বাংলাদেশেও ফেঁসে যাচ্ছে আদানি গ্রুপ
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১০:২৫:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ২৪ বার পড়া হয়েছে
ভারতের অন্যতম শীর্ষ ধনকুবের গৌতম আদানি ও তার ব্যবসায়িক গোষ্ঠী আদানি গ্রপের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে নিউইয়র্কের একটি আদালত। আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগ এমন সময়ে উঠল, যখন ঢাকার হাইকোর্ট আদানি গ্রুপের সঙ্গে এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিযোগপত্র দাখিল ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আদানি গ্রুপ ফেঁসে যেতে পারে। এমনটাই ধারণা জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের।
এদিকে, আদানির বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের বিষয়ে এবং বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করেনি। তবে কর্মকর্তারা জানান, সরকারি পর্যায়ের বিদ্যুৎ সরবরাহ চুক্তি অব্যাহত থাকবে এবং কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিতে হস্তক্ষেপ করার প্রয়োজন নেই।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, আদানি এবং শেখ হাসিনা সরকারের মধ্যে জ্বালানি চুক্তিটি শুরু থেকেই বিতর্কিত ছিল। কারণ, হাসিনার শাসনামলে অন্যান্য জ্বালানি চুক্তির মতো চুক্তিটি টেন্ডারিংয়ের মাধ্যমে করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আদানি একটি চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিল, যা শুরুতে আকর্ষণীয় বলে মনে হয়েছিল। কারণ, এটি বাংলাদেশের চাহিদা মেটাতে অস্ট্রেলিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। বড় কয়লা চালান পরিচালনার জন্য বাংলাদেশের গভীর সমুদ্র বন্দরের অভাব ছিল। তাই আদানির প্রস্তাবটি ছিল গ্রহণ করার মতো। তবে সমালোচকরা বলতে শুরু করেছেন যে, আদানি ভারত সরকারের ভর্তুকি পেয়েছে।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভারত জি টু জি চুক্তির অধীনে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে এবং প্রয়োজন না হলে একটি বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে করা চুক্তির বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে আদানি পাওয়ার ঝাড়খন্ডের গোড্ডা থেকে বাংলাদেশে প্রথম বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে। এই কেন্দ্রটি বানানো হয়েছে শুধু বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর জন্য।
এদিকে কেনিয়ার চুক্তি বাতিলও বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মানসিকভাবে আদানিকে চাপে রাখবে। কেনিয়ার বাতিল করা দুটি চুক্তির মধ্যে একটির অর্থমূল্য প্রায় ২শ’ কোটি মার্কিন ডলার। এ টাকা দিয়ে কেনিয়ার জোমো কেনিয়াত্তা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দ্বিতীয় রানওয়ে নির্মাণের কথা ছিল আদানির। তাছাড়া ৩০ বছর মেয়াদি লিজের আওতায় বিমানবন্দরের যাত্রী টার্মিনালও উন্নত করার কথা ছিল। এ ছাড়া আদানির সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি ৭৩ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলারের সরকারি-বেসরকারি খাতের একটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের চুক্তিও বাতিল করার কথা জানিয়েছেন কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট রুটো। দেশটির প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, তদন্তকারী সংস্থা ও অংশীদার দেশগুলোর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
২০২৩ সালের ফেব্রæয়ারিতে, বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) আদানিকে দামের সংশোধন চেয়ে একটি চিঠি দেয়। আদানি প্রতি মেট্রিক টন ৪০০ মার্কিন ডলার দাম নির্ধারণ করলেও, বিপিডিবি দাবি করে, এর মূল্য ২৫০ মার্কিন ডলারের নিচে হওয়া উচিত, কারণ অন্য কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর জন্য তাদের মূল্য ছিল কম।
গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর, বাংলাদেশের আদানির সঙ্গে ২০১৭ সালের বিদ্যুৎ চুক্তি নতুন সমস্যার সম্মুখীন হয়। আওয়ামী লীগের পতনের পর, বেশ কয়েকটি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যালোচনার আওতায় আসে। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে এক বিশেষ কমিটি গঠন করে হাসিনা সরকারের অধীনে হওয়া চুক্তিগুলোর পুনঃমূল্যায়ন শুরু করা হয়, যার মধ্যে আদানির সঙ্গে করা চুক্তিও ছিল।
এদিকে, ড. মোহাম্মদ ইউনুসের অধীনে অন্তর্বর্তী সরকার আদানি পাওয়ারের সঙ্গে সংলাপ বজায় রেখেছিল, যদিও তারা একসময় বকেয়া বেতনের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ স্থগিত করার হুমকি দেয়। তবে পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখার জন্য এক হাজার ৪৫০ কোটি রুপি দিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রæতি দেয়। সর্বশেষ পদক্ষেপ অনুসারে হাইকোর্ট এই চুক্তির বিষয়ে উচ্চ-পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আশা করা হচ্ছে এটি ঢাকাকে পুরো চুক্তিটি পুনঃমূল্যায়ন করার সুযোগ দিবে এবং আদানি গ্রæপের সঙ্গে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হতে পারে।