সড়কে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:৪৪:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ৬১ বার পড়া হয়েছে
সড়কে প্রতিদিনই সড়কে ঝরছে তাজা প্রাণ। ফলে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর সংখ্যা। এদিকে, দুর্ঘটনায় বছরে কতো মান ষের প্রাণহানি হচ্ছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর হাতে সড়কে প্রাণহানির যে তথ্য রয়েছে তাতেও বড় ধরনের গড়মিল। এমনকি সড়কে হতাহতের ঘটনায় মামলা, তাতে কত আসামি দÐিত, সেই হিসাবও নেই। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলেও বিচার হয় না। সড়ক দুর্ঘটনার মামলার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের আইনের আশ্রয় নেয়ার প্রবণতা কম। ঝামেলা এড়াতে ৮০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা মামলা করেন না।
ঢাক-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় বাসচাপায় থেমে থাকা তিনটি যানবাহন দুমড়েমুচড়ে গেছে। এ সময় ওই যানবাহনগুলোর পাঁচ যাত্রী নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন তিনজন। শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা দেওয়ান আজাদ বলেন, বেলা ১১টার দিকে সেতুর টোল পরিশোধের জন্য দাঁড়িয়ে ছিল একটি যাত্রীবাহী মাইক্রোবাস, একটি প্রাইভেট কার ও একটি মোটরসাইকেল। তখন ঢাকা-কুয়াকাটা রুটের ব্যাপারী পরিবহনের একটি বাস থেমে থাকা তিনটি যানবাহনকে চাপা দেয়। গাড়িগুলো দুমড়েমুচড়ে যায়। খবর পেয়ে তাঁরা ঘটনাস্থলে যান। আহত ব্যক্তিদের ঢাকার মিডফোর্ট হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে ওই হাসপাতাল সূত্রে জানতে পারি পাঁচজন মারা গেছেন।
নিহতরা হলো- মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার নন্দনকোনা গ্রামের বাসিন্দা ইকবাল হোসেনের স্ত্রী আমেনা আক্তার (৪৫), তাঁর মেয়ে ইসরাত জাহান (২৬) ও রিহা মনি (১১), রাজধানীর কদমতলীর জুরাইন এলাকার বাসিন্দা মো. সোহাগের ছেলে আইয়াজ হোসেন (২) ও রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকার বাসিন্দা সুমন মিয়ার ছেলে মো. আবদুল্লাহ (৭)।
অপরদিকে, পাবনার সাঁথিয়ায় ট্রাকের ধাক্কায় দাড়িয়ে থাকা করিমনের ৩ যাত্রী নিহত হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন আরও ৪ জন। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল ভোর রাত ৪টার দিকে উপজেলার মাধপুর-বেড়া স্থানীয় মহাসড়কের রাঙ্গামাটিয়া নামক স্থানে রিপনের বাড়ির নিকট। এ ঘটনায় সাঁথিয়া থানাপুলিশ লাশ উদ্ধার করে এবং ট্রাকটি ফেলে রেখে চালক পালিয়ে যায় বলে জানান পুলিশ। নিহতরা হলো-রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের আলতাব হোসেনর ছেলে খোকন-(৩৫), ছোন্দহ গ্রামের সাঈদ মোল্লার ছেলে রাসেল (৩০), নজিমুদ্দিনের ছেলে ধনি প্রামানিক।
জানা গেছে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণে দেখা যায় মোটরবাইক, অটোরিকশা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস এবং অ্যাম্বুলেন্স আরোহী হিসেবে একসাথে পুরো পরিবার বা এক পরিবারের অধিক সদস্য নিহতের প্রবণতা বাড়ছে। গত ৫ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় শতাধিক পরিবার পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ৫৫ ব্যক্তির প্রাণহানি হচ্ছে। প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে ১২ হাজার মানুষ নিহত ও ৩৫ হাজার আহত হন। সড়ক পরিবহন আইন আছে এবং প্রচারণাও যথেষ্ট রয়েছে। কিন্তু কেন সড়ক দুর্ঘটনা ও সড়কে প্রাণহাণি কমছে না। সড়ক দুর্ঘটনা বিশেষ করে মোটর সাইকেলের দুর্ঘটনা অন্যতম। এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে, সারা দেশে গত নভেম্বর মাসে ৪৫৮টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৪৫১ জন প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে ৪২০ জন। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) উপপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ) সুবীর কুমার সাহা স্বাক্ষরিত সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সারাদেশের ৬৪টি সার্কেল অফিসের মাধ্যমে পুলিশ বিভাগ, জেলা প্রশাসন, জাতীয় ও স্থানীয় পত্র–পত্রিকা এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহের পর যাচাই–বাছাই করে দৈনিক ও মাসিক সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে বিআরটিএর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে জনসম্মুখে প্রকাশ করা হচ্ছে। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে ৪৫৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৫১ জন নিহত ও ৪২০ জন আহত হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ঢাকা বিভাগে ১১৯টি দুর্ঘটনায় ১২৫ জন নিহত ও ৮৮ জন আহত হয়েছে। আর চট্টগ্রাম বিভাগে ৭৯টি দুর্ঘটনায় ৭২ জন নিহত ও ১০৫ জন আহত হয়েছে। এছাড়া নভেম্বর মাসে রাজশাহী বিভাগে ৫৮টি দুর্ঘটনায় ৬১ জন নিহত ও ২৮ জন আহত; খুলনা বিভাগে ৪১টি দুর্ঘটনায় ৮৪ জন নিহত ও ২৬ জন আহত; বরিশাল বিভাগে ৩০টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও ৪২ জন আহত; সিলেট বিভাগে ৩২টি দুর্ঘটনায় ২৯ জন নিহত ও ৩২ জন আহত; রংপুর বিভাগে ৬৪টি দুর্ঘটনায় ৬২ জন নিহত ও ৪২ জন আহত এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৫টি দুর্ঘটনায় ৩২ জন নিহত ও ৫৭ জন আহত হয়েছে।
সম্প্রতি, তথ্য স¤প্রচার ও টেলিযোগাযোগ উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, সড়কে বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত সমাজের উচ্চপর্যায়ের বিচার হয় না। বুয়েটের একজন মারা গেলো। একটা ধারণা যে সমাজের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে যারা আছেন তাদের বিচার হয় না, জবাবদিহিতা হয় না।
বিআরটিএর চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীন বলেন, বিআরটিএ ও পুলিশ সড়কে শৃঙ্খলা আনতে হিমশিম খাচ্ছে। কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। ফুটপাথ দখলমুক্ত করার পরই আবার দখল হয়ে যাচ্ছে। সিটি করপোরেশন বলেছে তারা সকালে দখল মুক্ত করলে আবার বিকালে আবার বেদখল হয়। তাহলে এমন দখল মুক্ত করে কিছু হচ্ছে না। এটা যেন সাস্টেইন করে সেটা করতে হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নির্ভুল পরিসংখ্যান তৈরি করা উচিত। যাতে দুর্ঘটনার ধরনও জানা যায়। কারণ ও ধরন নির্ভুলভাবে জানতে পারলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব। তথ্যই বলে দিচ্ছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কতটা বেড়েছে। নির্ভুল পরিসংখ্যান থাকলে দুর্ঘটনা রোধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব।