ঢাকা ০৮:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আটকে গেল কৃষিপণ্যের ট্রেনের চাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:২৯:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪ ১৮ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কৃষকের উৎপাদিত সবজি ঢাকার বাজারে কম খরচে সরবরাহের জন্য চালু হয়েছিল ‘কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন’। তবে সাড়া না পাওয়ায় শুরুতেই বন্ধ হয়ে গেছে ৬টি রুটের ৫টিতেই এই বিশেষ ট্রেন। কৃষকদের আগ্রহ না থাকায় উদ্বোধনের দিনই এই পাঁচ রুট থেকে খালি ট্রেন ঢাকায় এসেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাস্তবতা নিরূপণ না করে চালু করায় মুখ থুবড়ে পড়েছে এই উদ্যোগ। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, ছয়টি রুটে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন চালু হয়েছিল। কৃষকদের সাড়া না পাওয়া এবং খরচ তুলতে না পারায় পাঁচটি রুটে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আপাতত ঢাকা-খুলনা রুটের ট্রেনটি চালু থাকছে।

পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখতে সম্প্রতি চীন থেকে আনা আধুনিক কোচ সংযুক্ত করা হয়েছিল এই ট্রেনে। এছাড়াও রাখা হয়েছিল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বগি। তবে কোথাও কৃষকদের সাড়া না পাওয়ায় শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়ে এ উদ্যোগ। কোথাও হয়নি প্রচার-প্রচারণা আবার কোথাও যাতায়াত সমস্যা কিংবা, পরিবহন খরচ সড়কপথের তুলনায় বেশি। যদিও সংশ্লিষ্টরা আশা করেছিলেন ট্রেনে কৃষিপণ্য আনা হলে মধ্যস্বত্বভোগী ও আড়তদারের দৌরাত্ম্য কমবে, অন্যদিকে কমবে দামও। একই সঙ্গে রাজধানীবাসী পাবে টাটকা সবজি।

গত শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে কৃষিপণ্যের ট্রেন ছেড়ে আসে ঢাকায়। রেলওয়ে কর্মকর্তারা যোগাযোগ করেও কৃষি উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ীদের কোনো সাড়া পাননি। রহনপুর রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার মামুন আলী বলেন, কোনো বুকিং না হওয়ায় ওয়াগন ফাঁকা রেখে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেনটি রহনপুর থেকে আজ ছেড়ে গেছে। পরে নাচোল ও আমনুরা স্টেশনে থামলেও সেখানেও কোনো বুকিং হয়নি। ফলে ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে কৃষিপণ্য ছাড়াই ছেড়ে গেছে।

ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে মামুনুর রশীদ জানান, ১ নভেম্বর তাদের জানানো হয়, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন। তবে কেন বন্ধ হচ্ছে তা জানানো হয়নি।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, রহনপুর-ঢাকা রুটে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেনটিতে পাঁচটি লাগেজ ভ্যান বগি। এর মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বগি একটি, বাকি চারটি সাধারণ বগি। অত্যাধুনিক লাগেজ ভ্যানে কৃষিপণ্যের মধ্যে ফল, সবজি ছাড়াও রেফ্রিজারেটেড লাগেজ ভ্যানে হিমায়িত মাছ, মাংস ও দুধ পরিবহনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। কৃষক ও ব্যবসায়ীদের ঢাকায় যাওয়ার জন্য ছিল ব্যবস্থা। সবজির সঙ্গে তাদের বিনা ভাড়ায় যাওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছিল ট্রেনটিতে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, প্রতি কেজি কৃষিপণ্য খুলনা থেকে ঢাকা পর্যন্ত ১ টাকা ৪৭ পয়সা, যশোর থেকে ঢাকা ১ টাকা ৩৫ পয়সা, চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকা ১ টাকা ৩০ পয়সা, ঈশ্বরদী থেকে ঢাকা ১ টাকা ৮ পয়সা, পার্বতীপুর থেকে ঢাকা ১ টাকা ৩৪ পয়সা, জয়পুরহাট থেকে ঢাকায় ১ টাকা ৩০ পয়সা, সান্তাহার থেকে ঢাকা ১ টাকা ১৯ পয়সা, রাজশাহী থেকে ঢাকা ১ টাকা ১৮ পয়সা, রহনপুর থেকে ঢাকা ১ টাকা ৩০ পয়সা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল।

