বাংলাদেশে এখনো গণতন্ত্র ফিরে আসেনি : সালাম
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:১০:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪ ১১ বার পড়া হয়েছে
৭ নভেম্বরের ঘটনা না ঘটলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা থাকতো না। ১৬ডিসেম্বর যেমন বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তেমনি ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার বিপ্লবও একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি বলেন, বিগত প্রায় দেড়যুগ ক্ষমতায় থেকে দেশের গণতন্ত্র বিনষ্ট করেছে, সেইসাথে হাজার হাজার মায়ের বুক খালি করেছে এই খুনি হাসিনা। তিনি বলেন, এই অন্তবর্তীকালীন সরকারকে বিএনপি নিয়ে এসেছে। কারন বিএনপি দেশে গণতন্ত্র পুণরুদ্ধার ও বাকশালী সরকারকে বিতারিত করতে দির্ঘ্য ষোল বছর রাজপথে আন্দোলন করেছে। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর)বিকেলে রাজশাহী মহানগরীর বাটার মোড়ে ঐতিহাসিক বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে রাজশাহী মহানগর ও জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বলেন এই কথাগুলো বলেন।
তিনি বলেন, অন্তঃবর্তিকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ড. ইউনুসের মামলা প্রত্যাহার হলেও তারেক রহমানের নামে করা মামলা চলমান রয়েছে। দলটির অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়েছে। কিন্তু দেশে এখনো গণতন্ত্র ফেরেনি। এই সরকারকে বিএনপি সহযোগিতা করতে চায়। তবে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফেরানোর উদ্যোগ নিতে উপদেষ্টাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে নিরপেক্ষ না হওয়ার আহ্বান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম আরো বলেন, আপানাকে আমরা এনেছি। হাসিনাকে বিদায় করে, অভুত্থানের পরে এই অন্তর্বর্তী সরকার আমরা এনেছি। তাই নিরপেক্ষতার নামে আওয়ামী লীগ যাতে পুনর্বাসিত না হয়, সেইদিকে কিন্তু জনগণ খেয়াল রাখছে।তিনি বলেন, ‘যদি ৭ নভেম্বর না ঘটত, সেদিনই বাংলাদেশের স্বাধীনতা আমরা হারাতাম। তাই আজ আমাদের শপথ নিতে হবে- গত ১৫ বছর ভারতীয় তাঁবেদার সরকার ক্ষমতায় ছিল, ক্ষমতায় থেকে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। সেই তাঁবেদার সরকার আর যাতে ফিরে না আসতে পারে।’
আওয়ামী লীগ বিদায় হলেও দেশে গণতন্ত্র ফেরেনি উল্লেখ করে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনা বিদায় হইছে, এখনও কিন্তু গণতন্ত্র ফিরে আসে নাই। শেখ হাসিনা বিদায় নিছে, এখনও আমাদের নেতা তারেক রহমান ফিরে আসে নাই। তাই এই সরকারকে বলব- নিরপেক্ষ সরকার হওয়ার চেষ্টা কইরেন না। নিরপেক্ষ সরকার না আপনি। আপনাকে আমরা এনেছি।’
আওয়ামী লীগের নেতারা কীভাবে ভারতে পালাচ্ছেন, সে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘আজকের প্রশ্ন করতে চাই রাজশাহীতে। রাজশাহীর যে অবৈধ মেয়র ছিল, জোর করে ক্ষমতা দখলকারী, সেই লিটন আজকে কোথায়? কোথায় আছে? এখন ও পালিয়েইছে, কোথায় গ্রেপ্তার হয় নাই। এই সরকারকে বলি, ভারতীয় সরকারকেও বলি- সীমান্তে কৃষককে হত্যা করা হয়, শ্রমিককে হত্যা করা হয়, ফেলানিকে হত্যা করে তারকাটায় ঝুলাইয়া রাখা হয়। আর সীমান্ত পার হয়ে এই আওয়ামী লীগের হোমড়া-চোমড়ারা কীভাবে আজকে ভারতে যাচ্ছে, এই সরকারের কাছে আমরা জিজ্ঞাসা করতে চাই। আজকে ভারতকেও জিজ্ঞাসা করতে চাই। তাই বলব, তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।’
দ্রব্যমূল্যের দাম কমিয়ে সরকারকে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব জিনিসপত্রের দাম কমান। চাল, ডাল, তেল, লবণের দাম কমান। এখন উপদেষ্টাদের দেখি, তারা প্রায় আড়াইশো স্টেডিয়াম বানানোর পরিকল্পনা করে। স্টেডিয়াম বানানোর কাজ আপনাদের না। আপনাদের কাজ দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করা।’
গণতন্ত্র রক্ষায় নেতাকর্মীদের লাঠি প্র¯‘ত রাখার নির্দেশনা দিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘আপনারা ১৭ বছর ধৈর্য্য ধরেছেন। আরও কয়েক মাস একটু ধৈর্য্য ধরেন। ধৈর্য্য ধরা মানে এই না যে রাজপথ ছেড়ে দিতে হবে। ধৈর্য্য ধরা মানে এই না যে লাঠিটা আওয়ামী লীগকে মেরেছিলেন, ঐ লাঠিটা ফেলে দিতে হবে সেটা না। ঐ লাঠিটা স্বযত্নে রাখবেন। যতি আবার গণতন্ত্র ভুলণ্ঠিত হওয়ার জন্য কেউ ষড়যন্ত্র করে, ওই ষড়যন্ত্রকারীর মাঠে লাঠি ভাঙার জন্য সব সময় প্র¯‘ত থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র রক্ষা করতে হলে বিএনপি, তারেক রহমান, বেগম খালেদা জিয়ার কোন বিকল্প নেই। আগামী নির্বাচনে আমরা আশা করি, আমাদের সাথে আন্দোলনকারী যে রাজনৈতিক দল ছিল, সবার সাথে আমরা নির্বাচন করব। একসাথে আমরা নির্বাচন করব। ঐক্য যেন নষ্ট না হয়। সবার সঙ্গে ঐক্য ধরে রাখতে হবে। এটাই তারেক রহমানের নির্দেশ।
