আজ বিজয়ের দিন
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৩৭:২১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ৬৪ বার পড়া হয়েছে
আজ ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী বীর শহীদদের মহান বিজয় দিবসে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে জাতি। এ জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে সাভারের অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ। মহান বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে সবুজে ঘেরা ১০৮ হেক্টর জমির ওপর নির্মিত স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা নিবেদন ও ভালোবাসা জানাতে স্মৃতিসৌধে মানুষের ঢল নামবে। সকালে রাষ্ট্রপতি ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শুরু হবে শ্রদ্ধা নিবেদনের আনুষ্ঠানিকতা। এরপর সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হবে সৌধের ফটক।
বিজয় দিবস ঘিরে পুরো সৌধ প্রাঙ্গণকে দেয়া হয়েছে এক নতুন রূপ। উদযাপন নির্বিঘœ করতে ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। স্মৃতিসৌধের নানা স্থানে নতুন করে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।
সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের দায়িত্বে থাকা সাভার গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও মহান বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে জাতির বীর শহীদ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টাসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আসবেন। তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সৌধে প্রবেশের ফটকগুলো খুলে দিলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লাখো মানুষের ঢল নামবে সৌধ প্রাঙ্গণে। তাদের হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে বেদি।
তিনি বলেন, দিবসটি যাথযথভাবে উদযাপনের জন্য বরাবরের মতো এবারও পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগের কর্মীদের টানা ১৫ দিনের পরিশ্রমে সৌধপ্রাঙ্গণ পেয়েছে নতুন রূপ। ধোয়া-মোছা শেষে সিঁড়িসহ অন্যসব স্থাপনায় পড়েছে রং-তুলির আঁচড়। বাহারি ফুল গাছে ঢেকে দেয়া হয়েছে বেদির সবুজ চত্বর।
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি একেএম আওলাদ হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।সৌধপ্রাঙ্গণসহ আশপাশের এলাকায় বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। পুরো সাভার এলাকায় বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। দিবসটি উপলক্ষে তিন হাজারের বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পুরো সাভারজুড়ে মোতায়েন থাকবে। নিরাপত্তা চৌকির পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিও থাকবে বলে জানান তিনি।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি পরাধীনতার শেকল ভেঙ্গে প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করে। ২৪ বছরের নাগপাশ ছিন্ন করে জাতির ভাগ্যাকাশে দেখা দেয় এক নতুন সূর্যোদয়। প্রভাত সূর্যের রক্তাভা ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। মুক্তি পাগল বাংলার দামাল ছেলেরা স্বাধীনতার রক্ত সূর্যকে ছিনিয়ে আনবে বলে একদিন অস্ত্র কাঁধে তুলে নেয়। ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার সবাই শরিক হয়ে থাকে এ লড়াইয়ে। যতই দিন অতিবাহিত হতে থাকে, আরও শাণিত হয় প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার অস্ত্র। লক্ষ্য স্থির রেখে শত্রæ হননে দৃঢ়তায় এগিয়ে যায় বীর বাঙালি। ইতোমধ্যেই বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রতিবেশী ভারতও জড়িয়ে পড়ে বাঙালির ভাগ্যযুদ্ধে। ডিসেম্বর শেষ পর্যায়ে এসে চূড়ান্ত রূপ নেয় এই যুদ্ধের।
অবশেষে নয় মাসের দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটিয়ে বাঙালি জাতির জীবনে এলো নতুন প্রভাত। ১৬ ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সূচিত হলো মুক্তিযুদ্ধের অনিবার্য বিজয়। এর মধ্য দিয়ে এলো হাজার বছরের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। বাঙালি জাতি এদিন অর্জন করে তার ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের অধিকার। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীনতা ধরা দেয় বাঙালির জীবনে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবন ও এর আশপাশ এলাকায় যানবাহন চলাচলে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করতে নির্দেশনা প্রদান করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) । গতকাল রোববার ডিএমপি কমিশনার শেখ মো: সাজ্জাত আলী, এনডিসি স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, মাননীয় প্রধান বিচারপতি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টাগণ, বিদেশী রাষ্ট্রের ক‚টনীতিকগণ এবং সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বঙ্গভবনে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এ অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের যানবাহন সুষ্ঠুভাবে চলাচলের জন্য বঙ্গভবনের আশপাশ এলাকায় চলাচলরত গাড়িচালক/ব্যবহারকারীদের ১৬ ডিসেম্বর দুপুর ১২টা থেকে বঙ্গভবনের অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত নি¤েœাক্ত গমনাগমনের পথ অনুসরণের জন্য অনুরোধ করা হলো।
বিকল্প সড়ক: আহাদ বক্স (গুলিস্তান) হতে ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। আলিকো গ্যাপ হতে দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা ও রাজউক ক্রসিং পর্যন্ত সকল প্রকার গাড়ি প্রবেশ বন্ধ থাকবে। পার্ক রোডের উত্তরপ্রান্ত হতে ইত্তেফাক মোড় অভিমুখী কোনো প্রকার যানবাহন চলাচল করবে না। শাপলা চত্বর ও দৈনিক বাংলা হতে রাজউক-গুলিস্তানগামী সকল বাস দৈনিক বাংলা, ইউবিএল ক্রসিং, প্রেসক্লাব হয়ে চলাচল (আসা-যাওয়া) করবে কিংবা অন্য কোনো সুবিধাজনক বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের জন্য অনুরোধ করা হলো। দৈনিক বাংলা হতে রাজউক অভিমুখী কোনো বাণিজ্যিক গাড়ি চলাচল করবে না।