ঢাকা ০৭:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রধানমন্ত্রী নিজ দলের প্রধান হতে পারবেন না!

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৬:০৪:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ৬৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সম্পূর্ণ নতুন সংবিধান প্রণয়ন করার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। আর এ লক্ষ্যে তারা সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে ৬৯ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছে। প্রস্তাব হলো, নির্বাচনের মাধ্যমে গণপরিষদ গঠন করতে হবে। সেখানেই নতুন সংবিধান অনুমোদন করা হবে। জাতীয় নাগরিক কমিটি তাদের প্রস্তাবে বলেছে, দুইবারের বেশি কেউ রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।

জাতীয় সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় করে সংবিধান সংস্কার কমিশন। সেখানে নাগরিক কমিটি তাদের ৬৯দফা লিখিত প্রস্তাব তুলে ধরে। মতবিনিময় শেষে নিজেদের প্রস্তাবের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও মুখপাত্র সামান্তা শারমিন।

আখতার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, তারা মনে করেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বিদ্যমান সংবিধান বাতিল হয়ে গেছে। বর্তমান সংবিধানের গঠন আওয়ামী লীগের দলিল বলে মনে হয়। গণ-অভ্যুত্থানের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে দেশ এখনো পৌঁছাতে পারেনি। এ জন্য নতুন সংবিধান প্রয়োজন। তাই তাঁরা বিদ্যমান সংবিধান সংস্কার বা সংশোধন নয়, সম্পূর্ণ নতুন করে সংবিধান রচনার প্রস্তাব করেছেন।

জাতীয় নাগরিক কমিটি সংবিধানের পাঁচটি মূলনীতি প্রস্তাব করেছে। সেগুলো হলো-সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, নাগরিক অধিকার ও গণতন্ত্র। তারা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠন, সংসদের নাম ‘আইনসভা’ করা, সরকারের মেয়াদ চার বছর করাসহ নতুন সংবিধানের একটি রূপরেখা তুলে ধরেছে। তারা বলেছে, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রকে ‘প্রথম রিপাবলিকের প্রস্তাবনা’ এবং ‘দ্বিতীয় রিপাবলিকের প্রোক্লেমেশন’ জারি করে তা নতুন সংবিধানের প্রস্তাবনা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

নাগরিক কমিটির প্রস্তাব হলো-নতুন ‘লিগ্যাল ফ্রেমঅর্ডারের’ অধীন গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। সংবিধান প্রণয়ন সম্পন্ন হলে ওই গণপরিষদই আইনসভায় রূপ নেবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সব অংশীজনের কাছ থেকে পাওয়া প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রস্তাব তৈরি করে তা শুধু সরকার নয়, সব অংশীজনের কাছে পাঠাতে হবে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত খসড়া গণপরিষদে তোলা হবে। এটাই হবে গণপরিষদের সংবিধান বিতর্কের মূল দলিল।

তারা আরও বলেছে, সংবিধানে প্রত্যেক জাতিসত্তার স্বীকৃতি থাকতে হবে। বাংলাদেশের নাগরিকগণ ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে পরিচিত হবে। সংবিধানে গণভোটের বিধান থাকতে হবে। গণভোট ছাড়া কেবলমাত্র আইনসভার দুই-তৃতীয়াংশের জোরে সংবিধান সংশোধন করা যাবে না।

জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নে নাগরিক কমিটির প্রস্তাব হলো-রাষ্ট্রকে সরকারের নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপের বাইরে আনা গেলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার আর প্রয়োজন হয় না। তবে আগামী দুই নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে।

রাষ্ট্রপতি
নাগরিক কমিটির প্রস্তাবে বলা হয়ে, রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্রের নিয়মতান্ত্রিক প্রধান হবেন। জনগণের সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন। দুইবারের বেশি কেউ রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না। একজন রাষ্ট্রপতি পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচন করতে পারবেন না।

রাষ্ট্রপতি সংসদের উভয় কক্ষের যৌথসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের আস্থাভাজনকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেবেন। এ ছাড়া আইনের দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে মনোনীত ব্যক্তিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন। অন্যান্য সাংবিধানিক পদেও আইনের দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিয়োগ দেবেন।

