ঢাকা ০৫:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্কুলে যাতায়াতের রাস্তা কেটে পুকুর খনন

বাংলা টাইমস ডেস্ক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১০:৪১:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০২৪ ২৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নীলফামারীর ডোমার উপজেলার মাষ্টার পাড়া এলাকায় স্কুল যাতায়াতের রাস্তা কেটে পুকুর খননের অভিযোগ উঠেছে একই এলাকার বাসিন্দা মসিউর রহমান ওরফে মোশারফের বিরুদ্ধে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তাটি বর্ষার পানিতে ভরপুর হওয়ায় এলাকার কোমলমতি শিশুদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথ একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। রাস্তাটি বন্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রায় দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার পথ ঘুরে স্কুলে যেতে হয়।


এলাকাবাসী জাহেদুল, আবুল হোসেন, রশিদুলসহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান ওই রাস্তার অপর প্রান্তে রয়েছে মধ্য চান্দখানা কামাত ডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

বিদ্যালয়টি ১৯৯২ সালে স্থাপিত হয়েছে। রাস্তাটি সচল থাকা অবস্থায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল আড়াই শতাধিক, বর্তমানে রাস্তাটি বন্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাড়িয়েছে অর্ধেকেরও নিচে। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যেতে হলে প্রায় ২ থেকে আড়াই কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হয়। এতে করে একদিকে যেমন শিশুরা বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না।

অপরদিকে তারা পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ হারিয়ে ফেলছে। রাস্তাটি পুকুরে পরিনত হওয়ায় দুই পাড়ের মানুষের মাঝে যোগাযোগেরও অনেকটা ব্যঘাত সৃষ্টি হয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই রাস্তা দিয়ে আমাদের বাপ দাদারা চলাচল করেছে, আমরাও করেছি। এখন আমাদের বাচ্চাদের বেলায় এসে রাস্তাটি পুকুরে পরিনত হয়েছে। রাস্তটির সংলগ্ন জমির মালিক মশিউর রহমান ওরফে মোশারফকে দোষারোপ করেছেন তারা। এলাকাবাসীর একটাই দাবি পূর্বের ন্যায় রাস্তাটি যেভাবে আমরা চলাচল করেছি সেভাবেই আমাদের আগামী প্রজন্মরাও যেন রাস্তাটি ব্যবহার করতে পারে এবং কোমলমতি শিশুরা যেন তাদের শিক্ষার আলো থেকে পিছিয়ে না পড়ে।

এ বিষয়ে মধ্য চান্দখানা কামাত ডাঙ্গা বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সহকারী শিক্ষিক এবং বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজগার আলী এবং দাতা সদস্য নবিজ উদ্দিন বলেন, এই রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে এলাকার লোকজন এবং স্কুলের বাচ্চার চলাচল করতো। কিন্তু যে সময় রাস্তাটি বন্ধ হয় তখন আমাদের স্কুলের জায়গা দখল নিয়ে গন্ডগোল চলছিল তাই আমরা রাস্তাটির বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারিনি। তবে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান রশিদুল ইসলাম রোমানকে রাস্তাটির বিষয়ে মৌখিক ভাবে আমরা অবগত করেছি।

রাস্তার বিষয়ে বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন,আমি সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার মাত্র ৬ মাস হলো। তবে রাস্তাটি বন্ধ হওয়ায় একদিকে যেমন শিক্ষার্থী কমেছে, অপরদিকে স্কুলটি ক্ষতির মুখে পতিত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন রাস্তাটি পূর্ণরায় চালু হলে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আগের অবস্থায় ফিরে আসবে এবং দুই পাড়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে এবং সকল সমস্যার সমাধান হবে ইনশাআল্লাহ। তবে রাস্তাটি পূর্ণরায় সচলের জোড় দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে মধ্য চান্দখানা কামাত ডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রইসুল আলম বাবলু জানান, আমরা বিদ্যালয়ের জায়গা উদ্ধার নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ২০০৭ কিংবা ২০০৮ সালের দিকে রাস্তা তুলে দিয়ে পুকুর খনন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ২ নং কেতকীবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জহুরুল হক দিপুর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, আমি চেয়ারম্যান থাকাকালীন একবার নয় দুই বার নয় দশবার তার সাথে কথা বলেছি, তখন সে আমাকে বলেছিল আপনারা কাজটাকে এগিয়ে নিয়ে আসেন। যে গর্ত হয়েছে সেখানে আমি আমার নিজ অর্থে পিলার দিয়ে এলাকাবাসীর চলাচলের জন্য ব্রিজ করে দিব। তবে এলাকাবাসী যদি রাস্তাটি সংস্করণের উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে মশিউর যেটা কথা দিয়েছে সেই কথা সে রক্ষা করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

