ঢাকা ০৩:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৭০০ একর খাসজমি দুই চেয়ারম্যানের দখলে!

নোয়াখালী প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:১৭:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জুলাই ২০২৪ ৯৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নোয়াখালী সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চরলক্ষী,উরিরচর ও চর নোমান মৌজার ১নং খাস খতিয়ানের প্রায় ৭০০ একর খাসজমি দখলের অভিযোগ উঠেছে কবিরহাটের ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল কোম্পানী ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে। ভূমিহীন কৃষকদের ফসল নষ্ট করে এরমধ্যে চলছে পুকুর খননের কাজ।

জানা গেছে, উপজেলার চরলক্ষী,উরিরচর ও চর নোমান মৌজার ১নং খাস খতিয়ানের প্রায় ৭০০ একর খাসজমি ৫ শতাধিক ভূমিহীন কৃষকের দখলে চাষাবাদ হতো। ২০১৪ সালে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) সমুদ্র গবেষণার জন্য ৪০০ একর খাসজমি সরকারের কাছে বরাদ্দ চায়। ওই প্রস্তাবনার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনও শিক্ষামন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে। এরপর থেকে ওই খাসজমিতে শেখ হাসিনা সমুদ্র বিজ্ঞান ও সামুদ্রিক সম্পদ ইউনিস্টিটিউট স্থাপনে ১৫০ একর খাসজমি বন্ধোবস্ত প্রক্রিয়াধীন। নোবিপ্রবির প্রস্তাবিত জায়গায় বাহিরে ৫শত ভূমিহীন পরিবার সেই জমিতে চাষাবাদ করে আসছিলো। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচনের পর থেকে একটি প্রভাবশালী মহল ভূমিহীনদের ভয়ভীতি দেখিয়ে পুরো ৭শ একর জায়গা জুড়ে অবৈধভাবে দখলের মহোৎসবে মেতে উঠে। সেখানে নোবিপ্রবির প্রস্তাবিত শেখ হাসিনা সমুদ্র বিজ্ঞান ইউনিস্টিটিউট সাউনবোর্ড থাকলেও সেটির তোয়াক্কা না করে কবিরহাটের ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল কোম্পানী ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ও তাদের লোকজন খাসজমি দখল করে প্রজেক্ট করার জন্য ভেকু মেশিন দিয়ে দিনরাত মাঠি কেটে যাচ্ছে। অভিযুক্ত দুই ইউপি চেয়ারম্যান সুবর্ণচর উপজেলার দুই শীর্ষ জনপ্রতিনিধির আস্থাভাজন অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দুপুরের দিকে ভূমিদস্যুদের এমন একচেটিয়া দখল ও হুমিকর প্রতিবাদে ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে উপজেলার চরলক্ষী গ্রামে প্রতিবাদ মিছিল করে ভূমিহীন নদী ভাঙ্গা প্রায় শতাধিক মানুষ।

এলাকবাসী ও ভূমিহীনরা অভিযোগ করে বলেন, জেলার কবিরহাট উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল কোম্পানী ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ দুই সপ্তাহ ধরে ৩০ থেকে ৪০ টি ভেকু মেশিন দিয়ে ৭শত একর জায়গা জুড়ে প্রজেক্ট করার কাজ শুরু করে। তাদের দাবি শেখ হাসিনা সমুদ্র বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হলে তাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু সেটি না করে এতো বিশাল সরকারি খাসজমি ২/৪ জন লোক গিলে খাবে, সেটি কি করে হয়।

প্রতিবাদ সামবেশে ভূমিহীনরা অভিযোগ করে আরও বলেন, দীর্ঘ ৩০ থেকে ৩৫ বছর ধরে তারা সেখানে বসবাস করছেন। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচন শেষ হবার পর একটি মহল তাদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের সকল ঘরবাড়ী ভেঙ্গে উচ্ছেদ করে দেয়। এরপর ১শ একরের মত জায়গায় তাদের রোপন করা শিম,শসা, কচুসহ নানা প্রজাতির সবজি ও মাছের ঘের ধ্বংস করে দেয়। তবে প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ মুখ খুলেনা।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল কোম্পানী খাসজমি দখলের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, এ জায়গার মালিক শাহজাহান নামে এক প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি আমাকে পাওয়ার দিয়েছেন জায়গাটি দেখাশোনার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা হলে তারা কাগজ থাকলে জায়গা নিয়ে যাবে। তাদের জায়গা কেউ ধরে রাখতে পারবেনা।

মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু্ল কালাম আজাদ আমি জমি দখলের সাথে জড়িত নেই। তবে এটা আমাদের নৌকা মার্কার প্রার্থীর নির্বাচনী ইশতেহার ছিল আমরা জনগণের জমি জনগণকে বুঝিয়ে দেব। আগে এসব জায়গা তাদের লোকজনের ছিল বলেও দাবি করেন সাবেক এ চেয়ারম্যান।

সুবর্ণচর উপজেলা কমিশনার (ভূমি) অশোক বিক্রম চাকমা বলেন, অবৈধ দখলের অভিযোগ পেয়ে দুই দফা অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে ১১টি মাঠি কাটার ভেকু মেশিন জব্দ করে কয়েকটি সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড এবং লাল পতাকা উত্তোলন করে দেওয় হয়। একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের বাদের জন্য আটক করে নিয়ে আসা হয়। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. দিদার-উল-আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. দিদার-উল-আলম বলেন, ওই জায়গা শেখ হাসিনা সমুদ্র বিজ্ঞান ও সামুদ্রিক সম্পদ ইনস্টিটিউটের প্রস্তাবিত স্থান। ১নং খাস খতিয়ানভূক্ত ভূমিতে অবৈধভাবে কোনরুপ স্থাপনা নির্মাণসহ অবৈধভাবে দখল আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। উক্ত জমি অবৈধভাবে দখলের চেষ্টা করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ভূমিহীনদের বিনা নোটিশে তাড়িয়ে দেওয়া অমানবিক। ভূমিহীনদের পুর্নবাসন না করে কোন কিছু করা ঠিকনা। এত কিছু থাকার পরও যারা খাসজমি দখল চায় তারা মানসিক ভাবে অসুস্থ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

৭০০ একর খাসজমি দুই চেয়ারম্যানের দখলে!

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:১৭:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জুলাই ২০২৪

নোয়াখালী সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চরলক্ষী,উরিরচর ও চর নোমান মৌজার ১নং খাস খতিয়ানের প্রায় ৭০০ একর খাসজমি দখলের অভিযোগ উঠেছে কবিরহাটের ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল কোম্পানী ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে। ভূমিহীন কৃষকদের ফসল নষ্ট করে এরমধ্যে চলছে পুকুর খননের কাজ।

জানা গেছে, উপজেলার চরলক্ষী,উরিরচর ও চর নোমান মৌজার ১নং খাস খতিয়ানের প্রায় ৭০০ একর খাসজমি ৫ শতাধিক ভূমিহীন কৃষকের দখলে চাষাবাদ হতো। ২০১৪ সালে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) সমুদ্র গবেষণার জন্য ৪০০ একর খাসজমি সরকারের কাছে বরাদ্দ চায়। ওই প্রস্তাবনার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনও শিক্ষামন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে। এরপর থেকে ওই খাসজমিতে শেখ হাসিনা সমুদ্র বিজ্ঞান ও সামুদ্রিক সম্পদ ইউনিস্টিটিউট স্থাপনে ১৫০ একর খাসজমি বন্ধোবস্ত প্রক্রিয়াধীন। নোবিপ্রবির প্রস্তাবিত জায়গায় বাহিরে ৫শত ভূমিহীন পরিবার সেই জমিতে চাষাবাদ করে আসছিলো। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচনের পর থেকে একটি প্রভাবশালী মহল ভূমিহীনদের ভয়ভীতি দেখিয়ে পুরো ৭শ একর জায়গা জুড়ে অবৈধভাবে দখলের মহোৎসবে মেতে উঠে। সেখানে নোবিপ্রবির প্রস্তাবিত শেখ হাসিনা সমুদ্র বিজ্ঞান ইউনিস্টিটিউট সাউনবোর্ড থাকলেও সেটির তোয়াক্কা না করে কবিরহাটের ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল কোম্পানী ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ও তাদের লোকজন খাসজমি দখল করে প্রজেক্ট করার জন্য ভেকু মেশিন দিয়ে দিনরাত মাঠি কেটে যাচ্ছে। অভিযুক্ত দুই ইউপি চেয়ারম্যান সুবর্ণচর উপজেলার দুই শীর্ষ জনপ্রতিনিধির আস্থাভাজন অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দুপুরের দিকে ভূমিদস্যুদের এমন একচেটিয়া দখল ও হুমিকর প্রতিবাদে ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে উপজেলার চরলক্ষী গ্রামে প্রতিবাদ মিছিল করে ভূমিহীন নদী ভাঙ্গা প্রায় শতাধিক মানুষ।