প্রধানমন্ত্রী

নাগরিক কমিটি প্রস্তাব করেছে, কেউ প্রধানমন্ত্রী হলে তিনি একই সাথে নিজ দলের প্রধান এবং সংসদ নেতা হতে পারবেন না। জীবনে দুইবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না এবং প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর রাষ্ট্রের আর কোনো পদেই তিনি আসীন হবেন না। কোম্পানি বা ব্যবসায়ী উদ্যোগের ক্ষেত্রেও বিধি-নিষেধ থাকবে। প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় সকল সম্পদ এবং সম্পত্তি রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের অধীনে চলে যাবে।

কোনো সাংবিধানিক পদের নিয়োগে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিতে পারবেন; তবে তা পালন করা রাষ্ট্রপতির জন্য আবশ্যকীয় হবে না। সাংবিধানিক পদে নিয়োগ ও অপসারণ আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে। সাংবিধানিক পদে আসীন কাউকে অপসারণ করার ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর থাকবে না।

৭০ অনুচ্ছেদের কঠোরতা খর্ব করতে হবে। সংসদ সদস্যরা দল বদল করলে তথা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দিলে বা দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করলে বা অব্যাহতি দেওয়া হলে তার সংসদ পদ শূন্য হবে। আস্থা ভোটে দলের বিপরীতে ভোট দেওয়া যাবে না। অন্য যেকোনো বিষয়ে তিনি স্বাধীন থাকবেন, দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবেন।

সংসদ

নাগরিক কমিটির প্রস্তাব হলো আইন সভা হবে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট। উচ্চকক্ষের নাম হবে জাতীয় পরিষদ এবং নিম্নকক্ষের নাম হবে আইনসভা। উচ্চকক্ষ রাষ্ট্রপতির অধীনে; নিম্নকক্ষ প্রধানমন্ত্রীর অধীনে থাকবে। উচ্চকক্ষের সদস্যদের নিয়ে কিছু সংসদীয় কমিটি হবে, এই কমিটি নিম্নকক্ষের কাজ তদারকি করবে এবং গণশুনানি করতে পারবে। উচ্চকক্ষ পরপর তিনবার কোনো আইন পাশ না করলে তা গণভোটে যাবে। উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ উভয়ের মেয়াদ ৪ বছর হবে।

জাতীয় পরিষদে ১০০ আসন থাকবে। এখানে নির্বাচন হবে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে। আইনসভায় ৩০০ টি আসনে সরাসরি ভোট হবে। সেখানে সংরক্ষিত আসন রাখা যেতে পারে। জাতীয় পরিষদের ১০০ আসনের মধ্যে কমপক্ষে ৩৩ টি আসনে পেশাজীবী-কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-আইনজীবী- চিকিৎসক-প্রকৌশলী-কৃষিবিদ-সাংবাদিকসহ আইন দ্বারা তফসিলভুক্ত পেশা এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মানুষকে মনোনয়ন দিতে হবে।

উভয় কক্ষে পৃথকভাবে পাশ হওয়ার পরই কেবল আইন প্রণয়ন হবে। উভয় কক্ষের সমন্বয়ে সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটি গঠন করা হবে। সংসদীয় কমিটি মন্ত্রণালয়ের যেকোনো সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে তা সংসদের বিবেচনায় পেশ করতে পারবে। সকল সাংবিধানিক পদ ও মন্ত্রিসভার সদস্য নিয়োগের পূর্বে তাকে জাতীয় পরিষদের শুনানিতে বাধ্যতামূলক উপস্থিত হতে হবে। ফলাফল অসন্তোষজনক হলে তাঁকে নিয়োগ করা যাবে না।

আইনসভা ও জাতীয় পরিষদের সদস্য এবং তাদের পরিবারের সম্পদের হিসাব বছরে দুইবার জনগণের সামনে হাজির করতে হবে। সম্পদ বৃদ্ধি বৈধ উপায়ে ও যৌক্তিকভাবে হয়েছে কি না তা দুর্নীতি দমন কমিশন নির্ধারণ করবে।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, কেন্দ্রীয় সদস্য সারোয়ার তুষার, মুকুল মুস্তাফিজ, জহিরুল ইসলাম, আতিক মুজাহিদ এবং সালেহ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ, সদস্য ফিরোজ আহমেদ, মুস্তাইন জহির, সুমাইয়া খায়ের, মোহাম্মদ ইকরামুল হক, মইন আলম ফিরোজি,  ইমরান সিদ্দিকি। মতবিনিময় শেষে জাতীয় নাগরিক কমিটি কমিশনের কাছে লিখিত প্রস্তাব হস্তান্তর করে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

প্রধানমন্ত্রী নিজ দলের প্রধান হতে পারবেন না!