রাজশাহীতে নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিভেদের দিকে ইঙ্গিত করে দলের কেন্দ্রীয় এই নেতা বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধভাবেই রাজশাহীকে গড়ে তুলতে হবে। এখানে বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা আছেন, সদস্য সচিব মামুন অর রশিদ মামুন আছেন। এর বাইরে রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু আছেন। সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল আছেন। আছেন এডভোকেট শফিকুল হক মিলন। ঐক্যবদ্ধভাবেই কিন্তু রাজশাহীকে গড়ে তুলতে হবে। যদি রাজশাহী মহানগরীতে ঐক্য নষ্ট হয়, এই কয়জন নেতা দায়ী থাকবেন। তারেক রহমানের নির্দেশ- ঐক্যবদ্ধভাবে সংগঠন করে তুলতে হবে। বড় নেতা যাঁরা, তাঁদের দায়িত্ব বেশি। সেই দায়িত্ব আপনারা পালন করবেন। এটাই আমরা প্রত্যাশা করেন তিনি।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈসা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শফিকুল হক মিলন, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বিএনপি রাজশাহী জেলা শাখার আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদ, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বিএনপি রাজশাহী জেলার সিনিয়র সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম মার্শাল, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজশাহী জেলা বিএনপি’র সদস্য দেবাশিষ রায় মধু, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজশাহী জেলা বিএনপি’র সদস্য আবু বকর সিদ্দিক।
মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব মামুনুর রশিদ এর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন জেরা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি এডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন তপু, রাজশাহী নগরের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা, যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন, ওয়ালিউল হক রানা, শফিকুল ইসলাম শাফিক, জয়নাল আবেদিন শিবলী ও বজলুর হক মন্টু, জেলা বিএনপি’র সদস্য রায়হানুল আলম রায়হান, গোলাম মোস্তফা মামুন, তাজমুল তান টুটুল, মিজানুর রহমান মিজান, জাকিরুল ইসলাম বিকুল।
এছাড়াও যুবদল রাজশাহী মহানগরের সাবেক সভাপতি বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ সুইট, রাজশাহী মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান রিটন, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মোজাদ্দেদ জামানী সুমন, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক মাসুদুর রহমান সজন, যুবদল রাজশাহী মহানগরের সাবেক আহ্বায়ক আব্দুল কাদের বকুল, জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সাল সরকার ডিকো, যুবদল রাজশাহী মহানগরের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক শরিফুল ইসলাম জনি, সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম রবি।
রাজশাহী মহানগর কৃষক দলের আহ্বায়ক শরফুজ্জামান শামীম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাসুদুর রহমান সৌরভ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরফিন কনক, সদস্য সচিব শাহরিয়ার আমিন বিপুল, মহানগর স্বে”ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান জনি, মহানগর শ্রমিক দলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম পাখি ও সাধারণ সম্পাদক রফিকউদ্দিন, জেলা মহিলা দলের সভাপতি সামসাদ বেগম মিতালী, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা রোমেনা হোসেন, মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি আকবর আলী জ্যাকি, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাকসুদুর রহমান সৌরভসহ রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের আহ্বায়ক, সদস্য সচিব ও যুগ্ম আহ্বায়কসহ অন্যান্য নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে শেষে বাটার মোড় থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি আলুপট্টি মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এই শোভাযাত্রায় জেলা ও মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।