এলাকবাসী ও ভূমিহীনরা অভিযোগ করে বলেন, জেলার কবিরহাট উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল কোম্পানী ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ দুই সপ্তাহ ধরে ৩০ থেকে ৪০ টি ভেকু মেশিন দিয়ে ৭শত একর জায়গা জুড়ে প্রজেক্ট করার কাজ শুরু করে। তাদের দাবি শেখ হাসিনা সমুদ্র বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হলে তাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু সেটি না করে এতো বিশাল সরকারি খাসজমি ২/৪ জন লোক গিলে খাবে, সেটি কি করে হয়।

প্রতিবাদ সামবেশে ভূমিহীনরা অভিযোগ করে আরও বলেন, দীর্ঘ ৩০ থেকে ৩৫ বছর ধরে তারা সেখানে বসবাস করছেন। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচন শেষ হবার পর একটি মহল তাদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের সকল ঘরবাড়ী ভেঙ্গে উচ্ছেদ করে দেয়। এরপর ১শ একরের মত জায়গায় তাদের রোপন করা শিম,শসা, কচুসহ নানা প্রজাতির সবজি ও মাছের ঘের ধ্বংস করে দেয়। তবে প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ মুখ খুলেনা।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল কোম্পানী খাসজমি দখলের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, এ জায়গার মালিক শাহজাহান নামে এক প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি আমাকে পাওয়ার দিয়েছেন জায়গাটি দেখাশোনার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা হলে তারা কাগজ থাকলে জায়গা নিয়ে যাবে। তাদের জায়গা কেউ ধরে রাখতে পারবেনা।

মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু্ল কালাম আজাদ আমি জমি দখলের সাথে জড়িত নেই। তবে এটা আমাদের নৌকা মার্কার প্রার্থীর নির্বাচনী ইশতেহার ছিল আমরা জনগণের জমি জনগণকে বুঝিয়ে দেব। আগে এসব জায়গা তাদের লোকজনের ছিল বলেও দাবি করেন সাবেক এ চেয়ারম্যান।

সুবর্ণচর উপজেলা কমিশনার (ভূমি) অশোক বিক্রম চাকমা বলেন, অবৈধ দখলের অভিযোগ পেয়ে দুই দফা অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে ১১টি মাঠি কাটার ভেকু মেশিন জব্দ করে কয়েকটি সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড এবং লাল পতাকা উত্তোলন করে দেওয় হয়। একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের বাদের জন্য আটক করে নিয়ে আসা হয়। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. দিদার-উল-আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. দিদার-উল-আলম বলেন, ওই জায়গা শেখ হাসিনা সমুদ্র বিজ্ঞান ও সামুদ্রিক সম্পদ ইনস্টিটিউটের প্রস্তাবিত স্থান। ১নং খাস খতিয়ানভূক্ত ভূমিতে অবৈধভাবে কোনরুপ স্থাপনা নির্মাণসহ অবৈধভাবে দখল আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। উক্ত জমি অবৈধভাবে দখলের চেষ্টা করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ভূমিহীনদের বিনা নোটিশে তাড়িয়ে দেওয়া অমানবিক। ভূমিহীনদের পুর্নবাসন না করে কোন কিছু করা ঠিকনা। এত কিছু থাকার পরও যারা খাসজমি দখল চায় তারা মানসিক ভাবে অসুস্থ।