বিদ্যুৎবিভ্রাটে ভোগান্তিতে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ লাখ শিক্ষার্থী

শাহ জালাল, বরিশাল
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:০৪:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সাম্প্রতিককালের নজিরবিহীন বিদ্যুৎ ঘাটতিতে ভয়াবহ বিপর্যয়ে দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষের দুর্ভোগ আরো দীর্ঘায়িত হচ্ছে। নগর মহানগর থেকে সুদুর পল্লী এলাকার প্রায় ৩০ লাখ বিদ্যুৎ গ্রাহকের দুর্ভোগের কোন শেষ নেই। সন্ধ্য পীক আওয়ারে প্রায় ৯শ মেগাওয়াট চাহিদার বিরীতে দক্ষিণাঞ্চলে গত কয়েকদিন ধরে সরবারহ ৫শ মেগাওয়াটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে।

ভারতীয় আদানী এবং পায়রা, রামপাল, মাতারবাড়ী সহ কয়লা ভিত্তিক বেশ কয়েকটি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন হ্রাসের ফলে জাতীয় গ্রীডে সরবারহ সংকটজনক পর্যায়ে পৌঁচেছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের। ফলে সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার ৪২টি উপজেলায় সকাল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত বিদ্যুৎ ঘাটতি মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। শিল্প ও ব্যবসা-বানিজ্যের অবস্থা ক্রমশ নাজুক হচ্ছে। বেশীরভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানেই প্রতি শিফটে ২-৩ ঘন্টা পর্যন্ত উৎপাদন বন্ধ থাকলেও শ্রমিকদের বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে। ফলে লোকসান ঝুঁকির মুখে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানই বিকল্প পথ খুঁজছে।

ব্যবসা-বানিজ্যের অবস্থাও করুণ। হেমন্তের অস্বাভাবিক তাপমাত্রায় জনজীবনে দুর্ভেগের মাত্রা আরো বৃদ্ধি করছে বিদ্যুৎ সংকট। বিশেষকরে সন্ধ্যার পরে লোডশেডিংয়ে গ্রাহকশূন্য হয়ে পড়ায় ব্যবসায়ীরা ধুকছে বেচা বিক্রী নিয়ে।

তবে শিল্প ও ব্যবসা ক্ষেত্রে ঝুঁকির চেয়েও চরম অনিশ্চয়তা তৈরী করছে শিক্ষা ক্ষেত্রে। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও মাদ্রাসাগুলোতে বার্ষিক চূড়ান্ত পরীক্ষার আগের এই বিদ্যুৎ ঘাটতি দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ১১ লাখ ছাত্র-ছাত্রীকে চরম অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিচ্ছে। বরিশাল মহানগরী সহ এ অঞ্চলের শহরগুলোতেও সন্ধ্যা থেকে নূন্যতম দু দফায় ১ঘন্টা করে লোডশেডিং পল্লী এলাকায় আরো দীর্ঘায়িত হচ্ছে। ফলে গ্রামে-গঞ্জের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ।

দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পনী ওজোপাডিকোর প্রায় ৪ লাখ গ্রাহক ছাড়াও ৬টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আরো ২৪ লাখ গ্রাহকের মাধ্যমেই এই অঞ্চলের প্রায় কোটি মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতাভুক্ত হলেও এখন প্রতিদিন ৪-৬ ঘন্টারও বেশী অন্ধকারে থাকছে সবাই। কবে যে এই সংকট থেকে উত্তরন ঘটবে তা বলতে পারছেন না বিতরন প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বশীল মহল।

তবে বরিশাল অঞ্চলে সরকারী-আধা সরকারী এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎপাদিত প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সরবারহ করা হলেও সেখানে থেকে এই অঞ্চলের চাহিদা মাফিক ডে-পীক আওয়ারে ৬শ মেগাওয়াট এবং ফুল-পীক আওয়ারে ৯শ মেগাওয়াটের অর্ধেকের বেশী বিদ্যুৎ মিলছে না।

অপরদিকে, ভঙ্গুর বিতরণ ব্যবস্থার কারনেও বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের সর্বত্রই গ্রাহকের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছান নিয়ে বিড়ম্বনার শেষ নেই। এ অঞ্চলে ওজোপাডিকো এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো গ্রাহক সেবার বিষয়টি সুষ্ঠু বিবেচনায় নিয়ে বিতরন ও সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নত করতে পারেনি। এখনো সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত ব্যবস্থা সহ নিবিড় গ্রাহক সেবা গড়ে তুলতে পারেনি বিদ্যুৎ বিতরন প্রতিষ্ঠানগুলো। এমনকি পিডিবি থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া লাইনসহ বিদ্যুৎ স্থাপনা নিয়ে গঠিত হবার প্রায় দুই দশক পরেও ওজোপাডিকো সুষ্ঠু বিতরন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ বলেও অভিযোগ গ্রাহকদের।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো সুদুর পল্লী এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরনে অতিরিক্ত টেকসইসহ ভিন্ন নকশায় লাইন ও সাব-স্টেশনসমুহ গড়ে তুললেও দীর্ঘ দিনেও তারা সঠিক পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে পারেনি বলে সমান অভিযোগ গ্রাহকদের।

এসব বিষয়ে ওজোপাডিকো এবং বিভিন্ন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দায়িত্বশীল মহলের দাবী, বিদ্যুৎ ঘাটতির বিষয়টি তাদের হাতে নেই। তবে সুষ্ঠু বিতরন ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে সম্ভব সব প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

