নদী আছে, নেই শুধু পানি: মরা বড়ালের বুক জুড়ে সবুজের সমারোহ
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:০৫:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫ ৯ বার পড়া হয়েছে
রাজশাহী অঞ্চলের নদ-নদীগুলো পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। শুকনো নদীর পলিভরাট তলদেশে এখন চাষ-আবাদ হচ্ছে । রাজশাহীর চারঘাটে পদ্মার শাখা নদী এককালের প্রমত্তা বড়াল এখন নদীর চিহ্ন হারিয়ে পরিণত হয়েছে ফসলের খেতে। এখন বড়ালের বুকে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফসল। অপরিকল্পিত বাঁধনির্মাণ এবং যাতায়াতের জন্য নদীর বুকে একাধিক ব্রিজনির্মাণ করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া দখলদারদের দখলে দু’পার চেপে গেছে। ফলে এক সময়ের খরস্রোত বড়াল নদী আজ শুধুই স্মৃতি।
এক সময় যোগাযোগের সুবিধার কারণে বড়াল নদীর দু’পাওে চারঘাট বাজার, চারঘাট উপজেলা পরিষদ, চারঘাট মডেল থানা, চারঘাট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, চারঘাট এম এহাদী কলেজ, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, আড়ানী বাজার, রুস্তমপুর পশুহাট, পাকা বাজার, জামনগর বাজার, বাঁশ বাড়িয়া বাজার, তমালতলা বাজার, বাগাতিপাড়া থানা, দয়ারামপুর সেনানিবাসসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা গড়ে উঠেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, পদ্মার পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক রাখতে এবং নাব্য ফিরিয়ে আনতে বড়াল নদীকে ঘিরে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে‘নাটোরের নারদ ও মুসাখান (আংশিক) নদী ও রাজশাহীর চারঘাটের রেগুলেটরের ইনটেক চ্যানেল খনন’নামে ১৩ কোটি ৩ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল।
প্রায় ১৯ দশমিক ১০ কিলোমিটার নদীখনন ও প্রবেশ মুখে খনন করতে এই অর্থ ব্যয় হয়। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে চারঘাট বড়াল নদীর ইনটেক চ্যানেল খননকাজ শেষ হয়। ইনটেক চ্যানেল খনন কাজ শেষ হলেও বর্ষায় বড়ালে পানি আসেনি।
এছাড়াও গত বছরের জুলাই মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ড বড়ালের উৎসমুখে ৪৫০ মিটার বড়াল পুনর্খনন কাজে পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে ৫২ লাখ টাকার কাজ করে। সেই কাজে ব্যাপক অনিয়ম হয়। দায় সারা কাজ করার কারণে খনন করা বালু আবার নদীতে চলে গেছে, দাবি স্থানীয়দের।
জানা গেছে, প্রমত্তা পদ্মা নদীর শাখা নদী হিসাবে বড়াল নদীর উৎপত্তি হয়ে রাজশাহীর চারঘাট, বাঘা; নাটোরের বাগাতিপাড়া, বড়াইগ্রাম; পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে বাঘা বাড়ি হয়ে হুড়া সাগরের বুকে মিশে যমুনায় পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শিক্ষক শরিফুল ইসলাম জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৯৮১-৮২ অর্থবছওে নদীর তীরবর্তী উপজেলাগুলো বন্যামুক্ত করার জন্য উৎসমুখ চারঘাটে বাঁধনির্মাণের মাধ্যমে পানির স্বাভাবিক গতি প্রবাহ বন্ধ করে দেয়। বিভিন্ন স্থানে সুইসগেট ও বাঁধ নির্মাণের ফলে ক্রমান্বয়ে বড়াল নদী শুকিয়ে মরাখালে পরিণত হয়েছে। বর্ষায় নদীতে কিছু পানি জমলেও শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই শুকিয়ে মরা নদীতে পরিণত হয়।
এবারও তাই হয়েছে। এলাকার কৃষকরা নদীর বুক জুড়ে আবাদ করেন। শুষ্ক মৌসুমে পরিণত হয় গবাদি পশুর চারণক্ষেত্র। এক সময় যে বড়ালের পানিতে নদী তীরবর্তী মানুষ তাদের জমিতে ফসল ফলাত, এখন সে নদীর বুকে অগভীর নলকূপ বসিয়ে হয় ধানচাষ। নদী আছে, নৌকা আছে, নেই শুধু পানি।
স্থানীয় স্কুল শিক্ষক জাকারিয়া হোসেন জানান, নদীতে পানি না থাকায় এ নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্রগুলো তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। সেচসহ প্রতিদিনের প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করায় পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। এখনই সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করে নদীটি পুনঃখনন করা না হলে বড়াল নদীই একদিন হারিয়ে যাবে মানচিত্র থেকে।
স্থানীয় জেলেরা জানান, এক সময় এই বড়াল নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা হলেও এখন আর নদীতে মাছ শিকার করা হয়না। পানি না থাকায় জেলেরা আজ অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে।
পদ্মার মুখে পলি মাটি জমে পানির প্রবেশদ্বার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বড়াল আজ নিজের অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। বড়াল পুনঃখনন কওে অবাধ পানি প্রবাহের ব্যবস্থার দাবি জানান স্থানীয় জেলেরা। বড়াল নদীও এখন শুকিয়ে কাঠ। শুকনো বড়ালের বিস্তীর্ণ এলাকা এখন ফসলের মাঠ। দেখে উপায় নেই, এটি বড়াল নদী।