ঢাকা ০৮:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাবার স্বপ্ন পূরণে মেডিকেলে ভর্তি নিয়ে পরিবারে দুঃচিন্তা!

মোঃ বিপ্লব , রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৪১:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫ ১১ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার শালবাড়ী কাঠালতলী এলাকার মেধাবী শিক্ষার্থী মারুফের পিতা অন্যের দোকানের কর্মচারী। সামান্য ২০ শতাংশ জমি তাও অন্যের কাছে বন্ধক রেখে মারুফের পড়ালেখার খরচ চালিয়েছেন বাবা। বাবার স্বপ্ন পূরণে মারুফ এবার মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেয়েছে। তবে তার ভর্তি নিয়ে পরিবারের মধ্যে যেন চিন্তার ভাজ পড়েছে। বর্তমানে ৩৩শতাংশ জমি চাষাবাদ এবং অন্যের দোকানে কর্মচারী থেকে চলছে পরিবারের পাঁচ সদস্যের কস্টের সংসার।

মারুফের মেঝো ভাই সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে, মারুফ নিজেই কোচিং চালিয়ে করছেন পড়াশোনা । ছোট ভাই এখনো ঠিকমতো হাটতেই শিখেনি। মারুফের বাবা ২০০৬ সাল থেকে অসুস্থ শরির নিয়েই বাড়ির পাশেই এক বন্ধুর কিটনাশক দোকানে কাজ করে,সেখান থেকে সামান্য পারিশ্রমিক পায়। এটা দিয়ে চলে সংসারের বাজার খরচ। এভাবেই হাজারো কস্ট বুকের ভিতরে জমা রেখে হাসি মুখেই কথা গুলো বলছিলেন এবারের সদ্য মেডিকেল পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার অদম্য মারুফের বাবা মোহাম্মদ ইউসুফ আলী। মারুফ রাণীশংকৈলের মেরিট কেয়ার কিন্ডারগার্টেন স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা শেষে,পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন এবং জিপিএ – ৫ পেয়ে পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়।

এরপর রাণীশংকৈল ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২৩ সালে এইচএসসি পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং এবারো মারুফ জিপিএ -৫ পেয়ে নিজেকে অদম্য মেধাবীর পরিচয় দেন। মারুফের বাবা বলেন, আমি দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন ডাক্টারের চিকিৎসা নিয়ে আসছি। এ থেকেই আমারো স্বপ্ন জাগতো আমার সন্তান কে যদি ডাক্টার বানাতে পারতাম।

বাবার স্বপ্ন পুরনেই মারুক ২০২৪ সালে এমবিবিএস ভর্তি পরিক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। তবে সেই স্বপ্ন পুরুন হয়নি মারুফের পরিক্ষায় ৩ নম্বর কম পাওয়াতে। তবে সেই স্বপ্ন থেমে থাকেনি মারুফের ২৪ সালে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা দিয়ে মারুফ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি বিষয়ে ভর্তি হন। কিন্তু সেখানে কৃষি বিষয়ে তার আগ্রহ কম থাকায় দুই তিন দিন ক্লাস করেই বাড়ি চলে আসেন। এরপর এলাকায় একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করান এবং নিজেকেও ডাক্টারি পড়ার স্বপ্নে জাগ্রত করেন। তবে কোন রকম কোচিং ছাড়াই শুধু একটি কোচিং-এ নিয়মিত দুই মাস পরিক্ষায় অংশ গ্রহণ করেই ২০২৫ সালের এমবিবিএস পরিক্ষায় আর তাকে থামাতে পারেনি আল্লাহ অশেষ রহমতে।

এবারের এমবিবিএস পরিক্ষায় মারুফ মেধা তালিকায় নিজেকে পরিচয় দিয়েছেন ১৪৪৪ নাম্বারে। মারুফের এ সাফল্য দেখে বাবা মা সহ পরিবার ও আত্বীয় স্বজন থেকে এলাকাবাসী সকলেই এখন আনন্দিত। মারুফের ডাক্টারি ভর্তি খবরে এখন তার বাড়িতে প্রতিদিন বিভিন্ন মানুষ দেখতে আসছেন তাকে, নিচ্ছেন খোজ খবর। মারুফের বাবা ইউসুফ আলী আরো বলেন,সেদিন মাঠে কাজ করছিলাম এসময় মারুফের মোবাইল থেকে কল আসে আমার মোবাইলে। আমি ফোন রিসিভ করি তবে মারুফ আমার সাথে কথা বলতে পারেনি। সে আবেগ আপ্লুত হয়ে যায়। আমি বার বার বলি কথা বলো কিন্তু সে বলতে পারেনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে তার বন্ধু ফোন টা ধরে আমাকে বলে আক্কেল মারুফ রংপুর মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে। তারপর ও আমি বলি এ কথাটা আমাকে মারুফ শুধু একবার নিজের মুখে বলুক, তখন মারুফ ফোন ধরে বলে বাবা আমার জন্য দোয়া করো আমি চান্স পেয়েছি। এ কথা শুনে আমি সাথে সাথে মাটিতে সিজদায় পড়ে যায় আল্লাহর কাছে,এবং আমিও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছি।

তবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও সঙ্কা রয়েছে আগামীতে ভর্তি হওয়া এবং পড়াাশুনার খরচ চালানোর বিষয়ে। মারুফের মা মরিয়ম আক্তার ও বাবা ইউসুফ আলী, এ প্রতিনিধিকে বলেন,আমার ছেলে বড় ডাক্টার হয়ে দেশের গরিব মানুষেকে চিকিৎসা সেবা দিবে দেশ কে ভালো কিছু উপহার দিবে।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রকিবুল হাসান বলেন,আমি শুনেছি মারুফ নামে এক শিক্ষার্থী রংপুর মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

বাবার স্বপ্ন পূরণে মেডিকেলে ভর্তি নিয়ে পরিবারে দুঃচিন্তা!

