ঢাকা ০৫:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘পিলখানায় হত্যাযজ্ঞে সরাসরি জড়িত শেখ হাসিনা’

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১০:০০:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ২২ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দফতরে নির্মম ও নৃশংস হত্যাকান্ডের সঠিক বিচার চাইতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যাযেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিনমাসেও পিলখানা হত্যার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতে আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ারও অভিযোগ করেন নিহতদের স্বজনরা।

বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর মহাখালীতে রাওয়া হলে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, হত্যার ঘটনায় আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করা হবে। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রæয়ারি ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে হত্যা করা হয় ৫৭ সামরিক সদস্যকে। এছাড়া নিহত হন ১৭ বেসামরিক মানুষ। ওই বিদ্রোহ ও হত্যার ঘটনার ১৫ বছর পার হলেও শেষ হয়নি দুই মামলার চূড়ান্ত বিচারকাজ।

পিলখানায় নির্মম হত্যাযজ্ঞে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রতিবেশী ভারত সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ করেন নিহতদের স্বজনরা। তারা বলেন, দায়সারা তদন্ত করা হয়। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের সাথে কোনো যোগাযোগও করা হয়নি কখনো। সংবাদ সম্মেলনে আরও দাবি করা হয়, আইনজীবী ও সাংবাদিকদের প্রভাবিত করে সত্য ঘটনা সামনে আসতে দেয়নি আওয়ামী লীগ সরকার। পরবর্তীতে বাহিনীর অনেক সদস্যকে হত্যারও অভিযোগ তাদের। পিলখানায় নিহতদের স্মরণে শহীদ সেনা দিবসসহ ৬ দফা দাবি তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

সংবাদ সম্মেলনে সাকিব রহমান বলেন, শেখ ফজলে নূর তাপস, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করব। আন্তর্জাতিক আইনের ডকট্রিন অফ কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকেও বিচারের মুখোমুখি আনা সম্ভব। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসেবে তিনিও দায় এড়াতে পারেন না। তার বিরুদ্ধেও আমরা অভিযোগ করব। এছাড়া, তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা, বিশেষ করে ডিজিএফআই কর্মকর্তা যারা ছিলেন। তখনকার সময় কিছু সাংবাদিক যারা ভুল ন্যারেটিভ সৃষ্টি করেছেন তাদের বিরুদ্ধেও আমরা অভিযোগ আনব।

তিনি আরও বলেন, বিডিআর হত্যাকান্ডের পর্দার আড়ালের ষড়যন্ত্রকারী, যারা গত সরকারের সময় ক্ষমতায় ছিল। আমাদের প্ল্যান অব অ্যাকশন হচ্ছে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কমপ্লেন ফাইল করব। বর্তমান সরকারের এতোদিনেও আমাদের সময় দেয়ার ৫ মিনিট সময় হয়নি, এখন যারা কমপ্লেন ফাইল করব সেসব শহীদ পরিবারকে সরকার নিরাপত্তা দিবে আশা করছি। কারণ আমরা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করব তারা গত সরকারের ক্ষমতায় ছিল।

তৎকালীন বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকীন আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদ সরকার আওয়ামী চাইবে না গুম-খুনের বিচার হোক। যেহেতু এখন বাধা নেই, তাই বিডিআর সদস্য হত্যার তদন্ত দ্রæত শেষ করে জড়িতদের আইনের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হোক। পিলখানা হত্যার দিনকে শহীদ দিবস ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, জড়িতদের সাজা দিলে দেশের সকল মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়াবে। যারা হত্যাকান্ডের বিচার চাওয়ায় চাকরি থেকে বের করে দওয়া হয়েছে তাদের সুনির্দিষ্ট একটি ব্যবস্থা করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে শহীদ পরিবারের সদস্যরা বলেন, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ প্ররোচনায় ও নীলনকশায় শেখ হাসিনার নির্দেশে এই হত্যাকান্ডটি ঘটানো হয়েছে। শেখ হাসিনা এ হত্যাকান্ডের বিষয়ে সরাসরি জানতেন। এসময় শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে দাবিগুলো তুলে ধরেন শহীদ কর্নেল মজিবুল হকের স্ত্রী নাহরীন ফেরদৌসী।

