সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টার বক্তব্য অবৈজ্ঞানিক
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:৫০:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০২৪ ১১ বার পড়া হয়েছে
সেন্টমার্টিনের নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপ নিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টার বক্তব্য অবৈজ্ঞানিক ও বাস্তবতা বিবর্জিত বলে দাবি সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ছাত্র আন্দোলনের সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’। বিক্ষোভ সমাবেশে সদস্যরা পরিবেশ উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, পরিবেশ দূষণ রোধ প্রথম আপনার নিজের বাসা ও অফিস থেকে শুরু করুন। আপনার বাসা, অফিস ও গাড়িতে এসি বন্ধ করে দিন। কারণ এসিতে পরিবেশ দূষণ হয়। আপনি আগে নিজে পরিবেশ দূষণমুক্ত হোন।
শুক্রবার (৮ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন। তারা বলেন, নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপে যাতায়াত ও অবস্থানে সরকারি বাধা দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকী হয়ে দাঁড়াবে পরিবেশ উপদেষ্টাকে বাস্তবসম্মত এবং দেশ ও জনগণের পক্ষ হয়ে কথা বলার আহবান জানান।
ঢাবি শিক্ষার্থী ও স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক বলেন, বিদেশী জার্নালের রেফারেন্স টেনে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেছেন পর্যটকরা কোরাল তুলে নিয়ে যাচ্ছে, তাই ২০৪৫ সালের মধ্যে নাকি সকল কোরাল ক্ষয় হয়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ (নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপ) ডুবে যাবে! পরিবেশ উপদেষ্টার এই কথা সম্পূর্ণ অবাস্তব ও অবৈজ্ঞানিক। উপদেষ্টা কখনও দ্বীপে গিয়েছেন কি না, অথবা গিয়ে কখনও এসব জানার চেষ্টা করেছেন কি না সেটা আমরা জানি না। তবে গিয়ে থাকলে এমন অবাস্তব কথা তিনি বলতে পারতেন না।
বাস্তবতা হচ্ছে- দ্বীপের কোরালগুলো অনেক বড়, অনেক ওজন, অনেক ধারালো এবং পানির অনেক নিচে থাকে যেগুলো মানুষের পক্ষে তুলে আনা সম্ভব নয়। কোরাল নিয়ে আসা তো দূরের কথা, জীবন্ত কোরালে হাত দিলেই হাত কেটে যায়। তাই কথিত বিদেশী জার্নাল কিংবা পরিবেশবাদীদের কোরাল নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে যে বক্তব্য সেটি অসত্য ও মিথ্যা প্রচারণা। মূলত প্রাকৃতিক কারণেই কিছু কোরাল মারা যায়। আবার নতুন কোরাল জন্মায়। পর্যটকদের কেউ কেউ সাগরে ভেসে ওঠা সেই মৃত কোরাল অনেক সময় নিয়ে আসেন যেটাতে দ্বীপ কিংবা পরিবেশের ক্ষতি নয় বরং উপকার হয়, সাগর পরিচ্ছন্ন থাকে। তারপরেও সেসব মৃত কোরাল আনার ব্যাপারে যদি নিষেধাজ্ঞা থাকে সেটা সরকারিভাবে বাস্তবায়ন করলেই সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু মিথ্যা অজুহাতে দ্বীপে যাওয়া ও অবস্থানের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার রহস্য জনগণ জানতে চায়।
আরো বাস্তবতা হচ্ছে- নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপ শুধু কোরাল দিয়েই তৈরী নয়, শক্ত পাথর দিয়েও তৈরী। কোরাল নয়, শক্ত পাথরই এর মূল ভিত্তি। তাই কোরাল যদি তুলেও নেয়া হয়, তবুও পাথরের ভিত্তির উপর দ্বীপ টিকে থাকবে। কাজেই ২০৪৫ সালের মধ্যে দ্বীপ হারিয়ে যাবে’ বিদেশী জার্নালের এই বক্তব্য সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, অবৈজ্ঞানিক, কল্পনাপ্রসূত এবং এটাকে কন্সপিরেসি থিউরি (ষড়যন্ত্র তত্ত্ব) বললে অত্যুক্তি হবে না।
দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে- অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনের কারণেই নারিকেল দ্বীপ ২০৪৫ সালের মধ্যে তলিয়ে যাবে মর্মে বিদেশী জার্নালের যেই বক্তব্য প্রচার হচ্ছে সেটি পরিবেশবাদীদেরকে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করতে হবে। সেখানে গবেষক টীমে কারা ছিল, তারা কোন মতবাদে বিশ্বাসী অর্থাৎ তাদের গবেষণাটি কতটুকু সঠিক কিংবা বায়াসড ছিল, তাদের ফান্ডিং করেছে কোন সংস্থা, তাদের উদ্দেশ্য কী, রিচার্চের মেথডোলজি কতটুকু বিজ্ঞানসম্মত ছিল, মাঠ পযায়ে কয়দিন গিয়েছে, কী কী বিষয়ের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে, কার কার বক্তব্য নিয়েছে, যাদের বক্তব্য নিয়েছে তারা কারা অর্থাৎ কথিত বিদেশী জার্নালের গবেষণার সম্পূর্ণ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। কিন্তু দু:খের বিষয় হচ্ছে- এসব কিছুই খতিয়ে না দেখে দু’একটি বিদেশী জার্নালের রেফারেন্সে দেশীয় শিল্প বন্ধ করে দেয়া হলো, আয়-রোজগারের পথ বন্ধ করে দিয়ে দ্বীপবাসীদের চরম মৌলিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হলো।
আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাচ্ছি- পরিবেশ উপদেষ্টা বিদেশী পরামর্শে চলছেন কিন্তু দেশের মানুষের পরামর্শ ও দাবী-দাওয়াকে পাত্তা দিচ্ছেন না। বিদেশী জার্নালের পরামর্শে তিনি নিজ দেশের পর্যটন শিল্প ও দ্বীপবাসীকে একটা মারাত্বক ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। যেটা কোনো দেশপ্রেমিক মানুষের কাজ হতে পারে না।
তৃতীয় বিষয় হচ্ছে, পরিবেশবাদীরা বলছে, দ্বীপের কোরাল ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বিজ্ঞান বলছে, কোরাল ক্ষয় হয় না, বরং প্রতি বছর গড়ে প্রায় ০.৫-২.৮ সেমি হারে বৃদ্ধি পায়। দ্বীপে সরেজমিনে দেখা যায়, মৃত কোরাল জমে দ্বীপের আয়তন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু পরিবেশ উপদেষ্টা বলছেন, কোরাল ক্ষয়ে নাকি দ্বীপ হারিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ উপদেষ্টার বক্তব্যের সাথে বিজ্ঞান ও বাস্তবতার মিল পাওয়া যায় না।
স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’র যুগ্ম আহ্বায়ক ঢাবি শিক্ষার্থী মুহিউদ্দীন রাহাত বলেন, বাস্তবে নারিকেল দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি হচ্ছে বেওয়ারিশ কুকুর। দ্বীপে কুকুরের মাত্রাতিরিক্ত আধিক্য জীববৈচিত্র্যের ধ্বংস ডেকে আনছে। ক্ষুধার্ত কুকুরের পাল সৈকতে আসা লাল কাকড়াকে আক্রমণ করে, কচ্ছপের ডিম খেয়ে ফেলে। দ্বীপে আনুমানিক ৫ থেকে ৬ হাজার বেওয়ারিশ কুকুর ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু দ্বীপ থেকে সেই কুকুর অপসারণ করে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করার কোনো উদ্যোগ পরিবেশ উপদেষ্টা এখন পযন্ত নেননি। উপদেষশ্টা মহোদয় বৈদেশিক পরামর্শে চলছেন। তার সিদ্ধান্ত বরং পরিবেশকে যারা রক্ষা করেন সেই মানুষ অর্থাৎ দ্বীপবাসীকে বাস্তুচ্যূত করবে। এছাড়া উপদেষ্টা থাইল্যান্ডসহ বিদেশী পর্যটন স্পটের উদাহরণ টেনে বাংলাদেশের নারিকেল দ্বীপে যাওয়ার ব্যাপারে কথা বলেছেন। উপদেষ্টাকে আমরা বলবো- আমাদের নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপ ভ্রমণ মাত্র চার মাসের জন্য হয়ে থাকে, বাকী আট মাস বন্ধ থাকে। কিন্তু অন্যান্য দেশের দ্বীপগুলো দুই তিন মাস বন্ধ থাকে। বাকী সময়গুলো খোলা থাকে। সেটি কেন বললেন না?
মুহিউদ্দীন রাহাত বলেন, আমাদের দ্বীপটি ভৌগলিক অবস্থানগতভাবে অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি অবস্থানে রয়েছে। দ্বীপে ভ্রমণ বন্ধ রাখলে এক সময় দ্বীপ জনশূণ্য হয়ে যাবে। পার্শবর্তী মিয়ানমারের মগ, আরাকানী ও ভারতের জেলেরা একসময় দ্বীপটি দখলে নেয়ার চেষ্টা চালাবে। ইতিমধ্যেই মিয়ানমার ও আরাকান আর্মি দ্বীপটিকে একাধিকবার তাদের বলে দাবিও করেছে। অর্থাৎ দেশের অখণ্ডতা রক্ষার তাগিদেই নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপকে সবসময় জনবান্ধব ও জনগণের আসা যাওয়াকে উৎসাহিত করতে হবে। পরিবেশবাদসহ কোনো কিছু্র অজুহাতেই দ্বীপ ভ্রমণে বাধা দিলে দ্বীপটি আমাদের হাত ছাড়া হয়ে যেতে পারে।