা বাস্তবায়ন করব।
সেন্টমার্টিন হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এম এ আবদুর রহিম জিহাদী বলেন, পর্যটন মৌসুম ১ অক্টোবর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত হলেও এবার ৩১ জানুয়ারিতেই বন্ধ হয়ে গেছে। এতে আমাদের আয় কমে যাবে এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের সংকটে পড়বেন।
এদিকে, কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে ভ্রমণে ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারি বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করে পর্যটক যাতায়াত উন্মুক্ত করার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে দ্বীপবাসী। গত বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন স্টেশনে দ্বীপবাসীর উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে দ্বীপবাসীর পাশাপাশি স্থানীয় হোটেল-মোটেল ও কটেজ মালিক সমিতি, ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার-টুয়াক, রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতি, ট্রলার মালিক সমিতি, স্পিডবোট মালিক সমিতি, ভ্যানগাড়ি মালিক-শ্রমিক সমিতি এবং বাজার ব্যবসায়ী সমিতিসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের লোকেরা অংশগ্রহণ করেছেন। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তারা বলেন, চলতি পর্যটন মৌসুমে সরকারি বিধি-নিষেধের কারণে পর্যটক যাতায়াত সীমিত থাকায় এমনিতেই দ্বীপবাসী নানা সংকট ও সমস্যায় জর্জরিত। এতে আগামী বর্ষা মৌসুমে দ্বীপবাসীর দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করবে। তার উপর দীর্ঘদিনের দাবি উপেক্ষা করে ফেব্রæয়ারি মাস থেকে সরকারি নির্দেশনা বহাল রাখায় দুঃশ্চিন্তায় রয়েছে দ্বীপবাসী।