এবিষয়ে ২নং কেতকীবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান রশিদুল ইসলাম রোমানের কাছে রাস্তা বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাস্তার বিষয়ে কখনো কেউ আমাকে অভিযোগ করেনি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি আমি সমাধান করার চেষ্টা করবো।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের সাথে মুঠোফোন কথা হলে তিনি জানান, বিষয়টি সম্পর্কে আমি কোনভাবেই অবগত নই, কেউ কখনো আমাকে এ বিষয়ে অবগত করেননি। আপনাদের মাধ্যমে এই প্রথম বিষয়টি সমন্ধে অবগত হলাম।

এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সরকার ফারহানা আকতার সুমির সাথে কথা হলে তিনি জানান এলাকাবাসী আমাকে মৌখিক ভাবে বিষয়টি অবগত করার পর আমি উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি জান্নাতুল ফেরদৌস হ্যাপিকে বিষয়টি অবগত করি। তবে লিখিতভাবে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

মসিউর রহমান ওরফে মোশারফের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি কোন সরকারি রাস্তা দখল করি নাই। রাস্তার পাশের জমিগুলো আমার। আমার বর্গাচাষিরাই সেগুলো দেখাশোনা করে, তাছাড়া আমি এলাকায় ঠিকমতো থাকিনা। তবে এলাকাবাসী যদি রাস্তাটি মেরামতের ব্যবস্থা করেন তাহলে যেই জায়গাটিতে পুকুরের কারণে গর্ত হয়েছে সেইখানে আমি আমার নিজ অর্থে পুকুরের উপর পিলার দিয়ে এলাকাবাসীর চলাচলের জন্য ব্রিজ করে দিব।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

স্কুলে যাতায়াতের রাস্তা কেটে পুকুর খনন

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১০:৪১:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০২৪

নীলফামারীর ডোমার উপজেলার মাষ্টার পাড়া এলাকায় স্কুল যাতায়াতের রাস্তা কেটে পুকুর খননের অভিযোগ উঠেছে একই এলাকার বাসিন্দা মসিউর রহমান ওরফে মোশারফের বিরুদ্ধে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তাটি বর্ষার পানিতে ভরপুর হওয়ায় এলাকার কোমলমতি শিশুদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথ একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। রাস্তাটি বন্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রায় দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার পথ ঘুরে স্কুলে যেতে হয়।


এলাকাবাসী জাহেদুল, আবুল হোসেন, রশিদুলসহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান ওই রাস্তার অপর প্রান্তে রয়েছে মধ্য চান্দখানা কামাত ডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

বিদ্যালয়টি ১৯৯২ সালে স্থাপিত হয়েছে। রাস্তাটি সচল থাকা অবস্থায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল আড়াই শতাধিক, বর্তমানে রাস্তাটি বন্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাড়িয়েছে অর্ধেকেরও নিচে। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যেতে হলে প্রায় ২ থেকে আড়াই কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হয়। এতে করে একদিকে যেমন শিশুরা বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না।

অপরদিকে তারা পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ হারিয়ে ফেলছে। রাস্তাটি পুকুরে পরিনত হওয়ায় দুই পাড়ের মানুষের মাঝে যোগাযোগেরও অনেকটা ব্যঘাত সৃষ্টি হয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই রাস্তা দিয়ে আমাদের বাপ দাদারা চলাচল করেছে, আমরাও করেছি। এখন আমাদের বাচ্চাদের বেলায় এসে রাস্তাটি পুকুরে পরিনত হয়েছে। রাস্তটির সংলগ্ন জমির মালিক মশিউর রহমান ওরফে মোশারফকে দোষারোপ করেছেন তারা। এলাকাবাসীর একটাই দাবি পূর্বের ন্যায় রাস্তাটি যেভাবে আমরা চলাচল করেছি সেভাবেই আমাদের আগামী প্রজন্মরাও যেন রাস্তাটি ব্যবহার করতে পারে এবং কোমলমতি শিশুরা যেন তাদের শিক্ষার আলো থেকে পিছিয়ে না পড়ে।