বিদ্যুৎবিভ্রাটে ভোগান্তিতে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ লাখ শিক্ষার্থী

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:০৪:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪

সাম্প্রতিককালের নজিরবিহীন বিদ্যুৎ ঘাটতিতে ভয়াবহ বিপর্যয়ে দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষের দুর্ভোগ আরো দীর্ঘায়িত হচ্ছে। নগর মহানগর থেকে সুদুর পল্লী এলাকার প্রায় ৩০ লাখ বিদ্যুৎ গ্রাহকের দুর্ভোগের কোন শেষ নেই। সন্ধ্য পীক আওয়ারে প্রায় ৯শ মেগাওয়াট চাহিদার বিরীতে দক্ষিণাঞ্চলে গত কয়েকদিন ধরে সরবারহ ৫শ মেগাওয়াটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে।

ভারতীয় আদানী এবং পায়রা, রামপাল, মাতারবাড়ী সহ কয়লা ভিত্তিক বেশ কয়েকটি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন হ্রাসের ফলে জাতীয় গ্রীডে সরবারহ সংকটজনক পর্যায়ে পৌঁচেছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের। ফলে সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার ৪২টি উপজেলায় সকাল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত বিদ্যুৎ ঘাটতি মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। শিল্প ও ব্যবসা-বানিজ্যের অবস্থা ক্রমশ নাজুক হচ্ছে। বেশীরভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানেই প্রতি শিফটে ২-৩ ঘন্টা পর্যন্ত উৎপাদন বন্ধ থাকলেও শ্রমিকদের বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে। ফলে লোকসান ঝুঁকির মুখে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানই বিকল্প পথ খুঁজছে।

ব্যবসা-বানিজ্যের অবস্থাও করুণ। হেমন্তের অস্বাভাবিক তাপমাত্রায় জনজীবনে দুর্ভেগের মাত্রা আরো বৃদ্ধি করছে বিদ্যুৎ সংকট। বিশেষকরে সন্ধ্যার পরে লোডশেডিংয়ে গ্রাহকশূন্য হয়ে পড়ায় ব্যবসায়ীরা ধুকছে বেচা বিক্রী নিয়ে।

তবে শিল্প ও ব্যবসা ক্ষেত্রে ঝুঁকির চেয়েও চরম অনিশ্চয়তা তৈরী করছে শিক্ষা ক্ষেত্রে। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও মাদ্রাসাগুলোতে বার্ষিক চূড়ান্ত পরীক্ষার আগের এই বিদ্যুৎ ঘাটতি দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ১১ লাখ ছাত্র-ছাত্রীকে চরম অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিচ্ছে। বরিশাল মহানগরী সহ এ অঞ্চলের শহরগুলোতেও সন্ধ্যা থেকে নূন্যতম দু দফায় ১ঘন্টা করে লোডশেডিং পল্লী এলাকায় আরো দীর্ঘায়িত হচ্ছে। ফলে গ্রামে-গঞ্জের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ।

দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পনী ওজোপাডিকোর প্রায় ৪ লাখ গ্রাহক ছাড়াও ৬টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আরো ২৪ লাখ গ্রাহকের মাধ্যমেই এই অঞ্চলের প্রায় কোটি মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতাভুক্ত হলেও এখন প্রতিদিন ৪-৬ ঘন্টারও বেশী অন্ধকারে থাকছে সবাই। কবে যে এই সংকট থেকে উত্তরন ঘটবে তা বলতে পারছেন না বিতরন প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বশীল মহল।

তবে বরিশাল অঞ্চলে সরকারী-আধা সরকারী এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎপাদিত প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সরবারহ করা হলেও সেখানে থেকে এই অঞ্চলের চাহিদা মাফিক ডে-পীক আওয়ারে ৬শ মেগাওয়াট এবং ফুল-পীক আওয়ারে ৯শ মেগাওয়াটের অর্ধেকের বেশী বিদ্যুৎ মিলছে না।

অপরদিকে, ভঙ্গুর বিতরণ ব্যবস্থার কারনেও বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের সর্বত্রই গ্রাহকের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছান নিয়ে বিড়ম্বনার শেষ নেই। এ অঞ্চলে ওজোপাডিকো এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো গ্রাহক সেবার বিষয়টি সুষ্ঠু বিবেচনায় নিয়ে বিতরন ও সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নত করতে পারেনি। এখনো সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত ব্যবস্থা সহ নিবিড় গ্রাহক সেবা গড়ে তুলতে পারেনি বিদ্যুৎ বিতরন প্রতিষ্ঠানগুলো। এমনকি পিডিবি থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া লাইনসহ বিদ্যুৎ স্থাপনা নিয়ে গঠিত হবার প্রায় দুই দশক পরেও ওজোপাডিকো সুষ্ঠু বিতরন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ বলেও অভিযোগ গ্রাহকদের।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো সুদুর পল্লী এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরনে অতিরিক্ত টেকসইসহ ভিন্ন নকশায় লাইন ও সাব-স্টেশনসমুহ গড়ে তুললেও দীর্ঘ দিনেও তারা সঠিক পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে পারেনি বলে সমান অভিযোগ গ্রাহকদের।

এসব বিষয়ে ওজোপাডিকো এবং বিভিন্ন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দায়িত্বশীল মহলের দাবী, বিদ্যুৎ ঘাটতির বিষয়টি তাদের হাতে নেই। তবে সুষ্ঠু বিতরন ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে সম্ভব সব প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।