রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
দেড় কোটি মানুষের জন্য বার্ন ইউনিটে মাত্র ১৫টি বেড
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:১৬:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ৯৫ বার পড়া হয়েছে
শীতের শুরুতেই আগুন পোহাতে গিয়ে গত ৩ দিনে ৫জন নারী দগ্ধ হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি রয়েছে। এদের মধ্যে এক বৃদ্ধা ও গৃহবধুর অবস্থা আশংকাজনক। তাদের ঢাকা বার্ন হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দিয়েছে চিকিৎসকরা।
এদিকে রংপুর বিভাগের দেড় কোটি জনসংখ্যার ৮ জেলার মধ্যে এক মাত্র বিষেশায়িত চিকিৎসা কেন্দ্র রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের শয্যা সংখ্যা মাত্র ১৫টি এর মদ্যে ১২টি সচল। চিকিৎসক মাত্র দুজন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরজ্ঞাম আর ঔষধের তীব্র সংকটের কারনে আগুনে দগ্ধ রোগীরা চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না।
এবার পৌষ মাস শুরু হবার আগেই রংপুর বিভাগে শীতের তীব্রতা মারাত্মক বৃদ্ধি পেয়েছে সেই সাথে প্রচন্ড ঘন কুয়াশা জন জীবন অচল হবার উপক্রম হয়েছে। শহরের চাইতে গ্রামাঞ্চলে শীতের তীব্রতা অনেক বেশী হওয়ায় শীতের কবল থেকে রক্ষা পেতে খড় কুটো জ্বালিয়ে এবং জলন্ত চুলায় আগুন পোহাতে গিয়ে অসাবধানতা বশত পড়নের কাপড়ে আগুন ধরে যাওয়ার ঘটনায় গত ৩ দিনে ৫ জন নারী দগ্ধ হয়ে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে রংপুরের পীরগজ্ঞ উপজেলার ওসমানপুর গ্রামের জফুনা বেগম (৮৫) এবং দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার আলুবাড়ি গ্রামের গৃহবধু পপি আক্তারের অবস্থা আশংকা জনক বলে বার্ন ইউনিটের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন। তাদের দুজনের শরীরের শ্বাস নালী সহ ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে। দুজনেরই অবস্থা আশংকা জনক হওয়ায় তাদের জরুরী ভিত্তিতে ঢাকা বার্ন হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা নেবার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে রোগীর স্বজনরা জানিয়েছেন।
বৃদ্ধা জফুনা বেগমের বড় মেয়ে আফরোজা বেগম জানান, তার মা শীতের কবল থেকে রক্ষা পেতে অন্যান্যদের সাথে খড়কুটো জ্বালানো স্থানে আগুন পোহানোর সময় অসাবধানতা বশত তার শাড়ির পেটিকোটের নীচে আগুন ধরে যায়। মহুর্তের মধ্যে সারা শরীরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে শরীরে পা থেকে মুখ সহ শরীরের বেশীর ভাগ জায়গা মারাত্মক দগ্ধ হয়। আশংকা জনক অবস্থায় প্রথমে তাকে পীরগজ্ঞ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ভর্তি করা হলে চিকিৎসকরা তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। ডাক্তাররা বলেছে তার মায়ের শরীরের শ্বাস নালীসহ ৭০ ভাগ অংশ দগ্ধ হয়েছে। এ অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় বার্ন হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেছে কিন্তু ঢাকায় নিয়ে যাওয়া সেখানে চিকিৎসা ঔষধ কেনার মতো তাদের কোন আর্তিক সঙ্গতি নেই।
একই কথা বলেন, দিনাজপুরের বিরল উপজেলার আলুবাড়ি গ্রামের গৃহবধু পপি আকতারের ভাই শাহ আলম। তিনি জানান, তার বোনের ৪০ দিন বয়েসী একটি সন্তান রয়েছে সে বাড়ির চুলায় জলন্ত আগুনে তার সন্তানকে আগুনের তাপ দেবার জন্য যায় কিন্তু অসাবধানতা বশত তার পড়নের কাপড়ে আগুন ধরে যায়। তার শ্বাস নারীসহ ৭০ ভাগের বেশী অংশ পুড়ে গেছে। ডাক্তাররা উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেছে কিন্তু তাদের সেই আর্থিক সঙ্গতি নেই।
এ ব্যাপারে কর্তব্যরত চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটটি মাত্র ১৫ বেডের এর মধ্যে ৩টি বিকল। মাত্র ১২ বেড দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে হয়। যার জন্য সার্জিকাল ওয়ার্ডের বারান্দায় বার্ন ইউনিটের রোগীদের অস্থায়ী ভাবে রাখা হয়। এখানে মাত্র ২ জন চিকিৎসক তার উপর প্রয়োজনীয় ঔষধের সংকট আছে। ইচ্ছে থাকলে বার্ন ইউনিটের দগ্ধ রোগীদের ভালো চিকিৎসা দেবার সুযোগ অনেকটাই কম।
এ ব্যাপারে বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা, পলাশ জানান, দুজন রোগীর ৭০ শতাংশ দগ্ধ হয়েচে। তাদের শ্বাস নালী পুড়ে গেছে সে কারনে তাদের ঢাকার বার্ন ইউনিটে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, প্রতিবছর শীত কালে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে শীতের কবল থেকে রক্ষা পেতে খড়কুটো জ্বালিয়ে বা জলন্ত চুলায় আগুন পোহানোর সময় অসাবধানতা বশত পড়নের কাপড়ে আগুন ধরে দগ্ধ হবার ঘটনা ঘটছে। এ থেকে রক্ষা পাবার জন্য কোন অবস্থাতেই আগুন পোহানো বন্ধ করার আহবান জানান সেই সাথে সাবধানতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেন।
এদিকে, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে গত ৫ বছরে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে ৭শর বেশী নারী ও বৃদ্ধা ও শিশু দগ্ধ হয়ে মৃত্যু করান করেছে। গুরুতর আহত হয়েছে প্রায় দেড় হাজারের বেশী মানুষ।