তিনি বলেন, গ্যাজেটের মাধ্যমে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হোক। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের আগেই ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণা করে এদিন দেশজুড়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখারও দাবি জানান তিনি।  

পিলখানা হত্যার ঘটনা  সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে নতুন ভাবে তদন্ত শুরুর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত ইনকোয়ারি কমিশনের অগ্রগতি আমাদের জানানো হোক।  ইতোপূর্বের সকল তদন্তের প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করার হোক। অফিসিয়াল গ্যাজেটে নিহত ৫৭ জন বীর সেনানীকে শহীদের মর্যাদা দেওয়া ও পিলখানা ট্র্যাজেডিকে উপযুক্তভাবে স্কুলের পাঠ্যবইয়ের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা এবং দ্রæত বিচার শেষ করে আটককৃত নির্দোষ সকল মানুষকে দ্রæত ন্যায় বিচার দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

একইসাথে ঘটনার দ্রুত বিচার শেষ করে আটককৃত নির্দোষ সকল মানুষকে দ্রæত ন্যায় বিচার দেওয়ার দাবি করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপনা করেন শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফুর রহমান খানের মেয়ে ফাবলিহা বুশরা।

আরও বক্তব্য রাখেন-শহীদ লে. কর্নেল কাজী রবি রহমানের স্ত্রী ডা. ফৌজিয়া রশিদ ও তার ভাই কাজী ওলি রহমান, শহীদ কর্নেল এরশাদের ভাই ডা. মামুন, শহীদ কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল আলম হান্নান, শহীদ কর্নেল কুদরত এলাহির স্ত্রী লবী রহমান প্রমুখ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

‘পিলখানায় হত্যাযজ্ঞে সরাসরি জড়িত শেখ হাসিনা’

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১০:০০:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দফতরে নির্মম ও নৃশংস হত্যাকান্ডের সঠিক বিচার চাইতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যাযেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিনমাসেও পিলখানা হত্যার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতে আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ারও অভিযোগ করেন নিহতদের স্বজনরা।

বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর মহাখালীতে রাওয়া হলে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, হত্যার ঘটনায় আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করা হবে। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রæয়ারি ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে হত্যা করা হয় ৫৭ সামরিক সদস্যকে। এছাড়া নিহত হন ১৭ বেসামরিক মানুষ। ওই বিদ্রোহ ও হত্যার ঘটনার ১৫ বছর পার হলেও শেষ হয়নি দুই মামলার চূড়ান্ত বিচারকাজ।

পিলখানায় নির্মম হত্যাযজ্ঞে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রতিবেশী ভারত সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ করেন নিহতদের স্বজনরা। তারা বলেন, দায়সারা তদন্ত করা হয়। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের সাথে কোনো যোগাযোগও করা হয়নি কখনো। সংবাদ সম্মেলনে আরও দাবি করা হয়, আইনজীবী ও সাংবাদিকদের প্রভাবিত করে সত্য ঘটনা সামনে আসতে দেয়নি আওয়ামী লীগ সরকার। পরবর্তীতে বাহিনীর অনেক সদস্যকে হত্যারও অভিযোগ তাদের। পিলখানায় নিহতদের স্মরণে শহীদ সেনা দিবসসহ ৬ দফা দাবি তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

