হাসপাতালের বাতাসে পোড়া গন্ধ আর স্বজনদের আহাজারি
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:০৬:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ মার্চ ২০২৪ ১২৭ বার পড়া হয়েছে
রাজধানীর বেইলি রোডে ভবনে আগুনে দগ্ধ সবার শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। তাদের কেউই আশঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। প্রধানমন্ত্রী নিজে চিকিৎসাধীনদের খবর রাখছেন উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও জানান, দগ্ধদের চিকিৎসায় নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে বহুতল ভবনটিতে লাগা ভয়াবহ আগুনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ জনে। ফায়ার সার্ভিসের ১৩ ইউনিটের চেষ্টায় দুই ঘন্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও পুড়ে গেছে বাণিজ্যিক ভবনটি।
এ ঘটনায় আহতদের নেওয়া হয়েছে শেখ হাসিনা বার্ন ইন্সটিটিউটে। হাসপাতালটির বাতাসে পোড়া গন্ধ আর স্বজনদের আহাজারি। কেউ হারিয়েছেন ভাই, কেউ বোন, কেউ বা একান্ত আপনজন। প্রিয়জন হারানোর শোকে মূর্ছা যান অনেকে।
বেইলি রোডে ভবনে আগুনের ঘটনায় উদ্ধার হওয়া ৭৫ জনের মধ্যে মারা যান প্রায় অর্ধশত। নিহতদের মধ্যে ২৩ জনের মরদেহ এখন পর্যন্ত পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দগ্ধ হয়ে শেখ হাসিনা বার্ন ইন্সটিটিউট ও ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি আরও অন্তত ২৫ জন। যাদের বেশিরভাগেরই পুড়ে গেছে শ্বাসনালী।
দগ্ধদের খোঁজ নিতে দুই হাসপাতালেই যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। হতাভাগা এসব মানুষের জন্য চিকিৎসার সব ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। তিনি জানান, দগ্ধ কেউই শংকামুক্ত নন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘আশঙ্কাজনক সবাই। কারণ সবারই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। বাহিরে বার্ন নাই, কিন্তু ভেতরে পুড়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি যারা বেঁচে আছে তাদের যেন সুস্থ্যভাবে বাঁচিয়ে রাখতে পারি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তুমি যাও গিয়ে দেখো যে কি অবস্থা।’
ঢাকা মেডিকেল, বার্ন ইন্সটিটিউট ছাড়াও অন্যান্য হাসপাতালেও আহত অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
বেইলে রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে রাত পৌনে ১০টায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে। ৯টা ৫৬ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের ৬টি ইউনিট কাজ শুরু করে। একে একে যোগ দেয় ১৩টি ইউনিট।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পান তারা। মূহুর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে।
প্রথম দুই ঘণ্টা কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে রাত ১২টার পর থেকে আহত ব্যক্তিদের ভবন থেকে বের করে আনা হয়।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, পুরো ভবনে অসংখ্য গ্যাস সিলিন্ডার মজুত ছিল। এমনকি সিঁড়িতেও মজুত ছিল সিলিন্ডার। ফলে ভবনটিতে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে তা দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন বলেন, ‘দ্বিতীয় তলা ছাড়া প্রত্যেকটি তলায় ইভেন সিঁড়ি ঘরেও সিলিন্ডার ছিল। এটা বিপদজনক একটা ব্যাপার। আগুন লাগলে সিলিন্ডার কতটুকু বিস্ফোরিত হয়, কি হয় আপনারা জানেন। আমরা তল্লাশি করছি। এরপর আমরা নির্ধারণ করব ভবনটা কতটুকু নিরাপদ।’
ভবনটিতে পর্যাপ্ত অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা ছিল না বলে জানিয়েছে পুলিশ। ভবন মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘এটি একটি বাণিজ্যিক এলাকা এবং আশপাশে এবং পেছনে কিন্তু আবাসিক এলাকাও আছে। ভবনটি সঠিকভাবে তৈরি করা হয়েছিল কিনা, কারও গাফিলতি আছে কিনা সেটি দেখা হবে। একটি মামলা রমনা থানায় হবে। পুলিশ সেটি তদন্ত করবে।’
ভবনটিতে কাচ্চি ভাই, পিৎজা ইন, স্ট্রিট ওভেন, খানাসসহ বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এছাড়া ইলিয়েন, ক্লোজেস্ট ক্লাউডসহ বেশকিছু জনপ্রিয় পোশাকের দোকানও রয়েছে। ঘটনা তদন্তে এরই মধ্যে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে ফায়ার সার্ভিস।