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৬:০৪:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সম্পূর্ণ নতুন সংবিধান প্রণয়ন করার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। আর এ লক্ষ্যে তারা সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে ৬৯ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছে। প্রস্তাব হলো, নির্বাচনের মাধ্যমে গণপরিষদ গঠন করতে হবে। সেখানেই নতুন সংবিধান অনুমোদন করা হবে। জাতীয় নাগরিক কমিটি তাদের প্রস্তাবে বলেছে, দুইবারের বেশি কেউ রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।

জাতীয় সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় করে সংবিধান সংস্কার কমিশন। সেখানে নাগরিক কমিটি তাদের ৬৯দফা লিখিত প্রস্তাব তুলে ধরে। মতবিনিময় শেষে নিজেদের প্রস্তাবের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও মুখপাত্র সামান্তা শারমিন।

আখতার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, তারা মনে করেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বিদ্যমান সংবিধান বাতিল হয়ে গেছে। বর্তমান সংবিধানের গঠন আওয়ামী লীগের দলিল বলে মনে হয়। গণ-অভ্যুত্থানের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে দেশ এখনো পৌঁছাতে পারেনি। এ জন্য নতুন সংবিধান প্রয়োজন। তাই তাঁরা বিদ্যমান সংবিধান সংস্কার বা সংশোধন নয়, সম্পূর্ণ নতুন করে সংবিধান রচনার প্রস্তাব করেছেন।

জাতীয় নাগরিক কমিটি সংবিধানের পাঁচটি মূলনীতি প্রস্তাব করেছে। সেগুলো হলো-সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, নাগরিক অধিকার ও গণতন্ত্র। তারা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠন, সংসদের নাম ‘আইনসভা’ করা, সরকারের মেয়াদ চার বছর করাসহ নতুন সংবিধানের একটি রূপরেখা তুলে ধরেছে। তারা বলেছে, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রকে ‘প্রথম রিপাবলিকের প্রস্তাবনা’ এবং ‘দ্বিতীয় রিপাবলিকের প্রোক্লেমেশন’ জারি করে তা নতুন সংবিধানের প্রস্তাবনা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

নাগরিক কমিটির প্রস্তাব হলো-নতুন ‘লিগ্যাল ফ্রেমঅর্ডারের’ অধীন গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। সংবিধান প্রণয়ন সম্পন্ন হলে ওই গণপরিষদই আইনসভায় রূপ নেবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সব অংশীজনের কাছ থেকে পাওয়া প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রস্তাব তৈরি করে তা শুধু সরকার নয়, সব অংশীজনের কাছে পাঠাতে হবে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত খসড়া গণপরিষদে তোলা হবে। এটাই হবে গণপরিষদের সংবিধান বিতর্কের মূল দলিল।

তারা আরও বলেছে, সংবিধানে প্রত্যেক জাতিসত্তার স্বীকৃতি থাকতে হবে। বাংলাদেশের নাগরিকগণ ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে পরিচিত হবে। সংবিধানে গণভোটের বিধান থাকতে হবে। গণভোট ছাড়া কেবলমাত্র আইনসভার দুই-তৃতীয়াংশের জোরে সংবিধান সংশোধন করা যাবে না।

জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নে নাগরিক কমিটির প্রস্তাব হলো-রাষ্ট্রকে সরকারের নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপের বাইরে আনা গেলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার আর প্রয়োজন হয় না। তবে আগামী দুই নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে।

রাষ্ট্রপতি
নাগরিক কমিটির প্রস্তাবে বলা হয়ে, রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্রের নিয়মতান্ত্রিক প্রধান হবেন। জনগণের সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন। দুইবারের বেশি কেউ রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না। একজন রাষ্ট্রপতি পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচন করতে পারবেন না।

রাষ্ট্রপতি সংসদের উভয় কক্ষের যৌথসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের আস্থাভাজনকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেবেন। এ ছাড়া আইনের দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে মনোনীত ব্যক্তিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন। অন্যান্য সাংবিধানিক পদেও আইনের দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিয়োগ দেবেন।