সংবাদ সম্মেলনে সাকিব রহমান বলেন, শেখ ফজলে নূর তাপস, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করব। আন্তর্জাতিক আইনের ডকট্রিন অফ কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকেও বিচারের মুখোমুখি আনা সম্ভব। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসেবে তিনিও দায় এড়াতে পারেন না। তার বিরুদ্ধেও আমরা অভিযোগ করব। এছাড়া, তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা, বিশেষ করে ডিজিএফআই কর্মকর্তা যারা ছিলেন। তখনকার সময় কিছু সাংবাদিক যারা ভুল ন্যারেটিভ সৃষ্টি করেছেন তাদের বিরুদ্ধেও আমরা অভিযোগ আনব।

তিনি আরও বলেন, বিডিআর হত্যাকান্ডের পর্দার আড়ালের ষড়যন্ত্রকারী, যারা গত সরকারের সময় ক্ষমতায় ছিল। আমাদের প্ল্যান অব অ্যাকশন হচ্ছে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কমপ্লেন ফাইল করব। বর্তমান সরকারের এতোদিনেও আমাদের সময় দেয়ার ৫ মিনিট সময় হয়নি, এখন যারা কমপ্লেন ফাইল করব সেসব শহীদ পরিবারকে সরকার নিরাপত্তা দিবে আশা করছি। কারণ আমরা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করব তারা গত সরকারের ক্ষমতায় ছিল।

তৎকালীন বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকীন আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদ সরকার আওয়ামী চাইবে না গুম-খুনের বিচার হোক। যেহেতু এখন বাধা নেই, তাই বিডিআর সদস্য হত্যার তদন্ত দ্রæত শেষ করে জড়িতদের আইনের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হোক। পিলখানা হত্যার দিনকে শহীদ দিবস ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, জড়িতদের সাজা দিলে দেশের সকল মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়াবে। যারা হত্যাকান্ডের বিচার চাওয়ায় চাকরি থেকে বের করে দওয়া হয়েছে তাদের সুনির্দিষ্ট একটি ব্যবস্থা করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে শহীদ পরিবারের সদস্যরা বলেন, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ প্ররোচনায় ও নীলনকশায় শেখ হাসিনার নির্দেশে এই হত্যাকান্ডটি ঘটানো হয়েছে। শেখ হাসিনা এ হত্যাকান্ডের বিষয়ে সরাসরি জানতেন। এসময় শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে দাবিগুলো তুলে ধরেন শহীদ কর্নেল মজিবুল হকের স্ত্রী নাহরীন ফেরদৌসী।

তিনি বলেন, গ্যাজেটের মাধ্যমে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হোক। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের আগেই ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণা করে এদিন দেশজুড়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখারও দাবি জানান তিনি।  

পিলখানা হত্যার ঘটনা  সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে নতুন ভাবে তদন্ত শুরুর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত ইনকোয়ারি কমিশনের অগ্রগতি আমাদের জানানো হোক।  ইতোপূর্বের সকল তদন্তের প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করার হোক। অফিসিয়াল গ্যাজেটে নিহত ৫৭ জন বীর সেনানীকে শহীদের মর্যাদা দেওয়া ও পিলখানা ট্র্যাজেডিকে উপযুক্তভাবে স্কুলের পাঠ্যবইয়ের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা এবং দ্রæত বিচার শেষ করে আটককৃত নির্দোষ সকল মানুষকে দ্রæত ন্যায় বিচার দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

একইসাথে ঘটনার দ্রুত বিচার শেষ করে আটককৃত নির্দোষ সকল মানুষকে দ্রæত ন্যায় বিচার দেওয়ার দাবি করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপনা করেন শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফুর রহমান খানের মেয়ে ফাবলিহা বুশরা।

আরও বক্তব্য রাখেন-শহীদ লে. কর্নেল কাজী রবি রহমানের স্ত্রী ডা. ফৌজিয়া রশিদ ও তার ভাই কাজী ওলি রহমান, শহীদ কর্নেল এরশাদের ভাই ডা. মামুন, শহীদ কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল আলম হান্নান, শহীদ কর্নেল কুদরত এলাহির স্ত্রী লবী রহমান প্রমুখ।