ব্যবসায়ীদের দাবি, মূল ভাড়া কম থাকলেও কুলি ও অন্য পরিবহন খরচ মিলে সড়কপথের চেয়ে ট্রেনে খরচ পড়ছে বেশি। আরেকদিকে ট্রেনের সময় সকালে হওয়ায় বাজারজাত নিয়েও রয়েছে নানা শঙ্কা। তবে বিকাল কিংবা রাতে ট্রেনটি যাত্রা শুরু করলে দিনের কৃষিপণ্য তুলে রাতভর পরিবহন করে সকালে মোকামে পৌঁছনো যায়। এ ছাড়া ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়সহ নানা কারণে সময়মতো মালামাল পৌঁছাতে না পারলে ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়েও শঙ্কা কৃষক ও ব্যবসায়ীদের।

ব্যবসায়ী আরাফাত রহমান বলেন, ট্রেন থেকে পিকআপে কৃষিপণ্য পরিবহনে খরচ অনেক কম। এছাড়া আরও অনেক সুবিধা আছে। ট্রেনে পণ্য পরিবহনে কুলি খরচ, ফসলের মাঠ থেকে স্টেশন এবং সেখান থেকে মোকামের আলাদা খরচ লাগে। কিন্তু পিকআপে সরাসরি জমি থেকে মোকাম পর্যন্ত পণ্য পৌঁছানো যায়। তাতে খরচ হয় দুই থেকে আড়াই টাকা প্রতি কেজি। হিসাব করে দেখেছি, পিকআপে না পাঠিয়ে ট্রেনে পণ্য পরিবহনে কেজিপ্রতি ৩ টাকা বেশি খরচ হবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আজম খান বলেন, এ ধরনের উদ্যোগটা আমাদের দেশে নতুন, এ কারণে সরকারকে সাধুবাদ জানাতে হয়। তবে যাদের এই দায়িত্বটা দেওয়া হয়েছে, তারা বাস্তবতা নিরীক্ষা করেননি। আমাদের দেশ ক্ষুদ্র কৃষিনির্ভর। একজন কৃষকের ২-৫ মণ পণ্যও হয়। এটা ট্রেনে নেওয়ার একটা খরচ আছে। আবার এই পণ্য ঢাকায় নিয়ে ন্যায্যমূল্য পাওয়ার অনিশ্চয়তা আছে। কৃষকদের এই সমস্যাগুলোর আগে সুরাহা করতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

আটকে গেল কৃষিপণ্যের ট্রেনের চাকা

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:২৯:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪

কৃষকের উৎপাদিত সবজি ঢাকার বাজারে কম খরচে সরবরাহের জন্য চালু হয়েছিল ‘কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন’। তবে সাড়া না পাওয়ায় শুরুতেই বন্ধ হয়ে গেছে ৬টি রুটের ৫টিতেই এই বিশেষ ট্রেন। কৃষকদের আগ্রহ না থাকায় উদ্বোধনের দিনই এই পাঁচ রুট থেকে খালি ট্রেন ঢাকায় এসেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাস্তবতা নিরূপণ না করে চালু করায় মুখ থুবড়ে পড়েছে এই উদ্যোগ। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, ছয়টি রুটে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন চালু হয়েছিল। কৃষকদের সাড়া না পাওয়া এবং খরচ তুলতে না পারায় পাঁচটি রুটে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আপাতত ঢাকা-খুলনা রুটের ট্রেনটি চালু থাকছে।

পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখতে সম্প্রতি চীন থেকে আনা আধুনিক কোচ সংযুক্ত করা হয়েছিল এই ট্রেনে। এছাড়াও রাখা হয়েছিল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বগি। তবে কোথাও কৃষকদের সাড়া না পাওয়ায় শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়ে এ উদ্যোগ। কোথাও হয়নি প্রচার-প্রচারণা আবার কোথাও যাতায়াত সমস্যা কিংবা, পরিবহন খরচ সড়কপথের তুলনায় বেশি। যদিও সংশ্লিষ্টরা আশা করেছিলেন ট্রেনে কৃষিপণ্য আনা হলে মধ্যস্বত্বভোগী ও আড়তদারের দৌরাত্ম্য কমবে, অন্যদিকে কমবে দামও। একই সঙ্গে রাজধানীবাসী পাবে টাটকা সবজি।

গত শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে কৃষিপণ্যের ট্রেন ছেড়ে আসে ঢাকায়। রেলওয়ে কর্মকর্তারা যোগাযোগ করেও কৃষি উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ীদের কোনো সাড়া পাননি। রহনপুর রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার মামুন আলী বলেন, কোনো বুকিং না হওয়ায় ওয়াগন ফাঁকা রেখে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেনটি রহনপুর থেকে আজ ছেড়ে গেছে। পরে নাচোল ও আমনুরা স্টেশনে থামলেও সেখানেও কোনো বুকিং হয়নি। ফলে ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে কৃষিপণ্য ছাড়াই ছেড়ে গেছে।

ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে মামুনুর রশীদ জানান, ১ নভেম্বর তাদের জানানো হয়, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন। তবে কেন বন্ধ হচ্ছে তা জানানো হয়নি।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, রহনপুর-ঢাকা রুটে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেনটিতে পাঁচটি লাগেজ ভ্যান বগি। এর মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বগি একটি, বাকি চারটি সাধারণ বগি। অত্যাধুনিক লাগেজ ভ্যানে কৃষিপণ্যের মধ্যে ফল, সবজি ছাড়াও রেফ্রিজারেটেড লাগেজ ভ্যানে হিমায়িত মাছ, মাংস ও দুধ পরিবহনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। কৃষক ও ব্যবসায়ীদের ঢাকায় যাওয়ার জন্য ছিল ব্যবস্থা। সবজির সঙ্গে তাদের বিনা ভাড়ায় যাওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছিল ট্রেনটিতে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, প্রতি কেজি কৃষিপণ্য খুলনা থেকে ঢাকা পর্যন্ত ১ টাকা ৪৭ পয়সা, যশোর থেকে ঢাকা ১ টাকা ৩৫ পয়সা, চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকা ১ টাকা ৩০ পয়সা, ঈশ্বরদী থেকে ঢাকা ১ টাকা ৮ পয়সা, পার্বতীপুর থেকে ঢাকা ১ টাকা ৩৪ পয়সা, জয়পুরহাট থেকে ঢাকায় ১ টাকা ৩০ পয়সা, সান্তাহার থেকে ঢাকা ১ টাকা ১৯ পয়সা, রাজশাহী থেকে ঢাকা ১ টাকা ১৮ পয়সা, রহনপুর থেকে ঢাকা ১ টাকা ৩০ পয়সা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল।

ব্যবসায়ীদের দাবি, মূল ভাড়া কম থাকলেও কুলি ও অন্য পরিবহন খরচ মিলে সড়কপথের চেয়ে ট্রেনে খরচ পড়ছে বেশি। আরেকদিকে ট্রেনের সময় সকালে হওয়ায় বাজারজাত নিয়েও রয়েছে নানা শঙ্কা। তবে বিকাল কিংবা রাতে ট্রেনটি যাত্রা শুরু করলে দিনের কৃষিপণ্য তুলে রাতভর পরিবহন করে সকালে মোকামে পৌঁছনো যায়। এ ছাড়া ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়সহ নানা কারণে সময়মতো মালামাল পৌঁছাতে না পারলে ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়েও শঙ্কা কৃষক ও ব্যবসায়ীদের।

ব্যবসায়ী আরাফাত রহমান বলেন, ট্রেন থেকে পিকআপে কৃষিপণ্য পরিবহনে খরচ অনেক কম। এছাড়া আরও অনেক সুবিধা আছে। ট্রেনে পণ্য পরিবহনে কুলি খরচ, ফসলের মাঠ থেকে স্টেশন এবং সেখান থেকে মোকামের আলাদা খরচ লাগে। কিন্তু পিকআপে সরাসরি জমি থেকে মোকাম পর্যন্ত পণ্য পৌঁছানো যায়। তাতে খরচ হয় দুই থেকে আড়াই টাকা প্রতি কেজি। হিসাব করে দেখেছি, পিকআপে না পাঠিয়ে ট্রেনে পণ্য পরিবহনে কেজিপ্রতি ৩ টাকা বেশি খরচ হবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আজম খান বলেন, এ ধরনের উদ্যোগটা আমাদের দেশে নতুন, এ কারণে সরকারকে সাধুবাদ জানাতে হয়। তবে যাদের এই দায়িত্বটা দেওয়া হয়েছে, তারা বাস্তবতা নিরীক্ষা করেননি। আমাদের দেশ ক্ষুদ্র কৃষিনির্ভর। একজন কৃষকের ২-৫ মণ পণ্যও হয়। এটা ট্রেনে নেওয়ার একটা খরচ আছে। আবার এই পণ্য ঢাকায় নিয়ে ন্যায্যমূল্য পাওয়ার অনিশ্চয়তা আছে। কৃষকদের এই সমস্যাগুলোর আগে সুরাহা করতে হবে।