প্রধানমন্ত্রী

নাগরিক কমিটি প্রস্তাব করেছে, কেউ প্রধানমন্ত্রী হলে তিনি একই সাথে নিজ দলের প্রধান এবং সংসদ নেতা হতে পারবেন না। জীবনে দুইবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না এবং প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর রাষ্ট্রের আর কোনো পদেই তিনি আসীন হবেন না। কোম্পানি বা ব্যবসায়ী উদ্যোগের ক্ষেত্রেও বিধি-নিষেধ থাকবে। প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় সকল সম্পদ এবং সম্পত্তি রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের অধীনে চলে যাবে।

কোনো সাংবিধানিক পদের নিয়োগে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিতে পারবেন; তবে তা পালন করা রাষ্ট্রপতির জন্য আবশ্যকীয় হবে না। সাংবিধানিক পদে নিয়োগ ও অপসারণ আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে। সাংবিধানিক পদে আসীন কাউকে অপসারণ করার ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর থাকবে না।

৭০ অনুচ্ছেদের কঠোরতা খর্ব করতে হবে। সংসদ সদস্যরা দল বদল করলে তথা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দিলে বা দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করলে বা অব্যাহতি দেওয়া হলে তার সংসদ পদ শূন্য হবে। আস্থা ভোটে দলের বিপরীতে ভোট দেওয়া যাবে না। অন্য যেকোনো বিষয়ে তিনি স্বাধীন থাকবেন, দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবেন।

সংসদ

নাগরিক কমিটির প্রস্তাব হলো আইন সভা হবে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট। উচ্চকক্ষের নাম হবে জাতীয় পরিষদ এবং নিম্নকক্ষের নাম হবে আইনসভা। উচ্চকক্ষ রাষ্ট্রপতির অধীনে; নিম্নকক্ষ প্রধানমন্ত্রীর অধীনে থাকবে। উচ্চকক্ষের সদস্যদের নিয়ে কিছু সংসদীয় কমিটি হবে, এই কমিটি নিম্নকক্ষের কাজ তদারকি করবে এবং গণশুনানি করতে পারবে। উচ্চকক্ষ পরপর তিনবার কোনো আইন পাশ না করলে তা গণভোটে যাবে। উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ উভয়ের মেয়াদ ৪ বছর হবে।

জাতীয় পরিষদে ১০০ আসন থাকবে। এখানে নির্বাচন হবে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে। আইনসভায় ৩০০ টি আসনে সরাসরি ভোট হবে। সেখানে সংরক্ষিত আসন রাখা যেতে পারে। জাতীয় পরিষদের ১০০ আসনের মধ্যে কমপক্ষে ৩৩ টি আসনে পেশাজীবী-কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-আইনজীবী- চিকিৎসক-প্রকৌশলী-কৃষিবিদ-সাংবাদিকসহ আইন দ্বারা তফসিলভুক্ত পেশা এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মানুষকে মনোনয়ন দিতে হবে।

উভয় কক্ষে পৃথকভাবে পাশ হওয়ার পরই কেবল আইন প্রণয়ন হবে। উভয় কক্ষের সমন্বয়ে সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটি গঠন করা হবে। সংসদীয় কমিটি মন্ত্রণালয়ের যেকোনো সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে তা সংসদের বিবেচনায় পেশ করতে পারবে। সকল সাংবিধানিক পদ ও মন্ত্রিসভার সদস্য নিয়োগের পূর্বে তাকে জাতীয় পরিষদের শুনানিতে বাধ্যতামূলক উপস্থিত হতে হবে। ফলাফল অসন্তোষজনক হলে তাঁকে নিয়োগ করা যাবে না।

আইনসভা ও জাতীয় পরিষদের সদস্য এবং তাদের পরিবারের সম্পদের হিসাব বছরে দুইবার জনগণের সামনে হাজির করতে হবে। সম্পদ বৃদ্ধি বৈধ উপায়ে ও যৌক্তিকভাবে হয়েছে কি না তা দুর্নীতি দমন কমিশন নির্ধারণ করবে।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, কেন্দ্রীয় সদস্য সারোয়ার তুষার, মুকুল মুস্তাফিজ, জহিরুল ইসলাম, আতিক মুজাহিদ এবং সালেহ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ, সদস্য ফিরোজ আহমেদ, মুস্তাইন জহির, সুমাইয়া খায়ের, মোহাম্মদ ইকরামুল হক, মইন আলম ফিরোজি,  ইমরান সিদ্দিকি। মতবিনিময় শেষে জাতীয় নাগরিক কমিটি কমিশনের কাছে লিখিত প্রস্তাব হস্তান্তর করে।