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৪১:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার শালবাড়ী কাঠালতলী এলাকার মেধাবী শিক্ষার্থী মারুফের পিতা অন্যের দোকানের কর্মচারী। সামান্য ২০ শতাংশ জমি তাও অন্যের কাছে বন্ধক রেখে মারুফের পড়ালেখার খরচ চালিয়েছেন বাবা। বাবার স্বপ্ন পূরণে মারুফ এবার মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেয়েছে। তবে তার ভর্তি নিয়ে পরিবারের মধ্যে যেন চিন্তার ভাজ পড়েছে। বর্তমানে ৩৩শতাংশ জমি চাষাবাদ এবং অন্যের দোকানে কর্মচারী থেকে চলছে পরিবারের পাঁচ সদস্যের কস্টের সংসার।

মারুফের মেঝো ভাই সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে, মারুফ নিজেই কোচিং চালিয়ে করছেন পড়াশোনা । ছোট ভাই এখনো ঠিকমতো হাটতেই শিখেনি। মারুফের বাবা ২০০৬ সাল থেকে অসুস্থ শরির নিয়েই বাড়ির পাশেই এক বন্ধুর কিটনাশক দোকানে কাজ করে,সেখান থেকে সামান্য পারিশ্রমিক পায়। এটা দিয়ে চলে সংসারের বাজার খরচ। এভাবেই হাজারো কস্ট বুকের ভিতরে জমা রেখে হাসি মুখেই কথা গুলো বলছিলেন এবারের সদ্য মেডিকেল পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার অদম্য মারুফের বাবা মোহাম্মদ ইউসুফ আলী। মারুফ রাণীশংকৈলের মেরিট কেয়ার কিন্ডারগার্টেন স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা শেষে,পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন এবং জিপিএ – ৫ পেয়ে পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়।

এরপর রাণীশংকৈল ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২৩ সালে এইচএসসি পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং এবারো মারুফ জিপিএ -৫ পেয়ে নিজেকে অদম্য মেধাবীর পরিচয় দেন। মারুফের বাবা বলেন, আমি দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন ডাক্টারের চিকিৎসা নিয়ে আসছি। এ থেকেই আমারো স্বপ্ন জাগতো আমার সন্তান কে যদি ডাক্টার বানাতে পারতাম।

বাবার স্বপ্ন পুরনেই মারুক ২০২৪ সালে এমবিবিএস ভর্তি পরিক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। তবে সেই স্বপ্ন পুরুন হয়নি মারুফের পরিক্ষায় ৩ নম্বর কম পাওয়াতে। তবে সেই স্বপ্ন থেমে থাকেনি মারুফের ২৪ সালে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা দিয়ে মারুফ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি বিষয়ে ভর্তি হন। কিন্তু সেখানে কৃষি বিষয়ে তার আগ্রহ কম থাকায় দুই তিন দিন ক্লাস করেই বাড়ি চলে আসেন। এরপর এলাকায় একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করান এবং নিজেকেও ডাক্টারি পড়ার স্বপ্নে জাগ্রত করেন। তবে কোন রকম কোচিং ছাড়াই শুধু একটি কোচিং-এ নিয়মিত দুই মাস পরিক্ষায় অংশ গ্রহণ করেই ২০২৫ সালের এমবিবিএস পরিক্ষায় আর তাকে থামাতে পারেনি আল্লাহ অশেষ রহমতে।

এবারের এমবিবিএস পরিক্ষায় মারুফ মেধা তালিকায় নিজেকে পরিচয় দিয়েছেন ১৪৪৪ নাম্বারে। মারুফের এ সাফল্য দেখে বাবা মা সহ পরিবার ও আত্বীয় স্বজন থেকে এলাকাবাসী সকলেই এখন আনন্দিত। মারুফের ডাক্টারি ভর্তি খবরে এখন তার বাড়িতে প্রতিদিন বিভিন্ন মানুষ দেখতে আসছেন তাকে, নিচ্ছেন খোজ খবর। মারুফের বাবা ইউসুফ আলী আরো বলেন,সেদিন মাঠে কাজ করছিলাম এসময় মারুফের মোবাইল থেকে কল আসে আমার মোবাইলে। আমি ফোন রিসিভ করি তবে মারুফ আমার সাথে কথা বলতে পারেনি। সে আবেগ আপ্লুত হয়ে যায়। আমি বার বার বলি কথা বলো কিন্তু সে বলতে পারেনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে তার বন্ধু ফোন টা ধরে আমাকে বলে আক্কেল মারুফ রংপুর মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে। তারপর ও আমি বলি এ কথাটা আমাকে মারুফ শুধু একবার নিজের মুখে বলুক, তখন মারুফ ফোন ধরে বলে বাবা আমার জন্য দোয়া করো আমি চান্স পেয়েছি। এ কথা শুনে আমি সাথে সাথে মাটিতে সিজদায় পড়ে যায় আল্লাহর কাছে,এবং আমিও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছি।

তবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও সঙ্কা রয়েছে আগামীতে ভর্তি হওয়া এবং পড়াাশুনার খরচ চালানোর বিষয়ে। মারুফের মা মরিয়ম আক্তার ও বাবা ইউসুফ আলী, এ প্রতিনিধিকে বলেন,আমার ছেলে বড় ডাক্টার হয়ে দেশের গরিব মানুষেকে চিকিৎসা সেবা দিবে দেশ কে ভালো কিছু উপহার দিবে।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রকিবুল হাসান বলেন,আমি শুনেছি মারুফ নামে এক শিক্ষার্থী রংপুর মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।