ঢাকা ০২:২৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সমন্বয়ক হাসনাত-সারজিসকে হত্যা চেষ্টা!

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:২১:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ৬৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুই সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে ট্রাকচাপা দিয়ে হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে। বুধবার (২৭ নভেম্বর) চট্রগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এ হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, শহীদ অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ ভাইয়ের কবর জিয়ারত করে ঢাকায় ফিরছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম। পথিমধ্যে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চট্রগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চুনতি ইউনিয়নের হাজী রাস্তার মোড়ে তাদেরকে ট্রাকচাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়।

লোহাগাড়া থানার দায়িত্বরত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. আলিম বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে একটি আইনগত প্রক্রিয়া চলছে।

এর আগে বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মহানগরের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ মাঠে ওই জানাজায় অংশ নেন হাসনাত আবদুল্লাহ এবং সারজিস আলম।

পরবর্তীতে সাইফুল ইসলাম আলিফের মরদেহ দাফনের পর কবর জিয়ারত করেন তারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী। নিহত আইনজীবীর সাইফুল ইসলাম আলিফ সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) ছিলেন। আলিফ লোহাগাড়ার চুনতি এলাকার জামাল উদ্দিনের ছেলে। ২০১৮ সালে জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হন সাইফুল। পরে তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবেও নিবন্ধন পান।

আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন আইনজীবীরা। মঙ্গলবার জেলা আইনজীবী সমিতির জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এদিকে, আইনজীবীকে হত্যার ঘটনায় চট্টগ্রামে রাতভর অভিযান চালিয়ে ৩০ জনকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। এ ঘটনায় নগরের কোতোয়ালি থানায় দুইটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার বিকেলে সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভরতদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় নিহত হন আইনজীবী আলিফ। এ ছাড়াও পুলিশের ১২ জন সদস্যও আহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

মনে রেখো-শহীদেরা মরে না: দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়ার পর হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লেখেন, ‘মারবা? পারবা না। আমরা আবরার ও আলিফের উত্তরসূরী। মনে রেখো- শহীদেরা মরে না।’

তার এই স্ট্যাটাস দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।

বুধবার বিকেলে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের কবর জিয়ারত শেষে চট্টগ্রাম থেকে ফেরার পথে তারা এই দুর্ঘটনার শিকার হন। তাদের দাবি, এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়; বরং হত্যাচেষ্টা।

হাসনাতের ফেসবুক স্ট্যাটাসে উল্লেখ করা আবরার ফাহাদ ও অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যাকাণ্ড নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ভারতের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে সমালোচনামূলক একটি ফেসবুক পোস্ট দেওয়ার পর তাকে ছাত্রলীগের শেরে বাংলা হলের রুমে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

অন্যদিকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারী মুক্তির দাবিতে সংঘর্ষে গত মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) চট্টগ্রাম আদালত ভবনের প্রবেশমুখে রঙ্গম কনভেনশন হলের পেছনে নিয়ে গিয়ে আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে গলাকেটে হত্যা করা হয়।

হাসনাতের স্ট্যাটাস ও ঘটনার পর থেকে তার অনুসারীরা ক্ষোভে ফুঁসছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, এটি ছিল একটি পরিকল্পিত হামলা। আমাদের কণ্ঠরোধ করার জন্য বারবার হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

সমন্বয়ক হাসনাত-সারজিসকে হত্যা চেষ্টা!

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:২১:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুই সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে ট্রাকচাপা দিয়ে হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে। বুধবার (২৭ নভেম্বর) চট্রগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এ হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, শহীদ অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ ভাইয়ের কবর জিয়ারত করে ঢাকায় ফিরছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম। পথিমধ্যে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চট্রগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চুনতি ইউনিয়নের হাজী রাস্তার মোড়ে তাদেরকে ট্রাকচাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়।

লোহাগাড়া থানার দায়িত্বরত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. আলিম বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে একটি আইনগত প্রক্রিয়া চলছে।

এর আগে বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মহানগরের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ মাঠে ওই জানাজায় অংশ নেন হাসনাত আবদুল্লাহ এবং সারজিস আলম।

পরবর্তীতে সাইফুল ইসলাম আলিফের মরদেহ দাফনের পর কবর জিয়ারত করেন তারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী। নিহত আইনজীবীর সাইফুল ইসলাম আলিফ সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) ছিলেন। আলিফ লোহাগাড়ার চুনতি এলাকার জামাল উদ্দিনের ছেলে। ২০১৮ সালে জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হন সাইফুল। পরে তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবেও নিবন্ধন পান।

আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন আইনজীবীরা। মঙ্গলবার জেলা আইনজীবী সমিতির জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এদিকে, আইনজীবীকে হত্যার ঘটনায় চট্টগ্রামে রাতভর অভিযান চালিয়ে ৩০ জনকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। এ ঘটনায় নগরের কোতোয়ালি থানায় দুইটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার বিকেলে সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভরতদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় নিহত হন আইনজীবী আলিফ। এ ছাড়াও পুলিশের ১২ জন সদস্যও আহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

মনে রেখো-শহীদেরা মরে না: দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়ার পর হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লেখেন, ‘মারবা? পারবা না। আমরা আবরার ও আলিফের উত্তরসূরী। মনে রেখো- শহীদেরা মরে না।’

তার এই স্ট্যাটাস দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।

বুধবার বিকেলে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের কবর জিয়ারত শেষে চট্টগ্রাম থেকে ফেরার পথে তারা এই দুর্ঘটনার শিকার হন। তাদের দাবি, এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়; বরং হত্যাচেষ্টা।

হাসনাতের ফেসবুক স্ট্যাটাসে উল্লেখ করা আবরার ফাহাদ ও অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যাকাণ্ড নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ভারতের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে সমালোচনামূলক একটি ফেসবুক পোস্ট দেওয়ার পর তাকে ছাত্রলীগের শেরে বাংলা হলের রুমে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

অন্যদিকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারী মুক্তির দাবিতে সংঘর্ষে গত মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) চট্টগ্রাম আদালত ভবনের প্রবেশমুখে রঙ্গম কনভেনশন হলের পেছনে নিয়ে গিয়ে আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে গলাকেটে হত্যা করা হয়।

হাসনাতের স্ট্যাটাস ও ঘটনার পর থেকে তার অনুসারীরা ক্ষোভে ফুঁসছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, এটি ছিল একটি পরিকল্পিত হামলা। আমাদের কণ্ঠরোধ করার জন্য বারবার হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছে।