ঢাকা ০২:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কলাগাছিয়া হরিদ্রাবাড়ীয়া একতা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়

শিক্ষক আছে-শিক্ষার্থী নেই, মাসে বেতন লাখ টাকা

মাহবুব বিশ্বাস, বরগুনা
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৪৯:৩৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪ ৩৪২ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শিক্ষক-কর্মচারী আছে চারজন, কিন্তু শিক্ষার্থী নেই। চার শিক্ষক-কর্মচারী মাসে বেতন তোলেন প্রায় লাখ টাকা। স্থানীয়দের অভিযোগ বছরের পর বছর এমন অবস্থায় চললেও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার অজ্ঞাত কারনে এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হলেও ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। এমন বিদ্যালয় বিলুপ্তির দাবী এলাকাবাসীর। ঘটনা ঘটেছে আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের কলাগাছিয়া হরিদ্রাবাড়ীয়া একতা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।

জানা গেছে, আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের হরিদ্রাবাড়ীয়া এলাকায় ১৯৮৫ সালে কলাগাছিয়া হরিদ্রাবাড়ীয়া একতা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৮৬ সালে ওই বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিদ্যালয়ে তেমন শিক্ষার্থী ছিল না। গত দুই বছর ধরে ওই বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থী শুন্য হয়ে পড়ে।

বর্তমানে বিদ্যালয়ে আব্দুল আজিজ নেছারী, দেলোয়ার হোসাইন, হাবিবুর রহমান শিক্ষক এবং জব্বার মিয়া কারনিক হিসেবে কর্মরত আছেন। কিন্তু বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষার্থী নেই। শিক্ষক-কর্মচারীরা মাঝে মধ্যে বিদ্যালয়ে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান। কাগজে- কলমে খাতায় শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তাবে কোন শিক্ষার্থী নেই। বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হলেও ওই বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী চারজন প্রতিমাসে সরকারী অনুদানের প্রায় এক লাখ টাকা বেতন তোলেন।

অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা আলতাফ আকন আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় প্রভাবখাটিয়ে বিগত দিনে বিদ্যালয় পরিচালনা করেছেন। কেউ কিছু বলতে সাহস পায়নি। এমন বিদ্যালয় বিলুপ্তির দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী। স্থানীয়রা জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী না থাকলেও বছরের পর বছর শিক্ষকরা বেতন-ভাতা তুলে নেন। স্থানীয়দের অভিযোগ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিদ্যালয়ের এমন দশা জেনেও কার্যকরী কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। অফিস ম্যানেজ করেই তারা বছরের পর বছর এভাবে চলে আসছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, কবে যে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী এসেছে তা মনে পড়ে না।

সরেজমিনে ঘুরে দেখাগেছে, বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষার্থী বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। ময়লা আবর্জনায় স্তুপ আকারে পড়ে আছে, বিদ্যালয়ের চেয়ার, টেবিল ফাঁকা। জাতীয় পতাকা টানানো আছে।

বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিদ্যালয় আশে পাশে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকায় ছাত্র-ছাত্রী পাওয়া বড় মুশকিল। তাই বিদ্যালয়ে এ বছর কোন শিক্ষার্থী নেই।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল আজিজ নেছারী বলেন, আমাদের আর লজ্জা দিয়েন না। শিক্ষার্থী না থাকলে পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করবে কিভাবে? ছাত্র-ছাত্রী সংগ্রহের চেষ্টা করছি কিন্তু পাচ্ছি না। তিনি আরো বলেন, অনেক সমস্যায় আছি আমাদের মাফ করে দেন।

গুলিশাখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. এইচএম মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, নামে মাত্র বিদ্যালয় আছে। বাস্তবে শিক্ষার্থী বলতে কিছুই নেই। তিনি আরো বলেন, ওই বিদ্যালয়ে চলে মোটা অংকের টাকায় নিয়োগ বাণিজ্য।

আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ অলি আহাদ বাংলা টাইমসকে বলেন, আমি আদালতে আছি। পরে কথা হবে বলে ফোনের সংযোগ কেটে দেন।

বরগুনা জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি যে, ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নেই। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আমতলী উপজেলা নিবার্হী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ তারেক হাসান বলেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের বিষয়ে অবগত হবো। তার পরে ওই বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, খোজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