এ বিষয়ে মধ্য চান্দখানা কামাত ডাঙ্গা বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সহকারী শিক্ষিক এবং বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজগার আলী এবং দাতা সদস্য নবিজ উদ্দিন বলেন, এই রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে এলাকার লোকজন এবং স্কুলের বাচ্চার চলাচল করতো। কিন্তু যে সময় রাস্তাটি বন্ধ হয় তখন আমাদের স্কুলের জায়গা দখল নিয়ে গন্ডগোল চলছিল তাই আমরা রাস্তাটির বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারিনি। তবে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান রশিদুল ইসলাম রোমানকে রাস্তাটির বিষয়ে মৌখিক ভাবে আমরা অবগত করেছি।

রাস্তার বিষয়ে বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন,আমি সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার মাত্র ৬ মাস হলো। তবে রাস্তাটি বন্ধ হওয়ায় একদিকে যেমন শিক্ষার্থী কমেছে, অপরদিকে স্কুলটি ক্ষতির মুখে পতিত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন রাস্তাটি পূর্ণরায় চালু হলে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আগের অবস্থায় ফিরে আসবে এবং দুই পাড়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে এবং সকল সমস্যার সমাধান হবে ইনশাআল্লাহ। তবে রাস্তাটি পূর্ণরায় সচলের জোড় দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে মধ্য চান্দখানা কামাত ডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রইসুল আলম বাবলু জানান, আমরা বিদ্যালয়ের জায়গা উদ্ধার নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ২০০৭ কিংবা ২০০৮ সালের দিকে রাস্তা তুলে দিয়ে পুকুর খনন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ২ নং কেতকীবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জহুরুল হক দিপুর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, আমি চেয়ারম্যান থাকাকালীন একবার নয় দুই বার নয় দশবার তার সাথে কথা বলেছি, তখন সে আমাকে বলেছিল আপনারা কাজটাকে এগিয়ে নিয়ে আসেন। যে গর্ত হয়েছে সেখানে আমি আমার নিজ অর্থে পিলার দিয়ে এলাকাবাসীর চলাচলের জন্য ব্রিজ করে দিব। তবে এলাকাবাসী যদি রাস্তাটি সংস্করণের উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে মশিউর যেটা কথা দিয়েছে সেই কথা সে রক্ষা করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

এবিষয়ে ২নং কেতকীবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান রশিদুল ইসলাম রোমানের কাছে রাস্তা বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাস্তার বিষয়ে কখনো কেউ আমাকে অভিযোগ করেনি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি আমি সমাধান করার চেষ্টা করবো।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের সাথে মুঠোফোন কথা হলে তিনি জানান, বিষয়টি সম্পর্কে আমি কোনভাবেই অবগত নই, কেউ কখনো আমাকে এ বিষয়ে অবগত করেননি। আপনাদের মাধ্যমে এই প্রথম বিষয়টি সমন্ধে অবগত হলাম।

এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সরকার ফারহানা আকতার সুমির সাথে কথা হলে তিনি জানান এলাকাবাসী আমাকে মৌখিক ভাবে বিষয়টি অবগত করার পর আমি উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি জান্নাতুল ফেরদৌস হ্যাপিকে বিষয়টি অবগত করি। তবে লিখিতভাবে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

মসিউর রহমান ওরফে মোশারফের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি কোন সরকারি রাস্তা দখল করি নাই। রাস্তার পাশের জমিগুলো আমার। আমার বর্গাচাষিরাই সেগুলো দেখাশোনা করে, তাছাড়া আমি এলাকায় ঠিকমতো থাকিনা। তবে এলাকাবাসী যদি রাস্তাটি মেরামতের ব্যবস্থা করেন তাহলে যেই জায়গাটিতে পুকুরের কারণে গর্ত হয়েছে সেইখানে আমি আমার নিজ অর্থে পুকুরের উপর পিলার দিয়ে এলাকাবাসীর চলাচলের জন্য ব্রিজ করে দিব।