রংপুর সিটি করপোরেশন
পরিচ্ছন্নতা কর্মী নেই, মাসে বেতন বাবদ ৪১ লাখ লুটপাট
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:১৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪৩ বার পড়া হয়েছে
রংপুর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকা থেকে বর্জ্য অপসারনের নামে ব্যাপক অনিয়ম আর লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। কাগজ কলমে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সংখ্যা ৮০৭ জন দেখিয়ে প্রতিমাসে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করপোশেনের কজ্ঞারভেন্সি শাখার বিরুদ্ধে। কারা পরিচ্ছন্নতা কর্মী তাদের তালিকা নেই , বেতন দেয়া দেখানো হয় নগদ অর্থে। এভাবেই প্রতিমাসে শুধু বেতন বাবদ ৪১ লাখ টাকারও বেশী ব্যায় দেখিয়ে লুটপাটের মহোৎসব চলছে বলে অভিযোগ। সেই সাথে যান বাহনের জ্বালানী সহ সব মিলিয়ে কোটি টাকা ব্যায় দেখিয়ে লুটপাটের মহোৎসব চলছে ।
তথ্য অধিকার আইনে রংপুর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য অপসারনে পরিচ্ছন্নতা কর্মী মাসিক বেতন সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে দীর্ঘ দিন পর করপোরেশনের সরবরাহ করা তথ্য গুলোর সরেজমিন অনুসন্ধান করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
রংপুর সিটি করপোশেন সূত্রে জানা গেছে, করপোরেশন এলাকার প্রধান সড়ক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার জন্য ৮শ ৭ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী কাজ করে বলে জানানো হয়েছে। এদের বেতন বাবদ প্রতিমাসে ব্যায় দেখানো হয় ৪১ লাখ ১৯ হাজার ২শ ৮৮ টাকা। পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কাজের তদারকী করার জন্য রয়েছে ৭১ কর্মকর্তা। এদের মাসিক বেতন বাবদ ব্যায় দেখানো হয় প্রায় ১০ লাখ টাকারও বেশী। এই শাখার প্রধান হচ্ছেন মিজানুর রহমান তার পদবীসহ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা। তার মাসিক বেতন ৪০ হাজার টাকা আর তদারককারী কর্মকর্তা আছেন ৭১ জন।
এ ছাড়াও অফিস সহায়ক, টেলিফোন অপারেটর কজ্ঞারভেন্সি ইন্সপেক্টর সহ বিভিন্ন পদ মর্যাদার কর্মকর্তা আছেন আরও ২০ জনেরও বেশী।
৭১ জন সুপারভাইজার বা তদারককারী কর্মকর্তাসহ অন্যান্য পদবীর কর্মকর্তাদের ২/৪ জন ছাড়া বেশীর ভাগই দৈনিক মজুরী ভিত্তিতে বেতন পান।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বেশীর ভাগ কর্মকর্তার মাসিক বেতন ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে আবার কোন কোন কর্মকর্তার বেতন ২৭ থেকে ৩৩ হাজার টাকা। একরামুল হক নামে একজন সুপারভাইজারের বেতন ২৭ হাজার ৫০২ টাকা , এম এ মজিদ নামে সুপারভাইজারের মাসিক বেতন ২৩ হাজার ৩শ টাকা, আখিরুজ্জামানের বেতস ২৮ হাজার ৫৩০ টাকা, মোশারফ হোসেনের বেতন ২৭ হাজার ৯৪০ টাকা।
এছাড়াও বর্জ্য ব্যাবস্থাপনা কর্মকর্তা মাসুদ হাসান সরকারের বেতন ৩৩ হাজার ৩৪৪ টাকা, সুপারভাইজার জাহাঙ্গীরের বেতন ২৮ হাজার ৮১২ টাকা , আবুল কাশেমের বেতন ৩১ হাজার ৩১৪টাকা। বাকীদের বেতন সর্বনিম্ন ১২ সুমন আহাম্মেদের ৯ হাজার ৩শ টাকা, আমিনুল ইসলামের ১০ হাজার ৮শ টাকা। সিটি করপোরেশনের সরবরাহ করা বেতনের তথ্যে বলা হয়েছে পরিচ্ছন্নতা কর্মী ৮০৭ জনের বেতন বাবদ ব্যায় হয় ৪১ লাখ ১৯ হাজার ২শ ৮৮ টাকা। এদের সকলের বেতন দেয়া হয় ক্যাশ টাকায়। আর মাষ্টার রোল ও স্থায়ী কর্মকর্তাদের বেতন দেয়া হয় ব্যাংকের মাধ্যমে।
তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সংখ্যা ৮০৭ জন দেখানো হলেও বাস্তবে অর্ধেকেরও কম পরিচ্ছন্নাতাকর্মী প্রতিদিন কাজ করে। একইভাবে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের তদারকি করার জন্য ৭১ জন সুপার ভাইজারসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশী কোন কাজ করেন না। তাদের করপোরেশনে অফিস করা কেউ দেখেনা এমনকি অনেক কর্মকর্তাকে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা কর্মচারীরাই চেনেনা।
ফলে নগরীর বর্জ্য পরিস্কার করার নামে প্রতি মাসে গড়ে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা বর্জ্য শাখার প্রধান মিজানুর রহমান মিজুর নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট চক্র প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়াও বর্জ্য অপসারনের নামে সিটি করপোরেশনের যানবাহন বিশেষ করে ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহনের জ্বালানী , কর্মচারী , ড্রাইভারসহ সব মিলিয়ে কোটি টাকা ব্যায় দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মী ৮০৭ জনের পুনাঙ্গ নাম ঠিকানাসহ কোন তালিকাই নেই করপোরেশনের দপ্তরে। বর্জ্য শাখার কর্মকর্তা মিজানুর রহমান মিজু ও তার সিন্ডিকেটদের তৈরী করা ভুয়া তালিকা অনুযায়ী প্রতি মাসে অর্ধকোটি টাকারও বেশী উত্তোলন করা হয়। পুরো টাকা করপোরেশনের হিসাব শাখার ক্যাশিয়ার আজহারুল ইসলামের নামে চেক ইস্যু করা হয়। ওই কর্মকর্তা ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে বর্জ্য শাখার কর্মকর্তার মিজু তার সিন্ডিকেটসহ ভাগ বাটোয়ারা করে লুটপাট করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিশ্চুক একাদিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন ক্যাশ টাকায় মাসিক বেতন দেবার ঘটনা বাংলাদেশে কোন সিটি করপোরেশনে বিরল ঘটনা। অনেকদিন ধরে এই অনিয়ম অব্যাবস্থা চলে আসলেও কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছেনা। বরং অনিয়মেই এখন নিয়মে পরিনত হয়েছে। এর মাধ্যমে নগরবাসির ট্যাক্সের টাকা লুটপাট করা হচ্ছেও বলে অভিযোগ তাদের।
এদিকে, বর্জ্য অপসারনের নামে চলছে চরম অব্যাবস্থাপনা। নগরীর গুরুত্বপুর্ন সড়ক লক্ষ্মী সিনেমা হলের পরিত্যাক্ত স্থানে প্রদান সড়কের পার্শ্বে প্রতিদিন নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বর্জ্য এসে সেখানে জমা করা হয়। এ কারনে দূগন্ধে ওই সড়ক দিয়ে নগরবাসি চলাচল করতে পারছেনা বলে অভিযোগ নগরবাসির।
সার্বিক বিষয়ে বর্জ্য শাখার প্রদান মিজানুর রহমান মিজুর সাথে যোগাযোগ করা হলে কেন চেকের মাধ্যরেম প্রত্যেককে বেতন না দিয়ে নগদ অর্থ দেয়া হয় পরিচ্ছন্না কর্মী আর তদারককারী কর্মকর্তার মূল কাগজ কোথায় তাদের নিয়োগ কিভাবে হয়েছে তার কোন সদুত্তোর তিনি দিতে পারেননি।
অপরদিকে, সিটি করপোরেশনের সচিব শ্রী জয়শ্রী রায় এবং নির্বাহি কর্মকর্তা উম্মে ফাতেমার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
তবে সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, সিন্ডিকেটের কারনে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের মাসিক বেতন চেকে দেয়া যাচ্ছেনা। এ জন্য বর্জ্য শাখার মিজু , ক্যাশিয়ারসহ তিনজনের কথা বলেন তিনি।