কলাগাছিয়া হরিদ্রাবাড়ীয়া একতা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়

শিক্ষক আছে-শিক্ষার্থী নেই, মাসে বেতন লাখ টাকা

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৪৯:৩৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪

শিক্ষক-কর্মচারী আছে চারজন, কিন্তু শিক্ষার্থী নেই। চার শিক্ষক-কর্মচারী মাসে বেতন তোলেন প্রায় লাখ টাকা। স্থানীয়দের অভিযোগ বছরের পর বছর এমন অবস্থায় চললেও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার অজ্ঞাত কারনে এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হলেও ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। এমন বিদ্যালয় বিলুপ্তির দাবী এলাকাবাসীর। ঘটনা ঘটেছে আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের কলাগাছিয়া হরিদ্রাবাড়ীয়া একতা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।

জানা গেছে, আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের হরিদ্রাবাড়ীয়া এলাকায় ১৯৮৫ সালে কলাগাছিয়া হরিদ্রাবাড়ীয়া একতা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৮৬ সালে ওই বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিদ্যালয়ে তেমন শিক্ষার্থী ছিল না। গত দুই বছর ধরে ওই বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থী শুন্য হয়ে পড়ে।

বর্তমানে বিদ্যালয়ে আব্দুল আজিজ নেছারী, দেলোয়ার হোসাইন, হাবিবুর রহমান শিক্ষক এবং জব্বার মিয়া কারনিক হিসেবে কর্মরত আছেন। কিন্তু বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষার্থী নেই। শিক্ষক-কর্মচারীরা মাঝে মধ্যে বিদ্যালয়ে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান। কাগজে- কলমে খাতায় শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তাবে কোন শিক্ষার্থী নেই। বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হলেও ওই বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী চারজন প্রতিমাসে সরকারী অনুদানের প্রায় এক লাখ টাকা বেতন তোলেন।

অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা আলতাফ আকন আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় প্রভাবখাটিয়ে বিগত দিনে বিদ্যালয় পরিচালনা করেছেন। কেউ কিছু বলতে সাহস পায়নি। এমন বিদ্যালয় বিলুপ্তির দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী। স্থানীয়রা জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী না থাকলেও বছরের পর বছর শিক্ষকরা বেতন-ভাতা তুলে নেন। স্থানীয়দের অভিযোগ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিদ্যালয়ের এমন দশা জেনেও কার্যকরী কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। অফিস ম্যানেজ করেই তারা বছরের পর বছর এভাবে চলে আসছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, কবে যে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী এসেছে তা মনে পড়ে না।

সরেজমিনে ঘুরে দেখাগেছে, বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষার্থী বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। ময়লা আবর্জনায় স্তুপ আকারে পড়ে আছে, বিদ্যালয়ের চেয়ার, টেবিল ফাঁকা। জাতীয় পতাকা টানানো আছে।

বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিদ্যালয় আশে পাশে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকায় ছাত্র-ছাত্রী পাওয়া বড় মুশকিল। তাই বিদ্যালয়ে এ বছর কোন শিক্ষার্থী নেই।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল আজিজ নেছারী বলেন, আমাদের আর লজ্জা দিয়েন না। শিক্ষার্থী না থাকলে পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করবে কিভাবে? ছাত্র-ছাত্রী সংগ্রহের চেষ্টা করছি কিন্তু পাচ্ছি না। তিনি আরো বলেন, অনেক সমস্যায় আছি আমাদের মাফ করে দেন।

গুলিশাখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. এইচএম মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, নামে মাত্র বিদ্যালয় আছে। বাস্তবে শিক্ষার্থী বলতে কিছুই নেই। তিনি আরো বলেন, ওই বিদ্যালয়ে চলে মোটা অংকের টাকায় নিয়োগ বাণিজ্য।

আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ অলি আহাদ বাংলা টাইমসকে বলেন, আমি আদালতে আছি। পরে কথা হবে বলে ফোনের সংযোগ কেটে দেন।

বরগুনা জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি যে, ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নেই। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আমতলী উপজেলা নিবার্হী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ তারেক হাসান বলেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের বিষয়ে অবগত হবো। তার পরে ওই বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, খোজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।