ঢাকা ০৯:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২০২৪, কলঙ্কময় ‘ডামি’ নির্বাচন

বিশেষ প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৪৩:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫ ৪৬ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত দিন ৭ জানুয়ারি। ২০২৪ সালের এইদিনে পতিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সারাবিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন এক অভিনব প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে। ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে হয় ডামি নির্বাচন। ডামি নির্বাচন করার পর টানা চতুর্থবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা শপথ গ্রহণ করেন এবং মন্ত্রীপরিষদ গঠন করেন।

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচনে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং সুশাসনকে তুচ্ছ, তাচ্ছিল্য এবং উপহাসের পাত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। কিন্তু শেখ হাসিনা জানতো না মাত্র ৭ মাসের মাথায় করুণ পতন হবে। নিজেসহ দলের সকল নেতা-কর্মী পলাতক। নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য তিনি পালিয়ে যান ভারতে। সেখানে সাময়িক আশ্রয় নিয়ে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে অজ্ঞাত স্থানে দিনাতিপাত করছেন। বিশ্বের তাবৎ স্বৈরাচারের শেষ জীবন এবং পতনের মতো তারও একটি পতন হয়েছে।

এর আগে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৪ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। একতরফা সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একাই ২৪৩টি আসন পায়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৮টি আসন পেয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কিছুদিন আগের কথা, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর। সারা দেশের নজর তখন রাজধানীর পল্টন-মতিঝিল এলাকায়। কারণ, সেদিন বিএনপি-জামায়াত ও আওয়ামী লীগ প্রায় একই স্থানে সমাবেশের ডাক দিয়েছিল। ত্রিমুখী সেই কর্মসূচি ঘিরে সর্বমহলে নানা আলোচনা-সমালোচনা। বেশিরভাগ মানুষের চিন্তা-চেতনা এমন ছিল, আজ কিছু একটা হতে চলেছে।

অবশেষে সেই শঙ্কাই সত্যি হয়। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, প্রাণহানি ও হরতাল ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হয় ২৮ অক্টোবর। সংঘর্ষের শুরুটা হয় মূলত দুপুরের দিকে। মগবাজার থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পিকআপে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে নিজেদের সমাবেশস্থলের দিকে যাচ্ছিল। কাকরাইল মোড়ে পৌঁছানোর আগে সেখানে অবস্থানরত বিএনপির নেতাকর্মীদের কারণে পিকআপটি গুলিস্তানের দিকে যেতে পারেনি। এ সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটে।

কাকরাইল মোড়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের কয়েক দফায় সংঘর্ষ হয়। কাকরাইলে পুলিশবক্সে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরপর পুলিশ ব্যাপকভাবে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এ সংঘর্ষে যুক্ত হয় বিজিবি, র‍্যাবও। এরপর থেকে টানা সংঘর্ষ চলতে থাকে। এ সংঘর্ষে একজন করে পুলিশ সদস্য ও যুবদল নেতা নিহত হন।

২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছিলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী (২০২৪ সালের) ৭ জানুয়ারি। তবে সে সময়কার সংঘাতময় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে সিইসি বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক মতানৈক্যের সমাধান প্রয়োজন। আমি সব রাজনৈতিক দলকে অনুরোধ করব, সংঘাত পরিহার করে সমাধান অন্বেষণ করুন। সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা-সমাধান অসাধ্য নয়।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কী হতে যাচ্ছে, মূলত তা নির্ধারণ হয়ে যায় ২৮ অক্টোবরই। কারণ, বিএনপি সেদিনই রাজনীতির মাঠ থেকে আউট হয়ে যায়।

সেই ‘ডামি’ নির্বাচনের এক বছর হলো আজ। যার মাধ্যমে টানা চারবারের মতো ক্ষমতায় বসেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সেই সরকারের সাত মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানে পতন হয় স্বৈরাচারী সরকারের।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

২০২৪, কলঙ্কময় ‘ডামি’ নির্বাচন

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৪৩:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫

বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত দিন ৭ জানুয়ারি। ২০২৪ সালের এইদিনে পতিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সারাবিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন এক অভিনব প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে। ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে হয় ডামি নির্বাচন। ডামি নির্বাচন করার পর টানা চতুর্থবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা শপথ গ্রহণ করেন এবং মন্ত্রীপরিষদ গঠন করেন।

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচনে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং সুশাসনকে তুচ্ছ, তাচ্ছিল্য এবং উপহাসের পাত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। কিন্তু শেখ হাসিনা জানতো না মাত্র ৭ মাসের মাথায় করুণ পতন হবে। নিজেসহ দলের সকল নেতা-কর্মী পলাতক। নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য তিনি পালিয়ে যান ভারতে। সেখানে সাময়িক আশ্রয় নিয়ে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে অজ্ঞাত স্থানে দিনাতিপাত করছেন। বিশ্বের তাবৎ স্বৈরাচারের শেষ জীবন এবং পতনের মতো তারও একটি পতন হয়েছে।

এর আগে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৪ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। একতরফা সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একাই ২৪৩টি আসন পায়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৮টি আসন পেয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কিছুদিন আগের কথা, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর। সারা দেশের নজর তখন রাজধানীর পল্টন-মতিঝিল এলাকায়। কারণ, সেদিন বিএনপি-জামায়াত ও আওয়ামী লীগ প্রায় একই স্থানে সমাবেশের ডাক দিয়েছিল। ত্রিমুখী সেই কর্মসূচি ঘিরে সর্বমহলে নানা আলোচনা-সমালোচনা। বেশিরভাগ মানুষের চিন্তা-চেতনা এমন ছিল, আজ কিছু একটা হতে চলেছে।

অবশেষে সেই শঙ্কাই সত্যি হয়। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, প্রাণহানি ও হরতাল ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হয় ২৮ অক্টোবর। সংঘর্ষের শুরুটা হয় মূলত দুপুরের দিকে। মগবাজার থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পিকআপে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে নিজেদের সমাবেশস্থলের দিকে যাচ্ছিল। কাকরাইল মোড়ে পৌঁছানোর আগে সেখানে অবস্থানরত বিএনপির নেতাকর্মীদের কারণে পিকআপটি গুলিস্তানের দিকে যেতে পারেনি। এ সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটে।

কাকরাইল মোড়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের কয়েক দফায় সংঘর্ষ হয়। কাকরাইলে পুলিশবক্সে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরপর পুলিশ ব্যাপকভাবে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এ সংঘর্ষে যুক্ত হয় বিজিবি, র‍্যাবও। এরপর থেকে টানা সংঘর্ষ চলতে থাকে। এ সংঘর্ষে একজন করে পুলিশ সদস্য ও যুবদল নেতা নিহত হন।

২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছিলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী (২০২৪ সালের) ৭ জানুয়ারি। তবে সে সময়কার সংঘাতময় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে সিইসি বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক মতানৈক্যের সমাধান প্রয়োজন। আমি সব রাজনৈতিক দলকে অনুরোধ করব, সংঘাত পরিহার করে সমাধান অন্বেষণ করুন। সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা-সমাধান অসাধ্য নয়।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কী হতে যাচ্ছে, মূলত তা নির্ধারণ হয়ে যায় ২৮ অক্টোবরই। কারণ, বিএনপি সেদিনই রাজনীতির মাঠ থেকে আউট হয়ে যায়।

সেই ‘ডামি’ নির্বাচনের এক বছর হলো আজ। যার মাধ্যমে টানা চারবারের মতো ক্ষমতায় বসেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সেই সরকারের সাত মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানে পতন হয় স্বৈরাচারী সরকারের।