পাবনার সাঁথিয়া আজ হানাদারমুক্ত দিবস
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১০:৪২:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ৩৩ বার পড়া হয়েছে
৯ ডিসেম্বর পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এদিনে শত্রুমুক্ত হয় সাঁথিয়া উপজেলা। বিজয়ের পতাকা হাতে নিয়ে এদিন বিজয় উল্লাস করেন মুক্তিযোদ্ধারা।
দীর্ঘ ৯ মাসব্যাপী যুদ্ধে স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকবাহিনী সাঁথিয়ার বিভিন্নস্থানে মুক্তিযোদ্ধাসহ অসংখ্য নিরীহ মানুষকে হত্যা করে।
সাঁথিয়ার মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তৎকালীন জাতীয় পরিষদ সদস্য ও আ.লীগ নেতা অধ্যাপক আবু সাইয়িদের নির্দেশে সাঁথিয়া
হাইস্কুলের তৎকালীন শিক্ষক রুস্তম আলী, তোফাজ্জল হোসেন, কাশীনাথপুর হাইস্কুলের শিক্ষক আয়েজ উদ্দিনসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এলাকার ছাত্রসমাজ ও যুব তরুণদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিতে উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন।
যুদ্ধ অনিবার্য এটা আঁচ করতে পেরে এলাকার ছাত্র,যুব,তরুণরাও সংগঠিত হতে থাকেন। সাঁথিয়া হাইস্কুল মাঠে তারা প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য কাজী মোসলেম উদ্দিন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেন।
১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ সাঁথিয়া পশুসম্পদ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে যুদ্ধকালীন কমান্ডার নিজাম উদ্দিন, রাবির ছাত্র নেতা ফজলুল হক, মকবুল হোসেন মুকুল, লোকমান হোসেন,
রেজাউল করিম, আলতাব হোসেন, আবু মুসা, আবু হানিফ, মোসলেম উদ্দিন, তোফাজ্জল হোসেন, আব্দুল ওহাব, সোহরাব, রউফ, মতিনসহ যুব তরুণেরা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
দীর্ঘ ৯ মাস সাঁথিয়ার বিভিন্নস্থানে পাকসেনাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে বীরমুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক,নজরুল ইসলাম (চাদু), আব্দুস সামাদ, দারা হোসেন, শাহজাহান আলীসহ অসংখ্য নিরীহ মানুষ শহীদ হন।
সাঁথিয়ার সংগ্রামী জনতা ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ সাঁথিয়া থানা আক্রমণ করে অস্ত্র লুট করে নেয় এবং পশুসস্পদ হাসপাতাল চত্বরে আমগাছ তলায় বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। ১৯ এপ্রিল সাঁথিয়ার পাইকরহাটির ডাব বাগান (শহীদনগর) যুদ্ধে পাক বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ ও বিডিআর।
ওই যুদ্ধে ২০ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় দুইশ’ নিরীহ গ্রামবাসী শহীদ হন।
২৬ সেপ্টেম্বর সাঁথিয়ার মুক্তিযোদ্ধারা সাঁথিয়া হাইস্কুলে অবস্থিত রাজাকার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে ৯ জন রাজাকারকে হত্যা করেন এবং অনেক অস্ত্র উদ্ধার করেন। সাঁথিয়ার গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ হয় ৯ নভেম্বর পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর উপজেলার কালিয়ানী গ্রামে। ওই যুদ্ধে সাঁথিয়ার ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
সাঁথিয়ায় সবচেয়ে নারকীয় ও বেদনাদায়ক হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয় ২৭ নভেম্বর ধুলাউড়ীতে। ওইদিন পাকসেনারা বাড়ি-ঘর জ্বালানো ছাড়া রাতের অন্ধকারে পুরো গ্রাম ঘিরে ফেলে মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় ১শ’ জন গ্রামবাসীকে পুড়িয়ে, গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে।
৮ ডিসেম্বর সকালে সাঁথিয়ার প্রায় ৪ শ’ মুক্তিযোদ্ধা সমবেত হয়ে সাঁথিয়া থানায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।
পরদিন ৯ ডিসেম্বর পুনরায় পাকসেনারা সাঁথিয়া প্রবেশের চেষ্টা করে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ চালালে টিকতে না পেরে পাকসেনারা পিছু হটে পাবনা চলে যায়। এভাবে ৯ ডিসেম্বর সাঁথিয়া থানা হানাদার মুক্ত হয়।