সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তি হতে পারে সরকারি চাকরিজীবীদের
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১০:৩১:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ২৩ বার পড়া হয়েছে
সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা সাড়ে ১৫ লাখ। আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে তাদের সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দিতে হবে। প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তা জমা দিতে হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গত ১ সেপ্টেম্বর এই তথ্য জানানো হয়েছে।
সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ (৩০/১২/২০০২ তারিখের সংশোধনীসহ)-এর বিবি-৬৩ অনুযায়ী সকল সরকারি কর্মচারীর জন্য সম্পদ-বিবরণী দাখিল করা আবশ্যক।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ এ লক্ষ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হতে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে সকল সরকারি কর্মচারীকে সম্পদ-বিবরণী দাখিলের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
সম্পদ-বিবরণী প্রদানের সময়সীমা: সকল সরকারি কর্মচারীকে প্রতি অর্থবছরের সম্পদ-বিবরণী ডিসেম্বর মাসের ৩১ তারিখের মধ্যে দাখিল করতে হবে। কেবল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ক্ষেত্রে সম্পদ-বিবরণী ৩০ নভেম্বর ২০২৪ তারিখের মধ্যে দাখিল করতে হবে।
যে কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করতে হবে:
ক. ক্যাডার/নন-ক্যাডার (নবম বা তদূর্ধ্ব গ্রেড) কর্মকর্তা তাঁর নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়/বিভাগের সচিবের নিকট সম্পদ-বিবরণী দাখিল করবেন।
খ. গেজেটেড/নন-গেজেটেড কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ (১০ম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড) নিজ নিজ নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের নিকট তাঁদের সম্পদ-বিবরণী দাখিল করবেন।
জমা প্রদান প্রক্রিয়া:
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত নির্ধারিত ছকে সম্পদ-বিবরণী দাখিল করতে হবে। ছকটি জনপ্রশাসন
ক) মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/সংস্থার নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা যাবে।
খ) সম্পদ-বিবরণীটি সিলগালাকৃত খামে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিতে হবে।
সরকারি চাকরীজীবীর সংখ্যা: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, দেশের ৭ কোটির বেশি মানুষ চাকরি এবং কর্মমুখী নানা ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত। এই বিশাল সংখ্যক মানুষের মধ্যে সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা মাত্র সাড়ে ১৫ লাখ। আর ২০২৩ সালের ২৪ জানুয়ারি সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য শামসুন নাহারের প্রশ্নের জবাবে তৎকালীন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সংসদকে জানান, ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস ২০২১ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন।’
সম্পদ-বিবরণী দাখিল না করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা : নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ-বিবরণী দাখিল করতে ব্যর্থ হলে অথবা কোনো ভুল তথ্য প্রদান কিংবা তথ্য গোপন করা হলে বা সম্পদের কোনোরূপ অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রযোজ্যতা : এই অনুশাসনমালা সব সরকারি কর্মচারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
গোপনীয়তা সংরক্ষণ : ক. আদালতের আদেশ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতীত সম্পদ-বিবরণীর তথ্য সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ হস্তান্তরযোগ্য নয়।
খ. সম্পদ-বিবরণী অতি গোপনীয় দলিল বিধায় এক্ষেত্রে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ প্রযোজ্য হবে না।
পরিবর্তন ও পরিমার্জন: প্রয়োজনের নিরিখে এই নিয়মাবলি সরকার সময়ে সময়ে পরিবর্তন ও পরিমার্জনের এখতিয়ার সংরক্ষণ করে।
সম্পদের বিবরণী জমা না দিলে যে শাস্তি : সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৪(৫) (গ) উপবিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’-এর জন্য ওই বিধিমালার ৪(২) ও ৪ (৩) উপবিধিতে উল্লিখিত যে কোনো লঘুদণ্ড বা গুরুদণ্ড আরোপ করার বিধান রয়েছে।
৪ (২) এ উল্লিখিত লঘুদণ্ড নিম্নরূপ :
ক. তিরস্কার;
খ. চাকরি বা পদ সম্পর্কিত বিধি বা আদেশ অনুযায়ী পদোন্নতি বা আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধির অযোগ্যতার ক্ষেত্র ব্যতীত, নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা;
গ. কর্তব্যে অবহেলা বা সরকারি আদেশ অমান্য করার কারণে সংঘটিত সরকারের আর্থিক ক্ষতির সম্পূর্ণ অংশ বা তার অংশবিশেষ, বেতন বা আনুতোষিক হতে আদায় করা; অথবা
ঘ. বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিতকরণ।
৪(৩) এ উল্লিখিত গুরুদণ্ডসমূহ নিম্নরূপ:
ক. নিম্নপদ বা নিম্নবেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ;
খ. বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান;
গ. চাকরি হইতে অপসারণ;
ঘ. চাকরি হইতে বরখাস্ত করা যাবে।