হত্যার পর দেহাংশ রাখা হয় ফ্রিজে, খুনের নেপথ্যে জানা গেলো যেসব কারণ
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪ ১১৬ বার পড়া হয়েছে
ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের হত্যার ঘটনায় বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে রহস্য। তদন্তে উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য। কীভাবে তাকে খুন করা হয়, তা নিয়ে ক্রমেই জমাট বাঁধছে রহস্য।
দেশটির পুলিশ সূত্রের খবর, ১৩ মে নিউটাউনের আবাসনেই শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারকে। খুনের পর দেহ টুকরো টুকরো করে কাটা হয়। ১৬ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত তিনদিন ধরে দেহাংশ সরিয়ে ফেলা হয়। শরীরের কিছু অংশ ওই ফ্ল্যাটের ফ্রিজে রাখা রয়েছে বলে সূত্রের খবর। এমনকি ফ্ল্যাট থেকে প্লাস্টিক ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, প্লাস্টিক ব্যাগে ভরেই দেহাংশ বিভিন্ন জায়গায় ফেলা হয়েছে। তবে দেহাংশ কারা ফেলেছে, কোথায় ফেলা হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়।
এদিকে, এ ঘটনায় একটি চারচাকা গাড়ি বাজেয়াপ্ত করেছে দেশটির পুলিশ। গাড়ির নাম্বার WB18 AA 5473। পুলিশ সূত্রে খবর, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে গাড়িটি শনাক্ত করা হয়েছে। এরপর গাড়ির মালিকের সাথে যোগাযোগ করা হয়। সেই গাড়িটি আনা হয় নিউটাউন থানায়। উদ্ধার হওয়া গাড়ি থেকে ফরেনসিক এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞরা নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
চিকিৎসা করাতে চলতি মাসের ১২ মে কলকাতা যান এই এমপি। তার পর পরিবারের সাথে কোনো যোগাযোগও করেননি তিনি। ১৪ মে থেকে তার ফোনও ‘সুইচড অফ’ ছিলেঅ। পুলিশ সূত্রের খবর, শেষবার এমপি আনোয়ারুল আজিমের মোবাইল টাওয়ারের লোকেশন উত্তরপ্রদেশে পাওয়া গিয়েছিলো।
তবে তার সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে তার পরিবারের পক্ষ থেকেজোনানো হয় ডিবি অফিসে। এরপর যোগাযোগ করে দিল্লি ও কলকাতায় বাংলাদেশের দূতাবাসের সাথে। নিখোঁজ এমপির খোঁজে তদন্ত শুরু করে বিধাননগর পুলিশ। তদন্তে নেমে একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। আর তা থেকেই দাবি, খুন করা হতে পারে ওই এমপিকে।
এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার পর তাকে ঘিরেই দানা বেঁধেছে নানা রহস্য। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও দাবি করেছেন, পরিকল্পিতভাবেই হত্যা করা হয়েছে আনোয়ারুলকে। হত্যায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তবে এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের জীবন ঘিরেও রয়েছে নানা বিতর্ক। একসময় তার উপর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলো আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল। চোরাচালান, হুন্ডি কারবার ও পাচারের অভিযোগে ইন্টারপোল তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করেছিলো। আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার অপরাধে জড়িত থাকায় ২০০৬ সালে ইন্টারপোলের তালিকায় উঠে এসেছিলো আনোয়ারুলের নাম। যদিও ২০০৯ সালে সেই তালিকা থেকে তার নাম প্রত্যাহার করা হয়। তার বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের মধুগঞ্জ বাজার এলাকায়। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা তিনবার তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
জানা গেছে, এক সময় বনগাঁও মহকুমার বাগদা সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান করতেন আনোয়ারুল। ওই সময় কালীগঞ্জ থানাসহ মহেশপুর, কোটচাঁদপুর ও চুয়াডাঙ্গার জীবননগর থানা পুলিশের সাথে মাসিক চুক্তিতে ‘টোকেন’ তৈরি করত তার বাহিনী। টোকেন দেখালেই প্রশাসনের লোকজন মাদকদ্রব্য বহনকারী গাড়ি ছেড়ে দিতো। এই টোকেন বাণিজ্য থেকে আনার ‘মাদক সম্রাট’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। মাদক কারবারের মাধ্যমেই বিপুল সম্পত্তির মালিক হন তিনি। এরপর সোনা পাচার করতে গিয়ে খুনের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে আনোয়ারুলের নাম।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন অপরাধে এক সময় আনোয়ারুলের বিরুদ্ধে ২৪টিরও বেশি মামলা ছিলো। এর ফলে, পূর্ব কোনো ঘটনার জন্যই কী আনোয়ারুলকে খুন করার পরিকল্পনা করা হয়েছিলো?
এমপি আনোয়ারুল হত্যার ঘটনার তদন্তে উঠে এসেছে আরেক বিস্ফোরক তথ্য। তিনি একা ভারতে গিয়েছেন বলে শুরু থেকে প্রচার করা হলেও আসলে তার সাথে নাকি আরো দু’জন ছিলেন। তারাও বাংলাদেশি বলে জানা গেছে। ওই দুই ব্যক্তি এমপির দীর্ঘদিনের পরিচিত। তাদের বাড়িও ঝিনাইদহেই বলে ধারণা করা হচ্ছে। চিকিৎসা ও বন্ধুর মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে চলতি মাসের ১২ মে বরাহনগরে বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে ওঠেন আনোয়ারুল। এর পরদিন ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রউফের সাথে তার কথা হয়েছিলো। গত ১৬ মে সকাল ৭টা ৪৬ মিনিটে আনোয়ারুলের ফোন থেকে আবদুরের নম্বরে সর্বশেষ ফোন আসে। কলটি ধরতে পারেননি আবদুর। এরপর একাধিকবার ফোন করা হলেও আর আনোয়ারুলের সাথে যোগাযোগ করতে পারেননি পরিবারের সদস্যরা। বুধবার (২২ মে) ভারতের তরফে দাবি করা হয় আনোয়ারুলকে হত্যা করা হয়েছে।