অবৈধ করাতকলে গিলছে বনের গাছ, হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১০:৪৮:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০৫ বার পড়া হয়েছে
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সরকারি নিয়মকে তোয়াক্কা না করে গড়ে উঠেছে নামে-বেনামে অবৈধ করাতকল বা স’মিল। এসব অবৈধ করাতকলে গিলে খাচ্ছে সবুজ বন হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য। পরিবেশ ও বন বিভাগের ছাড়পত্র কিংবা লাইসেন্সও নেই বেশিরভাগ করাতকলের।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা বন বিভাগের তথ্যমতে, ২৫টি করাতকল রয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়।এর মধ্যে ৮টির লাইসেন্স থাকলেও ১৭টির কোনো লাইসেন নেই।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রশাসন ও বনবিভাগের কর্মকর্তাদের ‘মাসোহারা দিয়ে এসব করাতকল পরিচালনা করা হচ্ছে।এবিষয়ে বনবিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলার পর, যত্রতত্র অবৈধ করাতকল স্থাপনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। অন্যদিকে, করাতকল বিধিমালা-২০১২ তে বলা আছে, কোনো সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল,স্বাস্থ্যকেন্দ্র,ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান,বিনোদন পার্ক,উদ্যান ও জনস্বাস্থ্য বা পরিবেশের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে এমন স্থান থেকে কমপক্ষে ২০০ মিটার এবং সরকারি বনভূমির সীমানা থেকে কমপক্ষে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন করা যাবে না।এই নির্দেশনা মানছেনা না নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বেশ কয়েকটি স’মিল।
এদিকে, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন ধরে অনুমোদন ছাড়াই চলছে অনেক করাতকল। এসব করাতকল চত্বরে গেলে দেখা যায়, বিভিন্ন প্রজাতির গাছ মজুত করে রাখা হয়েছে। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এসব করাতকলে বিরামহীন চলে কাঠ কাটার কাজ।
জানা গেছে,অবৈধ করাতকলগুলোতে সরকার নির্ধারিত কোনো আইন ও নীতিমালা মানার কোনো বালাই নেই। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়ে থাকে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার লাইসেন্স করতে বলা হলেও প্রশাসনের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলছে অবৈধ করাত কল।সীমান্তঘেঁষা পাহাড় থেকে শুরু করে সমতল ভূমিতে লাগানো সব ধরনের গাছ কেটে সাবাড় করছে করাতকলের মালিক ও অসাধু কাঠ ব্যবসায়ীরা। এতে করে হুমকির মুখে পড়ছে এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।কমছে অক্সিজেনের ভারসাম্য।এসব কারণে দ্রুত এ সকল অবৈধ করাতকল বন্ধের দাবি জানিয়েছে স্থানীয় সচেতন মহল।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় নজরধারীর অভাবে করাতকল স্থাপন করে কাঠের ব্যবসা করতেছে। সীমান্তবর্তী ঘুমধুমে ইউনিয়নে আজুখাইয়া ৭নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা ফরিদুল আলমের স মিল,বড়ুয়া পাড়া ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের স মিল, কচুবুনিয়া ৬নং ওয়ার্ড সুব্রত বড়ুয়ার স মিল,কচু বুনিয়া ৬নং ওয়ার্ড সিরাজুল হকের স মিল, আজুখাইয়া ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি সদস্য আবুল কালামের স মিল, বড়ইতলী লাকড়ি ছড়া ৯নং ওয়ার্ড সনজিত চাকমার স মিল,সোনাইছড়ি এ্যানি চেয়ারম্যান এর স মিল,বদ্দর ছড়া দীপক বড়ুয়ার স’মিল,বাইশারী ফারুক চেয়ারম্যান এর স মিল,নাসির কোম্পানির স মিল, ক্যাংগারবিল ফিরোজ আহমেদ ভুট্টো চেয়ারম্যান এর স মিল, আলিক্ষ্যং কবির ডাক্তারের স মিল, ধুম চাই মার্মার স মিল, আবু তাহের এর স মিল, মংলা ওয়াই মার্মার স মিল বা করাতকলে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে পাহাড়ী গাছ উজাড় হচ্ছে বন।
নাইক্ষ্যংছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক সরকার বলেন, বন আইন অনুযায়ী কোনো করাতকল মালিক লাইসেন্স না নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন না। লাইসেন্স নেওয়ার পর প্রতিবছর নবায়ন করতে হবে। করাতকল স্থাপনের জন্য বন বিভাগের লাইসেন্স পাওয়ার পর পরিবেশ অধিদপ্তর থেকেও ছাড়পত্র নিতে হয়।যারা অবৈধ ভাবে করাতকল পরিচালনা করে আসছে তাদের বিষয়টি কতৃপক্ষ কে অবহিত করা হয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মানুষের জীবন-জীবিকা ও পরিবেশ এবং জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বন,বন্যপ্রাণী ও বনভূমি সংরক্ষণ অপরিহার্য।অবৈধ করাতকলের মালিকদের দ্রুত লাইসেন্স করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লাইসেন্স না করলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন-নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ইতি মধ্যে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া যেই সব করাতকল রয়েছে সেইগুলো বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।